ড.ইউনুস বনাম প্রথম ও তৃতীয় বিশ্বের সম্পর্ক:
মো: শরিফুল ইসলাম লিংকন, ১৫/০৮/১২
সামুতে আমি একজন নতুন ব্লগার। সামুতে আসার আগ পর্যন্ত লেখা-লেখির কোন অভ্যাস ছিল না। দু’চার কলম পর্যন্ত যতটুকু শিক্ষা অর্জন করেছি তা দিয়ে দেশ, রাজনীতি, ও গুণীজনদের সম্পর্কে কিছু লেখা একদম বেমানান। তবুও বিভিন্ন ব্লগারের ব্লগ ও পত্র-পত্রিকা থেকে Cut & Paste পদ্ধতি অবলম্বন করে কিছু আইডিয়া চোরি করে, এই ব্লগের মূল উপাদান হিসেবে ব্যবহার করেছি।
সকল পাঠকের কাছে এইটুকু অনুরোধ, লেখার মধ্যে যে কোন ভূল-ত্রুটির জন্য নতুন ব্লগার হিসেবে দয়া করে ক্ষমা করে দিবেন।
আমরা বাঙ্গালিরা জাতি হিসেবে নাকি কখনো জ্ঞাণী-গুণীদের সম্মান করতে জানিনা, তাই এদেশে কোন জ্ঞাণী-গুণী সৃষ্টি হয় না। দূর ভাগ্য কারণে যে সব জ্ঞাণী-গুণী ভূল করে জন্ম নেয়, তাদেরকে আমরা অংকুরে বিনষ্ট করি। তাদের জ্ঞান বিকাশ হওয়ার সুযোগ দিইনা। আমরা যদি জ্ঞাণী-গুণীদের উপযুক্ত সম্মান দিতাম, তাদের জ্ঞাণ বিকাশের জন্য উপযুক্ত পরিবেশ নিশ্চিত করতাম তবে দেশ অনেক আগেই জ্ঞাণ-বিজ্ঞানে অনেক এগিয়ে যেত।
আমার জানামতে বাঙ্গালি একবারই ঐক্যবদ্ধ হয়েছিল, ১৯৭১ সালে জাতির জনক বঙ্গ-বন্ধুর ডাকে। আর কখনো তাদের মধ্যে ঐক্যবদ্ধতা ছিল না, তাই ত আমরা স্বাধীনতার ৪১ বছর পরও অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, সামাজিক ভাবে এখনো পরাধীন।
এই সব ছোট ছোট খারাপ দিকের জন্য সারা বিশ্বের কাছে আমাদের বড় বড় অর্জস গুলো ঢেকে যাচ্ছে। যেমন- ৫২তে আমরা মায়ের ভাষার জন্য জীবন দিয়েছি, ৭১-এ ৩০লক্ষ্য সহিদ ও ২লক্ষ্য মা-বোনের ইজ্জতের বিনিময়ে স্বাধীনতা অর্জন করেছি, আজ প্রায় ১ কোটি প্রবাসির দিন-রাত পরিশ্রমে পাঠানো রেমিটেন্স দিয়ে দেশ উন্নায়ন করছি, ক্রিকেটে অনেক সাফল্য অর্জন করেছি, আমাদের সেনা বাহিনী বিশ্ব শান্তি রক্ষায় গুরুত্ব পূর্ণ অবদান রাখছে।বাঙ্গালির এই সব গৌরবের অর্জন গুলোকে সারা বিশ্বের কাছে তুলে ধরার দায়িত্ব আমার আপনার সবার দায়িত্ব।
এইবার আসা যাক ড.ইউনুস প্রসংঙ্গে:
ড.ইউনুস দেশে একজন উত্তম নাগরিক তা সকলের জানা নতুন করে বলার কিছুই নেই। তিনি বাঙ্গালিকে পরিচিত করেছেন বিশ্ব দরবারে (…হিসেবে!)। তার মাইক্রো কেডিট এখন দরিদ্র-দূরিকরণের মডেলে হিসেবে বিশ্ব স্বীকৃত। তথা কথিত প্রথম বিশ্বের কাছে ড.ইউনুস দেব তুল্য। হিলারি ক্লিনটনের মত বিশ্ব ক্ষমতাধর পরাষ্ট্ মন্ত্রীও ড.ইউনুসের প্রেমে পড়ে তার দেশেও মাইক্রো কেডিট পরিচালনা করবেন, ধনী রাষ্ট্র কে আরো ধণী করতে!। ঢাকা-ওয়াসিংটনের এসি রুমে টেলিভিশনের ক্যামরার সামনে বসে, যেখানে বড় বড় বুদ্ধি জীবিরা মাইক্রো কেডিটের সফলতার প্রসংশা করছেন সেখানে আমাদের মত মাটিতে যাদের বাস, অল্প শিক্ষিত তথা আম-জনতা ড.ইউনুসের বদনাম করে বেড়াচ্ছি।
আসলে আমরা বাঙ্গালিরা গুণীজনদের সম্মান দিতে জানিনা ত…..।
এইবার একটি সত্যিকারের গল্প বলি:-
