এই সময়ের বাংলাদেশে নূর হোসেন একদিন আবার এসেছিল । মিছিল নিয়ে রাজপথেও নেমেছিল । কিন্তু এবার তার বুকে কেউ গুলি ছোঁড়েনি । বরং তাকে আশ্বাস দেয়া হয়েছে একটি যথার্থ গণতন্ত্রের । কেউ বলেছে, 'নূর সাহেব দেশ তো গণতন্ত্রের মাধ্যমেই চলছে এরপর ও যদি কোন ঘাটতি থেকে থাকে তবে আমরা তা তদন্ত করে দেখব । কি দরকার শুধু শুধু মিছিল মিটিং করে ঝামেলা পাকানোর ? একজন বলল, ভাই শোনেন এদের কথায় কান দেবেন না । যতসব স্বৈরাচারীর দল । আপনি বরং আমাদের সাথে আসেন, একটা হরতাল দেই । কয়েকটা ককটেল ফুটলেই দেখবেন এদের পেছনটা কেমন ফাটে । একদল বলল, আরে ধুর মিয়া ! এরা সবাই ভোগাস । আসলে সব নষ্টের মূলে ওই পুলিশ । এদের কয়েকটারে মাইরা দিলেই দেখেন কেমন দেশের সবকিছু ঠিকঠাক হয়ে যায় । আরো হাজার জন হাজার টা কথা বলল । দু চারটা অজ্ঞাত হুমকি ও এসেছে । সেদিন তো এক সাংবাদিক নেতা এসে বলেই ফেললো ভাই , এমন কিছু একটা করেন যাতে পুরা দুনিয়ার মানুষ নইড়া চইড়া বসে । ঝাইড়া একটা নিউজ করে দেব । এই দেখেন না টিআরপি টা দিন দিন কেমন কমছে ।
কত জনের কত রকম কথা । কিন্তু কিসে গণতন্ত্রের মুক্তি মিলবে ? রাস্তা দিয়ে হাটতে হাটতে নূর হোসেন এসব নিয়ে ভাবছে । এমন সময় একটি কাল গ্লাসে মোড়া মাইক্রো বাস তার সামনে এসে দাড়াল .........
এরপর মাস খানিক হতে চলল এ তল্লাটে নূর হোসেনেকে আর দেখা যাচ্ছে না । অনেকের মুখে আতঙ্ক । কেউ বলল এটা সরকারের কারসাজি । নিশ্চয়ই তাকে কোথায় গুম করে দেয়া হয়েছে । এবার সরকারের বিরুদ্ধে কঠোর আন্দোলন দিতে হবে । সরকারের পতন না দেখে ছাড়ছি না (গদির কথাটাও মাথায় আছে)। নেতা গোছের কেউ বললেন এ ধরনের অপ্রিতিকর ঘটনা বিরুধীদল ছাড়া আর কেউ ঘটাতে পারে না । এদেরকে আমরা দেখে নেব । কেউ বলল ধুস সালা ! গেছে ভাল হয়েছে ল্যাটা চুকে গেছে । যতসব গণতন্ত্র ! । পুলিশ তাদের বিরুদ্ধে রুখে দাড়ানোর ভয়ে ক্রস ফায়ারে দিয়ে দিয়েছে বলেও অনেকে ধারনা করছেন । সংবাদ পত্রে নূর হোসেন নিখোঁজ হওয়ার খবর লাল কালিতে ছেপেছে । ঘন্টায় ঘন্টায় টক শো হচ্ছে । টিআরপি একদম আকাশচুম্বি ।
নূর হোসেন একটি জলজ্যান্ত ইস্যু হয়ে আগমন এবং প্রস্থান করলেন । মাঝখানে গণতন্ত্রটা মুক্তি পেল ।
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা জানুয়ারি, ২০১৬ রাত ১২:৫৭