ব্লগে একটা পোস্ট পাবলিশ করার পর আমরা কী চাই? আমরা চাই, মুহূর্তে ব্লগাররা এসে আমার পোস্টে হুমরি খেয়ে পড়ুন, ‘অনবদ্য’, ‘এত ভালো লেখা আগে কখনো পড়িনি’, ‘ব্লগে আপনি একটা ব্র্যান্ড’- ইত্যকার প্রশংসাবাণীতে কমেন্টের পর কমেন্ট এসে আমার পোস্টটা ফ্লাডেড হয়ে যাক। এটাই যদি আমাদের প্রত্যাশা হয়ে থাকে, তাহলে পোস্ট পাবলিশ করার কোনো তাৎপর্য থাকে না। সব পোস্টের সব বিষয়বস্তু সবার ভালো লাগবে না; সবার সব পোস্টের মান বা কোয়ালিটি ‘খুব ভালো’ বা উৎকৃষ্ট হবে, তাও অসম্ভব। একেক জনের স্বাদ ও রুচি একেক রকম; ফলে, আপনার কোনো একটা পোস্ট আমার কাছে যদি ‘অনেক ভালো’ লেগে থাকে, আরেক জনের কাছে ‘অনেক খারাপ’ লাগাও সম্ভব। কেউ কেউ হয়ত বলবেন, আমার কোনো পোস্টে কেউ সমালোচনা করলে আমার সহ্য হয় না, বা কেউ আমার পোস্ট ‘খারাপ’ বলুক তা শুনলে আমার খুব রাগ হয়- তাহলে আমি বলবো, সেটা খুব অমূলক প্রত্যাশা। এবং এটা যদি সত্যি সত্যিই আপনার মনোবাঞ্ছনা হয়ে থাকে, তাহলে কমেন্ট ‘ডিস্যাবল’ করে রাখাই হলো বুদ্ধিমানের কাজ। কারণ, আপনি তো জানেনই যে, সবাই এসে আপনাকে শুধু ‘বাহবা’ই জানাবেন, তাই আর শুধু শুধু কমেন্ট পড়ার কী দরকার, মনে মনে ‘জটিলস/অসাধারণ’ কথাগুলো আওড়ান আর অনিন্দ্য সুখ অনুভব করতে থাকুন।
কিন্তু, কমেন্ট করতে এসে কমেন্টে কী বলবেন? নতুন ব্লগারদের ক্ষেত্রে অনেক সময়ই অনেক সংকোচ দেখা যায় প্রধানত ‘পাছে লোকে কিছু বলে’র দ্বিধা থেকে। যদি পোস্টটি আপনার সত্যি সত্যিই ভালো লেগে থাকে, অসংকোচে বলে ফেলুন ‘খুব ভালো লাগলো’; ভালো না লাগলে এড়িয়ে যাওয়া যেমন একটা অপশন, তেমনি, বক্ষমাণ বিষয়ে আপনার অভিজ্ঞতা বা জ্ঞান থাকলে সে বিষয়ে আপনি অল্প দু-এক কথায় মতামত যুক্ত করে দিন। এতে আপনার সঙ্কোচ মুহূর্তে দূর হয়ে যাবে এবং পরের বার কুণ্ঠাহীনভাবে যে-কোনো কথা লিখে ফেলতে পারবেন। তবে, ‘ভালো’কে ভালো না বলা বা খারাপ বলা একটা বদ্-অভ্যাস, তেমন সাধারণ মানের একটা লেখাকে ফুলিয়া-ফাঁপিয়ে বলাও অন্যায়।
লিটারারি পোস্টে, যেমন, গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ, ছড়া উপন্যাস, ইত্যাদিতে বিশ্লেষণমূলক মন্তব্য দেয়াই অধিক সঙ্গত বলে মনে করি। আমি খুব অল্প পরিসরে এই পোস্টে সেই দিকটাই বলার চেষ্টা করবো। এ ব্যাপারে আমার কোনো গবেষণা বা ব্যাপক অধ্যয়ন নেই; শুধু একাডেমিক সাহিত্য আলোচনা ও ব্লগীয় অভিজ্ঞতা থেকে আমি কিছুটা ধারণা পেশ করতে চেষ্টা করছি। আর, একটা পোস্ট বা লেখা সম্পর্কে বিস্তারিত কিছু বলতে গেলে ঐ লেখাটা গভীর মনোযোগ সহকারে