somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

রাহেলার মায়ায় জামসিং'র টেউটিতে

২৩ শে অক্টোবর, ২০০৭ রাত ৮:৫৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


মানবীর লেখাটি পড়েই রাহেলার কথা আবার মনে পড়লো।২০০৪ সালে ২২ আগস্ট ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে রাহেলাকে দেখেছিলাম।অস্ফুটস্বরে ও জানিয়েছিলো মিনি চিড়িয়াখানা থেকে বেড়িয়ে ফেরার সময় জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ব বিদ্যালয়ের মশাররফ হোসেন হলের পেছনের জঙ্গলে নিয়ে আকাশ,কবির,লিটন ,দেলোয়ারসহ কয়েকজন খারাপ কাজ করার পর ছুরি দিয়ে তার গলা কেটে দেয়।একজন তার চুলের মুঠি চেপে ঘাড় ভেঙ্গে দেয়ার চেষ্টা করে ।কিছুক্ষন পর তারা রাহেলা মারা গিয়েছে মনে করে চলে যায়। রাহেলা হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে আপ্রান চেষ্টায় বলছিলো,দিন রাত টের পাচ্ছিল না ও।নড়ার শক্তি ছিলো না। অনেক চেষ্টার পর সে নিজেই টের পায় গলা দিয়ে অল্প কথা বেরুচ্ছে তার। সে লাগাতার বলছিলো ...আমি মরি নাই আমাকে বাচান! (তাই শুনতে পেয়ে বিশ্ব বিদ্যালয়ের একজন মালি রাহেলাকে খুঁেজ পায়।) রাহেলা বলেছিলো, জ্ঞান ফেরার পর সে টের পেয়েছিলো রাজ্যের পোকা-মাকড় তার গলার ক্ষত স্থানে লুটোপুটি খাচ্ছে। রাহেলা কথা বলার সময় ঘনঘন দাঁেত দাঁত বাড়ি খাচ্ছিল। মেয়েটির জন্য খুব মায়া লেগেছিলো।আর আশ্চর্য হয়েছিলাম মেয়েটি এখনো বেঁচে আছে কী করে!
এরপর আবার রাহেলাকে দেখেছিলাম একই বছরের ২৪ সেপ্টেম্বর। ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মর্গে। মনে আছে মর্গের সামনে দাড়িয়ে ছিলেন ২/৩ জন নারী নেত্রী। রাহেলার মা রোকেয়া বেগম গ্রিল ধরে দাড়িয়ে কাঁদছিলেন। স্বামী চান মিয়া নির্বাক দাড়িয়ে ছিলেন।তখন বোধ হয় চান মিয়া ও রাহেলার সংসারের বয়স বছর খানেক হয়েছিল মাত্র।মৃত্যুর পর স্বামী বাড়িতে রাহেলার কবরের জায়গাও হয়নি।তার লাশ পাঠানো হয়েছিলো গ্রামের বাড়ি ফরিদপুরে।


গতকাল, রাহেলার মায়ায় জামসিং’র টেউটিতেঃÑ

মানবীর লেখাটি পরে আমার এই সব কথা মনে পড়ে! এই লেখাটি থেকেই জানলাম মামলাটিতে আইনি সহায়তা দিচ্ছে আইন শালিশ কেন্দ্র। মামলাটির অবস্থা জানার জন্য কেন্দ্রে দায়িত্বপ্রাপ্ত এডভোকেট লাকিকে খুজে বের করলাম। কিন্তু কিছুতেই তিনি কথা বলতে রাজি নন। তিনি জানালেন, বিচারাধীন কোন মামলায় কথা কলা তাদের নিয়মে নেই। জানা গেল নারী ও শিশু নির্যাতন প্রতিরোধ ট্রাইবুনাল -১ এ বিচারাধীন রয়েছে মামলাটি। পিপিকে ফোন করার পর তিনি বললেন ৩০/৩৫টি ফাইল নিয়ে তিনি ব্যস্ত পরে সময় করে গেলে অবস্থা জানাবেন।বললাম আদালতে মামলাটির নাম্বার ১৩/২০০৫। ৪ আসামীর মধ্যে ৩ জন আদালত থেকে জামিন নিয়ে বাইরে আছে।একজন পলাতক।পিপি বললেন তার সময় নেই।আগামীকাল জানাবেন।(আজকের কথা বলেছেন।আজও ফোন দিয়েছিলাম,বলেছেন একটা হিয়ারিংএ আছেন।এখন কথা বলতে পারবেন না।) সরকারবাদী মামলাটি দায়ের করা হয়েছিলো সাভার থানায়। সাভারের এক সাংবাদিক বন্ধুকে থানায় পাঠিয়ে রাহেলা হত্যা মামলাটির খোঁজ নিতে বললাম। বললাম আমি আসছি।আমিন বাজারের কাছে পৌঁছেছি ,তখন বন্ধুটি জানালেন থানা পুলিশ জান দিয়েও মামলার নথি খুঁজে পাচ্ছেনা। ২২ আগস্টের পরবর্তী কয়েক দিনে এধরনের কোন মামলার খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। মামলা নাম্বার আছে কিনা জিঙ্গেস করলো বন্ধুটি।বললাম একটা নাম্বার আছে ১৩/২০০৫। থানার কাছা কাছি পৌঁছেছি এমন সময় বন্ধুটি আবার জানালো নাম্বারটি বোধ হয় ঠিক নেই। থানার মামলার নাম্বার এরকম হয় না।
থানায় পৌঁছে ওি ফকির সাহেবকে ফোন দিলাম।তিনি জানালেন গত কয়েক দিন টানা পুজার ডিউটি করে তিনি খুব ক্লান্ত। অনেক ভদ্রতা করে বিষয়টি কি জানতে চাইলেন ওসি সাহেব।জানার পর বললেন, বিষয়টি খুব করুণ। আমার দেয়া মামলা নাম্বারটি কোর্টের সিরিয়াল।এভাবে মামলার নথি খুজে পাওয়া যাবে না। তিনি বললেন মামলা নাম্বার জানাতে পারলে তিনি হেল্প করার চেষ্টা করবেন। থানায় ঘটনার কোন আগা মাথা না পেয়ে ঠিক করলাম রাহেলার পরিবারের সদস্যদের সদস্যদের কাছে যাবো।

