তৃতীয় বিশ্ব, বানায় না অস্ত্র,
তবুও সসস্ত্র,
ওরা আজন্ম যুদ্ধ করতে চায়,
বৃহৎ শক্তি,
অস্ত্র বেচে যুদ্ধ থামাতে যায়!
আনন্দবাজার পত্রিকার একটা রিপোর্ট পড়ে আজ বহুদিন পরে এই অজনপ্রিয় গানের লাইনগুলো মনে পড়লো।
এক-
আনন্দবাজার লিখেছে 'পূর্ব লাদাখে ভারতের জমি ছেড়ে যাওয়ার কোনও লক্ষণ দেখায়নি চিনা সেনা। উল্টে দখল করা ভূখণ্ডে আজ নিজেদের শক্তি আরও বাড়িয়েছে পিপল্স লিবারেশন আর্মি। ...এই অবস্থায় পাল্টা পেশিশক্তি দেখাতে আজ ১২টি সুখোই ও ২১টি মিগ-২৯ যুদ্ধবিমান চেয়ে প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের কাছে প্রস্তাব জমা দিয়েছে ভারতীয় বায়ুসেনা। যা কিনতে খরচ হবে পাঁচ হাজার কোটি টাকা।...আগামী মাস থেকে অত্যাধুনিক রাফাল বিমানও আসতে শুরু করবে বলে জানিয়েছে বায়ুসেনা।'
সৌদি আরবকে পেছনে ফেলে মোদির ভারত পৃথিবীর সর্বোচ্চ অস্ত্র আমদানী কারক দেশ হয়ে উঠেছে। মোদির ভারত সম্ভবত পৃথিবীর একমাত্র দেশ যারা চায়না ছাড়া পুর্ব-পশ্চিমের সব ব্লক থেকেই অস্ত্র কিনে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, ফ্রান্স, ইজরায়েল, ব্রিটেন, জার্মানি সহ সবার কাছ থেকে অস্ত্র কিনে এই দেশ গুলার সাথে সম্পর্ক উষ্ণ রাখে। যদিও তার জন্য উন্নত ভারতীয় মেধা ও মানব সম্পদ ভিত্তিক সম্পর্কের কৌশলই যথেষ্ট ছিল। অস্ত্র কিনার মূল উদ্দেশ্য পাকিস্তানকে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে একঘরে করে দক্ষিন এশিয়ায় অর্থনৈতিক ও ভূরাজনৈতিক মস্তানি করা।
বিশ্বব্যাংক ‘পভার্টি অ্যান্ড শেয়ার প্রসপারিটি বা দারিদ্র্য ও সমৃদ্ধির অংশীদার-২০১৮’ শীর্ষক প্রতিবেদনে সবচেয়ে বেশি হতদরিদ্র মানুষ আছে, এমন ১০টি দেশের যে তালিকা তৈরি করেছে, তাতে শীর্ষে অবস্থান করছে ভারত। সবচেয়ে বেশি ১৭ কোটি ৫৭ লাখ হতদরিদ্র আছে। তালিকায় থাকা শীর্ষ ১০–এর অন্য দেশ গুলো হলো নাইজেরিয়া, কঙ্গো, ইথিওপিয়া, তানজানিয়া, মাদাগাস্কার, কেনিয়া, মোজাম্বিক, বাংলাদেশ ও ইন্দোনেশিয়া। ভারতের দারিদ্র্য ও ধনবৈষম্য এমন যে, এখানে মাত্র ৭০ জন শীর্ষ ধনীর সম্পদ দেশের ৭০ শতাংশ গরিবের মোট সম্পদের সমান বা বেশি। এমতাবস্থায়, সাড়ে ১৭ কোটি অতি দরিদ্র্য সহ প্রায় ৫০ কোটি দারিদ্র জনগোষ্ঠীর টেকসই আর্থিক