somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

প্রাণের শহর

০৫ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ রাত ১:৫৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

পুরান ঢাকার অলিগলিতে প্রতিনিয়ত হরেক রকম ঘটনা ঘটে চলে।
পথ চলতে কখনো সেইসব ঘটনা চাক্ষুষ দেখা যায়, আবার কখনো তা ঘটে যায় চোখের আড়ালেই।

নবাবপুরের আলুবাজার থেকে আগামাসি লেন, টাকার হাট দিয়ে বংশাল পেরিয়ে বাশপট্টি পর্যন্ত যে ৫২ বাজার ৫৩ গলি আছে, সেখানে নতুন কাউকে ছেড়ে দিলে অনায়াসে হারিয়ে যাবে।
অন্তত যে গলি দিয়ে যাবে, ঘুরেফিরে হয়তো সেই গলিতেই চক্কর খাবে, কিন্তু বুঝতে ইকটু কষ্টই হবে যে, আগের রাস্তাতেই চলে এসেছে।

বীণা স্মৃতি ঘাটে যাচ্ছিলাম শাঁখারিবাজারের ভেতর দিয়ে। এই রাস্তাটার দুপাশেই মন্দির দিয়ে ভরা। সবসময়ই ধূপের গন্ধ ছড়িয়ে থাকে।
দুপাশেই অনেক চিকন বাড়ি। আর সেসব বাড়িতে ঢোকার জন্য আরও লম্বা সরু চিপাগলি।
তেমনই একটা গলি থেকে একটা তাগড়া লোক বেড়িয়ে এলো একটা কঙ্কালসার ছেলেকে মারতে মারতে। পিঠে কনুই দিয়ে গুঁতা, কিল মেরে মাটিতে ফেলে দিয়ে পেটে লাথি দিতেই থাকল।
এইসব ক্ষেত্রে মুহূর্তেই লোক জমে যায় রাস্তায়। কিছুক্ষণ তাকিয়ে তাকিয়ে দেখে। তারপর কেউ জিজ্ঞেস করে, কী হয়েছে ভাই, কী করেছে?
লোকটা লাথি মারা অব্যাহত রেখে বলল, ঘরে কেউ নাই। শুওরের বাচ্চা একদম ঘরের ভিতরে ঢুকে গেছে। ভাগ্যিস আমি তারাতারি পায়খানা কইরা আইসিলাম। দেখি উঁকিঝুঁকি মারতাসে। ব্যাস, শুরু করলাম ধোলাই। নেন হাত লাগান, আপনেরাও হারামজাদারে কিলান।

ছেলেটার লুঙ্গি খুলে গেছে। সেন্ট ফ্রান্সিস স্কুলের দু তিনটা মেয়ে যাওয়ার পথে বিস্ময়ে তাকিয়ে তাকিয়ে দেখছে। ওদের মুখ শরীর রঙিন হয়ে আছে। টিশার্টে সাইনপেন দিয়ে বন্ধুদের সিগনেচার বা দুষ্টুমিপনা করে হাবিজাবি লেখা। স্কুলের শেষ ক্লাসের পার্টি ছিলো নিশ্চই। স্কুলজীবনের শেষদিনের সবকিছুই মনে গেঁথে যায়। ওদের সরল মনেও কী এই নৃশংসতা ছাপ ফেলবে?

