somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আপনারা প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন পাকিস্তান বোর্ডকে। আমরা দিয়েছি আমাদের দেশকে। ব্যক্তিগত প্রতিশ্রুতি রক্ষা করতে গিয়ে দেশের ক্রিকেটারদের আমরা বিপদে ফেলতে পারি না ।।

২৭ শে ডিসেম্বর, ২০১২ দুপুর ২:৩৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ বেশ ভালো ফিল্ডার। মাঝেমধ্যেই বলের বদলে নিজের ছেলেকে নিয়ে ক্যাচ ক্যাচ খেলেন তিনি। আজও খেলছেন। ছেলেকে ওপরে ছুড়েই সঙ্গে সঙ্গে আবার ধরে ফেললেন। ছেলে হাসে। হাসেন রিয়াদও। তবে দুজনকে হাসতে দেখেও হাসলেন না রিয়াদের স্ত্রী। এয়ারপোর্টের ভিআইপি লবিতে দাঁড়িয়ে নীরবে চোখের পানি ফেলছেন তিনি। একটু পরই পাকিস্তানে খেলতে যাবেন তাঁর স্বামী। এটা কিছুতেই মানতে পারছেন না তিনি।


স্ত্রীকে সান্ত্বনা দেওয়ার জন্য রিয়াদ বললেন:
—তুমি যে হারে কাঁদছ, একটু পর তো ফ্লোর মুছতে ক্লিনার ডাকতে হবে।
—সব সময় ফাজলামো করবা না তো।
—আচ্ছা, তুমি একটা শিডিউল করে দিয়ো। শিডিউল অনুযায়ী প্র্যাকটিস করি, ফাইজলামিও করব। নো সমস্যা।
—ওখানে না গেলে কী হয়? বললেই যেতে হবে?
—আরে বলে কী! টিম যাচ্ছে, যেতে হবে না? দু-তিন দিনের ট্যুর। চিন্তা কোরো না তো। রাষ্ট্রপতি-প্রধানমন্ত্রীর মতো নিরাপত্তা দেবে আমাদের।
—পাকিস্তানের নিরাপত্তাকর্মীদের বিশ্বাস আছে? ওরা যে বোম মারবে না, তার নিশ্চয়তা কী? ওরা তো নিজেদের প্রেসিডেন্টরেই নিরাপত্তা দিতে পারে না!


রিয়াদের পাশে এসে দাঁড়ালেন এনামুল। কদিন আগেই দলে স্মরণীয় অভিষেক হয়েছে তাঁর। রিয়াদের পাশে এসে বললেন:
—টেনশন করবেন না ভাবি। সব ম্যাচ জিতব ইনশাল্লাহ!
—আমি ম্যাচ নিয়ে টেনশন করছি না। টেনশন করছি তোমাদের নিয়ে। ওখানে প্রতিদিন বোমা হামলা হচ্ছে, কত মানুষ মারা যাচ্ছে। এমন একটা দেশে তোমাদের খেলতে পাঠাচ্ছে, আর তোমরাও যাচ্ছ! আমরা টেনশন করব না?
—সমস্যা নেই ভাবি। গত সিরিজে তামিম ভাই বলেছিলেন, সামনে বল পেলেই ছক্কা মেরে দিবি। কথাটা মনে আছে। বোম পেলে সোজা ছক্কা মেরে মাঠের বাইরে পাঠিয়ে দেব!
—তুমিও ফাজলামো করছ?


হাসলেন রিয়াদ। ছেলেকে স্ত্রীর কোলে দিয়ে এনামুলকে নিয়ে সামনে এগোলেন। দলের সবাই গোল হয়ে দাঁড়িয়ে কথা বলছে। রিয়াদ, এনামুলও যোগ দিলেন তাঁদের সঙ্গে। মুশফিক বললেন, ‘রিয়াদ ভাই, আসো, আসো। নাসির এই ট্যুরের থিম সং বানাইছে। ওই নাসির, গান গা।’
অধিনায়কের নির্দেশ বলে কথা! নাসির গান শুরু করলেন, ‘চলো না খেলতে যাই পাকিস্তানে...যেখানে বোমা ফাটে বামে-ডানে...ট্যা ট্যা ট্যা ট্যা ট্যা!’ সবাই একসঙ্গে হইহই করে উঠল। হইচই থামলে মাশরাফি বললেন, ‘পাবলিক ব্যাপক প্রতিবাদ করছে। পেপারে দেখছছ তোরা?’ রাজ্জাক বললেন, ‘দেখলাম। কিন্তু বোর্ড তো কারও কথা শুনল না। খারাপ লাগছে মানুষের জন্য।’ এনামুলের মাথায় টোকা মারলেন নাসির। এনামুল মাথায় হাত দিয়ে বললেন, ‘ভাই, জুনিয়র বলে আপনাদের সামনে আমার মাথায় টোকা মারল, কিছু বলবেন না?’ তামিম বললেন, ‘আরে এখন তো টোকা মারছে। পাকিস্তানে গেলে তো পাবলিক বোমা মারবে!’ সবাই একসঙ্গে হেসে উঠল। নাসির আক্ষেপ করে বললেন, ‘আমাদের দেশে নিয়মিত ফুল ফোটে, আর পাকিস্তানে ফোটে বোমা! কই যে যাইতেছি!’ নাসিরের কথায় চুপ হয়ে গেল সবাই।


