somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ছোটগল্পঃ দুঃস্বপ্ন?

২০ শে ডিসেম্বর, ২০১৪ ভোর ৪:৫৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

খুব সকালে ঘুম থেকে উঠতে হবে রাশেদের। ৮ টায় ক্লাস, এই ক্লাস মিস করলে বিপদ। এদিকে টিউশনি করে ফিরে খাওয়া দাওয়ার পর একটু ফেসবুক আর পড়াশোনা করতে না করতেই রাত ৩ টা। সর্বনাশ! কিন্তু তড়িঘড়ি করে শুতে আসার পর, এখন? চোখে ঘুম নেই। মে মাসের আঠালো গরম, তার মাঝে নেই ইলেক্ট্রিসিটি। ঘুমটা আসবে কীভাবে?

এপাশ ওপাশ করতে করতে কখন যে চোখটা লেগে এসেছিল, খেয়াল নেই। হঠাৎ কিছু একটা শুনে চমকে উঠল রাশেদ। কী ছিল ওটা? একটা কিছু সে অবশ্যই শুনেছে। তার চোখে ঘুমের লেশ মাত্র নেই, সমস্ত ইন্দ্রিয় টানটান। চোখ খুললে তেমন কিছু দেখা যায়না। ঘর অন্ধকার। এমন সময় রাশেদের মনে হল মাথার পাশ দিয়ে সাৎ করে কী যেন চলে গেল। মনের ভুল না তো! ঘরে কটু একটা গন্ধ, অনেকটা কোরবানির ঈদের পরের দিন রাস্তায় যে দুর্গন্ধ পাওয়া যায়, তার সাথে ঝাঝাল ধোঁয়া মেশালে যেমন হতে পারে, অনেকটা সেরকম। রাশেদের বেশ সাহস, তবু তার গা কেমন যেন শির শির করে উঠল।

রাশেদের মা সবসময় বলেন এ বাড়িটাতে 'দোষ' আছে, ওরা কেউ পাত্তা দেয়নি। তারপর একদিন ওর বাবা ভয় পেলেন। সেদিন বসার ঘরে একাই ঘুমিয়েছিলেন তিনি। মাঝ রাতে কিছু একটা তাঁর গলা চেপে ধরেছিল। ভাল মানুষ, নির্বিরোধী বাবা কখনো মিথ্যে বলেন না, এটা জানা থাকায় আবার এসব বিশ্বাস না করতে পারায়, খুব অস্বস্তিতে পরেছিল রাশেদ।

কিন্তু এখন এটা কী হচ্ছে? এরকম হচ্ছে কেন ঘরটায়? কী শুনেছিল সে? ঘরে এমন গন্ধই বা কেন? ঘরের গুমোট গরমটা নেই, কেমন একটা শিরশিরে ঠাণ্ডা। বারান্দার দরজা দিয়ে রাস্তার ওপাশের কোন বাড়ি থেকে আসা অস্পষ্ট আলোটুকু ঘরের অন্ধকার সরাচ্ছে না। বরং অস্পষ্ট করে দিচ্ছে। হঠাৎ মনে হল একটা ছায়া, মুহূর্তের মাঝে জায়গা বদল করে ঘরের জমাট অন্ধকারে মিলিয়ে গেল। এসব কী হচ্ছে? ও কি অন্য ঘরে গিয়ে শোবে? কেউ জিজ্ঞেস করলে গরমের অজুহাত দেয়া যাবে। বিছানা থেকে উঠতে যাবে, ভয়ংকর আতংকের সাথে ও দেখল ওর শরীরে কোন অনুভূতি নেই। সারা শরীর অবশ, হাত-পা কিছুই নাড়ানো যাচ্ছেনা। আর তখনই ও দেখল জমাট ধোঁয়ার একটা কুন্ডুলি ঘরের চারপাশে ঘুরে বেড়াচ্ছে। খুব খেয়াল করলে না-মানুষ, না-জন্তু একটা অবয়ব চোখে পরে। কটু গন্ধটা অনেক বেড়ে গেছে। বাতাসটা মনে হচ্ছে তরল কোন পদার্থ। খুব হাল্কা ফিসফাস, কুকুরের চাপা কান্নার সাথে অট্টহাসির একটা কোরাস এই তরলে যেন সাঁতরে বেড়াচ্ছে। শ্বাস নেয়া যাচ্ছেনা, দম বন্ধ হয়ে আসছে। আতংকের শেষ সীমায় পোঁছে গিয়ে রাশেদ জোরে একটা চিৎকার দিল। কী আশ্চর্য! গলা থেকে কোন শব্দ বের হচ্ছেনা। আবার চেষ্টা করল রাশেদ। এবারও না। ঘরের অদ্ভুত শব্দ গুলো যেন ওকে কোন পৈশাচিক ভাষায় তাকে বিদ্রুপ করছে। শরীরটা পাথরের মতো ভারি হয়ে গেছে। সমস্ত শক্তি এক করে বিছানায় উঠে বসে রাশেদ হাঁপাতে লাগলো। ও নিশ্চিত এ যাত্রা টিকবে না। এতো ভয় ও ক্যাম্পাসে গোলাগুলির মাঝে পরেও পায়নি। মার শত নিষেধ না শুনে ঘরের দরজা বন্ধ করে ঘুমানোর অভ্যাসের জন্য জীবনে প্রথমবারের মতো আফসোস হল ওর।