হাসেম আলি ও তার বউ আমেনা সহ ৫জনের দরিদ্র্র পরিবার। একজনের আয় দিয়ে এত বড় পরিবার চালতে গিয়ে দিন মজুর হাসেম আলির খুব হিম-সিম খাচ্ছেন, কখনোবা না খেয়ে দিন কাটাতে হচ্ছে পরিবার নিয়ে। আমেনা বেগম পরিবারের এই দূর অবস্থা দেখে গ্রামীন ব্যাংক থেকে ৭ বছর আগে ৩হাজার টাকার লোন নেন এবং আরো কিছু টাকা দিয়ে স্বামিকে একটা রিকসা কিনে দেন। হাসমে আলি রিকসা চালিয়ে যা আয় করেন তা দিয়ে কোন রকম সংসার চালাচ্ছেন। ২/৩ মাস পর হাসমে আলি কিছু দিন অসুস্থ থাকায় রিকসা চালাতে পারলেন না, তাই সময় মত কিস্তি দিতে পারলেন না। ব্যাংক কতৃপক্ষ কিস্তির টাকার জন্য হাসেম আলিকে বাদ্য করেন। রিকসা বিক্রি করে লোন পরিশোধ করলেন আর বাকি টাকা দিয়ে নিজের চিকিৎসা করালেন। কিছু দিন পর আবার লোন নিলেন আবার রিকসা কিনলেন। আবার একই ঘটনা কিন্তু পরিস্থিতি ভিন্ন, হাসেম আলি সড়ক দূর-ঘটনায় আহত হন।রিকসা বিক্রি করে চিকিৎসা করালেন, লোনের টাকা না দিতে পেরে কয়েক মাস বাড়ি ছাড়া ছিলেন।
এই গল্প থেকে যা বুঝার তা হল- গ্রামীন ব্যাংক থেকে শতকরা ২০% সুদে লোন নিয়ে তার পরিবারের দরিদ্রতা দূর করতে না পারলেও হাসেম আলি দু’দুই বার চিকিৎসার খরচ যোগাড় করতে পেরেছেন। এই দূর সময়ে গ্রামীন ব্যাংক তার পাশে না থাকলে কি হত তার জিবনে একমাত্র আল্লাহ জানে।
বৃটিশরা এক সময় গর্ব করে বলত “বৃটিশ রাজ্যে নাকি সূর্য ডুবেনা”। বৃটিশরা এক সময় প্রায় সারা বিশ্বটাকে তাদের উপনিবেশ বানিয়েছিল, তাই তাদের এত বিশাল সম্রাজ্যে কখনো সূর্য ডুবত না। এখন কথাটি আর সত্য নেই, দিন বদলে গেছে উপনিবেশ দেশ গুলো স্বাধীন হয়েছে, বৃটিশ রাজ্য ছোট হয়ে গেছে। কিন্তু আজও তারা তৃতীয় বিশ্বের দেশ গুলোকে তাদের হুকুমের গোলাম বানাতে চায়। এই জন্য কোটি কোটি ডলার খরচ করছে তৃতীয় বিশ্বের নামধারি গুণী-বুদ্ধিজীবিদের পিছনে। এই বুদ্ধিজীবি তথা বেনিয়দি কিংবা তাদের এজেন্টদের মাধ্যমে তাদের স্বার্থ উদ্বার করে এবং তৃতীয় বিশ্বে পরোক্ষ ভাবে তাদের শাসন কায়েম করছে। একে নব্য উপনিবেশ বাদ বলা চলে।
দু:খিত আসলে নতুন ব্লগার ত….. লেখা কোন দিকে যাচ্চে বুঝছিনা…………
আসলে আমরা গুণীজনদের সঠিক সম্মান দিতে জানিনা। আমরা ত আম জনতা তাই দিই না তাই বলে কি সরকারও দিবেনা? যদি সরকার গুণীজনদেরকে সম্মান দিতেন,আজকের রাত্রে ব্লগ না লিখে আমি পদ্মা সেতুর উপর বসে বসে জ্যোৎস্নার চাঁদ দেখতাম……..!
তবে বি,এন,পি তথা বিরোধি দল আমার পদ্মা সেতুর উপর বসে বসে জ্যোৎস্নার চাঁদ দেখার যে সাধ তা পূরণ করার জন্য খুব ব্যাস্ত। তারা নাকি ক্ষমতায় গেলে গুণীজনদেরকে সম্মান করবেন, ফলসরুপ গুণীজনরা পদ্মা সেতুর জন্য বিশ্ব ব্যাংক থেকে লোন পেতে সাহার্য্য করবেন!! এই সরকার আমলে গুণীজনরা নাকি খুব অ-সুবিধায় আছে। এজন্য সরকার উৎখাত করতে ঈদের পর কঠোর আন্দোলনে যাবেন তারা…..।
এই দিকে আমি আম জনতা হিসেবে আন্দাজে ঢিল মারছি যে, বর্তমান ক্ষমতাসীন দল(আ:লীগ) মিডিয়াকে ড.ইউনুসের দিকে ঘুরিয়ে দিয়েছেন ফলে বিরোধী দলকে ব্যাস্ত রেখে খুব সহজে সরকার তাদের সকল জনস্বার্থ বিরোধী এজেন্ডা বাস্তবায়ন করে পেলছেন।অর্থাৎ খালি মাঠে সরকার সহজে গোল দিচ্ছে আর বিরোধী দল আঙ্গুল চোষছে…..।
আমাদের মত আম জনতাদের উচিৎ গুণীজনদের নিয়ে বাড়া-বাড়ি না করে, দেশ যে রসা-তলে যাচ্ছে তার দিকে একটু খোজ খবর নেয়া। এতে দেশের মঙ্গল হবে।
এই দিকে পরগাছা টাইপের দল তথা জামায়েত নিজেদের নেতা বাচাঁতে ব্যাস্ত। তারা গুণীজনদের সামনে থাকাকে যেমন বিপদ ঠিক পিছনে থাকাকেও বিপদ ভাবছে!।
সর্বোশেষ একটি কথাই বলতে চাই, সাধু সাবধান, কতিপয় গুণীজনরা সাবধান, আমজনতা ঐক্য গড়েতুল, দেশকে এগিয়ে নিতে হবে…আমাদের পথ চলা এখনো অনেক বাকি।
--ধন্যবাদ--
মো: শরিফুল ইসলাম লিংক