[ একটা তথ্য শুনে অনেকেই বিস্মিত হবেন, ক্রিকেট ইতিহাসে একদিনের ম্যাচে এক ইনিংসে দলীয় সর্বোচ্চ সংগ্রহ এর রেকর্ড টা পাপুয়া নিউ গিনি'র! ২০০৭ সালে তারা এই রেকর্ড করে। ১৯৭৩ সালে আইসিসি'র সদস্যপদ পাওয়া এই দলটি এযাবতকালে আইসিসি অনুমোদিত প্রায় সব টুর্নামেন্ট এই অংশ নিয়েছে। সদ্য ওয়ানডে স্ট্যাটাস প্রাপ্ত দলটিতে রয়েছে বেশকিছু উঠতি ক্রিকেটার। তাদের পরিচয় করিয়ে দেয়ার ক্ষুদ্র চেষ্টা ]
গারেন্ট জোন্সঃ
নামটা অনেকের কাছেই চেনা চেনা ঠেকতে পারে। সন্দেহ সঠিক, ইনি-ই ইংল্যান্ড দলের এক সময়ের উইকেট কিপার জোন্স! খেলেছেন অ্যাশেজ এও। ইংল্যান্ডের জার্সি গায়ে টেস্ট খেলেছেন ২৩টি এবং একদিনের ম্যাচ খেলেছেন ৫০ এর অধিক। কিন্তু, জোন্স এর জন্ম কিন্তু পাপুয়া নিউ গিনি তেই! ইংলিশ পিতামাতার চাকুরির চক্করে পড়ে তিনি জন্ম নেন সেখানে, পরবর্তিতে অস্ট্রেলিয়া হয়ে আসেন পিতামাতার মূল আবাসস্থলে! সেখানেই ক্রিকেটের হাতেখরি।
২০০১ সাল থেকে ২০১৪ পর্যন্ত খেলেছেন কাউন্টি দল কেন্ট এ। ইংল্যান্ড দলে খেলেছেন ভন-নাসির হুসেন-ট্রেসকোথিক-ফ্রেডি দের মত খেলোয়ারদের সাথে। ২০০৬-০৭ অ্যাশেজের পরেই ইংল্যান্ড দলে কিছুটা ব্রাত্য হয়ে পরেন। কাউন্টি খেলা চালিয়ে যান যদিও।
২০১২ সালে ফিরে যান জন্মভূমি পাপুয়া নিউ গিনি তে। পাপুয়া নিউ গিনির হয়ে তার পারফর্মেন্স চোখে পড়ার মতই। নিউ গিনির জার্সি গায়ে ফার্স্ট ক্লাস ক্রিকেটে ব্যাটিং গড় প্রায় ৪০ এই ক্রিকেটারের। পাপুয়া নিউ গিনি'র ওয়ানডে স্ট্যাটাস অর্জনের পেছনে অন্যতম ভূমিকা এই ক্রিকেটারের। চলতি বছরে সব রকমের ক্রিকেট থেকে অবসরে যান ৪০-ছুই ছুই করা এই ক্রিকেটার, বর্তমানে কোচিং পেশায় নিয়োজিত আছেন।
লেগা সিয়াকাঃ
মারকুটে স্বভাবের এই ডানহাতি ব্যাটসম্যান পাপুয়া নিউ গিনির উজ্জ্বলতম নক্ষত্র! নিউ গিনির উঠে আসার উদাহরন তিনি। মাত্র ২২ বছর বয়সি এই ক্রিকেটারের লিস্ট এ ক্যারিয়ার এ ব্যাটিং গড় প্রায় ৪৪। শতক আছে ৩টি এবং অর্ধ-শতক ১টি। সেইসাথে স্ট্রাইক-রেট টা উল্লেখযোগ্য, ১১৩ এর উপর। ওয়ানডে স্ট্যাটাস পাওয়ার পর তিনি ২টি ওয়ানডে ইন্টারন্যাশনাল খেলেছেন এবং ক্যারিয়ারের মাত্র দ্বিতীয় ম্যাচেই শতক তুলে নেন হংকং এর বিপক্ষে। বর্তমানে তার ওয়ানডে গড় ৭০!!
