somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ক্রিং..... ক্রিং ক্রিং।

১০ ই মে, ২০০৯ রাত ৮:৩০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


ক্রিং..... ক্রিং ক্রিং।

ফোনটা বেজেই যাচ্ছে। দু দুবার রিং হয়ে বাজল, কেউ ধরল না। আচ্ছা, মা এখন ঘুমুচ্ছে নাতো? ফোনটাকে ঘাড় আর কাধের মাঝখানে চেপে আড়চোখে ঘড়ির দিকে তাকলাম। সময়টাকে হালকা ক্যালকুলেশনে ফেলে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। এই যা! ঢাকায় তো এখন ভোড় সাড়ে পাচটার মত..... সবাই নিশ্চয়ই অঘোরে ঘুমুচ্ছে। আগেই খেয়াল করা উচিত ছিল। গত রাতেই অবশ্য এস.এম.এস পাঠিয়ে দিয়েছি একটা। বারোটার সময় সেট করা ছিল, এস.এম.এস অটো চলে গেছে। সকালে বিল আর জিনিও তাদের মাকে গলায় ধরে চুমু দিয়ে উইশ করেছে। আমার বাচ্চাদের কাছে আমার চেয়ে ওদের মা-ই বেশি প্রিয়। আর মাদার্স ডে তে ওদের উইশ করতে মনে থাকবে না- এটা ভাবার চেয়ে বরং শ্যাম্পেইনের একটা বোতল ট্রাশে ফেলে দেয়া ভালো! :D এখানকার স্কুল গুলো এক কথায় চমৎকার, গতকাল বিলি আর গিনি স্কুলে রং টং দিয়ে নিজেরাই অনেক রকম কার্ড বানিয়েছে, মা'এর জন্য গিফ্ট নিয়ে এসেছে, ওদের মা যাতে কোনভাবেই খুজে না পায় সেটা নিশ্চিত করার জন্য আমাকে ওদের একটা যুতসই লুকোনোর জায়গা খুজে দিতে হয়েছে, সেটা জেসির খুজে বের করার কথা। দেশের স্কুলগুলো এখন এখানকার সমমানের কাছাকাছি এসেছে কিনা কে জানে, হয়ত মা-দিবসে ওরাও এখন টুকিটাকি আয়োজন করে। দেশের ওপর ভরসা নেই আমার কোন, দেখা যাবে মা-দিবসের জন্য ২০ পৃষ্ঠার রচনা বিশাল একটা লিখতে দিয়ে ছেলেমেয়েগুলোর দিনটাকেই তিক্ত করে দেবে।

মা ফোন ধরছেনা কেন? ওহহো, ঐযে ঘুমুচ্ছে, ভুলেই গিয়েছিলাম। ফোনটা রেখে দিতে যাচ্ছিলাম, সেইসময় মা ধরেই ফেললো।

হ্যালো মা! হঠাৎ এক্সাইটেড হয়ে আমার ভল্যুম একধাপ বেড়ে গেল। জিনি কৌতুহলী হয়ে আমার দিকে তাকালো।

কে..... "..." ? মা'র কন্ঠে ঘুমের কোন চিহ্নই নেই। আমি নিশ্চিত ছিলাম ঘুম ভাঙিয়ে দেবার জন্য মা যারপনাই বিরক্ত হবেন।

হ্যাপি মাদার'স ডে মম! আবেগে গলা আমার সামান্য কাপছিল। মা ..... এক্সট্রিমলি স্যরি...... তোমার ঘুমটা এভাবে নষ্ট করলাম।

ওপাশে মা'এর কোন সাড়া নেই। এতদূরে ফোনালাপে খানিক বিলম্ব হয়েই থাকে। কিন্তু বিলম্ব যা হচ্ছে সেটার থেকে বেশি।

মা..... শুনছ?

হ্যা বাবা।

ঘুমোছ্ছিলে না? মা স্য......

নারে বাবা, ফজরের নামাজ পড়ছিলাম। তোরা আছিস কেমন। জেসি, টুম্পা, .....


ওহ মা, আমি থামিয়ে দিলাম। টুম্পা না মা, জেনি। তোমাকে কতবার বলেছি... জেসি রাগ করে।

ওপাশে আবার সাড়া নেই। দীর্ঘ সময়। এর মধ্যে জেসি তার লুকোনো গিফট সোফার নিচ থেকে বের করে ফেলেছে। জেসি আনন্দের আতিশয্যে তার দু সন্তানকে জড়িয়ে চুমু দিয়ে ভরিয়ে ফেলছে আর বিলি জিনি এমন অভিনয় করছে যেন এত সহজে লুকোনো গিফট বের করে ফেলায় যারপনাই বিরক্ত হয়েছে। জেসি আমার দিকে হেসে ফেলল। আমিও হা হয়ে দেখছিলাম। সামান্য একটা কার্ড আর ক্যান্ডি পেয়েই জেসি যেন পুরো তাজমহল পেয়ে গেছে! মা দিবসের মাহাত্ব্যটাই এমন! সবার মাথা খারাপ করে দেয়! :)

মা...... শুনতে পাচ্ছ?

বাবা...... কতদিন পর ফোন করলি?

এই মাম আর বলোনা কাজের এত চাপ........ পোস্ট গ্রাজুয়েশন টা শেষ হবার পর কাজ আর পিছু ছাড়ছে না। তোমাকে তো মেইল দেই-ই মাম। তুমি আবার মেইল কিভাবে চেক করে ভুলে গেছ?

