somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বহুতল ভবনের অগ্নি নিরাপত্তাঃ সর্বেসর্বা দুর্নীতির বিপরীতে নিরাপদ অগ্নিনিরাপত্তা ব্যবস্থাপনা!

০১ লা এপ্রিল, ২০১৯ বিকাল ৪:২০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

রাজউকের হিসেবে ২০১৬ সাল পর্যন্ত ঢাকায় সাততলা বা তার চেয়ে উঁচু ভবন আছে ১৬ হাজার ৯৩০টি। ফায়ার সার্ভিস বলছে সারাদেশে ২০০০ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত মাত্র ৫ হাজার ২৪টি ভবন ফায়ার সার্ভিস থেকে ছাড়পত্র নিয়েছে। অর্থাৎ ১১ হাজার ৯০৬টি ভবনের অগ্নিপ্রতিরোধের প্রক্রিয়া যথাযথভাবে পালন করা হয়নি। যেসব বহুতল ভবনে অগ্নি নিরাপত্তা ব্যবস্থা আছে বলা হয়,সেখানেও দেখা যায়, অগ্নিকান্ডে সেগুলোও কাজ করে না। বস্তাবতাও তাই বলছে (বসুন্ধরা সিটি অগ্নিকান্ড ২০০৯), আগুন লাগলে কোন ভবনেরই নিরাপত্তা ব্যবস্থা কাজ করছে না। কিন্তু কেন?

১। বাংলদেশের কমার্শিয়াল এবং ইন্ডাস্ট্রিয়াল কমপ্লেক্সে যেসব অগ্নি নিরাপত্তা ব্যবস্থাপনা নেয়া হয় তার প্রায় সবই পরোক্ষ (প্যাসিভ) এবং দুর্ঘটনা ঘটা সাপেক্ষে নেয়া হিউম্যান একশন কেন্দ্রিক অর্থাৎ রিয়েক্টিভ। অর্থাৎ এখানে স্মোক ডিটেক্সটর, ফায়ার ডিটেক্সটর, অগ্নির্বাপক সিলিন্ডার এবং অগ্নিনির্বাপক হোজ পাইপ ভিত্তিক। স্মোক ডিটেক্টর, ফায়ার ডিটেক্টর অগ্নি সতর্কতা তৈরি করে তথাপি প্রশিক্ষিত ব্যক্তিকে গিয়ে সঠিক সময়ে সঠিকভাবে অগ্নির্বাপক সিলিন্ডার এবং অগ্নিনির্বাপক হোজ পাইপ ব্যবহার করতে হয়। দেরি হয়ে গেলে অনেকসময় তা আর কাজেই আসে না। বিপরীতে লার্জ স্কেইল, প্রপার্টি ভ্যালূ সেন্সিটিভ ইন্ডাস্ট্রিয়াল ও কমার্শিয়াল ভবন ও কমপ্লেক্সে দরকার প্রত্যক্ষ ও স্বয়ংক্রিয় অগ্নিনিরোধক ব্যবস্থা যা নিজে থেকেই আগুণ সনাক্ত করে পরিমাণমত ওয়াটার এবং গ্যাস স্প্রে করে আগুন নিয়ন্ত্রণ করবে।

সাধারণ ভাবে বলা যায়, Fire Sprinkler System FSS এর দুটি ইউনিট থেকে কনট্রোল বা নিয়ন্ত্রণকারী ইউনিট এবং ডিস্ট্রিবিউশন ইউনিট। তবে এই কারিগরি সলূশ্যন ও বাস্তবায়ন ব্যবস্থা অনেক বেশি খুরুচে। বাংলদেশের স্বল্প খুরুচে শিল্প উৎপাদন মডেলে কিংবা নিন্ম ফেসিলিটির অফিস বা কমার্সিয়াল স্পেইসে ফায়ার স্প্রিঙ্কলার ব্যবস্থাকে খরুচে হিসেবে বাতিল করা হলেও এটাই সবচেয়ে নিরাপদ কারিগরি সমাধান। এছাড়াও একটিভ অগ্নি নিরোধক হিসেবে বাজারে পাওয়া যায় অগ্নি নির্বাপক বল “একটিভ ফায়ার এক্সটিঙ্গুইসার বল” যদিও তাদের কর্ম ক্ষমতার স্কোপ লার্জ নয় কিংবা সেগুলো খুব বেশি নির্ভরযোগ্য নয়।

