ল্যাপটপ গুতাইতে গুতাইতে রাত ৩ টা বাজলো । ভাবলাম ঘুমানো দরকার । যেই ভাবা সেই কাজ । মাথার কাছে ল্যাপটপ রেখে দিলাম ঘুম । ঠিক ২ ঘণ্টা পর ফ্রেন্ডের ফোনের শব্দে ঘুম ভাংলো । কথা বলার সময় হঠাৎ খেয়াল হলো , মাথার কাছে ল্যাপটপ নাই আর জানালাটা হালকা খোলা ।
মুহূর্তেই মাথাই আকাশ ভেঙ্গে পড়লো । একটু ধাতস্থ হবার সাথে সাথে খেয়াল করলাম বন্ধু সাইফের ল্যাপটপটাও উধাও । উল্লেখ্য যে , আমার আর সাইফের ল্যাপটপ জানালা থেকে প্রায় ৭ / ৮ ফুট দূরে ছিলো ।
কিছুতেই বুঝতে পারলাম না , ল্যাপটপটা জানালা দিয়ে কিভাবে নিলো ? কিছু সময় পর খেয়াল করলাম আমার জানালার কাছে আমার একটা বই পড়ে আছে । যার উপর একপ্রকার আঠা লাগানো । চিউইংগামের সাথে অ্যাডহেসিব মিশায়ে আঠাটা বানানো হইছে । অন্ধকারে হইত বইটাকে দামি কিছু ভেবে ৭ ফুট দূর থেকে নিছিলো , পরে বই দেখে ফেলে দিছে ।
অনেক বেশি কষ্টে কাটলো সকালটা । আমার কালেকশনের কত্ত মুভি , ভার্সিটি লাইফের অনেকগুলা মুভি আর পড়ালেখা সংক্রান্ত অনেক জিনিষ একসাথে হাতছাড়া হলো , ব্যাপারটা মেনে নিতে কষ্ট হচ্ছিলো ।
এরপর থেকে কিছুক্ষণ পরপর বিক্রয়.কম’এ ভিজিট করতে থাকলাম আর আমার মডেলের ল্যাপটপ গুলো ঘাটতে থাকলাম । ঠিক পর দিন দুপুরেই একটা অ্যাড দেখলাম । কনফিগারেশন একেবারেই আমার ল্যাপটপের সাথে মিলে যায় । একটু সন্দেহ লাগলো । তার পর ক্রেতা হিসাবে কল দিলাম । তারা আমাকে তাদের অফিসে আসতে বললো । কথা বলার সময় কয়েকটা ব্যাপারে সন্দেহটা বেড়ে গেলো । যেমন , ল্যাপটপের কোন কাগজ পত্র নেই , কারন, এটা নাকি বিদেশ থেকে আসছে । মাত্র ৩ মাস ব্যাবহার করা হইছে । যেখানে ল্যাপটপটার বাজার দাম ৪৯,০০০ টাকা সেখানে তারা ৩ মাস ব্যাবহার করে কিভাবে ২৮০০০ টাকাই দিবে , ভাবার বিষয় ।
যাই হোক, ফ্রেন্ডকে নিয়ে গেলাম তাদের অফিসে । ল্যাপটপটা দেখেই চিনতে পারলাম এটা আমার । ১.৫ বছর ব্যাবহার করে এটার একপাশে সামান্য ক্রাক হইছিলো । তাছাড়া কিছু কিছু চিহ্ন যা কেবল আমিই জানতাম আমারে সিওর করে দিলো, এটা আমার । ল্যাপটপটা ওপেন করে দেখলাম হার্ডডিস্কের সব কিছু ডিলিট করে দেয়া হইছে । কিন্তু ভাগ্যক্রমে আমার কিছু ছবি হাইড করা ছিল, যা তারা খেয়াল করে নি , তাই সেগুলো ডিলিটও করতে পারে নি । এরপর দামদর করে বেরিয়ে আসলাম ।
এরপর... আমার ফ্রেন্ডের এক রিলেটিভকে বলার পর উনি ডিবিকে জানালেন । তারপর আবার ক্রেতা হিসাবে গেলাম , ল্যাপটপে আমার ছবিগুলা বের করলাম আর তখনই বাংলা মুভির মতো পুলিশের আগমন । আমার ছবি আর কাগজ পত্র দেখে তারা সিওর হলেন , এটা আমার ল্যাপটপ । এরপর ওই দোকানে আরো ৫ টা চোরাই ল্যাপটপ আর ৩৮ টা স্মার্টফোন পাওয়া গেছিলো । সবকিছুই জব্দ করা হয় ।
১১ মে চুরি হওয়া ল্যাপটপটা আমি ১৪ মে ফেরত পেলাম । কি যে ভালো লাগছিলো, বলে বোঝানো যাবে না ...