স্থানীয়ভাবে যোগাযোগ করে রাহেলার শ্বশুড় বাড়ির ঠিকানা বের করলাম। জানা গেল রেডিও কলোনির পাশে থাকে চান মিয়া। তবে সবার আগে গেলাম মশাররফ হোসেন হলের পেছনের ঘটনাস্থলে। আগের জঙ্গল কেটে এলাকাটা অনেক পরিস্কার করা হয়েছে এখন। পানির পাইপের নিচে এখন কয়েকটা কচি কলাগাছ গজিয়ে উঠেছে সেখানে। গার্ড হায়দার আমাদের দেখে ঘটনাটা আবার খুলে বললো।
ক্যাম্পাস থেকে বের হয়ে রওনা হলাম ভাট পাড়ার দিকে। স্থানীয় লোকজন যাকেউ জিঙ্গেস করি বলে ঘটনাটা তারা শুনেছে কিন্তু বাড়ির ঠিকানা তারা জানেন না। একজন বললেন ভাটপাড়া মসজিদ ওয়ালা বাড়ি। সেখানে যাওয়ার পর একজন বললেন আপনারা বাড্ডা ভাটপাড়া এসেছেন। রাহেলার শ্বশুড় বাড়ি শুধু ভাটপাড়ায়।
ভাটপাড়ায় পৌঁছার পর লোকজনের দেখানো ঠিকানা অনুযায়ি আধা ঘন্টার মতো এই রাস্তার ওই রাস্তার মাথায় গেলাম। একজন বললো মাদবর ইলেকট্রনিক্সএর পাশে জিঙ্গেস করলে মানুষ দেখিয়ে দেবে। সেখানে যাওয়ার পর জানা গেলোরাহেলার শ্বশুড় বাড়ির নাম তারা মিয়াদের বাড়ি। সেটা জাম সিংএ।মহল্লার নাম কেউটি। আমি হতাশ হলাম।মনে হলো খুঁেজ বের করতে পারবো না।
ফিরে যাবো এমন সময় ড্রাইভার মামুন জানালো সে একজন খুজে পেয়েছে যে তারা মিয়ার বাড়ি চেনে। তাকে গাড়িতে তুলবে কিনা।বললাম ,নিয়ে নাও। ভাটপাড়ার একটা উপ-রাস্তার মাথায় যাওয়ার পর দেখলাম ইটের রাস্তা খুবই ভাঙ্গা চোরা। হেঁেট রওনা দিলাম আমরা। গাইড, স্থানীয় এক তরুন। চুপ-চাপ আমাদের পথ দেখিয়ে নিয়ে চলছে সে।ততক্ষনে রাত ৭টা বাজে। বাড়ি-ঘরের মাঝ দিয়ে চিকন রাস্তচাপ দেড় কিলোমিটারের মতো হবে।রাস্তায় আলো নেই । মোবাইলের কি বোর্ড চেপে রাস্তা আলো করে হাঁটছি আমি আর আমার ক্যামেরাম্যান।