২। ফ্লোর প্রতি একটি করে লোকদেখানো অগ্নির্বাপক সিলিন্ডার বসানো থাকে (ফ্লোর স্পেইস ও মাথাপিছু ক্যাপাসিটি অনুসারে তা একেবারেই অপর্যাপ্ত) , অনেক ক্ষেত্রেই সেগুলা মেয়াউত্তীর্ণ থাকে। এইগুলা বছরে দু'বার পরিদর্শন করে তার উপর দিনক্ষণ উল্লেখ সহ যাচাইকারী কর্তৃপক্ষের স্টীকার থাকার কথা। অগ্নির্বাপক সিলিন্ডারের সংখ্যা ফ্লোর স্পেইস ও জনমিতিক হিসেবে মাথপিছু হারে এবং বিল্ডিং কোডের নাজুকতার দিক থেকে বিপদজনক মাত্রার বিপরীতে মজুদ থাকার কথা। আমরা দেখছি, ঢাকার কোন ভবনেই এমন মাথাপিছু সংখ্যায় ও হালনাগাদ তথ্যের সিলিন্ডার দেখা যায় না।

৩। বেশ কিছু নতুন ও পুরানো বহুতল ভাবনে ওয়াটার হোজপাইপ বসানো থাকে। অবাক করা ব্যাপার হল এটা পুরাপুরি লোক দেখানো এবং ধোকার জন্য। এই হোজপাইপের সাথে কোন পাম্পের সংযোগ থাকে না। এই ধোঁকাবাজি বাংলাদেশের অগ্নি নিরাপত্তা ব্যবস্থাপনার সর্বত্র। ফায়ার সার্ভিসের লোকেরা এগুলা সবই জানেন। ঘুষ মারফত সব ঠিক ঠাক হয়। কথাপ্রসঙ্গে বলি, নতুন ভবনে সৌরবিদ্যুতের বাধ্যবাধকতা দেয়া হয়েছিল। সেখানেও চলে এমন ধোকাবাজি। প্যানেল ভাড়া করে এনে ইন্সপেকশন করিয়ে ইউটিলিটি ছাড়পত্র নেয়া হয় যাতে কোন কানেক্টিভিটি থাকে না। সবই হয় জানাশুনা আর ঘুষ লেন্দেনের পরিধির মধ্যেই। এ যেন, দুর্বিত্তপনার এক স্বর্গ!

৪। ইমার্জেন্সি এক্সিট কিংবা ফায়ার এক্সিট এরিয়া, লিফট এরিয়া এবং বৈদ্যুতিক লাইনের যায়াগা এই তিন এরিয়া ফায়ার সেপারেশন দেয়াল দিয়ে আলাদা থাকার কথা। সেপারেশন দেয়াল না থাক্লেও অন্তত এদের মাঝে স্থানগত দূরত্ব থাকার কথা। কিন্তু একই সিঁড়ি ঘরেই পাশাপাশি ইমার্জেন্সি ও সাধারণ সিঁড়ি, লিফট এবং বৈদ্যুতিক কেবলওয়ে তৈরি হয় বাংলদেশে। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই স্পেইস নষ্ট হবে বলে ইমার্জেন্সি সিঁড়ি থাকে না। অতি সংকীর্ণ সাধারণ সিঁড়ি থাকে তাও আবার বন্ধ থাকে। কিংবা লিফট ব্যবহারের পরিবেশ অবান্ধব চর্চার কারণে তা অব্যবহৃত থাকে। অন্য সমস্যা হচ্ছে ভবনের স্পেইস এবং লোক সংখ্যার অনুপাতে হলওয়ে, সিঁড়ির সামনের স্পেইস এবং সিঁড়ির স্পেইস নকশায় থাকে না। ফারুক রুপায়ন টাওয়ারে আগুনে সিঁড়ি এত উত্তপ্ত হয়ে গিয়েছিল যে, অতি উচ্চ তাকে জুতা আটকে যাচ্ছিল। আর সব ধোঁয়া সিঁড়ি দিয়েই উদ্গরীত হচ্ছিল। ফলে সিঁড়ি কেউ ব্যবহার করতে পারেননি। লিফট, সিঁড়ি আর বৈদ্যুতিক হলয়ের মধ্যে কোনই সেপারেশন ছিল না।

