somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

প্রেমিক অথবা হিমু হবার গল্প

০৭ ই আগস্ট, ২০১৪ বিকাল ৫:১২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



গত সাড়ে তিন মিনিট ধরে দিপুর পাঞ্জাবীর বাঁ আস্তিন ধরে আছে মিলা। ঠোঁট উল্টে, ভ্রু কুঁচকে রেখেছে সে, পাঞ্জাবীর একটা বেরিয়ে থাকা সুতোকে দুই আঙুলে ডলে যাচ্ছে গভীর মনোযোগ দিয়ে।

দিপু তাকাচ্ছে না। সে তাকিয়ে আছে তার ডান হাতের দিকে। তালুতে ধরা সস্তা প্লাস্টিকের চশমাটা, যেটা সে দিবারাত্র নাকের ডগায় বসিয়ে রাখে। বাসে এক মহিলার ব্যাগের মধ্য থেকে ছাতার ডগা উঁকি দিচ্ছিলো, হার্ডব্রেক করতেই দিপু উড়ে গিয়ে ঠিক ছাতাটার উপরেই পড়লো। চশমার কাঁচের ঠিক মাঝ বরাবর ভয়াবহ একটা আঁচড় পড়ে গেছে। চোখে দিলেই একটা ব্লাইন্ড স্পট পড়ছে দৃষ্টির সামনে, মাথা ধরে যাচ্ছে।

মিলা অবশ্য বাচ্চাদের মতো মাথা নাড়তে নাড়তে মতামত জানিয়ে দিয়েছে তার। চশমা না থাকলে নাকি ঐ খোঁচাতে দিপুর চোখ “গলে ছানাবড়া” হয়ে যেতো। দিপুর জন্য অবশ্য ছানাবড়া হওয়াটাই বেশি সমীচীন মনে হচ্ছে এই মুহূর্তে। চশমা ছাড়া সে তেমন কিছুই দেখতে পায় না, মিলার ভাষায় “আন্ধা পাতিলেখক”। পাক্কা সাড়ে তিনশো টাকা লাগবে এখন এই কাঁচ বদলাতে।

জুলফির চুলে চিমটি খেয়ে পাশ ফিরে তাকালো দিপু, মিলা মিটিমিটি হাসছে। চোখ ভর্তি দুষ্টুমি।

- “শেল অ্যান্ড কোর খাওয়াও।“

- একটু বসো। এখন উঠতে ইচ্ছা করছে না।

- দিপুউ, আমি এক্ষন শেল অ্যান্ড কোর খাবো। তুমি খাওয়াবা।

- মিলা আমার কাছে টাকা নাই, জ্বালিও না।

- আমি টাকা দিই, তুমি নিয়ে আসো নাহ।

- খেতে ইচ্ছে করলে নিজে খেয়ে আসো। আমি উঠতে পারবো না।

মিলার হাসি মুছে মুখ কালো হয়ে গেলো। দিপু ওকে বুঝতে না দিয়ে একটা নিঃশ্বাস গোপন করলো, তারপর নিঃস্পৃহ দৃষ্টিতে আবার চশমার কাঁচে মনোযোগ দিলো।

প্রেমের প্রথম দিকে দিপুও আহ্লাদী প্রেমিক ছিলো। এতো মিষ্টি আদুরে একটা মেয়েকে আহ্লাদ না করে, কি করে মানুষ বেঁচে থাকতে পারে, দিপু তা বুঝে পায় না। মিলাই বাধ সাধলো, অতি আবেগী ছেলেদের আবেগ নাকি পুরোটাই ছ্যাবলামো। ছেলেদের নাকি হতে হবে মহীরুহের মতো, বটবৃক্ষের মতো, সুবিশাল, ছায়াময়, উদার, আশ্রয়। মিলা চড়ুই পাখির মতো ছটফট করবে দিনমান ধরে, আর দিপু তার সন্ধ্যেকালে পাখ গুটিয়ে ফেরবার ঘর হবে।

দিপু আসলে এটাও বুঝে পায় না, ভালোবাসার মানুষের জন্য পাগলামী এলে পাগলামী করা যাবে না কেন? আচ্ছা বেশ, করলাম না কিছু। সে নিজেকে এমন দেয়ালের মাঝখানেই আটকে দিয়েছে, এখন আর চাইলেও মিলার আশেপাশে সে “দিপু” হয়ে উঠতে পারে না। মিলার পাশে রোজ বিকেলে অন্য কেউ বসে থাকে, দেখতে শুনতে ঠিক দিপুর মতোই। কিন্তু দিপু তাকে চেনে না। মিলা চিনতে পারে তো?