একাধিকবার পাঠ করা আবশ্যক। অতঃপর, যে দিকগুলো আলোচনায় তুলে ধরা উচিত তা মোটামুটি নিম্নরূপ। এর চাইতেও আরো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়াদি থাকতে পারে; ব্লগারদের উপকারের জন্য আপনারা সেগুলো যুক্ত করতে পারেন। শিরোনাম দেখে মনে হতে পারে এ পোস্টটা কেবলমাত্র কমেন্টদাতাদের জন্যই, আসলে এটা লেখকের জন্যই অধিক প্রযোজ্য। কারণ, কমেন্টদাতা যা লিখছেন (কমেন্ট যদি নেগেটিভ হয়), লেখকের তা গ্রহণ করার মধ্যেই কমেন্টের সার্বিক মান উন্নয়নের তাৎপর্য নিহিত রয়েছে।
১। বিষয়বস্তু। বিষয়টা সমসাময়িক বা সময়োপযোগী কিনা, সেটা বিচার করুন। এ আলোচনা থেকে সমাজ বা ব্যক্তিজীবনে আমরা কোনো উপকার পেতে পারি কিনা, তা উল্লেখ করুন।
২। বিষয়বস্তুর নতুনত্ব বা মৌলিকত্ব। অভিনব একটা বিষয় কিনা, নাকি বহুল চর্বিত চর্বন ধরনের লেখা। প্রসিদ্ধ কোনো লেখকের কোনো লেখার অনুকরণ কিনা; এ বিষয়ে আরো বিশ্লেষণ করতে পারেন, লেখক রবীন্দ্র, নজরুল, হুমায়ূন আহমেদ, শামসুর রাহমান- কোন বলয়ের প্রভাব দ্বারা প্রভাবান্বিত; নাকি তিনি স্বকীয় ধারায় নিজ প্রতিভায় প্রোজ্জ্বল একজন।
৩। উপস্থাপনা। উপস্থাপনার গুণে অতি গতানুগতিক একটা বিষয়ও আকর্ষণীয় ও হৃদয়গ্রাহী হয়ে ওঠে। বর্তমান লেখাটির উপস্থাপনার মান কেমন, সে দিকটা আলোকপাত করুন।
৪। নকলের দোষে দুষ্টু কিনা। দুঃখজনক হলেও সত্যি যে, অনেক লেখক চৌর্যবৃত্তির আশ্রয় গ্রহণ করে অন্য লেখকের লেখা হুবহু, কিনা সামান্য রদবদল করে নিজের নামে চালিয়ে দিয়ে থাকেন। সাম্প্রতিক কালে বিভিন্ন কবির কবিতা চুরি করে নিজের নামে আস্ত বই পর্যন্ত প্রকাশ করে ফেলেছেন কোনো এক ‘ধূরন্ধর কবি’। কোনো কোনো কবিকে দেখা গেছে প্রসিদ্ধ কবির কবিতা সামান্য ঘুরিয়ে নিজের নামে চালিয়ে দিয়েছেন। বর্তমান লেখাটি ও-ধরনের কিনা, সেটা যাচাই করতে পারেন; অবশ্য এ বিষয়টা সচরাচর কাকতালীয়ভাবেই আপনার চোখে ধরা পড়বে- যখন দেখবেন জাহিদ অনিকের ‘জীবন যন্ত্রণা’ শীর্ষক একটা কবিতা আপনি আগেই ফেইসবুক বা সামহোয়্যারইন ব্লগে পড়েছিলেন, যেটি হঠাৎ আরেকদিন দেখে ফেললেন জনাব ‘সোনাবীজ’ তাহার নামে তাহার ব্লগেই পাবলিশ করে দিয়েছেন। এ ক্ষেত্রে আপনার মহান ও পবিত্র দায়িত্ব হবে সাক্ষী প্রমাণসহ জনসমক্ষে এটা তুলে ধরা ও ব্লগ কর্তৃপক্ষের কাছে ‘রিপোর্ট’ করা।