ছেলেটা লুঙ্গিটা গিঁট দিয়ে গোঙাতে গোঙাতে বলল, ইকটু ভাত চাইতে গেসিলাম।
সেই লোকটা আবার এক লাথি মারতেই ছেলেটা পড়ে গেলো। এবার প্রচন্ড ব্যথা পেয়েছে। লুঙ্গিটাও খুলে গেলো আবার। স্কুলের মেয়েগুলোও চলে গেলো। এতক্ষণ তারা মায়া মায়া চোখে এখানে তাকালেও, ইকটু দূরে যেতেই হাসিঠাট্টায় প্রাণোচ্ছল হয়ে গেলো।

একজন বললেন, টোকাই পোলাপান। ছাইড়া দেন ভাই।
অনেকদিন পর "টোকাই" শব্দটা শুনলাম।
টোকাই শব্দটা রফিকুন্নবীর বিখ্যাত আবিষ্কার। তার একটা ছবির নামও "টোকাই"।
লোকজন এবার বলল, কাঙ্গালি মাইরা কেস খাইবেন নাকি ভাই? ছাইড়া দেন।
লোকটা বাজখাঁই গলায় বলল, ফালতু কথা বলবেন না। আপনার ঘরে চুরি করলে ছাইড়া দিতেন?
সেই লোকও পাল্টা বলল, ফালতু কথা মানে? চুরিই তো করে নাই। আর আমারে আপনে ফালতু কইলেন?
কইসি তো কী হইসে?
ব্যাস, লেগে গেলো বাকবিতণ্ডা।
এই ফাঁকে ছেলেটাকে উঠয়ে লুঙ্গি পড়িয়ে বললাম, যা ভাগ!
সে এক দৌড়ে চম্পট দিলো।

শিকার চলে গেছে দেখে লোকটা রাগে গরগর করতে করতে বিশ্রী ভাষায় গালাগাল করতে লাগলো। পুরান ঢাকার গালি কী জিনিস, তা যে শুনে নাই, তার জন্য না শোনাই ভালো। এমন সময় হটাত তার উপরের পাটির দাঁত খুলে পড়ে গেলো রাস্তায়। এমন দৃশ্য দেখে হাসি সামলানো দায়। সবাই একযোগে হেসে ফেললো। লোকটা থতমত খেয়ে গেলো।
আমিও প্রস্থান করলাম।

বীণা স্মৃতি ঘাটে সবসময়ই লঞ্চ ভীড়ে থাকে। আজকে একটাই লঞ্চ আছে। তা-ও খুব ছোটো। দোতলা। তবে ছাদটা খুব চমৎকার। ছাদের দুই কিনারে মুখোমুখি বসার জন্য অনেকগুলো চেয়ার আছে। আমি চুপচাপ বসে থাকলাম। আকাশ, নদী, বিল্ডিং, নৌকা, মানুষ, সবকিছু যেনো মন্থর গতিতে চলছে। সূর্যটাও ধীরে ধীরে হলুদ আলো ছড়িয়ে আজকের জন্য বিদায় নেবার জন্য প্রস্তুত।

একটা ব্যাপার খেয়াল করে দেখলাম। এই যে মাঝিরা নৌকা চালাচ্ছে। মনে হয় যেনো, আবহমানকাল ধরে একই মাঝি নৌকা চালাচ্ছে। আমার জন্মের আগেও যে মাঝি নৌকার বৈঠা বাইতো, এখন যে বাইছে, এবং ভবিষ্যতেও যে বাইবে, সবাই যেনো একই রকম মানুষ। তাদের যে রূপ মনে গাঁথা, তা যেনো চিরস্থায়ী, এদের কোনোকালেই পরিবর্তন হবেনা।
আরেকটা ব্যাপার, নদীকে কোনো এক বিচিত্র কারণে আমার নারীর মতো মনে হয়। নারীদের মতো নদীরাও স্বাস্থ্যবতী, রূপবতী, দুরন্ত যৌবনবতী হয়। গঙ্গা যেমন উন্মত্ত যৌবনের প্রতীক। এই নদীটা তার বুড়িগঙ্গা নামের মতোই রুগ্ন।

