আমার টেস্ট পরীক্ষা অনেক খারাপ হয়েছিল । খারাপ না হয়ে কোনো উপায় ও ছিল না । যে ছেলে কলেজ লাইফে বই নিয়ে বসার সময় পেতনা , তার রেজাল্ট ভালো হবে ক্যামনে ? বই নিয়ে বসার টাইম পেতাম না , এর মানে এই না যে , আমি মহাগুরুত্বপূর্ণ কোনো কাজ করতাম । সারা দিন আড্ডা মারা , ঘুম আর ফেসবুক ছিল আমার একমাত্র কাজ । মেসে থাকতাম তো, তাই এগুলা করেই সময় যেত । যদিও মেসের দোষ দিয়ে লাভ নেই , কারন মেস লাইফে এমন অনেক ছেলেকে দেখছি যে দিনে ১৮ ঘণ্টা পড়ালেখা করছে । বুয়েটের জন্য কোচিং করে বুয়েট আর ঢাকা মেডিকেল ২ জায়গাতে চাঞ্চ পাইছে।
যাই হোক , টেস্ট পরিক্ষায় কৃতিত্তের সহিত আমার ১ সাবজেক্টে ফেল , তিন সাবজেক্টে ফেলের কাছাকাছি আর ২ সাবজেক্টে অনেক নাম্বার পেয়ে আমার রেজাল্ট প্রকাশিত হলো । যেই ২ সাবজেক্টে ভালো নাম্বার পাইছিলাম সেই সাবজেক্ট দুইটার নাম ছিল বাংলা আর ইংরেজি । এর প্রধান কারন ছিল এই সাবজেক্ট ২ টা না পড়েই পরীক্ষা দেয়া যেতো । তো আমার কলেজে রেজাল্ট আসতো পাস, ফেল আর উইথেল্ড হিসাবে । আমার রেজাল্ট আসলো উইথেল্ড । তার মানে ইন্টার পরীক্ষা দেয়ার জন্য আমার জন্মদাতা পিতা কে কলেজের পিতার ( ফাদার ) সাথে দেখা করতে হবে । তো সুদুর যশোর থেকে আব্বু আসলো । আমার মনে আছে আব্বু যখন আসছিল , তখন খুব বৃষ্টি হচ্ছিল । আমি মোবাইল সাইলেন্ট করে ঘুমাইছিলাম । বেলা ১২ টার সময় আব্বু এসে দেখে আমি ঘুমাচ্ছি । আর আমি দেখলাম আব্বু রাগে কটমট করে আমার দিকে তাকায়ে আছে । ফোনে মাত্র ১৫ টা মিসকল , সবগুলো আব্বুর দেয়া । কি আর করা , বাপ কে সান্তনা দেয়ার জন্য সারা দিন বই নিয়ে বসে ছিলাম । তো , আব্বুর সাথে যখন ফাদার হেমন্তোর রুমে গেলাম , তখন ফাদার আব্বু কে আমার রেজাল্ট কার্ড দেখায়ে বলছিল, “ আপনার ছেলের রেজাল্ট তো ভালো না। ও কি ইন্টার পরীক্ষা দিতে পারবে ?” খেয়াল করে দেখলাম , আব্বুর মন টা খুব খারাপ । কোন কথা বলতে পারছে না। ওই আক মুহূর্তের জন্য আমি জীবনে ভালো হয়ে গেছিলাম । তখন ফাদারকে বলছিলাম ।
--“ আজ আমি আমার আব্বু কে অনেক কষ্ট করায়ে যশোর থেকে ঢাকা আনলাম। এই কাজটা আমি আরো এক দিন করতে চায় ।”
ফাদার অবাক হয়ে জিজ্ঞাসা করেছিলেন কবে ?
আমার উত্তর ছিল , “এ+ এর সংবর্ধনার দিন । ”
আমার আব্বু আর ফাদার ২ জনই খুশি হয়ে সে দিন আমাকে মাফ করে দিছিলেন । ইনফফ্যাক্ট, এমন উত্তর তারা বোধ হয় আশা করেননি ।
যাই হোক, ঢেঁকি স্বর্গে গেলেও ধান ভানে । আর রিংকু বিপদে পড়লেও লাইনে আসেনা । এটার যথাযথ প্রমান সবাই পাইছিল । আমি বরাবরের মতো পড়ালেখা করতাম না। তাই আব্বু কে ঢাকা আনতে পারছিলাম না । ৪।৯০ তে এসে আমার রেজাল্ট থেমে গেছিলো । কিন্তু আমি সাস্টে ইঞ্জিনিয়ারিং-এ ভর্তির সময় আব্বুকে সিলেট আনছিলাম । আর সত্যিকার অর্থে , সেবার আব্বুর চোখে খুশি দেখছিলাম ।
তখন , আব্বু আমার কাধে হাত রেখে বলছিল , নটরডেমিআনরা পারে । ওরা কখনো হারতে শেখে না ।
(বি.দ্র. – ওই একবার ছাড়া আমি আর কক্ষনো ভালো হয়নি ।)