রাশেদ তখন ক্লাস নাইনে পড়তো। মাঝরাতে চাচাতো বোন-জামাই এর সাথে বাজি ধরে ও আগের দিন সন্ধ্যায় দেয়া দাদার কবর থেকে মাটি তুলে এনে দেখিয়েছিল। ইউনিভার্সিটির ফার্স্ট ইয়ারে থাকতে নরসিংদী গিয়ে বন্ধুদের সাথে বাজি ধরে কেবল মাত্র এক প্যাকেট সিগারেট সম্বল করে সারারাত ও কাটিয়েছিল মেঘনার পারে- এক শ্মশানে। এসব করতে গা ছম ছম করেছে ওর, কিন্তু সত্যিকার অর্থে ভয় পায়নি কোনদিন, পাত্তাও দেয়নি।

আর এখন? এভাবে ও মরে যাবে? মা-বাবা, ভাই-বোন, বন্ধুবান্ধব, ক্যাম্পাসের পাগলী মেয়েটা - সবার চেহারা একবার চোখের সামনে ভেসে উঠল রাশেদের। তারপর আর কিছু মনে নেই......

ফজরের আজানের শব্দে জ্ঞান ফিরেছিল রাশেদের। তখনও ওর সারা শরীর ঘামে ভেজা, বিছানা ছেড়ে মেঝেতে কুঁকড়ে পরে ছিল। প্রচণ্ড জ্বরে আচ্ছন্ন হয়ে সকালে ও হাসপাতালে ভর্তি হয়, দুই সপ্তাহ পর বাড়ি ফেরে।

তারপর কেটে গেছে আড়াই বছর। ঢাকা শহরে বড় বাড়ি ভাড়া পাওয়া খুব কষ্ট। এখনও রাশেদরা ঐ বাড়িতেই থাকে। ক্যাম্পাসের পাগলী মেয়েটা এখন ওর স্ত্রী। সেদিন আসলে কী ঘটেছিল, সে বিষয়ে রাশেদ নিশ্চিত নয়। তবে সেই রাতের পর আর কখনো কিছু ঘটেনি ওদের বাড়িতে। তারপরও মাঝরাতে লোডশেডিং হলে বুক কেঁপে ওঠে ওর। চোখে চলে যায় বারান্দার দরজার কাছে।

সেদিন ভোরবেলা ওখানেই, মেঝের ওপর নিজেকে খুঁজে পেয়েছিলো রাশেদ।
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে ডিসেম্বর, ২০১৪ রাত ১২:২০
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জামায়াত শিবির রাজাকারদের ফাসির প্রতিশোধ নিতে সামু ব্লগকে ব্লগার ও পাঠক শূন্য করার ষড়যন্ত্র করতে পারে।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৪৯


সামু ব্লগের সাথে রাজাকার এর সম্পর্ক বেজি আর সাপের মধ্যে। সামু ব্লগে রাজাকার জামায়াত শিবির নিষিদ্ধ। তাদের ছাগু নামকরণ করা হয় এই ব্লগ থেকেই। শুধু তাই নয় জারজ বেজন্মা... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাওরের রাস্তার সেই আলপনা ক্ষতিকর

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৫৯

বাংলা বর্ষবরণ উদযাপন উপলক্ষে দেশের ইতিহাসে দীর্ঘতম আলপনা আঁকা হয়েছে কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রাম হাওরের ‘অলওয়েদার’ রাস্তায়। মিঠামইন জিরো পয়েন্ট থেকে অষ্টগ্রাম জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত ১৪ কিলোমিটার দীর্ঘ এই আলপনার রং পানিতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছবির গল্প, গল্পের ছবি

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৩:১৫



সজিনা বিক্রি করছে ছোট্ট বিক্রেতা। এতো ছোট বিক্রেতা ও আমাদের ক্যামেরা দেখে যখন আশেপাশের মানুষ জমা হয়েছিল তখন বাচ্চাটি খুবই লজ্জায় পড়ে যায়। পরে আমরা তাকে আর বিরক্ত না করে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×