somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

একটি পেয়ালায় খানিকটা জীবন

০৪ ঠা জুলাই, ২০১৫ রাত ৮:৫০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


- আপনাকে কি আমি চিনি?
- (মৃদু হাসি...) হুমম!
বুঝলাম না এটা আমার প্রশ্নের জবাব নাকি চায়ের চুমুকের সাথে হাসির মিশ্রণ! কিছুক্ষণ শুধু তাকিয়ে থাকলাম লোকটার দিকে। একনজরে দেখলে যে কেউ মুগ্ধ হয়ে যাবে...তবে চেহারাতে কিছু একটার স্পষ্ট ছাপ আছে যা আমি এই মুহূর্তে ধরতে পারছি না।
- তোমার চা ঠাণ্ডা হচ্ছে...।
আমি আসলেই বুঝলাম না, সে কি আমাকে চা টা তাড়াতাড়ি শেষ করতে বলল নাকি এখানে যে চা ঠাণ্ডা হবার মত একটা ছোট্ট ঘটনা ঘটছে তা অবহিত করল।
কোথাও কিছু একটা গড়বড় আছে। মাথা কাজ করছে না। কিছু না ভেবেই চায়ের কাপটা হাতে নিলাম। মাথাটা একটু রিফ্রেশ করা দরকার। একটু হেঁটে আসতে পারলে মন্দ হত না। আবার লোকটাকে রেখে তো ওঠাও যাচ্ছে না। চায়ের কাপে চুমুক দিতে যাব... বুকটা ছ্যাঁত করে উঠলো। আমি তো...... নাহ! স্পষ্ট মনে আছে, রাতে নজরুলের চক্রবাক টা হাতে নিয়ে বিছানায় শুয়ে ছিলাম। কোথায় বিছানা আর কোথায় চক্রবাক!!! আমি তো হাওয়ার ওপর ভেসে আছি। চারিদিকে ঘন কুয়াশা। অবাক হলেও সত্য আমার সামনের জনও এভাবেই আছে... আমি এতক্ষন কিছুই খেয়াল করি নাই।
- তোমার চা ঠাণ্ডা হচ্ছে!...
আবার একই রকম ভাবলেশহীন কণ্ঠ। অনিচ্ছাসত্ত্বেও কাপের দিকে তাকালাম। অবাক হব ,না কি...... কাপের ভিতর তাজা রক্ত। বমির অভ্যাস আমার নেই, তারপরও কেমন জানি গা টা গুলিয়ে আসতে চাইছে। ভয় জিনিসটা কিছুদিন হল আমার কাছ থেকে একদম ই কেন জানি দূরে চলে গেছে। যে আমি আগে মাঝরাতে একা বাথরুমে যেতে ভয় পেতাম, সেই আমি এখন মাঝরাতে গোপনে বেরই অজানার খোঁজে। মানব প্রকৃতি বড়ই রহস্যময়। কাপটা হাতে রেখেই খুব স্বাভাবিক চাহনি নিয়ে তাকালাম লোকটার দিকে।
- পুরোটা না।
- বুঝলাম না।
- তোমার জবাব......
- পরিস্কার করুন
- your time is running…..but U’R looking good now!
এত কিছুর পরও মানুষটাকে কেমন জানি আপন মনে হচ্ছে। মনে হয়না কোন ক্ষতি করবে। স্বাভাবিক আওয়াজেই প্রশ্ন করলাম, আমার কাপে রক্ত?
- তোমারই...এখনও কিছু বাকি আছে। ( হঠাৎ করে লোকটার হাসি কেমন জানি বিশ্রী হয়ে যেতে থাকে)
- আমরা কোথায়?
- তোমার কি মনে হয় জীবনের সবচে সুন্দর মুহূর্ত এখনও তোমার সামনে বাকি?
- আপনার কি মনে হয় এই রক্তভর্তি পেয়ালা নিয়ে কোন সুন্দর মুহূর্তের কথা কল্পনাও করা সম্ভব!!!
- ফেলে দাও।
- হু????
মনে হয় আবার কথাটা বলতে চায় না- নিস্পলক তাকিয়ে আছে। আমি আমার নজর তার চোখ থেকে না সরিয়ে কাপটা উল্টিয়ে দিলাম। ঠোঁটের কোণে হাল্কা হাসি ফুটিয়ে, চোখ দিয়ে ইশারা করল আমার হাতের দিকে।
- এবার যা ঘটলো তাতে অবাক না হয়ে পারলাম না। রক্তে ভেজা একটা কালো গোলাপ। কালো গোলাপ আমার সবচে পছন্দের।
আমার আওয়াজের কোমলতা হঠাৎ উধাও হয়ে গেলো। মোটামুটি রূঢ় ভাবে বললাম, আপনি কি বোঝাতে চাচ্ছেন?
- মানুষ কখনও কখনও নিজেই চাওয়া আর পাওয়ার মধ্যে দূরত্ব তৈরি করে ফেলে, তাইনা?
আমি চুপ থাকলাম। কেন জানি মনে হচ্ছে সে নিজেই এখন বাকি সব বলবে।
- মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড়...... ভুল কথা! আচ্ছা! একটা কথা ভাঙিয়ে দাও তো...... তুমি যে মুহূর্তগুলো এখন উপভোগ করো তার স্মৃতিগুলোর দাম কতো?
- আগে অনেক দামি মনে হত... এখন মূল্যহীন মনে হয়।
লোকটা ঠিক প্রথমবারের মত মৃদু হেসে জিজ্ঞাসা করল, কেন?
আমি বলতে চেয়েও বললাম না। আমার নিজের একটা উত্তর আছে, কিন্তু......থাক! লোকটা বলে চলল,
- তুমি যদি এখন ভাল থাকো তাহলে এটাই যথেষ্ট, সেখানে কোন পুরানো কিছুর সহায়তার দরকার হয় না। আর যদি থাকো কষ্টের আড়ালে গোপন, তাহলে পুরানো স্মৃতি তোমার কষ্টকে শুধু বাড়াবে......কক্ষনও কমাবে না।
আমি অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলাম তার দিকে। ঠিক এই কথাটাই আমি আমার ডায়েরীতে বড় করে লিখে রেখেছি।
- আমার শেষ প্রশ্ন। দয়া করে উত্তরটা দেবেন...... আমি কোথায়, আর আপনিই বা কে? এসব কিছুর মানে আমার মাথায় ঢুকছে না।
লোকটা হঠাৎ পিছন ফিরে বাতাসের সাথে ভেসে যেতে থাকে। ওই বাতাসের সাথেই প্রতিধ্বনি শুনি আমি......... আমিই জীবন, তোমাকে চেনাতে এসেছিলাম!।
আমি চোখ বড় করে তাকিয়ে থাকি। ধীরে ধীরে কুয়াশা আরও ঘন হচ্ছে। আরও ঘন...আরও!!! চারিদিকে কোন রঙ নেই, কোন আলো নেই, নাইবা আছে কোন অন্ধকার। আছে শুধু একটা প্রতিধ্বনি...... “আমিই জীবন, তোমাকে চেনাতে এসেছিলাম!”
প্রতিধ্বনি??? আমি শক্ত কারও ভিতর বাঁধা। জীবন তো চলে যেতে পারে সীমানা ছাড়িয়ে। কিন্তু আমি তো খোলস। কখনও এক জীবনের জন্য আবার কখনও বা আরেক জীবনের জন্য!
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা জুলাই, ২০১৫ রাত ৮:৫০
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কে কাকে বিশ্বাস করবে?

