somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আগামীর বাংলাদেশ বিনির্মাণে যে সব সুবিধার প্রস্তাব- তা জেনে নিন

৩১ শে জুলাই, ২০২৫ রাত ৯:০৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

অনেক পাওয়া না-পাওয়া ও হতাশার মধ্যেও অবশেষে এদেশের শাসনকাঠামোয় অনেকগুলো গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন আসতে যাচ্ছে!
এক.
এক ব্যক্তি জীবনে সর্বোচ্চ ১০ বছর প্রধানমন্ত্রী পদে থাকতে পারবেন, এমন বিধান সংবিধানে যুক্ত করা হচ্ছে।
দুই.
সংসদে উচ্চকক্ষ গঠিত হচ্ছে, যা শাসন বিভাগকে জবাবদিহিতার পাশাপাশি নিম্নকক্ষে পাশ হওয়া প্রতিটি আইনের রিভিউতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
তিন.
সংসদে সকল রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণ নিশ্চিতে উচ্চকক্ষে পিআর (PR) পদ্ধতি বাস্তবায়ন হচ্ছে। এটা একটা ঐতিহাসিক শাসনতান্ত্রীক পরিবর্তন। যার ফলে সংসদে আমরা বহুমতের প্রতিফলন দেখতে পাবো।
চার.
গুরুত্বপূর্ণ আন্তর্জাতিক চুক্তির অনুমোদন, সংশোধন ইত্যাদি সংসদের উচ্চকক্ষ ও নিম্নকক্ষ উভয় থেকে পাশ করিয়ে নিতে হবে। কোনরূপ আলোচনা না করেই, জনগনকে না জানিয়েই হাসিনার মতো ট্রানজিট দিয়ে দিতে পারবে না আর কেই, হিজ্রেল থেকে পেগাসাস কিনে ফেলতে পারবে না, দেশ বিরোধী আদানি চুক্তি করতে পারবে না।
পাঁচ.
হাইকোর্টে পঞ্চদশ সংশোধনী বাতিলের পর গুরুত্বপূর্ণ কিছু প্রভিশনের ক্ষেত্রে সংবিধানে গণভোটের বিধান ফিরে এসেছে। ফলে জনগণের ক্ষমতা আরও বৃদ্ধি পাচ্ছে।
ছয়.
সংসদে বিরোধী দলের গুরুত্ব বৃদ্ধি করা হয়েছে। এখন থেকে ডেপুটি স্পিকার পদে বিরোধী দল থেকে মনোনয়ন হবে। সংসদীয় স্থায়ী কমিটিগুলোতে আনুপাতিক হারে সব দলেরও অংশগ্রহণ থাকবে। অর্থাৎ, বিরোধী দলগুলো সংসদে যে কটি আসন পাবে, তার অনুপাতে সংসদীয় কমিটির সভাপতি পদ পাবে।
সাত.
স্থানীয় সরকার নির্বাচনে দলীয় প্রতীক আর থাকছে না। ফলে ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের স্থানীয় পর্যায়ের মাদকাসক্ত, গুন্ডা পান্ডাদের পরিবর্তে যোগ্য, শিক্ষিত, মার্জিত লোকজন স্থানীয় প্রতিনিধি হিসেবে উঠে আসবে।
আট.
৭০ অনুচ্ছেদ পরিবর্তন হচ্ছে। এতে অর্থবিল ও আস্থা ভোট ছাড়া অন্য যেকোনো বিষয়ে সংসদ সদস্যরা দলের বিপক্ষে ভোট দিতে পারবেন। এতোদিন ধরে চলমান প্রধানমন্ত্রী যা বলে তা-ই সঠিক এই "rubber stamp" প্রথার প্রভাব কমবে।
নয়.
হাইকোর্ট বিভাগের বেঞ্চগুলো বিভাগীয় পর্যায়ে স্থানান্তরিত হচ্ছে। ফলে পঞ্চগ্রামের জমি বিরোধ নিয়ে আপনাকে আর ঢাকায় আসতে হবে না।
দশ.
স্বাধীন পুলিশ কমিশন হচ্ছে। এটার ইতিবাচক ইমপ্যাক্ট হবে হিউজ। প্রতিষ্ঠান হিসেবে পুলিশকে আর রাজনৈতিক হাতিয়ার বানানো যাবে না।
এগারো.
নির্বাহী বিভাগ থেকে বিচার বিভাগকে স্বাধীন করার জন্য সুপ্রিম কোর্টের আলাদা সচিবালয় হচ্ছে।
বারো.
সুপ্রিম কোর্টের বিচারক নিয়োগে প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে একটি স্বাধীন বিচার বিভাগীয় নিয়োগ কমিশন (Judicial Appointments Commission-JAC) গঠিত হচ্ছে।
তেরো.
গণহত্যা ও ভোট জালিয়াতির সঙ্গে জড়িত কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে স্বাধীন তদন্ত কমিশন গঠিত হচ্ছে।