আজকের আকাশে একইসঙ্গে অনেকগুলো রঙ। পশ্চিমের রক্তিম আকাশের সোনালি আভা থেকে ধীরে ধীরে আমার মাথার ওপরের আকাশের দিকে তাকিয়ে দেখি, মাঝখানের এক যায়গা বেগুনি রঙের হয়ে আছে। এর আগে কী কখনো আকাশের এমন বেগুনি রঙ দেখেছি? মনে পড়েনা!
এটাই কী সূর্যের আল্ট্রা ভায়োলেট বা অতি বেগুনি রশ্মি? কী দারুন সুন্দর। আমি এতোটাই অভিভূত হয়ে তাকিয়ে ছিলাম, যে ছবি তুলতেই ভুলে গিয়েছিলাম।
আহা! একটা সময় ছিলো, যখন কোনো সৌন্দর্যই ফ্রেমে বন্দি করতে পারতাম না। কেবল সৌন্দর্যসম্ভোগ করতাম মন ভরে। সেইসব দিনগুলো সত্যিই অতুলনীয় ছিলো! আজকে অনেক অনেকদিন পর প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্যের জন্য সত্যিকারের হাহাকার অনুভব করলাম হৃদয়ে।

১/১১/২০১৫
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ রাত ১:৫৮
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সমাধান দিন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৩১




সকালে কন্যা বলল তার কলিগরা ছবি দিচ্ছে রিকশাবিহীন রাস্তায় শিশু আর গার্জেনরা পায়ে হেটে যাচ্ছে । একটু বাদেই আবাসিক মোড় থেকে মিছিলের আওয়াজ । আজ রিকশাযাত্রীদের বেশ দুর্ভোগ পোয়াতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

=নিছক স্বপ্ন=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ১৯ শে মে, ২০২৪ রাত ৯:৪৮



©কাজী ফাতেমা ছবি
তারপর তুমি আমি ঘুম থেকে জেগে উঠব
চোখ খুলে স্মিত হাসি তোমার ঠোঁটে
তুমি ভুলেই যাবে পিছনে ফেলে আসা সব গল্প,
সাদা পথে হেঁটে যাব আমরা কত সভ্যতা পিছনে ফেলে
কত সহজ... ...বাকিটুকু পড়ুন

একদম চুপ. দেশে আওয়ামী উন্নয়ন হচ্ছে তো?

লিখেছেন তানভির জুমার, ১৯ শে মে, ২০২৪ রাত ১০:৫৯



টাকার দাম কমবে যতো ততোই এটিএম বুথে গ্রাহকরা বেশি টাকা তোলার লিমিট পাবে।
এরপর দেখা যাবে দু তিন জন গ্রাহক‍কেই চাহিদা মতো টাকা দিতে গেলে এটিএম খালি। সকলেই লাখ টাকা তুলবে।
তখন... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে গরু দুধ দেয় সেই গরু লাথি মারলেও ভাল।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২০ শে মে, ২০২৪ রাত ১২:১৮


০,০,০,২,৩,৫,১৬, ৭,৮,৮,০,৩,৭,৮ কি ভাবছেন? এগুলো কিসের সংখ্যা জানেন কি? দু:খজনক হলেও সত্য যে, এগুলো আজকে ব্লগে আসা প্রথম পাতার ১৪ টি পোস্টের মন্তব্য। ৮,২৭,৯,১২,২২,৪০,৭১,৭১,১২১,৬৭,৯৪,১৯,৬৮, ৯৫,৯৯ এগুলো বিগত ২৪ ঘণ্টায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইরানের প্রেসিডেন্ট কি ইসরায়েলি হামলার শিকার? নাকি এর পিছে অতৃপ্ত আত্মা?

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ২০ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩৯


ইরানের প্রেসিডেন্ট হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হয়ে নিহত!?

বাঙালি মুমিনরা যেমন সারাদিন ইহুদিদের গালি দেয়, তাও আবার ইহুদির ফেসবুকে এসেই! ইসরায়েল আর।আমেরিকাকে হুমকি দেয়া ইরানের প্রেসিডেন্টও তেমন ৪৫+ বছরের পুরাতন আমেরিকান হেলিকপ্টারে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×