ঢাকার বহুতল ভবনের আরেকটি সমস্যা সেন্টাল্র এসি কিংবা ডিস্ট্রিবিউটেড এসি। কেন্দ্রীয় শীতাতপ নিয়ন্ত্রণের ভবন গুলোতে সিঁড়ির আশেপাশেই জেনারেটর রুম থাকে। এর কোন নিরাপত্তা জনিত বাস্তবায়ন নেই। এক একটি ভবনের জেনারেটরের গরম বাতাস হুড বা চিমনি ছাড়াই সরাসরি রাস্তায় ছাড়া হয়, রাস্তার বাতাস এত গরম হয়ে ঊঠে যে পথচারী চলাচলে বেশ অসুবিধা হয়। অর্থাৎ এখানেও থাকে না মানসম্মত এক্সস্টেড হট এয়ার এক্সিট। আর ডিস্ট্রিবিউটেড এসি'র ভবন গুলো আরো জঞ্জাল পুর্ণ। এসির জন্য নির্ধারিত স্পেইস নাই, যেখানে সেখানে যে ভাবে পারা যায় যে কোন সংখ্যায় এসি বসানো হয়।অত্যন্ত ভয়ঙ্কর দিক হচ্ছে ভবনের বৈদ্যুতিক ড্রাফটিং এ ব্যবহৃত কেবল, সার্কিট ব্রেকার ও অন্যান্য সারঞ্জামের বৈদ্যুতিক লোড সক্ষমতার সাথে এসি সহ অন্য সকল বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতির সংখ্যা সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। ফলে দু ভাবে আগুন লাগে-ক। অতি লোডে বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিটে। খ। এসি'র এক্সজস্ট থেকে। বুয়েটের গবেষণা বলছে, দেশের অন্তত ৭০ ভাগ অগ্নিকান্ড বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিট থেকে ঘটে।

৫। ভবনের বাইরে রাস্তার দিকে কোন ফায়ার এক্সিট বা সিঁড়ি বা অন্য ব্যবস্থা থাকে না। ভবনে কার্নিশ থাকে না। উচ্চ তাপমাত্রার দেশে কাঁচের দেয়াল বেষ্টিত বহুতল ভবন করা হয়, দেখতে সুন্দর লাগে কিন্তু এই ভবন গুলো টেকসই নয়, পরিবেশ বান্ধবও নয়। অন্যদিকে এগুলা একেবারেই নিরাপত্তা হীন। আগুনে কোথায় কাঁচ ভাংতে হবে কোন নির্দেশনা থাকে না, কাঁচ ভাঙ্গার টুল থাকে না। ফায়ার সার্ভিস এসে কোথায় সেইফ এক্সিটের জন্য ল্যাডার লাগাবে সেটাও কেউ জানে না। একেবারেই অপব্যবস্থা যাকে বলে।

৬। ভবনের উচ্চতা ফায়ার সার্ভিসের ওয়াটার স্প্রে সক্ষমতার সাথে সমন্বিত নয়। ফায়ার সার্ভিস সর্বোচ্চ ১০ তলায় পানি স্প্রে করতে পারে। অথচ ব্যাপারটা এরকম হওয়ার কথা, একটি শহরে ফায়ার সার্ভিসের কারিগরি সক্ষমতা যদি ১০ তলার উপরে পানি বা ক্যামিক্যাল কেন্দ্রিক অগ্নিনিরোধে অক্ষম হয়, তাহলে সেখানে ১০ তলার উপরে ভবন উঠাবে না। যদি উঠাতে হয় তা হলে আগে, অগ্নিনিরাপত্তার কারিগরি সক্ষমতা তৈরি করতে হবে। যদি ভবনের অগ্নি নির্বাপণের জন্য একটি নির্দিস্ট দূরত্বে (ধরুন ৩০০-৪০০ মিটার) ওয়াসার ওয়াটার হাইড্র্যান্ট কিংবা জলাধার না থাকে তাহলে ভবন নির্মাণের অনুমতি মিলবে না। অর্থাৎ লার্জ স্কেইল ফায়ার ডিফেন্সের পানি না থাকলে ভবন উঠবে না। এমনই হবার কথা, এভাবে নির্মাণ করলে একদিকে নগর নান্দনিক হয়, হয় নিরাপদও। উল্টো আমাদের নগরে চলছে জলাধার ও খাল দখল ও ভরাটের রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক মাফিয়াগিরি। হতাশার ব্যাপার যে, উপর থেকে লাফ দিবার জন্য একটা বাতাস ভর্তি জাম্পিং প্যাডও থাকে না ফায়ার ডিফেন্স ও ভবন মালিকের।