২০১৪ সালে বিগ ব্যাশ দল মেলবোর্ন রেনেগেডস তাকে দলে অন্তর্ভুক্ত করে।এর মাধ্যমেই আমরা এই ক্রিকেটারের কদর টা বুঝতে পারি। এবং সিয়াকার ভবিষ্যত উজ্জ্বল হবে এই আশা করি
উইলি গাভেরাঃ
পাপুয়া নিউ গিনির বোলিং এর স্তম্ভ তিনি। ডানহাতি ফাস্ট বোলিং এ ভালই গতি তুলতে পারেন। ১৫টি লিস্ট এ ম্যাচে তার উইকেট-সংখ্যা ২৩টি। কিন্তু তার লক্ষনীয় বিষয় হচ্ছে ইকোনমি রেট। সব পর্যায়ের ক্রিকেটেই তার ইকোনমি রেট বেশ চোখে পরার মত। টি-২০'র ধুন্ধুমার খেলায় তার ক্যরিয়ারে তার ইকোনমি ৫ এর একটু উপরে।
২টি আন্তর্জাতিক ওয়ানডে খেলে উইকেট পেয়েছেন ৪টি। ৩টি আন্তর্জাতিক ২০-অভারের ম্যাচে তার উইকেট ৩টি, সেরা বোলিং ৩/১৭! এবং বোলিং গড় ৫.৫৫, যা যথেষ্ট প্রশংসনীয়।
চার্লস আমিনীঃ
পুরোদস্তর ক্রিকেটীয় পরিবার যাকে বলে, সে পরিবার থেকেই আগত তিনি! তার বাবা এবং দাদা উভয়েই পাপুয়া নিউ গিনি ক্রিকেট দলের অধিনায়কত্ব করেছেন। তার মা পাপুয়া নিউ গিনি প্রমিলা দলের অধিনায়ক ছিলেন, তার খালা ও খেলেছেন সেখানে! তার ভাই ক্রিস্টোফার এবং তিনি খেলে যাচ্ছেন বর্তমানে।
সব রকমের বয়সভিত্তিক দলে খেলে আসা চার্লস দারুন ঠান্ডা মাথার খেলোয়ার। বাহাতি ব্যাটিং এর পাশাপাশি করেন লেগ-ব্রেক। লিস্ট এ ক্যারিয়ারে তার ব্যাটিং গড় প্রায় ২৯। সেইসাথে উগান্ডার বিরুদ্ধে ৬/১৯ এর একটি বোলিং ফিগার সহ আছে ১৪টি উইকেট।
২টি আন্তর্জাতিক ওয়ানডে রান তার ৬১। অপরদিকে টি-২০ তে তার ব্যাটিং গড় ৪৩!! আবার লেগ ব্রেকে ৩টি উইকেট ও আছে। দারুন মানানসই এই ক্রিকেটার ২০১৩ সালে বিগ ব্যাশে খেলেছেন সিডনী সিক্সার্সের হয়ে।
পাপুয়া নিউ গিনি'র ক্রিকেটে আসার পেছনে অনেক অবদান অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেট বোর্ডের। তাদের সুনজরে পরেই মূলত অনেক "ব্যারামুন্ডিস" ক্রিকেটার বড় আসরে খেলার সুযোগ পায়। সেইসাথে তাদের খেলোয়ারদের ও মেধা কম না। মেধার সম্মান সকল জায়গায় দেয়া হোউক এটাই কাম্য। সেইসাথে এগিয়ে যাক পাপুয়া নিউ গিনি ক্রিকেট
পূর্বের লেখাগুলি পড়তে চাইলে......
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে নভেম্বর, ২০১৫ রাত ১১:৪২