উন্নতির দিকে মনোযোগ না দিয়ে দেশটি কাশ্মীর ও দিল্লিতে মুসলিম নিধন, কাশ্মীর লকডাউন, বাংলাদেশী তাড়ানো, নেপালে জ্বালানি ব্লক, পাকিস্তানে বিমান হামলা, অভ্যন্তরে নাগরিকত্ব বিলের উগ্র হিন্দুত্ববাদী পদক্ষেপ সহ আঞ্চলিক সমস্যাতে নিজেদের জড়িয়ে অস্ত্র কেনায় শীর্ষ স্থান দখল করেছে। এককালের বিকাশমান ভারতের এমন উল্টা যাত্রা দক্ষিণ এশিয়ায় বহু ঝুঁকি তৈরি হয়েছে।
নির্বাচনের আগে আগে পুলোওমা হামলার অযুহাতে (ঘটাতে উৎসাহ দেয়া স্টিং অপারেশান) পাকিস্তানের সাথে গায়ে পড়া যুদ্ধের মাধ্যমে "আচ্ছে দিন আনতে শোচনীয়ভাবে ব্যর্থ" মোদি উগ্র হিন্দুত্ববাদী আবেগের বন্যায় নির্বাচনী বৈতরণী পার পেয়েছে।
চায়না গ্লোবাল টাইমসের প্রতিবেদনে চাইনিজ এক্সপার্টদের দেয়া মতামতের প্রতিফলন হচ্ছে- "কোরোনা ব্যবস্থাপনায় শোচনীয় ব্যর্থ মোদির, বেকারত্ব, খাদ্য সংকট, মৃত্যু মিছিল তৈরি হবার প্রেক্ষিতে মোদি সীমান্ত অস্থিরতার পুরানো কৌশলে জাতীয়তাবাদী আবেগ উস্কে দিয়ে নাগরিকের মনোভাব ঘুরাতে গিয়ে ধরা খেয়েছে। এমতাবস্থায়, চীনের কৌশল হচ্ছে ভারতীয় ভূমি দখল ও পাল্টা কৌশলগত হামলা করে এমন শিক্ষা দেয়া যাতে ভারত ভবিষ্যৎ এ চীন ও নেপালের সাথে সীমান্ত বিরোধে না যায়।''
সব মিলে ঘরে ও ঘরের বাইরে ভারত বিপদে পড়েছে। প্রতিবেশীদের উপর প্রভুত্ব তৈরির চর্চিত সংস্কৃতি ভারতকে এশিয়ায় একা করে ফেলেছে। প্রায় চল্লিশ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ বেকারত্ব, গাড়ি, স্টীল সহ অভ্যন্তরীণ পণ্য বাজারের ক্রমাগত সংকোচন, অর্থনীতির টালমাটাল অবস্থা এবং একই সাথে দক্ষিণ এশিয়ার ভূ রাজনীতির কৌশলগত অবস্থা গুলোতে ভারত এখন ব্যাকফুটে। এখানে আরেকটি গুরুত্বপূর্ন বিষয় হচ্ছে, পাকিস্তান সম্ভবত প্রথমবারের মত নিজেদের এখনও পর্যন্ত ভারত-নেপাল-চীনের ত্রিমুখী সংকট থেকে দূরে রাখতে পেরেছে। পুলোওমা হামলার পরে ইমরান খান যে প্রখর কূটনীতির পরিচয় দিয়েছেন তা অব্যহত আছে। মাথা মোটা পাক আর্মি এই স্টাটাস্কো বজায় রাখতে পারলে ভালো, নতুবা মোদির পক্ষে (মোদির গেড়ুয়া ব্লক বলছি, ভারত বলছি না, ভারতীয় সমাজের সবাই যুদ্ধবাজ নয়) ব্লেইম গেইম তৈরির ক্ষেত্র বাড়বে।
দুই-
নতুন স্ট্যাটাস্কোতে বাংলাদেশের কৌশলগত ভূমিকা কি হবে?