চকবাজার আগুণের পরে এক সাক্ষাৎকারে জাতীয় অগ্নিসনদ প্রণয়নকারী বিশেষজ্ঞ (বুয়েট অধ্যাপক) জানিয়েছেন, কোন কারণে ফায়ার কোড সংশ্লিষ্ট কমিটিতে উনি এখন আর নাই। জাতীয় বিল্ডীং কোডেরও এই অবস্থা, আপনি ন্যায্য নীতিমালার বাস্তবায়ন চাইলেই পদে থাকবেন না। অর্থাৎ আইন ও নিয়ম ফাইলবন্ধী। নয়তলার ওপর ভবন করতে গেলে রাজউকসহ কমপক্ষে দশটি সরকারি সংস্থার ছাড়পত্র লাগে- এই ছাড়পত্রের মধ্যে ফায়ার সার্ভিসের ছাড়পত্রও আছে। রাজউকের দায়বদ্ধতা নেই, বরং রাজউক ঘুষ ও দুর্নীতির খনি। কোন নকশার ফাইল আটকালেই, বা যে কোন নোটিশের বিপরীতেই শুরু হয় ঘুষ, না হয় আসে উপরতলার ফোন।

দেশে স্থপতি ও প্রকৌশলীদের প্রতিষ্ঠান আছে। আছে ভবন নির্মাতাদের প্রতিষ্ঠান রিহাব। আছে রাজউক, গণপূর্ত মন্ত্রণালয়, স্থাপত্য বিভাগ ও সিটি কর্পোরেশনের প্রকৌশল শাখা। কিন্তু এদের কাজ দেখলে মনে নয়, পরিবেশ বান্ধব বা জলবায়ু নিরাপত্তা বা এমনকি নাগরিক নিরাপত্তার কোন বোধ এদের মাঝে প্রতিষ্ঠান গত ভাবে গড়ে উঠেনি। খেয়াল করবেন ঢাকায় রাস্তা, গণপরিবহন এমনকি বহুতল ভবন কোথাও প্রতিবন্ধীদের জন্য কোন সুবিধা নেই। নেই রোগী ও পথচারী কিংবা বয়োবৃদ্ধদের জন্যও, পাখপখলি কিংবা প্রাণ ও প্রকৃতি বোধ তো দুরের কথা। ঢাকার ফুটপাথ দেখলে মনে হয় এই নির্বোধরা শুধু টাকার বিনিময়ে নিজের, সরকারি চোরের আর বেসরকারি মালিকের লোভাতুর পারপাজই শুধু সার্ভ করে।

মোটকথা ঢাকা শহরের অধিকাংশ হাইরাইজ বিল্ডিং নিয়ম মেনে নির্মাণ করা হয়না। অথচ কারো কোন শাস্তি নেই কারণ আছে ঘুষের দফারফা। নিয়মবহির্ভূত ভবন নির্মাণ করলে ইউটিলিটিজ অর্থাৎ পানি, বিদ্যুৎ,পয়ঃনিষ্কাশনের সংযোগ পাওয়ার কথা নয়, আবার নিয়ম মেনে ভবন নির্মাণ করা হয়েছে কি না তা ইনস্পেকশন/তদন্ত করেই ইউটিলিটিজ সংযোগগুলো দেওয়ার কথা। এমনকি ভাড়াটিয়া পরিবর্তন হলেও নতুন ইন্সপেকশন হবার কথা। কিছুই হয় না, যেটা হয় সেটা হচ্ছে ঘুষ, উপরতলার ফোন আর তদবিরে দফারফা।