চৌদ্দ.
প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা নানা উপায়ে হ্রাস করা হয়েছে। এখন একটাই বাকি আছে, সেটা হলো সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলোর নিয়োগ প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ মুক্ত করে স্বতন্ত্র নিয়োগ কমিটির মাধ্যমে করা। আশাকরি এটাও শীঘ্রই বাস্তবায়ন হবে।
দেখেন একটা গুরুত্বপূর্ণ কথা বলি। এতো স্বল্প সময়ের মধ্যে এতগুলো গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন আশাজাগানিয়া। জুলাই ভাগাভাগি নিয়ে দ্বন্দ্ব ও দলাদলি হয়েছে, যা আমাদের মনে হতাশা তৈরি করেছে। তন্মধ্যে আবার ইন্টেরিম সরকারের উপর যে প্রত্যাশা ছিল সেটাও সিকিভাগ তারা পূর্ণ করতে পারেনি এটা সত্য। চারদিকে মব কালচার হয়েছে, চাঁদাবজি হচ্ছে, দলীয় কোন্দলে মানুষ মারা গিয়েছে। এনসিপি, বিএনপি, জামাত সহ রাজনৈতিক দলগুলো নিয়ে নানা ক্ষোভ আমাদের আছে। এতো কিছু পরেও জুলাই আমাদের যা দিয়েছে সেটা বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর আর কেউ দিতে পারেনি। দেখেন উপরে কতোগুলো শাসনতান্ত্রীক পরিবর্তনের কথা বললাম এগুলো সহ আরও অসংখ্য ইতিবাচক পরিবর্তন জুলাই আমাদের এনে দিয়েছে। একটা বিপ্লব বা গণঅভ্যুত্থানের পর এতো দ্রুত এতোগুলা পরিবর্তন খুব কম রাষ্ট্র নিয়ে আনতে পেরেছে।
দেখেন ফরাসি বিপ্লবের পর ফ্রান্সে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা এসেছে প্রায় চার বছর পর। আমরা কী ফ্রান্স থেকেও সভ্য? যে একটা গণঅভ্যুত্থানের পর আমাদের সকল প্রত্যাশা দুই মাসেই পূর্ণ হয়ে যাবে? না ভাই। চব্বিশের পাঁচই আগস্টের পর বিগত একটা বছর আমাদের যে হতাশা, চারদিকে যে অরাজকতা, মব কালচার, সহিংসতা এগুলো সব হচ্ছে Emancipatory Violence. মানে একটা বিপ্লবের পর একটা নতুন শাসনতান্ত্রীক কাঠামোর মধ্যে দিয়ে রাষ্ট্রের স্থিতিশীলতা ফিরে আসার আগ মুহূর্ত পর্যন্ত সেখানে অবধারিত ভাবে ভায়ালেন্স ও অরাজকতা হবেই। তবে সেই ভায়ালেন্স কতোটা কমিয়ে আনা যায় সেটা নির্ভর করে ঐ অন্তর্বর্তীকালীন দায়িত্বশীলদের সক্ষমতার উপর। সেটা নিয়ে আলাপ হতে পারে।
ফ্রান্সের লেগেছে চার বছর। তিউনিসিয়ার গণঅভ্যুত্থান হয়েছে ২০০৯ সালে, তিউনিসিয়া তার নতুন শাসনকাঠামো বা সংবিধান পেয়েছে ২০১৪ সালে। ইউক্রেনের অরেঞ্জ, জর্জিয়ার রোজ, কিরগিজিস্থানের টিউলিপ সহ ২০০৪/৫ সালের দিক যেসকল দেশে কালার রেভুলোশন হয়েছে সেসব দেশের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা এসেছে ২০১১/১২ সালের দিক। অর্থাৎ পাঁচ বছর পর।
দেশে দেশে প্রতিটি গণঅভ্যুত্থান ও বিপ্লবের পর শাসনকাঠামোয় যে সকল পরিবর্তন এনে দিয়েছে, আমরা ঐক্যবদ্ধ থাকলে জুলাই তার চেয়ে অনেকগুন বেশি পরিবর্তন এনে দিতে পারবে বলেই আমি বিশ্বাস করি। তাই এতো হতাশার পরেও জুলাইকে আমি, আমরা ব্যর্থ বলে আগেই ভালো ছিলাম এই ন্যারেটিভ কথিত বুদ্ধিজীবীদের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠা করতে দিতে পারি না।
অনেক জীবন আর আত্মত্যাগের এই জুলাইকে আমরা ব্যার্থ হতে দিবো না। ইনশাআল্লাহ।

সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে জুলাই, ২০২৫ রাত ৯:১০
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

রাজাকার-আলবদর চাই না, কিন্তু হাসিনাকেও চাই না!

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ১৪ ই নভেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৩৫



হাসিনার কর্তৃত্ববাদী শাসনের সবচেয়ে অপকৃষ্ট দৃষ্টান্ত ছিল হাসিনার মুখের ভাষা। পৃথিবীতে আর কোনো সরকার প্রধান তার মতো ইতর ভাষায় জনগণকে হুমকি-ধামকি দিয়েছেন বলে আমার জানা নেই। মনে পড়ে তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামীলীগ ঠিক কোথায় জিতে যাচ্ছে?

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ১৪ ই নভেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:১০





৫ই তারিখের পূর্বে জুলাই আন্দোলনের এক স্মরণীয় দিনের কথা বলি। ১৪-১৫ বছরের এক কিশোর সকাল থেকেই পুলিশ ও ছাত্রলীগের বিপক্ষে রাজপথে সক্রিয় ছিল। বাসায় খেতে এসে পরিবারের... ...বাকিটুকু পড়ুন

শেখ হাসিনার উল্টো পুরাণ : আমেরিকার হাত ছিলো না

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৪ ই নভেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:৩৩


ক্ষমতাচ্যুতির প্রায় ১৫ মাস পর এসে আওয়ামী লীগ প্রধান ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর পূর্বের অবস্থানে নাটকীয় পরিবর্তন এনেছেন। গত বছরের জুলাই মাসে গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে সরকারের পতন হওয়ার... ...বাকিটুকু পড়ুন

পাকিস্তানের সাথে কখন বন্ধুত্ব হতে পারে?

লিখেছেন সত্যপথিক শাইয়্যান, ১৪ ই নভেম্বর, ২০২৫ রাত ১০:১৫

পাকিস্তানের সাথে সম্পর্ক পূনঃস্থাপন হচ্ছে বলে মনে হচ্ছে। পাকিস্তানী রাজনৈতিক, খেলাধুলা ও সামরিক বাহিনীর ব্যক্তিত্বরা বাংলাদেশ সফর করেছেন। সেই দেশের সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বরাও সফর শুরু করেছেন আমাদের দেশে। বাংলাদেশ আগ বাড়িয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

একফোঁটা মায়া এখনো পৃথিবীতে বাকি আছে

লিখেছেন সামিয়া, ১৪ ই নভেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:০১


নিঃসঙ্গ এক প্রহরীর মতো আমি জেগে থাকি একা কয়েকশো শতাব্দীর পুরাতন প্রাসাদের মতন।
বাতাসে শুকনো ফুলের গন্ধ।দেয়ালে ঝুলছে সময়ের দীর্ঘ প্রতিচ্ছবি, সোনালী ফ্রেমে বন্দী বিস্মৃত মুখগুলো।তারা এখনো চেয়ে আছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×