ভারতের সহযোগীতায় ২০১৪ নির্বাচনে চুরি করে জিতার বদৌলতে বাংলাদেশ সরকার স্বেচ্চায় কিংবা আধিপত্যবাদী ভারতের চাপে পড়ে বহু কিছু হারিয়েছে-
১। নতজানু সরকার ভারত থেকে পানি হিস্যা আদায় করতে পারেনি। যৌথ নদী কমিশনের একাধিক বৈঠকে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে কোন দাবী ও এজেন্ডা না থাকায় এই বৈঠক আর বসছে না বহু বছর। এদিকে শুষ্ক মৌসুমে উত্তরাঞ্চলের মরুকায়ন তীব্রতর হয়েছে, তিস্তার পানি পুরোপুরি প্রত্যাহার করেছে। যমুনায় ইতিহাসের সর্ব নিন্ম পানি প্রবাহিত হয়েছে শুষ্ক মৌসুমে। বিগত বছরে ধীরে ধীরে গঙ্গা ব্যারেজের গেইট খোলার পরিবর্তে একযোগে ১১৯টি স্লুইস গেইট খুলে বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলে হঠাত বন্যা তৈরি করে ভয়াবহ অর্থনৈতিক ও অবকাঠামোগত ক্ষতি করেছে ভারত। যদি বন্ধুত্বপূর্ন সম্পর্কই থেকে থাকে ভারত কেন সম্ভাব্য বৃষ্টিপাতের পরিমাপ সাপেক্ষে গঙ্গা ব্যারেজের গেইট খোলে না। মেটেরিও স্যাটেলাইট দেখে বর্তমান সময়ে এই কাজটি এত সহজ হলেও কেন বার বার শুকনা মৌসুম না পেরুতেই বাংলাদেশের উত্তরবঙ্গ তলিয়ে যায়?
২। ভারতীয় চাপে বাংলাদেশের গভীর সমুদ্রবন্দর প্রকল্প বন্ধ হয়েছে। ভারত বিগত ১২ বছরে ধরে গঙ্গা ব্যারেজ প্রকল্প বন্ধ রেখেছে, এতে করে ২০২৬ এ আসন্ন গঙ্গা পানি চুক্তির নেগোসিয়েশান কৌশলে পিছিয়ে পড়েছে বাংলাদেশ।
৩। ভারত তেল উৎপাদনকারী না হয়েও বাংলাদেশে ডিজেল বিক্রি করছে আন্তর্জাতিক বাজারের চেয়ে উচ্চ দামে। অভিযোগ উঠেছে এই ডিজেল সঠিক মানে পরিশোধিত নয়, এতে উচ্চ পরিমাণ সালফার সহ পরিবেশ ধ্বংসকারী উপাদান আছে। তেল উৎপাদনকারী না হয়েও, পৃথিবীর এভারেজ থেকে নিচের মানের কয়লার মুজদদারী ভারত থেকে ঠিক কোন যুক্তিতে বাংলাদেশকে ভারত থেকে তেল ও কয়লা কিনতে হবে? যেখানে আমেরিকার ফ্রেকিং এবং রাশিয়ার ব্যাপক প্রডাকশনের পরে তেলের বাজারে সারপ্লাস বিরাজ করছে?