৫। ভাষারীতি। এটা উপস্থাপনার সাথে সম্পর্কিত। আমরা শুনে আসছি বহুকাল হলো যে, রবীন্দ্রনাথ যে ভাষারীতি প্রতিষ্ঠা করে গেছেন, আমরা এখনো তাতেই ঘুরপাক খাচ্ছি। এটা কতখানি ঠিক আমি তা বলতে পারবো না, তবে এটা বুঝি যে হুমায়ূন আহমেদ আর সৈয়দ শামসুল হকের ভাষারীতি এক নয়; রবীন্দ্রনাথ আর নজরুলের ভাষারীতিও এক নয়। আবার দেখুন, সৈয়দ মুজতবা আলী ও সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়- এঁরাও স্বকীয়তায় ভাস্বর। ঠিক এভাবেই আপনি বুঝতে পারবেন যে, আহমেদ জী এস এর ভাষারীতি বা স্টাইল, চাঁদগাজী আর রাজীব নুরের স্টাইল থেকে সম্পূর্ণ আলাদা। ব্লগারের নাম না দেখেই, কিছু কিছু পোস্টের শিরোনাম ও ভাষারীতি দেখে আপনি বলে দিতে পারবেন যে এটা নুর মোহাম্মদ নুরু ছাড়া আর কেউ এ ব্লগে লিখতেই পারেন না। এটাকেই হয়ত ‘স্বকীয়তা’ বলা হয়ে থাকে। এভাবে আরেকটা উদাহরণ না দিয়ে পারছি না – জাদিদের লেখায় যেমন সূক্ষ্ম হাস্যরস ও প্রজ্ঞার একটা অপূর্ব সমন্বয় দেখা যায়, তেমনি শিখা রহমানের লেখায় দেখি বেশ গুরুগম্ভীর ভাব-রস। আমি এখানে এতগুলো কথা যে বললাম, তা থেকেও কিছু উদাহরণ হয়ত নেয়া যেতে পারে আপনার পঠিত লেখাটা চপল রসিকতা, নাকি সুভীর ভাবগাম্ভীর্যে পরিপূর্ণ।
৬। দর্শন বা মূল বক্তব্য বা বার্তা। এ লেখা থেকে লেখক কোন দর্শন, তত্ত্ব, বা বার্তা প্রচার করতে চাইছেন, তা চিহ্নিত করতে চেষ্টা করুন। আমার অভিজ্ঞতায় দেখেছি, পাঠক খুব কম সময়েই লেখকের মন ছুঁতে পারেন। আমি আমার অত্যন্ত সরল লেখাতেও দেখেছি, খুব কম সংখ্যক পাঠকই আমার মূল বক্তব্যকে ধরতে পেরেছেন। এটা যে-কোনো লেখকের লেখার ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য বলে মনে করি। রবীন্দ্রনাথের ‘সোনার তরী’র ব্যাখ্যা নিয়ে গল্প শুনেছি। অনেকেই অনেক ব্যাখ্যা দিয়েছিলেন, কিন্তু রবীন্দ্রনাথ যে-মূলভাব প্রকাশের উদ্দেশ্যে ‘সোনার তরী’ লিখেছিলেন, সেটা কেউ ধরতে পারেন নি। আমাদের ব্লগেও এরকম উদাহরণ প্রচুর পাওয়া যাবে। লেখক হয়ত একটা কবিতা লিখে ওটার একটা ব্যাখ্যাও সাথে দিয়ে দিচ্ছেন, কিন্তু আপনি দেখছেন কবিতার কন্টেন্টের সাথে লেখকের দেয়া ব্যাখ্যাটা মিলছে না, বা ততটা প্রাসঙ্গিক হচ্ছে না, যেমনটা আপনি ভাবছেন। এখানে, হয় আপনি কবিতার মূলভাব ঠিকঠাক বুঝে উঠতে পারছেন না, অথবা স্বয়ং লেখকই গড়মিল করে ফেলছেন (কারণ, এটাও সত্য যে, অনেকে নিজেই জানেন না যে তিনি কী লিখেছেন আর কী প্রকাশ করতে চেয়েছেন)। মূল কথা হলো, একটা লেখা পড়ে আপনি কী বুঝলেন, আপনার কাছে সেটাই হলো সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ। রবীন্দ্রনাথের কোনো লেখা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পাঠ্যভুক্ত করা হলে অনেক সময় রবীন্দ্রনাথের কাছ থেকে ওটার একটা মূল ভাব