৭। ২০০৯ এ বসুন্ধরায় আগুন লেগেছে ৯ তলায়, ফায়ার সার্ভিসের পানি উঠেনি, ১০ বছর পরে ফারুক-রুপায়ন টাওয়ারে আগুন লেগেছে সেখানেও ১০ তলার উপরে পানি উঠেনি। বরং দেখা গেছে ফাটা পাইপের লীক সারাতে বিবেকের ডাকে সাড়া দিয়ে এক ছোট্ট ছেলে পলিথিন মুড়িয়ে ধরে আছে। অন্যদিকে হেলিকপ্টারে লেকের পানি আনার উদ্যোগ বাবমি বাকেটের তলা ফুটার কারণে ভেস্তে গেছে। অর্থাৎ সক্ষমতা তো বড়েইনি বরং হাতে থাকা যন্ত্রপাতি কিংবা টুলগুলো কাজ করে কিনা তার তদারকিও ঠিক ঠাক নেই।

ফায়ার ডিফেন্স কাজের প্রকৃতির দিক থেকে খুব মানবিক কাজ হলেও কাজের প্রতিকূলতার দিক থেকে খুব বেশি শ্রমঘন, বিপদ্দজনক। তাই ফায়ার সার্ভিসের কর্মীদের আমরা প্রতিবারই স্যালুট জানাই। কিন্তু তাঁদের উপরস্তরের ব্যবস্থাপকেরা পদ পেলেই তেল্বাজিতে নেমে ব্যক্তি স্বার্থে নেমে পড়ে ফলে ফায়ার ডিফেন্সের কারিগরি সক্ষমতা আসে না। আর নূন্যতম নিরাপত্তা বোধ হীন ও কারিগারি জ্ঞানে অজ্ঞ লোকেরা রাজনীতি করে বলে (তাঁদের কোন মানসম্মত ট্রেনিং নেই) ফায়ার সার্ভিস সবসময়ই অবহেলিত। যাকিছু বাজেট তার সিংহভাগ খরচ হয় বেতন, ভ্রমণ, ভবন নির্মাণ, কর্তাদের ব্যক্তিগত টান্সপোর্ট সহ অকারিগরি খাতে। উচ্চ কারিগরি সক্ষমতা কিংবা কর্মী ট্রেনিং এ ব্যয় সীমিত। আঞ্চলিক দেশগুলোর দুর্ঘটনায় যেখানে আন্তর্জাতিক সংস্থা গুলো অগ্নিনির্বাপণ ও উদ্ধারে অংশ নেয়, সেখানে শরিক হয়ে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীদের কারিগরি সক্ষমতা তৈরিরও কোন বোধ নেই রাজনৈতিক ব্যবস্থাপকদের। বিদেশ ভ্রমণ ও ট্রেনিং লুটে নেয় অকারিগরি ব্যবস্থাপকেরা।

ফলে নগর পরিকল্পনায় ফায়ার ডিফেন্সের নির্দেশনার সঠিক বোধ জন্মেনি, অন্যদিকে এই নির্দেশনা গুলোকে অসচেতন ও লোভী নাগরিকেরাও বাধ্যবাধকও মনে করে না। যা করে সবই না পারতে। নিরাপত্তার নূন্যতম বোধ তাড়িত হয়ে হয় না নির্মাণ। বলতে গেলে কোন বাসা বাড়িতেই নেয় ফায়ার ডিটেক্টর কিংবা কার্বণ মনোক্সাইড ডিটেক্টর। স্মোক বা ফায়ার ডিটেক্টর ও কার্বণ মনোক্সাইড ডিটেক্টর দেশে উৎপাদন করে সর্বত্র এর ব্যাবহার বাধ্যতামূলক করারও কোন বোধ নেই। এ এক অদ্ভুত নাগরিক সমাজ, প্রশাসন ও সরকার ব্যবস্থা।


৮। সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ দুটি ব্যাপার হচ্ছে- অগ্নি নিরাপত্তার সমন্বিত পরিদর্শন এবং অগ্নি নিরাপত্তা অনুশীলন (ফায়ার ড্রীল)।

