(প্রিয় ব্লগার পিঁজরা গল্পটি একটু বড় হওয়াতে গল্পটিকে ক্রমান্নয়ে প্রকাশ করছি..
দয়া করে চোখ রাখুন পরবর্তী অংশে..)
তোমাকে একটা প্রশ্ন করি ?
কথাটা বলার পর পরই অপলার মনে হলো এই মুহুর্তে সুজিত কি সুস্থ মানুসিকতায় রয়েছে ? সঠিক জবাব কি সে দেবে?
বারান্দার ইজি চেয়ারে খানিকটা হেলান দিয়ে পত্রিকার পাতায় চোখ রেখেছে সুজিত, চোখে মুখে রাজ্যের গম্ভীরতা, উদভ্রান্ত এক ভাবনায় সে বিভূর, অথচ সামনের পত্রিকাটা দেখলে মনে হবে কি অসম্ভব মনোযোগী পাঠক।
কতক্ষন নিরবতার পর অপলা কিছুটা নড়েচড়ে দাড়ালো রেলিংএর গা ঘেষে। গতকাল থেকে একটানা বৃষ্টি হচেছ। পাশের বিল্ডিং এর ঢালু ছাদটাতে জমানো পানির উপর এখন বৃষ্টির ফোটা পড়ে টপটপ শব্দ হচেছ। অপলার মনোযোগ এখন বৃষ্টির ফোটার দিকে। সে ভাবে বৃষ্টির রিনিঝিনি শব্দ বলে একটা কথা আছে । একেই কি বলে সেটা? আবার ভাবে নাহ সেটা বোধ হয় অন্যরকম। কেয়া ঠিক বলতে পারবে, কেয়াটার এত বুদ্ধি যে কোথা থেকে হলো অপলার মাথায়ই আসেনা।
সুজিত পত্রিকার পাতা থেকে মুখ তুলে গম্ভীর গলায় বলে
ও হ্যা কি যেনো বলছিলে?
অকস্মাৎ অপলার ভেতরের বৃষ্টি নিয়ে ভাবনার সলতেটা দপ করে নিভে যায়। সুজিতের চোখে চোখ রাখতেই বুকের ভেতরটা কেঁপে উঠে অপলার। ঠোঁট দুটিকে সামান্য নেড়ে বলে; না তেমন কিছু না এমনিতেই।
মিথ্যে বলছো কেনো? তোমাকে না কতবার বলেছি মিথ্যে বলা আমি একদম পছন্দ করিনা।
মুখ থেকে কথা সরেনা অপলার। হিংস্র বাঘের মত দাঁত খিচিয়ে কথা বলছে সুজিত এখন। সুতরাং সত্য বা মিথ্যে এ নিয়ে তর্ক করা শোভনীয় নয়, অপলা তা জানে। অসহায় দৃষ্টি নিয়ে সামনে তাকায় সে। বৃষ্টির ফোটা আরো ঘন হয়ে পড়ছে। দৃষ্টির সীমানা যেনো সাদা চাদরে ঢেকে যাচেছ ক্রমেই।
কি হলো ? সরে দাড়াচেছা না কেনো ? বৃষ্টির ফোটায় ভিজে যাচেছা টের পাওনা ?
অপলার সত্যি খেয়াল হয়নি,এতোক্ষনে রেলিংয়ের উপরে রাখা হাত থেকে চুইয়ে পানি ঝরছে।
মৃদু পা ফেলে ঘরে ফিরে আসে অপলা। তার পায়ের আওয়াজ পেয়ে পিন্জরে রাখা মুনিয়া পাখি দুটি ঝপ ঝপ শব্দ করতে থাকে। অপলা পিঁজরাটির কাছে গিয়ে দাড়ায়। দুহাতে মৃদু দুলিয়ে বলে; কিরে প্রকৃতির প্রতিনিধিরা জীবন কতোটা সুখের এখানে? একেই কি বলে সুখাশ্রয় ?