৪। চাহিদা না থাকা ভারতীয় কয়লা বিদ্যুৎ ক্রস বর্ডার বিদ্যুতের নামে বিক্রি করছে। বাংলাদেশ তার বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতার অর্ধেকেরও কিছু বেশি বসিয়ে রাখলেও বর্তমানে ভারত থেকে দুটি হাব দিয়ে দিনে ৭৫০ মেগাওয়াটের মত বিদ্যুৎ কিনে লোকসান দিয়ে যাচ্ছে।
৫। ভারত নিজের অব্যবহৃত নিন্ম মান কয়লা দিয়ে বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চল এবং সুন্দরবন নষ্টের জন্য রাপমাল সহ একাধিক কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্প হাতে নিয়েছে। বাংলাদেশে ব্যাপক নাগরিক অসন্তুষ্টিকে আমলে নেয়নি তারা। যৌথ বলা হলেও মাত্র ১৫% মালিকানা দিয়ে উল্টো রামপাল সহ কয়লা প্রকল্প গুলোতে বাংলাদেশকে ভারতীয় ঋণ নিতে হয়েছে।
৬। কভিড-১৯ এর আগেই বাংলাদেশের যেখানে নূন্যতম ৪ কোটি ৮২ লক্ষ লোক বেকার সেখানে বাংলাদেশের ভারতীয়দের ব্যবসা ও কর্মসংস্থানের বিশাল বাজার তৈরি হয়েছে। করোনা কালে ভারত তার শ্রমিকদের ফিরিয়ে নিতেও গড়িমসি করেছে।
৭। টোল না দিয়ে, রাস্তা নির্মাণ খরচ না দিয়ে, রাস্তা রক্ষণাবেক্ষণ খরচ না দিয়ে ভারত প্রায় ফ্রি স্থল ট্রানজিট সুবিধা ভোগ করছে। উল্টো রাস্তা নির্মানে ভারত উচ্চ সুদে বাংলাদেশকে ঋণ নিতে বাধ্য করেছে।
৮। ড্রেজিং খরচ না জুগিয়ে ভারত প্রায় ফ্রি নৌ ট্রানজিট সুবিধা ভোগ করছে।
৯। নিজস্ব দুটি সাবমেরিন ল্যান্ডীং স্টেশান থাকার পরেও, সরকারি খাতে অন্যায্য দাম, খুরুচে ট্রান্সমিশান পথ আর কুয়াকাটায় কারিগরি সমস্যা জিইয়ে রাখায়, বেসরকারি কোম্পানি সামিট ও ফাইবার এট হোম এর ক্রস বর্ডার ইন্টারনেট ব্যবসা চালু আছে।
১০। চট্রগ্রাম সমূদ্র বন্দর ক্যাপাসিটি স্বল্পতায় ভুগলেও ভারতীয় কোম্পানি অগ্রাধিকার ভিত্তিতে চট্রগ্রাম সমূদ্র ব্যবহার করার চুক্তি করে নিয়েছে।
১১। বাংলাদেশের কমার্শিয়াল মেরিটাইম জোনে ভারতীয় রাড়ার বসার চুক্তি হয়েছে। ভারত নিজে সমরাস্র ক্রয়ের শীর্ষ দেশ হলেও বাংলাদেশকে ভারত থেকে নিন্ম মান সমরাস্র কিনতে হচ্ছে। সেখানেও বাংলদেশকে ভারতীয় ঋণ ধরিয়ে দিয়েছে। ভারতীয় নৌ সেনা ও নৌ সেনা আশ্রিত দস্যুরা বাংলাদেশের পাথরঘাটা ও সুন্দরবনের উপকূলীয় জেলেদের অপহরণ করে মুক্তিপণ দাবি করে, মাছ ডাকাতি করে এবং ট্রলার ডুবিয়ে দেয় বলে বহু অভিযোগ আছে।
১২। বাংলাদেশের একমাত্র পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রে পরামর্শক হিসেবে ঢুকে গেছে ভারত সম্পূর্ণ অযাচিত ভাবে, যেখেন নির্মাণকারী দেশ প্রযুক্তির মূল স্বত্বাধিকারী রাশিয়া নিজেই।
১৩। বাংলাদেশের সংসদে উপস্থাপিত সরকারি তথ্য মতেই ভারত বিগত এক দশকে সীমান্তে ২৯৪ জন বাংলাদেশীকে হত্যা করেছে। (সীমান্ত অপরাধ প্রায় সাড়ে চার হাজারের বেশি)।
১৪। ভারতে বাংলাদেশের পণ্য বিক্রিতে পরোক্ষ শুল্কারোপ অব্যহত আছে। পাটের উপর এন্টি ডাম্পিং নীতিমালা বসিয়ে বাংলাদেশের পাট ও পাটজাত শিল্পকে ধ্বসিয়ে দিয়েছে।
১৫। বাংলাদেশ ভারতের শীর্ষ রেমিটেন্স সংগ্রহকারী দেশের অন্যতম হলেও ভারতে বাংলাদেশীদের ওয়ার্ক ভিসা এখনও প্রকৃতভাবে উন্মুক্ত হয়নি।
বাংলাদেশের প্রতিটি বোধ, বিবেক সম্পন্ন মানুষের এই বুঝাপড়া গুলো করে নিতে হবে। আমরা কেন সাময়িক দলীয় রাজনৈতিক স্বার্থ্যের জন্য আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের সম্পদ, অবকাঠামো এবং অর্থনৈতিক সম্ভাবনা ভারতের কাছে বর্গা দিয়ে রেখেছি। কে এই বর্গা ছুটাবে, কিভাবে?
