somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

স্কুলের স্মৃতি-০১

২১ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ রাত ২:৫৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আজ অনেকদিন পর ছুটি নিলাম আমার অভ্যস্ত জীবনসুচি থেকে। সাধারণত টুইশনি শেষ করে সরাসরি বাসায় ফিরি। তবে আজ আবহাওয়া এতটা ভাল ছিল যে হটাৎ বসন্ত বাতাস রাস্তার মাঝে থামিয়ে দিল। আমার আমি এই যান্ত্রিক আমিকে আবার হারিয়ে দিল।
একা ভাল লাগল না। তাই বন্ধুকে নিয়ে হাটা ধরলাম। স্কুলজীবনের বন্ধু সে, আজ কয়েক মাস পরে দেখা। তাই গল্পের তো আর শেষ নেই।
স্কুল নিয়ে কথা হল। স্কুল নাকি অনেক বদলে গেছে। আমাদের সময়কার শিক্ষক-শিক্ষিকা বেশি নেই এখন। কেউ সাময়িক অবসর গ্রহণ করেছেন, কেউ চিরতরে অবসর গ্রহণ করেছেন।
নিষ্ঠুর রেহানা ম্যাডাম এর কথা মনে পড়ে। বাংলা শিক্ষিকা ছিলেন আমাদের। যত না আমাদের পাঠ্যবই পড়াতেন, তার চেয়ে বেশি গল্পও বলতেন। এমন সব গল্প যেসব গল্প শুনে স্কুলের সবচেয়ে বেয়াদপ ছেলেরা কল্পনায় হারিয়ে যেত। টু-শব্দ হত না ক্লাসে। জীবনে কিছু করার অনুপ্রেরণা পেতাম আমরা। বেয়াদপ ছেলেরা ভাবুক হয়ে পরতো। কখন যে ক্লাস শেষ হত বুঝতাম না।
ওহ, নিষ্ঠুর বললাম কেন? মার্কস দিতেন না ম্যাডাম। তাই বাংলাতে ভাল মার্কস পাওয়ার জন্য আমরা শিশু সাহিত্যিক হয়ে যেতাম। কিন্তু লিখা ভাল হলে ম্যাডাম এত সুন্দর করে প্রশংসা করতেন যে কি বলব। একবার কিভাবে যেন আমি কি একটা কবিতার মূলভাব খুব ভাল লিখেছিলাম। মুহূর্তটা এখনও মনে পড়ে। সম্পূর্ণ ক্লাসের সামনে আমার প্রশংসা হচ্ছে। যেনতেন মানুষের কাছে নাহ, রেহানা ম্যাডাম এর কাছে। ক্লাসের ভাল ছাত্ররা হিংসা করে মুখ ফুলিয়ে বসে আছে। দৃশ্যটা এখনও মনে পড়ে।

পিটি(আমরা তাই বলতাম) শেষ হওয়ার সাথে সাথে আমাদের চিৎকার-চেচামেচি আর ছুটাছুটি শুরু হয়ে যেত সিট দখল করার জন্যে। কিন্তু উদ্দেশ্য ছিল উল্টো। আমাদের ক্লাসের সবচেয়ে মূল্যবান ছিল শেষ বেঞ্চের সিট। যে সবার আগে পৌঁছাবে, সে সবার পেছনে বসবে। আর এই সময় হাওলাদার স্যার এর হুংকার শোনা যেত। বাগান থেকে বেড়া ভেঙে বাঁশের কঞ্চি নিয়ে আমাদের পেছনে দৌড়াতেন। সেটা নাহয় মেনে নেওয়া যায়। কিন্তু তার বদৌলতে বাগানে বেড়া থাকত না।
তবে একটা গোপন ব্যাপারও ছিল। মাঝে মাঝে স্যারের মেজাজ খারাপ থাকলে বেদম পেটাতেন। মেজাজ ঠাণ্ডা হলে স্যার সেই ছেলেকে নিজের রুমে ডাকতেন। ছেলেটা ভয়ে কাঁপতে কাঁপতে হাজির হত আর বদমেজাজি স্যারের চোখে তার জন্য অপরাধবোধ দেখত।

আরও মনে আছে কুমকুম ম্যাডাম এর বাংলা ব্যাকরণ পড়ানো। একজন একজন করে বোর্ড এর সামনে ডাকতেন। আর যেকোনো একটা ব্যাকরণ সমাধান করতে দিতেন। পারলে হুংকার করে ফিরে যেতে বলতেন। আর না পারলে সপাং সপাং করে দুইবার শব্দ আসতো আর সবার বুক কেঁপে উঠত। ম্যাডাম এর বেতটা স্পেশাল ছিল। এত পাতলা বেত স্কুলের আর কার কাছে ছিল না। কি যে ব্যাথা লাগত বলার মত না।

বেত এর কথা যখন আসল, তখণ মুসলিম স্যার এর বেত এর কথা না বললেই নয়। স্যার আমাদের ইংরেজি পড়াতেন। পড়া না পারলে তার তিন হাত(অথবা চার হাত) লম্বা বেত এর স্পর্শ। পড়া পারি আর না পারি, স্যার এর রাগী চেহারা আর বিশাল বড় বেত দেখে সব ভুলে যেতাম। আর স্যার বেজায় আনন্দে তার বেত তুলতেন। এত লম্বা বেত ছিল যে দূর থেকেই পেটাতেন। কাছে আসতে হত না কষ্ট করে।

আরও পরে পেয়েছি সিদ্দিক স্যার এর ক্লাস। স্যার এর কারনে আমার রসায়নে আমার মার্কস ভাল হত। সপ্তাহের ছয় দিনই স্যার এর ক্লাস থাকত। ছোট ছোট পড়া দিতেন আর সবার কাছ থেকে পড়া নিতেন। কেউ না পারলে হাতে সিক্কিক স্যার স্পেশাল ঘুসি। ছোট সাইজের একটা মানুষ, মারতেনও আলতো করে কিন্তু খুব ব্যাথা লাগত। তবে কষ্ট লাগত যখন খুব স্নেহের সাথে জিজ্ঞাসা করতেন, কেন পড়া করিস না? তোদের মারতে কি আমার ভাল লাগে? তোদের মারতে গিয়ে আমার হাত ব্যাথা হয়ে যায়। কাল পড়া হবে তো?