অনেকক্ষণ পর। তিন মাস পর তুই ফোন করলি। মা'র গলাটা কেমন যেন। তোকে আমি ফোন দিলে পাই না।

মাম...... ওহ সরি মা........। কনফারেন্সে থাকি তো মাম....। ইমার্জেন্সি ছাড়া কলগুলো ধরি না। ঐদিন জেসির কলটাও মিস গেছে মা......। আর বলোনা, বেচারী এমন চেতেছে ঐদিন...... বলতে বলতে জেসির দিকে তাকালাম। জেসি ইশারায় বোঝালো ফোনালাপ সংক্ষিপ্ত করতে। ওহহো, ওরো তো মা দিবসের উইশ করতে হবে....। নিউজার্সিতে ওর প্যারেন্টস থাকে। আজ আমাদের একসাথে লান্চে যাবার কথা। মাদার্স ডে-এর স্পেশাল ট্রীট। বুক করা আছে, নাহয় এসময় পাওয়া যেত কিনা কে জানে।

মাম......। আমি আর জেসি ডিসাইড করে ফেলেছি। তুমি কিন্তু কোনভাবেই না বলতে পারবে না। তোমাকে আর বাবাকে এবার নিয়ে আসব আমাদের এখানে।

কি দরকার বাবা......... তোরা থাক না ওখানে। আমরা ওখানে গিয়ে কি করব......

ওহ মাম থামো তো, দেখেছো জেসি, আগেই বলেছিলাম না মাম না করবে! ইশারায় জেসি আবার ফোন রাখার কথা বলল। মাম, তুমি এসেই দেখো না। আমার পরিচিত অনেকেই তাদের বাপ মা কে এনে রেখেছে। এই বয়সে তোমাদের কেয়ার টা খুব ভালোমত হওয়া দরকার। আর কত খাটবে? এখানকার হোমগুলোতে একবার থাকলে আর অন্য কোথাও যাবার নামই নেবে না তুমি.......।


...........

ফোনালাপের বাকি অংশ টা জানা নেই। ফোন রাখার পর কথকের মাএর কান্না বাতাসে ভেসে কোথায় হারিয়ে গিয়েছিল তা-ও আমার জানা হয়নি।


বছর বিশেক পরের কথা। ক্রিং ........ ক্রিং ক্রিং।


সাধু টমাসের হোম। ওরা বলে সেন্ট থমাস। আরেকটি সুন্দর ভোর। অথবা সকাল। ভোরের স্নিগ্ধতা ছাপিয়ে আসছে ক্রিং....... ক্রিং। তাতে অবশ্য কেউ কম্প্লেইন করছে না। বরং আজ সকালের ফোনটাই যেন সবার প্রত্যাশিত।

ফোনটা জেসি-ই ধরল। লাউডস্পীকার অন ছিল তাই গলাটা চিনতে অসুবিধা হল না। যদিও বিলির গলার চেন্জ এসেছে অনেক।

"হ্যাপি মাদার্স ডে, মাম্মি!"

১৬টি মন্তব্য ১৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আইনের ফাঁকফোকর-০৩

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৪২

যেকোনো চাকরির নিয়োগের পরীক্ষা চলছে। সেটা পাবলিক সার্ভিস কমিশন, বিভিন্ন সংস্থা, বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসক বা উপজেলা পর্যায়ের কোনো কার্যালয়ে হতে পারে। এই নিয়োগ পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁস হতে পারে। একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

গল্পঃ অনাকাঙ্ক্ষিত অতিথি

লিখেছেন ইসিয়াক, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ দুপুর ১:১২

(১)
মাছ বাজারে ঢোকার মুখে "মায়া" মাছগুলোর উপর আমার  চোখ আটকে গেল।বেশ তাজা মাছ। মনে পড়লো আব্বা "মায়া" মাছ চচ্চড়ি দারুণ পছন্দ করেন। মাসের শেষ যদিও হাতটানাটানি চলছে তবুও একশো কুড়ি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগে বিরোধী মতের কাউকে নীতি মালায় নিলে কি সত্যি আনন্দ পাওয়া যায়।

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১৮

ব্লগ এমন এক স্থান, যেখানে মতের অমিলের কারণে, চকলেটের কারণে, ভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শের কারণে অনেক তর্কাতর্কি বিতর্ক কাটা কাটি মারামারি মন্তব্যে প্রতিমন্তব্যে আঘাত এগুলো যেনো নিত্য নৈমিত্তিক বিষয়। ব্লগটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

সিকান্দার রাজার চেয়ে একজন পতিতাও ভালো।

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ৮:০৭

সিকান্দার রাজা কোকের বোতল সামনে থেকে সরিয়ে রাতারাতি হিরো বনে গেছেন! কিন্তু তাকে যারা হিরো বানিয়েছেন, তারা কেউ দেখছেন না তিনি কত বড় নেমকহারামি করেছেন। তারা নিজেদেরকে ধার্মিক বলে দাবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগার'স ইন্টারভিউঃ আজকের অতিথি ব্লগার শায়মা

লিখেছেন অপু তানভীর, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ১১:০৫



সামুতে ব্লগারদের ইন্টারভিউ নেওয়াটা নতুন না । অনেক ব্লগারই সিরিজ আকারে এই ধরণের পোস্ট করেছেন । যদিও সেগুলো বেশ আগের ঘটনা । ইন্টারভিউ মূলক পোস্ট অনেক দিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×