এরকম আছে আরো বহু অর্থনৈইতিক ও কৌশলগত বিষয়, যার মাধ্যমে বাংলাদেশের সম্পদ, অর্থনীতি, অবকাঠামো ও সামরিক সকল কৌশলগত নিরাপত্তার ক্ষেত্রে ভারত ধুকে গেছে। এই থেকে বেরুবার পথ বড় কঠিন। পাশাপাশি বাংলাদেশ দ্বিপাক্ষিক নেগোসিয়েশানের কৌশলগত সুবিধা গুলো হাতছাড়া করে দিয়েছে। বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী ভারতীয় বিচ্ছিন্নতাবাদীদের দমনে অভুতপূর্ব ভূমিকা পালন করেছে বাংলাদেশ যার কোনই প্রতিদান আসেনি। অনুপ চেটিয়া, পরেশ বড়ুয়াদের হস্তান্তর করে দিয়েছে, দশ ট্রাক অস্র মামলার নিষ্পত্তি করে ফেলেছে। তিস্তার পানি না পেয়েও ফেনী নদীর পানি দিয়ে দিয়েছে। ফলে ভারতের সাথে কৌশলগত নেগোসিয়েশানের ইন্সট্রুমেন্ট নাই বললেই চলে বাংলাদেশের হাতে। বাংলাদেশ নেপাল বাণিজ্য করিডোরের আলাপ তো ছাই! আমরা ভুলে যাব না যে, ভারত রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে বাংলাদেশের পাশে ছিল না।
ভারতীয় স্বার্থান্ধ্য ও আধিপত্যবাদী প্রভুত্ব কেন্দ্রিক আচরনে শেখ হাসিনা ইন্ডিয়া থেকে কিছুটা দুরুত্ব বজায় রেখেছেন সত্য, পুরাপুরি সরে আসেননি, কার্যত ভারত থেকে পানি হিস্যা সহ অন্য কোন দাবি আদায়ে শক্ত অবস্থানে যাননি। তবে যেহেতু উনি ইন্ডীয়ান বলয়ের বড় নেতাদের মন্ত্রীসভার বাইরে রেখে চাইনিজ বলয়ের জুনিয়রদের মন্ত্রী করেছেন তাই ইন্ডীয়ার জন্য এই মুহুর্তে বাংলাদেশে ফাংশন করাটা কিছুটা টাফ। অন্য আলোচনাটা হচ্ছে বাংলাদেশের আমলাতন্ত্রে ভারতীয় প্রভাব খুবই বেশি, তাই চায়নার জন্য ইকনোমিক ইন্টারফারেন্স এর বাইরে স্রেফ পলিটিক্যাল ইন্টারফারেন্স তৈরিও টাফ- অনেক কিছু ভারতের কাছে লীক হয়ে যায়। চায়না এন্ড মিজ হাসিনা প্লেইড স্মার্ট উইথ ইন্ডীয়া, এটা সত্য। তবে দুই নৌকায় পা রাখার বিপদ সম্পর্কে শেখ হাসিনা নিশ্চয়ই অবগত আছেন!