- শোনো টিউশনিতে যেতে হবে।

- এখনই যাবা?

- হুঁ। তুমি ফোন করে গাড়ি ডাকাও। গাড়ি এলেই আমি চলে যাবো।

- আরেকটু বসো।

- বাস দিয়ে যাবো, দেরি হবে।

- সিএনজি নিয়ে যেও, আমি ভাড়া দিয়ে দিচ্ছি।

- নাহ, স্টুডেন্টের পরীক্ষা। হাত ছাড়ো, গরমে গা আঠা আঠা লাগছে।

মিলা গাড়ির দিকে এগোচ্ছে। শ্রাবণের অন্ধকার আকাশকে দুচোখে জমিয়ে সে একটু একটু করে চলে যাচ্ছে। তার ওড়না দমকা হাওয়ায় ঢেউয়ের মতোন নড়ছে, মিলার পারফিউমের ঘ্রাণটুকু ছড়িয়ে দিয়ে যাচ্ছে সন্ধ্যার বাতাসে।

দিপুর ইচ্ছে করছে ছুটে গিয়ে মিলাকে থামায়, বুক ভরে টেনে নেয় মিলার ঘ্রাণ টুকু। তারপর বলে – তুমি একটু হাসো, আমি দেখবো।

কেন যেন নিজেকে হিমু হিমু মনে হচ্ছে আজকে দিপুর। দেবশিশুর মতোন নিষ্পাপ দেখতে কোন তরুণীকে এইভাবে উপেক্ষিত করতে পারে, শুধুমাত্র হিমুর পক্ষেই সম্ভব। কিন্তু মিলা তো এটাই চেয়েছিলো।

দিপুর মাথায় দুলাইন কবিতা খেলে যাচ্ছে।

আমি তাহাকে খুঁজি, আমি দিনমান তাহাকে খুঁজি।
সে যে বিষ, সেই অমৃত আমার, শুধু আমিই তা বুঝি।

দিপু কখনোই হিমু চরিত্রের প্রেমে পড়ে নি। দিপু শুধুই প্রেমিক হতে চেয়েছিলো, সে কখনোই হিমু হতে চায় নি।
১৮টি মন্তব্য ১৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জীবন চলবেই ... কারো জন্য থেমে থাকবে না

লিখেছেন অপু তানভীর, ০২ রা মে, ২০২৪ সকাল ১০:০৪



নাইমদের বাসার ঠিক সামনেই ছিল দোকানটা । দোকানের মাথার উপরে একটা সাইনবোর্ডে লেখা থাকতও ওয়ান টু নাইন্টি নাইন সপ ! তবে মূলত সেটা ছিল একটা ডিপার্টমেন্টাল স্টোর। প্রায়ই... ...বাকিটুকু পড়ুন

যুক্তরাষ্ট্রে বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভ ঠেকাতে পুলিশি নির্মমতা

লিখেছেন এমজেডএফ, ০২ রা মে, ২০২৪ দুপুর ১:১১



সমগ্র যুক্তরাষ্ট্র জুড়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসগুলোতে বিক্ষোভের ঝড় বইছে। যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভ কর্মসূচী অব্যাহত রয়েছে। একাধিক বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বিক্ষোভ দমনের প্রচেষ্টা চালালেও তেমন সফল... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ ০১

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ৯:৫৫



নতুন নতুন শহরে এলে মনে হয় প্রতি টি ছেলেরি এক টা প্রেম করতে ইচ্ছে হয় । এর পেছনের কারন যা আমার মনে হয় তা হলো, বাড়িতে মা, বোনের আদরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

হিটস্ট্রোক - লক্ষণ ও তাৎক্ষণিক করণীয়

লিখেছেন ঢাকার লোক, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:০৭

সাধারণত গরমে পরিশ্রম করার ফলে হিটস্ট্রোক হতে পারে। এতে দেহের তাপমাত্রা অতি দ্রুত বেড়ে ১০৪ ডিগ্রী ফারেনহাইট বা তারও বেশি হয়ে যেতে পারে।

হিটস্ট্রোক জরুরি চিকিৎসা প্রয়োজন। চিকিৎসা... ...বাকিটুকু পড়ুন

আল্লাহকে অবিশ্বাস করার সংগত কোন কারণ নাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৩



সব কিছু এমনি এমনি হতে পারলে আল্লাহ এমনি এমনি হতে সমস্যা নাই। বীগ ব্যাং এ সব কিছু হতে পারলে আল্লাহও হতে পারেন। সব কিছুর প্রথম ঈশ্বর কণা হতে পারলে আল্লাহও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×