অগ্নি নিরাপত্তার সমন্বিত পরিদর্শন
প্রতিটা ভবনের ফায়ার এলার্ম সিস্টেম এবং ফায়ার ডিফেন্স প্রসেস ও টুলস কাজ করে কিনা তা বছরে দুবার পরিদর্শনে পড়ার কথা। বছরে দুবার ফায়ার ড্রিল হবার কথা। একটি ফায়ার পরিদর্শনে থাকবে রাজউক, ফায়ার ডিফেন্স, ওয়াসা, বিদ্যুৎ গ্যাস, মালিক ও ভাড়াটিয়া এমনকি ইনস্যুরেন্স কোম্পানির প্রতিনিধি। এগুলো ডকুমেন্টেড হবে এবং ফলাফল অনলাইনে দেখা যাবে। এখানে ভবনের সমস্ত কারগিরি ও নিরাপত্তা ত্রুটি বেরিয়ে আসবে। এর বিস্তারিত অনলাইনে পাওয়া যাবে যাতে একজন ব্যক্তি ভাড়াটিয়া, সাধারণ ব্যবসায়ী বা কর্পোরেইট অফিসের ভাড়াটিয়া জেনে বুঝে ভাড়া নিতে পারেন। একজন চাকুরিজীবি তার কর্মস্থলের নিরাপত্তা নিয়ে সচেতন থাকতে পারেন।

আর অগ্নি নিরাপত্তা অনুশীলন (ফায়ার ড্রীল) উপরোক্ত বিষয়াদির মধ্যে সবচাইতে গুরুত্বপুর্ন মনে করি। জনাকীর্ণ শহরে, যানজটের রাস্তায়, সর্বেসর্বা দুর্নীতির রাজনৈতিক প্রশাসনিক বহুমাত্রিক যোগসাজশে ফায়ার সার্ভিসের উচ্চ কারগরি সক্ষমতার কাঙ্ক্ষিত সেবা সঠিক সময়ে পৌঁছাবেনা জানার পরেও বছরে ২ বার ফায়ার ড্রীল না করা ভয়ঙ্কর পর্যায়ের উদাসীনতা ও চরম দায়িত্বহীনতা। ফায়ার ড্রিলের উদ্দেশ্য থাকে যে কোন অগ্নি দূর্বিপাকে ঠিক কত সময়ের মধ্যে একটি ভবনকে (সাধারণত ১০ থেকে সর্বোচ্চ ২০ মিনিট) জনশূন্য করা যাবে। এর জন্য আগে সুনির্দিস্ট নিরাপত্তা নির্দেশনা এবং ট্রেনিং দেয়া হয়। পরে দৈবভাবে কৃত্তিক এলার্ম তৈরি করা হয়। ১৫ মিনিটের মধ্যে জনশূন্য না করা গেলে কারিগরি অসক্ষমতা, নিরাপত্তা ত্রুটির এবং ভীড় ও বহিরাগমন ব্যবস্থাপনার খত গুলো শুধারনো হয়। এভাবে ভবন ব্যবহারকারীরা এমার্জেন্সি এক্সিট নিয়ে সচেতন হতে পারেন এবং জরুরি সময়ে বিচার বুদ্ধি খাটাতে সক্ষম হন।

এক একটি বহুতল ভবন নির্মাণ বাংলাদেশে বহু সরকারি ও বেসরকারি সংস্থার বৈধ ও অবৈধ উপার্যনের পথ খুলে দেয়। এরমধ্যে বাঁকা পথ গুলো বন্ধ হয়ে ভবনের নিরাপত্তা ব্যবস্থাপনা সেন্সিবল ও নিরাপদ হোক। বাংলাদেশ এগিয়ে যাক!
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা এপ্রিল, ২০১৯ রাত ৮:৩৮
১৭টি মন্তব্য ১৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমার প্রফেশনাল জীবনের ত্যাক্ত কথন :(

লিখেছেন সোহানী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সকাল ৯:৫৪



আমার প্রফেশনাল জীবন বরাবরেই ভয়াবহ চ্যালেন্জর ছিল। প্রায় প্রতিটা চাকরীতে আমি রীতিমত যুদ্ধ করে গেছি। আমার সেই প্রফেশনাল জীবন নিয়ে বেশ কিছু লিখাও লিখেছিলাম। অনেকদিন পর আবারো এমন কিছু নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×