[ এককালে স্কটল্যান্ড এবং ইংল্যান্ড ক্রিকেট বোর্ড একত্রেই ছিল। ১৯৯২ সালে স্কটিশরা আলাদা হয়ে যায়। এর দুই বছর বাদেই তারা আইসিসির সদস্যপদ অর্জন করে ফেলে। আলাদা হয়ে পরলেও, ইংলিশ বোর্ডের বিশেষ সুনজর বরাবরই পেয়ে থাকে স্কটিশরা। এর প্রেক্ষিতে তাদের প্ল্যায়ার রা কাউন্টি তে খেলার বেশ সুযোগ পায়। এর জন্য ইতিমধ্যে বেশ কিছু মেধাবী ক্রিকেটার ও পরিচিত করতে পেরেছে তারা। তাদের তুলে ধরার ক্ষুদ্র প্রয়াস ]
প্রেস্টন মমসেনঃ
স্কটল্যান্ড দলের বর্তমান অধিনায়ক এই ক্রিকেটারের জন্ম দক্ষিন আফ্রিকায়। স্কুল পর্যায়ে তিনি একই সময়ে খেলতেন ক্রিকেট এবং রাগবি উভয় দলেই। সেখান থেকে স্কুল পর্যায়ের চ্যাম্পিয়নশিপে প্রথমবার অংশ নিয়েই টুর্নামেন্টে সর্ব্বোচ্চ রান সংগ্রাহকের খেতাব অর্জন করেন। তখন থেকেই ক্রিকেটের পেছনে কিছুটা ঝুকে পড়েন।
অনেকটা ক্রিকেটের প্রতি টানের বশেই, অনেকটা পারিবারিক কারনে, পাড়ি জমান স্কটল্যান্ডে। সেখানে চার বছর বিভিন্ন পর্যায়ে ক্রিকেট খেলে ২০১০ সালে প্রথমবার স্কটল্যান্ডের জার্সি গায়ে প্রথম মাঠে নামার সুযোগ পান। একই সময়ে খেলেছেন কেন্ট দ্বিতীয় দলেও। এছাড়াও স্কটল্যান্ডের স্থানীয় ক্লাব ক্রিকেটে তার পারফর্মেন্স ছিল শ্রেষ্ঠ! ২০১২ সালে তিনি চুক্তিবদ্ধ হন কাউন্টি দল লিস্টারশ্যায়ার এর সাথে। পরের বছরই তাকে স্কটল্যান্ডের অধিনায়ক মনোনিত করা হয়।
তার অধিনায়কত্বে ভর করেই স্কটল্যান্ড ২০১৫ বিশ্বকাপে খেলার যোগ্যতা অর্জন করে। সেখানে তিনি তুলে নেন ক্যরিয়ারের প্রথম শতক, প্রতিপক্ষ ছিল আরব আমিরাত। এপর্যন্ত ৩৬ টি আন্তর্জাতিক ওয়ানডে তে মমসেনের সেঞ্চুরী একটি এবং ফিফটি ৫টি। আন্তর্জাতিক টি-২০ তে তার স্ট্রাইক-রেট ১৩৩!! অসাধারন এই ক্রিকেটার এখন পর্যন্ত স্কটল্যান্ডের সেরা অধিনায়ক। তিনি আরো এগিয়ে যাবেন, এটাই কাম্য
ম্যাট মাচানঃ
ইংল্যান্ডে জন্ম নেয়া ক্রিকেটার ম্যাথু উইলিয়াম মাচান, সংক্ষেপে ম্যাট মাচান। সাসেক্সে জন্ম নেয়া এই ক্রিকেটার ক্রিকেটে আসেন তার সাসেক্স কাউন্টির হাত ধরেই। তিনি প্রথম শ্রেনির ক্রিকেটে খেলতে নেমে প্রথম ম্যাচেই ৯৯ রান করে আউট হন। এক রানের জন্য শতক থেকে বঞ্চিত হলেও সবাইকে তার আগমনি বার্তা দিয়ে রাখেন। ২০১০ সালে তিনি সাসেক্সের মূল চুক্তিতে আসেন। এখনো খেলে যাচ্ছেন জন্মভূমির দলের হয়ে।
২০১২ সালে স্কটল্যান্ড জাতীয় দলে ডাক পান তিনি। স্কটল্যান্ড দলে ডাক পাওয়ার কারন ছিল তার পিতামাতার স্কটিশ নাগরিকত্ব। ২২টি আন্তর্জাতিক ৫০ অভারের ম্যাচে তার শতক ১টি এবং অর্ধশতক ৩টি। ব্যাটিং গড় ৩৩ এর অধিক। টি-২০ ক্যারিয়ার তার দুর্ধর্ষ, মাত্র ৬ম্যাচে ৬৯ গড়ে তার রান সংগ্রহ ২৭৬। এছাড়াও মাঝে-মধ্যে অফ-স্পিনে উইকেট পেতেও দেখা যায় তাকে। অনেক স্কটিশ তরুনির স্বপ্নের নায়ক তিনি, বয়স মাত্র ২৪, তিনি আরো এগিয়ে যাবেন এটা বলাই বাহুল্য।