তোমার কি আজকাল মাথার প্রবলেম দেখা দিচেছ অপলা? একা একা বিড় বিড় করো। চমকে উঠে পিছনে তাকায় অপলা। সুজিত ঘরে এসেছে টেরই পায়নি। বুকের বা পাশ থেকে কারুকার্যময় একটি দীর্ঘশ্বাস থেমে থেমে বেরিয়ে আসছিলো, সুজিতের শব্দ পেয়ে ওটা দ্রুত আত্মার কাছে ফিরে যায়।
অপলা তার নেবু ফুলের মত সাদা ধবধবে মুখটিতে খানিকটা হাসির আভাস আনতে চেষ্ঠা করে। তারপর বলে; না, না, মুনিয়া গুলি কেমন ছটফট করছিলো তাই একটু-----।
- টেবিলে না¯তা দিতে বলো, আমার বেরুতে হবে তাড়াতাড়ি। এসব অন্য সময় করতে পারবে। বলে সুজিত ভেতরের দিকে পা বাড়ায়।
সুজিত নাস্তা খেয়ে বের হয়ে যাবার পর বিশাল বাড়ীটির এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্ত ঘুরে ফিরে আবার দেখে অপলা। কি সপ্নময় মায়াপুরি, দামী দামী কার্পেটে মোড়ানো প্রতিটি ঘর, সেলফে রাখা বিদেশী বাহারী মুল্যবান সো-পিস, ড্রয়িংরুমের সিড়ি বেয়ে উপরে উঠার দেয়াল ঘেষে বাধানো দামী তৈল চিত্র। মমতা আর মানুষের ভালবাসা সে সব ছবিতে একাকার। চেয়ে থাকলে চোখের পাতায় এসে থেমে থাকে স¡র্গীয় সুখের উপমা। তৃপ্তিতে দৃষ্টির সামনে উড়ে বেড়ায় জ্যোৎস্নার গাংচিল।
ঘুরে ঘুরে বিছানায় এসে গাটা এলিয়ে দেয় অপলা। হঠাৎ মনে পড়ে চাচাজান বলতেন ,সাজ বেলায় শুয়ে থাকা ভাল নয়. এতে মনটা বিষন্ন থাকে।
চাচাজানের কথাটা মনে পড়তেই স্মৃতির আয়নায় ভেসে উঠে শৈশব থেকে যৌবন, যৌবন থেকে এইযে এই অন্ধকারে যুবতী রমনী। শৈশবের স্মৃতি বলতেতো কেবল মায়াময় চাচাজানের মুখখানা। সারাটা জীবন অবিবাহিত কাটিয়ে দিলেন শুধু আমার আর কেয়ার জন্যে। যদি বাবা মা হারা দুটি মেয়ে অনাদরে ঝরে যাই।
ভাবতে ভাবতে ঝট করে উঠে বসে অপলা। এবাড়ীতে চাকর বাকর এর মেলা আর হৈ চৈ ছাড়া অন্য কোন মানুষ নেই। বেল টিপলেই তির তির করে ছুটে আসবে একঝাক লোক হুকুম তালিম করতে। কিšতু অপলার কখনই এটা করো, ওটা করো এসবে ইচেছ নেই । মাথাটা ব্যাথায় টনটন করছে কিন্তু কাউকে কিছু বলতে মন চাইছে না।
হঠাৎ দুঃসহ গুমোট নিরবতাকে খান খান করে ডোর বেলটা বেজে উঠে। মাথার চুলগুলিতে দ্রুত চিরুনী লাগিয়ে দরজায় হাত রাখে অপলা।
মিষ্টি হেসে ছোট্র ছেলে তমালের হাত ধরে ঘরে ঢুকে রেহানা। রেহানা পাশের বিল্ডিং এর নিচ তলায় থাকে। প্রায়ই এসে গলপ টলপ করে। তমালের আবার মুনিয়া দুটি খুব পছন্দের। রেহানা আসে অনেকটা একারনেই।
- অমা ভাবী, এই বৃষ্টিমুখর দিনে তোমাকে যে আরো অপ্সরী লাগছে। দুধসাদা গায়ের বরনে হলুদ গাদাফুলের রং শাড়ী। তার উপর কোমর অবধি ছড়ানো রেশমী চুল। এসো এসো কাজলের টিপ পরিয়ে দেই। নজর লেগে শেষে সর্বনাশ হয়ে যেতে পারে।
- ওফ রেহানা ছাড়ো, আরে ছাড়োইনা লাগছেতো, কিযে পাগলামী করোনা ?
দুজনে জড়াজড়ি করে ঝপ করে বসে পড়ে বিছানায়। খিলখিল করে হেসে কথা বলে রেহানা।
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই অক্টোবর, ২০০৮ ভোর ৬:২২