লিখিয়ে নেয়া হতো, যাতে ছাত্রছাত্রীরা একই প্লাটফর্মে থাকে। আমাদের শিক্ষাবোর্ড থেকে সাধারণত শিক্ষা নির্দেশিকা প্রকাশ করা হয় সবাইকে একই সমতলে আনার জন্য। কিন্তু, আপনি যখন মনের আনন্দে কোনো ব্লগপোস্ট বা বই পড়ছেন, যেখানে কোনো ‘পরীক্ষার’ বালাই নেই, সেখানে আপনি যা বুঝবেন, ধরে নিন, লেখক তাঁর ঐ লেখায় ওটাই বোঝাতে চেয়েছেন।
৭। প্রোমোশনাল পোস্ট। এটা কোনো প্রোমোশনাল পোস্ট কিনা; অর্থাৎ কাউকে হাইলাইট করার জন্য কিনা, তা উল্লেখ করতে পারেন। এটার ভালো বা মন্দ দিক সম্পর্কে আপনি নির্দ্বিধায় মতামত পেশ করতে পারেন। যেমন, (উপরে একবার বলেছি), খুব সাধারণ মানের একটা লেখাকে বা একজন ব্লগারকে এমনভাবে উপস্থাপন করা হলো পড়ে মনে হতে পারে তিনি সাহিত্যের এক নতুন দিকপাল; কাউকে উৎসাহিত করার উদ্দেশ্যে কোনো পোস্ট লেখা হলে তাঁর সঠিক কোয়ালিটি বা স্ট্যান্ডার্ডই প্রকাশ করা উচিত। এর ব্যত্যয় হলে পাঠক সহজেই তা বুঝে ফেলবেন, নিঃসন্দেহে। অন্যদিকে, একজন ভালো লেখককে নীচে নামানোর অভিপ্রায়ে অন্য একজন কম মেধাবী ব্লগারকে যদি অতিরঞ্জিত অভিধা ও বিশেষণে ভূষিত করি, সেটা অন্যায় হবে। এটা ‘তৈলমর্দন’-এর নামান্তর, যা ‘সিন্ডিকেটিং’ হিসাবেও বিবেচনা করা যেতে পারে। এরকম ‘অতিরঞ্জন’ সমৃদ্ধ পোস্ট লেখা যেমন অনুচিত, তেমনি এরকম পোস্টে অহেতুক বিতণ্ডার সূত্রপাত না করে মার্জিত ভাষায় লেখকের দৃষ্টি আকর্ষণ করে এরূপ লিখতে তাকে ‘নিরুৎসাহিত’ করা উচিত বলে আমি মনে করি।
আমার এ পোস্টটাও একটা প্রোমোশনাল পোস্ট। আমি এখানে কয়েকজন ব্লগারের নাম উচ্চারণ করেছি। তাঁরা সুপ্রিয় ব্লগার; শ্রদ্ধেয়। আমি তাঁদের লেখার সাথে পরিচিত। তাঁরা ভালো লেখেন। তাঁদের সম্পর্কে আমি যদি মিথ্যা গুণকীর্তন করে থাকি, আমার মুখের উপর তা বলে দিতে পারেন, আমি নিজেকে সংশোধন করবো।
৮। বাক্যগঠন, বানান, যতিচিহ্নের ব্যবহার, ইত্যাদি। আপাত অবহেলিত এ কাজগুলো প্রুফরিডারের হলেও শুদ্ধ বানান ও প্রমিত বানানরীতি সম্পর্কে সম্যক জ্ঞান থাকা যে-কোনো লেখকের জন্যই অপরিহার্য। অনেকে সঠিক জায়গায় যতিচিহ্ন বসাতে ভুলে যান (কারো পিসিতে সমস্যার কারণে তা হতে পারে, কেউ বা উদাসীন)। ফলে, আপনি যা বোঝাতে চান, পাঠক তা না বুঝে সম্পূর্ণ ভিন্ন কিছু বুঝলো। (এখানে প্রস্রাব করিবেন না করিলে গুনাহ হইবে )।
প্রশংসা পেলে উৎসাহ বাড়ে সন্দেহ নেই, কিন্তু ‘প্রশংসা’ গঠনমূলক না হলে লেখকের উন্নতি হওয়া প্রায় ‘অসম্ভব’। ‘অয়েলিং’ বা ‘তৈলমর্দন’ একজন লেখকের উন্নতির অন্তরায়। আবার, ভালো লেখাগুলোতে প্রতিহিংসামূলকভাবে নেতিবাচক কমেন্ট, গালিগালাজ করাও ঘোর অন্যায়; এ দ্বারা লেখার মান যেমন হ্রাস পায় না, তেমনি লেখকের ইমেজকে ক্ষুণ্ণ না করে বরঞ্চ কমেন্টদাতার ইমেজকেই বিনষ্ট করে ও সবার কাছে তাকে ‘ঘৃণিত’ হিসাবে তুলে ধরে।
