somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

ফরিদ আলম
সুন্দর জীবন সকলে পায় না, তবে কিছু লোক জীবনকে সুন্দর করে গড়ে তোলেন। আর সুন্দর জীবনের জন্য চাই সুন্দর জীবন ব্যবস্থা। নিঃসন্দেহে ইসলাম হল শ্রেষ্ঠ সুন্দর জীবন ব্যবস্থা।

ইসলামে পশু-পাখিদের অধিকার

২৪ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৫ রাত ৯:১৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

শিরোনামটা অনেককে অবাক করবে। অনেকের ঠোঁট প্রসারিত হয়ে মুখে একটা মুচকি হাসি খেলে যাবে। হুহ! যে ধর্মে কুরবানী নামের পশুবলি উতসব আছে সে ধর্মে আবার পশু অধিকার! আমাদের সমাজে এমন লোকের মোটেও অভাব নাই। কুরবানীর কারনে অনেকেই মনে করেন ইসলাম একটা হিংস্র ধর্ম। অথচ সত্যটা একেবারেই উলটো। ইসলাম পশু-পাখিদের যে অধিকার চৌদ্দশ বছর আগে দিয়েছে সেগুলোর জন্য মাত্র কিছু বছর থেকে সরকার এবং বিভিন্ন সংস্থা গুলো ব্যবস্থা নিচ্ছে। ইসলামে জীব জন্তুদের অধিকার জানার আগে আমাদের একটা কথা জেনে নেওয়া উচিত। আল্লাহ পশু পাখি এবং পৃথিবীর সবকিছু অর্থাৎ গাছ, জল, আকাশ, সুর্য শুধুমাত্র মানুষদের জন্যই সৃষ্টি করেছেন। আল্লাহ বলেন, ‘তিনি পৃথিবীর সবকিছু তোমাদের জন্য সৃষ্টি করেছেন’ [সুরা বাক্বারাহ/২৯]। ইসলাম বৈধ পশু পাখি খাওয়া জায়েয। ইসলাম এমন অযৌক্তিক কথা বলেনা যে সকলে নিরামিষাসী হও অথবা প্রাণ খেও না। এটা একেবারেই অবৈজ্ঞানীক ও যুক্তিহীন কথা। সকলে নিরামিষাশী হলে পৃথিবী টিকেই থাকতো না। আর উদ্ভিদেরও প্রাণ আছে, তাহলে মানুষ খাবে কী?

ইসলাম পশু পাখি খাওয়ার অনুমতিও দিয়েছে আবার সেই সাথে কিছু সাবধানবানীও দিয়েছে। ইসলাম পশু-পক্ষীর ন্যায্য অধিকার দিয়েছে। অকারণে তাদের মেরা ফেলা, খাওয়ার জন্য ছাড়া হত্যা করা, তাদের উপর বেশী বোঝা চাপানো, নিজেদের মনোরঞ্জনের জন্য তাদের কষ্ট দেওয়া ইসলামে নিষিদ্ধ। মুহাম্মাদ (সা.) বলেছেন, ‘আল্লাহর অভিশাপ সেই ব্যক্তির উপর, যে (অকারণে) পশুর অঙ্গহানী ঘটায়‘ [নাসাঈ/৪৪৪২; ইবনে হিব্বান, বাইহাকী]। অর্থাৎ শুধু মজা করার জন্য কোন পশুর অঙ্গহানী করা যাবেনা। তাকে কোন ভাবেই অকারণ কষ্ট দেওয়া যাবেনা। আব্দুল্লাহ বিন উমার (রা.) একবার কুরাইশ বংশের কতিপয় নবযুবকের নিকট দিয়ে অতিক্রম করার সময় লক্ষ্য করলেন যে, তারা একটি পাখীকে বেঁধে রেখে (হাতের নিশানা ঠিক করার মানসে তার উপর নির্দয়ভাবে) তীর মারছে। তারা পাখির মালিকের সাথে এই চুক্তি করেছিল যে, প্রতিটি লক্ষ্যভ্রষ্ট তীর তার হয়ে যাবে। সুতরাং যখন তারা ইবনে উমারকে দেখতে পেল, তখন ছত্রভঙ্গ হয়ে পালিয়ে গেল। ইবনে উমার (রা.) বললেন, ‘এ কাজ কে করেছে? যে এ কাজ করেছে তার উপর আল্লাহর অভিশাপ। নিঃসন্দেহে রাসুলুল্লাহ (সা.) সেই ব্যক্তির উপর অভিশাপ করেছেন, যে কোন এমন জিনিসকে (তার তীর খেলার) লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করে, যার মধ্যে প্রাণ আছে’ [বুখারী মুসলিম]

