সত্যি আমি খুশি হইতে পারি না। আমি আরও কিছু আশা করেছিলাম। অন্তত নিজের দেশের মাটিতে যখন খেলা হচ্ছে। বুঝলাম ভারত অনেক শক্তিশালী একটি দল। কিন্তু আয়ারল্যান্ড, ওদের সাথে খেলতে গেলে কেন আমাদের হাত পা এতো কাপাকাপি করে? আয়ারল্যান্ড একটি নতুন দল। সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে ওরা পার্ট টাইম খেলোয়ার। কাজের ফাঁকে ফাঁকে তারা তাদের প্রাকটিস করার সুযোগ পায়। এতেই তারা অনেক কিছু অর্জন করতে পেরেছে। হতে পারে তাদের দলে কিছু ইংল্যান্ডের বংশভূত কিছু খেলোয়ার আছে। তাই বলে তারা হাই লেভেলের কোনো খেলোয়ার না। তারা যেটা পারতেছে, আমরা কিন্তু শুরুতে সেটা পারি নাই। বছর ছয়কের মধ্যে তারা যেটা অর্জন করতে পেরেছে, আমরা কিন্তু প্রথমেই তা পারি নাই। অন্তত বিশ্বকাপে আমাদের এমন কোনো ভালো রেকর্ড নাই।
এইবারের ফিক্সচার দেখে অনেকেই বলেছে, বাংলাদেশ অনেক কঠিন একটা গ্রুপে পরেছে। আমি কিন্তু তা মনে করি না। এখনো যদি আমরা দল বিচার করে খেলি, তাহলে খেলার চেয়ে না খেলাই ভালো। বর্তমান সময়ে বাংলাদেশের যে পারর্ফমেন্স, তাতে আমি মনে করি, তারা বিশ্বকাপ জয় করার সম্ভাবনা রাখে। কিন্তু, এই কিন্তুটাই আমাদের পথে বাঁধা হয়ে দাঁড়ায়। আমরা ভয় পাই। আমাদের কি ভয় পাওয়া উচিত? আমি মনে করি উচিত না। আমাদের বাঘের মতো গর্জন করে সামনে আগানো উচিত। আমাদের গর্জনে যাতে অন্যান্য দলেরা বিড়ালের মতো মিউ মিউ করে চলে যায়।
সবাই আয়ারল্যান্ডের সাথে ম্যাচ জেতায় খুব খুশি হয়েছে। এটা অনেকটা প্রতিশোধের ম্যাচ ছিলো। আর জিতটা সবসময়ই আনন্দের। আমিও খুশি হয়েছি, কিন্তু সন্তুষ্ট হতে পারি নাই। ঐ যে আমাদের চাহিদাটা একটু বেশি, সেই কারনে। আমিও তাদের বাহবা দিতে চাই, বলতে বাই সাবাস বাংলাদেশ সাবাস। কিন্তু কখন? যখন বাংলাদেশ ওয়েস্টইন্ডিজ বা সাউথআফ্রিকা বা ইংল্যান্ডকে হারাবে। তখন কেউ মিছিল করুক বা না করুক, আমি ঠিকই মিছিল করবো। আমি রাস্তা দিয়ে দৌড়াবো আর বলবো সাবাস বাংলাদেশ সাবাস।
বাংলাদেশ যখন নিউজিল্যান্ডকে বাংলা ওয়াশ করলো, বিশ্বাস করুন আমি সজোরে চিৎকার দিয়ে উঠেছিলাম। ছাদে উঠে অনেকক্ষন লাফিয়েছিলাম। অনেকেই অবাক হয়ে গেছিলো। এরকম বয়স্ক একজন ব্যাক্তি ওভাবে লাফাচ্ছে দেখে। আমি তাদের দিকে ফিরেও তাকাইনি। কারন বিজয়টা আনন্দের। আর সেটা যেভাবেই আসুক না কেন। আর সেটা ছিলো বড় দলের বিপক্ষে।
অষ্ট্রেলিয়া যখন খেলে তখন কিন্তু তারাও ছোটো বড় ভাডাভেদ করে ঠিকই খেলে। আপনি তাদের গেম প্লানিং টা দেখবেন। বড় দলের সাথে তাদের গেম প্লানিং আর বোলিং লাইনাআপ একরকম হয় আর ছোটো দলের সাথে তাদের গেম প্লানিং আর বোলিং লাইনাআপ আরেকরকম হয়। তারা মুখে যতটাই বলুক না কেন, আমরা কাউকেই ছোটো মনে করি না। তারা কিন্তু ঠিকই ছোটো বড় ভাদাভেদ করে। তাদের জয়ের সময় ফেস রিয়্যাকসন একটু খেল করবেন। তাহলেই সব বুঝতে পারবেন। আমাদেরকেও কিন্তু বড় দলগুলো থেকে শিখতে হবে।
আমাদের বর্তমান পারর্ফমেন্সের দিকে তাকান। তামিম আর সাকিব ছারা কেউই কিন্তু ভালোভাবে দাঁড়াতে পারছে না। তাদের কি উচিত না নিজেদের মাঠে নিজেদেরকে ভালোভাবে উপস্থিত করা। আশা রাখি তারা তা করবে। এবং আমাদের আরো বিজয়ের মুখ দেখাবে।
খেলা শেষে আয়ারল্যান্ডের এক খেলোয়ার বলছিলো, "আমরা খেলায় ঠিকমতো মন সংযোগ করতে পারছিলান না।কারন গ্যালারির মানুষের চিৎকারে সেটা অসম্ভব ছিলো।" এর থেকে কি বোঝা যায় না আমাদের আশা ও ভরসার কথা। আমাদের এই জনবলই কিন্তু আমাদের মূল শক্তি। এই শক্তিকে কাজে লাগিয়ে আমরা নিয়ে আসতে পারি আরো বিজয়। যে বিজয়ে মাতবে সারা দেশ। বাংলাদেশের টেষ্ট খেলা দেখার পর এক সাংবাদিক জাভেদ মিয়াদাদকে বলেছিলো, "বাংলাদেশকে দিয়ে কি ক্রিকেট খেলা হবে?" তিনি বলেছিলেন, "অবশ্যই হবে। তুমি মাঠ ভরা দর্শক দেখতে পাওনি? এরাইতো বাংলাদেশের প্রান। এদের দ্বারাই তারা সামনে এগিয়ে যাবে"।
সুতরাং আমি অপেক্ষায় আছি। আমি অপেক্ষায় আছি বড় বিজয়ের আশায়। মার্চের ৪, ১১ ও ১৯ এই তিনটি ম্যাচের জয়ের আশায়। আমি রাস্তায় নেমে স্লোগান দিতে চাই, বলতে চাই সাবাস বাংলাদেশ সাবাস।