রাহেলার শ্বশুড় বাড়ি
অবশেষে রাত পৌনে আটটার দিকে আমরা পৌঁছাই রাহেলার শ্বশুড় বাড়ি। একচালা টিনের ঘর। পাশাপাশি কয়েকটা শোয়ার ঘর।নিচে কোনায় উনুন।উঠোনে একটা গাভি বাঁধা। জিঙ্গেস করলাম, রাহেলার স্বামী চান মিয়া বাসায় আছে কিনা? রাহেলার শ্বাশুড়ি জানালেন সে মিস্ত্রির কাজ করে কখন ফিরবে ঠিক নেই।কেন এসেছি জানার পর রাহেলার শ্বাশুড়ি পাশেই কোলে বাচ্চাকোলে করে দাড়িয়ে থাকা এক তরুনীকে দেখিয়ে বললেন চান আবার বিয়ে করেছে।
চাঁন মিয়ার নতুন বৌএর নাম কল্পনা। দুবছর বয়সী মেয়ের নাম চাঁদনী। চান মিয়ার বড় ভাই জয়নাল আবেদিন জানালেন, রাহেলার মৃত্যুর পর ৬ মাস পর বিয়ে করেছে চান।
কল্পনা জানালেন তারা ভালো আছেন। তার স্বামী রাহেলার কথা প্রথমে তাকে বলেছেন বলেও জানালেন কল্পনা।
সঙ্গে ফ্লাসগান না থাকায় আলো স্বল্পতার জন্য আমার ক্যামেরাম্যানের ছবি পেতে সমস্যা হচ্ছিল। সে একটা স্টিলের গামলা জোগার করে আলোর প্রতিফলন তৈরি নিল।গামলা ধরে থাকলো গাইড ছেলেটি।
চান মিয়ার ভাইদের সঙ্গে আলাপ করে জানলাম, মামলা নিয়ে তারা কোন খোজ রাখেন না। তবে সে স্বস্তি প্রকাশ করলো এই বলে যে, আল্লার ইচ্ছায় রাহেলা তাদের বাঁচিয়ে গিয়েছে। সে যদি সন্ত্রাসীদের নাম নিজ মুখে না বলে যেতো তাহলে তারা ফেঁেস যেতেন।
আমার আর বেশিক্ষন কথা বলতে ইচ্ছে করছিলো না।ফিরতি পথ ধরলাম। বাড়ি থেকে বের হওয়ার
রাস্তায় চান মিয়া বাড়ি ফিরে আসছে দেখতে পেলাম। আবার বাড়ি কথা বললাম রাহেলার স্বামীর সঙ্গে। সে জানালো,সংসারে টানাটানি হবে এজন্য সে মামলার খবর রাখে না। মামলা সরকার করেছে তাই তার করার কিছু নেই। একবার সে রাহেলার মাকে পাঠিয়ে ছিলো থানায় ,থানায় গিয়ে সে কোন কুল কিনারা করতে পারেনি। রাহেলার জন্য আর কোন মায়া চান মিয়ার মনে অবশিষ্ট আছে কিনা বুঝতে পারলাম না। আড়াল থেকে চাঁনের নতুন বৌ কথা
শুনছিলো ।
চাঁনকে জিঙ্গেস করলাম, রাহেলার মা কোথায়?
চাঁন জানালেন, অনেক দিন যোগাযোগ নেই তাই ওদের ঠিকানা সে আর জানে না। কিছুক্ষন এটা সেটা নিয়ে কথা বলে ভাটপাড়া একটা চায়ের দোকানে বসে চা দিতে বললাম দোকানিকে।
মনটা বিষন্ন হয়ে উঠতে চাইলো বোধ হয়।এক ঝলকায় মনে প্রশ্ন জাগতে চাইলো- কেন এসেছিলাম এখানে?

ঢাকায় ফিরতে ফিরতে ভাবার চেষ্টা করলাম মামলাটির ভবিষ্যৎ নিয়ে। দোষিদের বিচার চেয়ে আদালতের বারান্দায় ঘোরার মতো কেউ নেই।

রাহেলার জন্য মায়া কার মনে আছে আমি জানি না।হয়তো তার মা ,যার ঠিকানা বের করতে পারিনি আমি...তিনি নিয়মিত কাঁদেন তার হতভাগ্য মেয়েটির জন্য। আর কে কাদেঁ? আদৌ কেউ কি কাঁদে!
কতো নিষ্ঠুর ঘোর প্যাচে মানুষের জীবন কতো মূল্যহীন হয়ে যায়!!!
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই অক্টোবর, ২০১০ দুপুর ১২:৫৬
৫৯টি মন্তব্য ৪৩টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

অন্যায় অত্যাচার ও অনিয়মের দেশ, শেখ হাসিনার বাংলাদেশ

লিখেছেন রাজীব নুর, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৪:৪০



'অন্যায় অত্যাচার ও অনিয়মের দেশ, শেখ হাসিনার বাংলাদেশ'।
হাহাকার ভরা কথাটা আমার নয়, একজন পথচারীর। পথচারীর দুই হাত ভরতি বাজার। কিন্ত সে ফুটপাত দিয়ে হাটতে পারছে না। মানুষের... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

দ্য অরিজিনস অফ পলিটিক্যাল জোকস

লিখেছেন শেরজা তপন, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১১:১৯


রাজনৈতিক আলোচনা - এমন কিছু যা অনেকেই আন্তরিকভাবে ঘৃণা করেন বা এবং কিছু মানুষ এই ব্যাপারে একেবারেই উদাসীন। ধর্ম, যৌন, পড়াশুনা, যুদ্ধ, রোগ বালাই, বাজার দর থেকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×