এদিকে চীন আন্তর্জাতিক বাণিজ্য যুদ্ধের, ভারত-চীন, ভারত-নেপাল বহুমুখী অস্থিরতার একটা মোক্ষম সময়ে বাংলাদেশকে ৫ হাজার ১৪১ টি পণ্যে শুল্ক মুক্ত ছাড় দিয়ে বসেছে। এটা গভীর তাতপর্যময় এবং ইঙ্গিত বাহী ঘটনা। চায়নায় বাংলাদেশী পণ্যের বাজার বাড়ছে। সেখানে তৈরি পোশাক, চামড়া, পাট, পেট ফ্লেক্স, থেকে শুরু করে হিমায়িত চিংড়ি, কাকড়া ইত্যাদির বাজারও তৈরি হয়েছে।আদতে চায়নার কষ্ট অফ লেবার বাড়ায় চায়নিজ ব্যবসায়ীরা ভিয়েতনাম, মিয়ানমার,বাংলাদেশ,পাকিস্তানে আসার চেষ্টা করছে। বাংলাদেশের রপ্তানি বহুমুখী করণ খুবই দরকার। এই স্ট্যাটাস্কো কাজে লাগিয়ে সর্বোচ্চ অর্থনৈতিক সুবিধা বিবদমান পক্ষ গুলোর কাছ থেকে আদায় করে নিতে হবে এটাই মূল কথা, তবে তা চীন থেকে শুধু নয়, ভারত থেকেও। কূটনীতির প্রখর উচ্চতায় এসে হীনমান্য গোয়েন্দা বাহিনীগুলোর উর্বর ভূমি 'বাংলাদেশ সচিবালায়' নিয়ে শেখ হাসিনা সে উচ্চতায় পৌঁছাতে পারবেন কি?
ভারতের সাথে হার্ড নেগোসিয়েয়াশানের আগে, অপচুক্তি থেকে বেরুনার আগে, ভারতকে দেয়া অন্যায় সুবিধা গুলো বন্ধের দফারফা না করে ভারতীয় বল্য থেকে বাংলাদেশের গায়ে পড়ে চাইনিজ ব্লকে একচেটিয়া ভাবে ঢুকা ঠিক হবে না, সেক্ষেত্রে দীর্ঘ্য শত্রুতার জন্ম হতে পারে। প্রতিবেশীর সাথে যে কোন ধরণের তিক্ততা ভালো না। বাংলাদেশের উচিৎ নিরপেক্ষ থেকে নেগসিয়েশন পাওয়ার তৈরির কৌশল নেয়া। শুল্কমুক্ত বাণিজ্য তো বটেই চায়নাকে সমর্থনের সর্বোচ্চ অবস্থান হচ্ছে রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধান। চীন তার শাবক মিয়ানমারকে চাপ দিয়ে রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে না নিলে স্থায়ীভাবে চায়নাকে একক সমর্থন করা যায় না। হ্যাঁ কৌশলগত কারণে পরোক্ষ সমর্থন থাকতে পারে।
সবকিছুর পরেও পশ্চিমা ও ভারতীয় চাপে ভারত-চীন-নেপাল-পাকিস্তান সামরিক ও ভূরাজনৈতিক মারপ্যাঁচে বাংলাদেশ রাজনৈতিক ভাবে ভারতকে আবারো সমর্থন করে বসলে সেটা যাতে অন্তত শর্তহীন না হয়। আমাদের প্রত্যাশা যে বর্তমান স্টেটাস্কোর সর্বোচ্চ সদ্যবহার করে বাংলাদেশ হাতছাড়া হয়ে যাওয়া অর্থনৈতিক ও কৌশলগত অবকাঠামোর ব্যাপারে ভারতীয় কব্জা থেকে বেরুবার চেষ্টা করবে। পানি হিস্যার জন্য চাপ দিবে, অবকাঠামো গুলো শুরু করে দিবে, বিদ্যুৎ ডীজেল আমদানি একেবারে কমিয়ে দিবে, ট্রানজিট মাসুল আদায় করবে, কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্প বন্ধ করবে। ভারতের ক্ষতি বাংলাদেশ করুক আমরা তা চাইনা, বাংলাদেশের পররাষ্ট্র নীতিও তা না। তবে ভারত যে বাংলাদেশের সমূহ অর্থনৈতিক ক্ষতি করছে, বাংলাদেশ যে কোন ধরনের সমর্থনের বিপরীতে নিজের বুঝাপড়া করে নিবে, নিজের স্বার্থ্য গুলো ফিরিয়ে আনবে- এটাই সর্বজন স্বীকৃত নাগরিক প্রত্যাশা।