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৩৯


করোনার সময় এক লোক ৯৯৯ এ ফোন করে সাহায্য চেয়েছিল। খবরটা স্থানীয় চেয়ারম্যানের কানে গেলে ওনি লোকটাকে ধরে এনে পিটিয়েছিলেন। কারণ, ৯৯৯ এ ফোন দেওয়ায় তার সম্মানহানি হয়েছে।

সমাজে এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিসিএস পরীক্ষার্থীদের পরীক্ষায় বসতে না পারার কষ্টটা সমালোচনার কোন বিষয়বস্তু নয়

লিখেছেন ঢাবিয়ান, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৩৬

গতকালের একটি ভাইরাল খবর হচ্ছে কয়েক মিনিটের জন্য বিসিএস পরীক্ষা দেয়া হলো না ২০ প্রার্থীর !! অনেক প্রার্থীর কান্নাকাটির ভিডিও ভাইরাল হয়েছে।এ বিষয়ে পিএসসি চেয়ারম্যান এর নিয়ামানুবর্তিতার জ্ঞান বিতরনের... ...বাকিটুকু পড়ুন

বারবাজারে মাটির নিচ থেকে উঠে আসা মসজিদ

লিখেছেন কামরুল ইসলাম মান্না, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:৪০

ঝিনাইদহ জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার বারবাজার ইউনিয়নে মাটির নিচ থেকে মসজিদ পাওয়া গেছে। এরকম গল্প অনেকের কাছেই শুনেছিলাম। তারপর মনে হলো একদিন যেয়ে দেখি কি ঘটনা। চলে গেলাম বারবাজার। জানলাম আসল... ...বাকিটুকু পড়ুন

সৎ মানুষ দেশে নেই,ব্লগে আছে তো?

লিখেছেন শূন্য সারমর্ম, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:৪৮








আশেপাশে সৎ মানুষ কেমন দেখা যায়? উনারা তো নাকি একা থাকে, সময় সুযোগে সৃষ্টিকর্তা নিজের কাছে তুলে নেয় যা আমাদের ডেফিনিশনে তাড়াতাড়ি চলে যাওয়া বলে। আপনি জীবনে যতগুলো বসন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

পরিবর্তন অপরিহার্য গত দেড়যুগের যন্ত্রণা জাতির ঘাড়ে,ব্যবসায়ীরা কোথায় কোথায় অসহায় জানেন কি?

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৩:৫৭


রমজানে বেশিরভাগ ব্যবসায়ীকে বেপরোয়া হতে দেখা যায়। সবাই গালমন্দ ব্যবসায়ীকেই করেন। আপনি জানেন কি তাতে কোন ব্যবসায়ীই আপনার মুখের দিকেও তাকায় না? বরং মনে মনে একটা চরম গালিই দেয়! আপনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×