প্রশ্ন হল, অকারন বা মজা করার জন্য পশু হত্যা করা কেমন ধরনের পাপ? মহানবী (সা.) এব্যাপারে বলেছেন, ‘আল্লাহর নিকট সব চাইতে বড় পাপিষ্ট ব্যক্তির একজন হল সেই ব্যক্তি, যে খামোখা পশু হত্যা করে’ [দ্রঃ হাকেম, বাইহাকী, সহীহুল জামে’/১৫৬৭]। খামাখা পশু হত্যাকারী অর্থাৎ শখের শিখারী যারা তারা হল সব চাইতে বড় পাপিষ্টদের একজন। পশু শিকার অনেকের কাছে অনেক গৌরবের হলেও ইসলাম তার অনুমোদন করেনা। অর্থাৎ ইসলাম পশুদের বেঁচে থাকার অধিকার দিয়েছে। তাদের অকারন হত্যা করাকে নিষিদ্ধ করেছে। এব্যাপারে আরো একটি হাদীস দেখুন। দয়ার নবী (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি অধিকার ছাড়া (অযথা) একটি বা তার বেশি চড়ুই হত্যা করবে, কিয়ামাতের দিন আল্লাহ সেই চডুই সম্পর্কে প্রশ্ন করবেন’। বলা হল, ‘হে আল্লাহর রাসুল! অধিকারটা কী (যে অধিকারে তাকে হত্যা করা বৈধ হবে)?’ তিনি বললেন, ‘অধিকার হল এই যে, তা যবাই করে খাওয়া হবে এবং মাথা কেটে (হত্যা করে) ফেলে দেওয়া হবে না’ [নাসাঈ; সহীহ তারগীব/২২৬৬]। এই হাদীস থেকে বোঝা যায় শুধু মাত্র খাওয়ার উদ্দেশ্যেই হত্যা করা যাবে। অন্য কোন কারণে নয়। তবে, কোন জন্তু জানোয়ার মানুষের ক্ষতি করলে তাকে মেরে ফেলা যাবে। বিষাক্ত প্রাণী ঘরে ঢুকলেও তাকে ফেরা ফেলা যাবে। যেমন সাপ বা বিচ্ছু। তবে বাইরে কোথাও যেখানে তারা মানুষের কোন ক্ষতি করবেনা সেখানে তাদের মারা যাবেনা। এবং একজনের কারনে পুরো দলকেও মারা যাবেনা। একদা একটি গাছের নিচে একজন নবীকে পিঁপড়ে কামড়ে দিলে তিনি গর্তসহ পিঁপড়ের দল পুড়িয়ে ফেললেন। আল্লাহ তাঁকে অহী করে বললেন, ‘তোমাকে একটি পিঁপড়ে কামড়ে দিলে তুমি এমন একটি জাতিকে পুড়িয়ে মারলে, যে (আমার) তসবিহ পাঠ করত? তুমি মারলে তো একটিই মারলে না কেন, (যে তোমাকে কামড়ে দিয়েছিল) ?’ [বুখারী মুসলিম/২২৪১]। ভেবে দেখুন ইসলাম শুধু পশু পাখি নয় একটা সামান্য পিপড়াও অধিকার নিশ্চিত করেছে। সুবহান’আল্লাহ!

এছাড়াও বলা হয়েছে, একটা পশুর সামনে অন্য পশুকে যবেহ না করতে, মা পাখির থেকে তার শিশুকে আলাদা না করতে, পশু পাখিকে খাবার না দিয়ে বেঁধে না রাখতে ইত্যাদি। এমনকি, পশু পাখিদের প্রতি দয়াপ্রদর্শনে আছে নেকি। একদা লোকেরা বলল, ‘হে আল্লাহর রাসুল! জীব জন্তুর প্রতি দয়াপ্রদর্শনেও কি আমাদের সওয়াব আছে? তিনি বললেন, ‘প্রত্যেক সজীব প্রাণবিশিষ্ট জীবের (প্রতি দয়াপ্রদর্শনে) সওয়াব বিদ্যমান’ [বুখারী/২৪৬৬; মুসলিম/২২৪৪]।
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৫ রাত ৯:১৯
৬টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×