জশ ডেভিঃ
মাত্র ২০ বছর বয়সে কাউণ্টিতে অভিষেক হয়েছিল এই ক্রিকেটারের। ২০১০ সাল থেকে টানা ৪বছর খেলেন মিডলসেক্স এর হয়ে। শুরু দিকে পারফর্মেন্স এ কিছুটা স্থবিরতা থাকলেও আস্তে আস্তে সুযোগ পেতে থাকেন এবং ভাল করতে থাকেন।
স্কটল্যান্ডের হয়েও অভিষেক তার ২০১০ সালে, মাত্র ২০ বছর বয়সে। মূলত একজন মিডিয়াম ফাস্ট বোলার তিনি। কিন্তু ব্যাটের হাতটাও তার পরিক্ষীত। ২৪টি আন্তর্জাতিক ওয়ানডে তে ২টি ফিফটি সহ লোয়ার অর্ডার নেমে রান-সংগ্রহ ৪২০+। ওয়ানডে তার উইকেট সংখ্যা দেখেই তার সম্পর্কে অনেকটা ধারনা করে নেয়া যায়। দুইবার ম্যাচে ৫উইকেট সহ তার মোট সংগৃহিত উইকেট সংখ্যা ৪৩! অর্থাৎ ২৪ ম্যাচে ৪৩ উইকেট, যা নিঃসন্দেহে দুর্দান্ত।
দুর্দান্ত এই অল-রাউন্ড ফাস্ট বোলার ২০১৩ সালে ধারে খেলতে যান হ্যামশ্যায়ারে। পরের বছর তার সাথে পূর্ন চুক্তি করে সমারসেট কাউন্টি ক্রিকেট ক্লাব। এখনো খেলে যাচ্ছেন সেখানে।
কাইল কোয়েটজারঃ
স্কটল্যান্ড বর্তমান দলের সর্বাধিক অভিজ্ঞ ক্রিকেটার তিনি। ২০১৩ পর্যন্ত ছিলে দলের অধিনায়ক। স্কটল্যান্ডের সবরকম বয়সভিত্তিক দলে অধিনায়কত্ব করা এই খেলোয়ারের প্রথম শ্রেনির অভিষেক ডারহামের জার্সি গায়ে। ২০০৪ সাল থেকে ৮ বছর খেলেন এই দলে।
২৬ টি একদিনের আন্তর্জাতিক ম্যাচে তার রান-সংগ্রহ ৯৭১ এবং ৪০ এর উপর। ২০১৫ বিশ্বকাপে বাংলাদেশের বিপক্ষে প্রথমে ব্যাট করে স্কটল্যান্ড ৩০০ পার করে, এর মূল ভিত্তি ছিল তার করা ১৫৬ রান। এই ইনিংস টির মহত্ব এর মাধ্যমে বোঝানো সম্ভব না, সহযোগী দেশসমূহের খেলোয়ারদের কাছ থেকে প্রাপ্ত পারফর্মেন্সের মধ্যে তার ইনিংস টি থাকবে উপরের দিকে। একদিনের ক্রিকেটে তার মোট শতকের সংখ্যা ২ এবং অর্ধ-শতক ৬! টি-২০ তে রান তুলতে পারেন দ্রুত, এছাড়াও মিডিয়াম পেসে যে কোন সময় দিতে পারেন অধিনায়কের আস্থার প্রতিদান।
স্কটল্যান্ড কতটা ভয়াবহ হতে পারে তার একটি উদাহরন আমরা দেখেছিলাম বিশ্বকাপের গ্রুপ ম্যাচে বাংলাদেশের বিপক্ষে তাদের খেলার দিন! স্কটল্যান্ড দলের আগের খেলোয়ারের জাতীয় দলের চেয়ে মনোযোগ বেশি দিতেন কাউন্টিতে, এখন অবস্থার পরিবর্তন এসেছে। খেলোয়ারের দেশের প্রতি আন্তরিক হয়েছেন, তাই অনেক মেধাবী তরুন ক্রিকেটারের উঠে আসছেন। আমরা স্কটল্যান্ডের উজ্জ্বল ভবিষ্যত কামনা করি
পুর্বের লেখাগুলি পড়তে চাইলে......
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে নভেম্বর, ২০১৫ রাত ৮:৫৩