মোয়াজ্জেম স্যার এর ইংরেজি ক্লাসের কথাও মনে পড়ে। আমরা পড়া পারলে স্যার যে কি খুশি হতেন বলার মত না। স্যার এর হাসিমুখ দেখার জন্যই মনে হয় পড়া পড়তাম। আর বাড়তি লাভ ছিল পড়া পারলে ক্লাসের সব দুষ্টামি মাফ।

সেকান্দার স্যার আমাদের ইসলাম শিক্ষা পড়াতেন। স্যারকে মনে পরে তার অদ্ভুত কিছু পদ্ধতির কথার মাধ্যমে। স্যার ধার্মিক ছিলেন। তার ধারণা ছিল, সমাজে চলতে গেলে মিথ্যা বলার প্রয়োজন হতে পারে। কিন্তু এইসব পরিস্থিথিতে সম্পূর্ণ মিথ্যা থেকে বাঁচার উপায় বের করেছিলেন তিনি। একটা উদাহরন দিই- ধরুন আপনার কাছে কেউ টাকা ধার চাইল কেউ। আপনার কাছে টাকা আছে কিন্তু আপনি তাকে টাকা দিতে চাচ্ছেন না। আবার সরাসরি নিষেধ করতেও পারছেন না। এই অবস্থায় কি করবেন?? উপায় হল- আপনি বলবেন, আপনার হাতে টাকা নেই।তাই আপনি টাকা ধার দিতে পারছেন না। সম্পূর্ণ মিথ্যা বলা হল না। কারণ, টাকা হয়তো আপনার পকেটে অথবা বাসাতে।

আরও কত কি আছে। কত কি যে মনে পড়ে হিসেব নেই। একই স্কুলে আট বছর পড়েছি। বলতে গেলে একই বন্ধুদের নিয়ে। কিছু বন্ধু চলে গিয়েছে আবার কিছু বন্ধু পরে এসেছে। যদিও আমি শুধু আমাদের পেটানোর গল্পই বললাম, তবু তারা আমাদের অনেক ভালবাসতেন। বলা যেতে পারে, অতিরিক্ত ভালবাসার প্রমাণস্বরূপ অতিরিক্ত পেটাতেন আমাদের।

আজ আর লিখব না। সেই সন্ধ্যায় টুইশনির জন্য বেরিয়েছিলাম। অনেকটা হাঁটা হয়েছে। বাসায় ফিরেছি রাত ১২ টার পর। ঘুমাতে যেতে হবে আর সকালবেলা তাড়াতাড়ি উঠতে হবে। কাল থেকে আবার যান্ত্রিক জীবনে ঢুকতে হবে তো।
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ রাত ২:৫৫
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

৫০১–এর মুক্তিতে অনেকেই আলহামদুলিল্লাহ বলছে…

লিখেছেন বিচার মানি তালগাছ আমার, ০৩ রা মে, ২০২৪ বিকাল ৩:০০



১. মামুনুল হক কোন সময় ৫০১-এ ধরা পড়েছিলেন? যে সময় অনেক মাদ্রাসা ছাত্র রাজনৈতিক হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছিল। দেশ তখন উত্তাল। ঐ সময় তার মত পরিচিত একজন লোকের কীভাবে মাথায় আসলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঝিনুক ফোটা সাগর বেলায় কারো হাত না ধরে (ছবি ব্লগ)

লিখেছেন জুন, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ৮:০৯

ঐ নীল নীলান্তে দূর দুরান্তে কিছু জানতে না জানতে শান্ত শান্ত মন অশান্ত হয়ে যায়। ১৯২৯ সালে রবার্ট মোস নামে এক ব্যাক্তি লং আইল্যান্ড এর বিস্তীর্ণ সমুদ্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

'চুরি তো চুরি, আবার সিনাজুরি'

লিখেছেন এমজেডএফ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৮


নীলসাধুকে চকলেট বিতরণের দায়িত্ব দিয়ে প্রবাসী ব্লগার সোহানীর যে তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছিল তা বিলম্বে হলেও আমরা জেনেছি। যাদেরকে চকলেট দেওয়ার কথা ছিল তাদের একজনকেও তিনি চকলেট দেননি। এমতাবস্থায় প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বরাবর ব্লগ কর্তৃপক্ষ

লিখেছেন নীলসাধু, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২২

আমি ব্লগে নিয়মিত নই।
মাঝে মাঝে আসি। নিজের লেখা পোষ্ট করি আবার চলে যাই।
মাঝেমাঝে সহ ব্লগারদের পোষ্টে মন্তব্য করি
তাদের লেখা পড়ি।
এই ব্লগের কয়েকজন ব্লগার নিজ নিক ও ফেইক... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ অপেক্ষা

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২৩



গরমের সময় ক্লাশ গুলো বেশ লম্বা মনে হয়, তার উপর সানোয়ার স্যারের ক্লাশ এমনিতেই লম্বা হয় । তার একটা মুদ্রা দোষ আছে প্যারা প্রতি একটা শব্দ তিনি করেন, ব্যাস... ...বাকিটুকু পড়ুন

×