ব্লগে অনেকে আছেন, যাঁরা খুব বিস্তৃত ও বিশ্লেষণধর্মী কমেন্ট করেন (খায়রুল আহসান, কাওসার চৌধুরী, পদাতিক চৌধুরী, আখেনাটেন, ঠাকুরমাহমুদ, শায়মা, সোহানী, প্রমুখ)। কিন্তু, ব্লগারদের একটা সাধারণ ধর্ম এই যে, কেউ নিজের পোস্টে কোনো নেগেটিভ কথা শুনতে চান না; সেটা মাথায় রেখেই খুব সতর্কভাবেই সবাই কমেন্ট করে থাকেন। এতে দেখা যায়, আমার লেখার শুধু ভালো দিকটা সম্পর্কেই জানতে পারছি, কিন্তু ভালো দিকের চাইতে খারাপ দিকটার পাল্লা যে আরো বেশি ভারী, ভদ্রতার খাতিরেই হোক, বা সঙ্কোচের কারণেই হোক- আমাকে সেটা আর কেউ খুলে বলছেন না। ফলে, আমি 'কী হনুরে' ভাব নিয়ে আকাশে উড়তে থাকি। ব্লগের আরেকটা লিমিটেশন হলো, একটা লেখার মান নির্ণয়ের সূচক সাধারণত এর কমেন্টসংখ্যা ও পাঠসংখ্যাকে ধরা হয়। ফলে আমার 'আমি কী হনুরে' ভাব কাটার কোনো অবকাশ জোটে না। তাই দেখবেন, দীর্ঘকাল ধরে কবিতা, ছড়া, গল্প লিখছেন, কিন্তু তাঁর রচনাশৈলী ও বিষয়বস্তুর কোনো উত্তরণ বা পরিবর্তন নেই, 'কোয়ালিটি ইম্প্রুভমেন্ট' চোখেই পড়ে না।
মনে রাখতে হবে, যিনি সমালোচনা করছেন, তিনি আপনার উপকার করছেন। ঐ উপকারের ভাগী হতে হলে আপনাকে সমালোচনা সহ্য করার শক্তি অর্জন করতে হবে। আপনাকে অপেক্ষা করতে হবে ঐ কমেন্টদাতার জন্য, যখন অজস্র 'ভালো' মন্তব্যের শেষে একজন এসে আপনার লেখার দুর্বল দিকটা ধরিয়ে দিয়ে যাবেন।
একটা লেখার চুলচেরা বিশ্লেষণ থেকেই নিজেকে চেনা যায়। সমালোচনাকে ঘৃণা নয়, স্বাগত জানান। সমালোচক আপনার ক্ষতি নয়, উপকার করছেন। নিজেকে বিশুদ্ধ ও উন্নত করে গড়ে তোলার শ্রেষ্ঠ চর্চাকেন্দ্র হলো এই ব্লগ। আপনার লেখার শক্তিশালী বা সাবলীল দিকগুলো কী কী, একই সাথে লেখার দুর্বলতাগুলো কী কী, কেউ একজন আপনাকে তা চিহ্নিত করে দিলে আপনি ঐ দুর্বল দিকগুলোর উন্নতি সাধনে সচেষ্ট হোন। আপনার লেখার মান উন্নত হলে, একদিন দেশজোড়া খ্যাতি অর্জন করলে আপনার নামের পাশে আমার নাম উচ্চারিত হবে না। তাহলে, এই যে এত সময় নষ্ট করে, এত শ্রম দিয়ে, নিজের টাকায় কেনা চাউলে নিজের বউয়ের রান্না করা ভাত খেয়ে ব্লগারের উপকার করে দিলাম, এতে আমার লাভ কী? লাভটা হলো, আমার মনের আনন্দ। (‘আমার’ বলতে ‘সোনাবীজ’ নয়, যে-কোনো পাঠককে বুঝতে হবে)।
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ বিকাল ৪:০৩