হঠাৎ হন্তদন্ত হয়ে ছুটে এলেন বোর্ডের এক কর্মকর্তা। সবাইকে প্লেনে ওঠার তাগাদা দিলেন তিনি। পরিবারের সদস্য ও শুভানুধ্যায়ীদের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে পাকিস্তানগামী প্লেনে উঠে গেল বাংলাদেশ দল। বিদেশ সফরে গেলে এমনিতেই সবার মন খারাপ থাকে। এবার মন খারাপকে সঙ্গ দিতে এসেছে বিপদের আশঙ্কা!


এমনিতে সবাই হইচই আনন্দ আড্ডায় কাটিয়ে দেয় প্লেন-ভ্রমণ। আজকে তেমন কিছু হচ্ছে না। কেউ কেউ সিনেমা দেখছে। কেউ ডুবে আছে চিন্তায়, আবার কেউ কেউ ডুবে আছে ঘুমে। দলের নতুন সদস্য মমিনুল হঠাৎ ঘোষণা দিয়ে উঠলেন, ‘আমার খিদা লাগছে।’ পাশে বসা শফিউল হেসে বললেন, ‘এখনই খেয়ে নে। নইলে প্লেন থেকে নেমে গুলি খেতে হতে পারে!’ শুনে হেসে ফেললেন মমিনুল। সিনিয়ররা কত সহজে আপন করে নেন নতুনদের!


দীর্ঘ অপেক্ষার পর ল্যান্ডিংয়ের ঘোষণা দিলেন বিশেষ প্লেনটির পাইলট। নড়েচড়ে বসল টাইগাররা। আসতে অনেক বেশি সময় লেগেছে এবার। বাইরে কী অপেক্ষা করছে কে জানে। জানালা দিয়ে অবশ্য সুন্দর প্রাকৃতিক দৃশ্য দেখা যাচ্ছে। তবুও সবার মনেই অজানা আশঙ্কা। কোনো বিপদ ছাড়াই ল্যান্ড করল প্লেন। একগাদা নিরাপত্তারক্ষী থাকবে এমনটাই ভাবল সবাই। কিন্তু প্লেনের দরজা খোলার পর দেখা গেল, তেমন কোনো নিরাপত্তাই নেই। অবাক হলো সবাই। ঘটনা কী? নামার পর দেখা গেল কোনো এয়ারপোর্ট না, দ্বীপের মতো একটা জায়গায় ল্যান্ড করেছে প্লেন। দলের সবাই অবাক। এটা আর যা-ই হোক, পাকিস্তান নয়! তার মানে পাকিস্তানে ল্যান্ড করেনি প্লেন? বোকা হয়ে গেল সবাই। বোর্ডের কর্মকর্তারা ছোটাছুটি করতে লাগলেন। পাইলটের সঙ্গে কথা বলতে উচ্চপদের এক কর্মকর্তা ছুটে গেলেন ককপিটে। পাইলট হাসিখুশি মানুষ। বোর্ডের কর্মকর্তা বজ্রকণ্ঠে তাঁকে জিজ্ঞেস করলেন:
—ঘটনা কী? এটা কোন জায়গা?
—এটা প্লেনের ককপিট স্যার।
—মশকরা হচ্ছে? কী করতে চান আপনি? কোথায় ল্যান্ড করেছেন প্লেন?
—একটা দ্বীপে। পাকিস্তান থেকে অনেক দূরে।
—মানে?
—মানে হলো প্লেন পাকিস্তানে যায়নি। যাবে না।
—হোয়াট দ্য...আমরা ওদের প্রতিশ্রুতি দিয়েছি। এক্ষুনি জায়গামতো প্লেন নিয়ে যাবেন। নইলে আপনাকে জেলে যেতে হবে।
—আপনারা প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন পাকিস্তান বোর্ডকে। আমরা দিয়েছি আমাদের দেশকে। ব্যক্তিগত প্রতিশ্রুতি রক্ষা করতে গিয়ে দেশের ক্রিকেটারদের আমরা বিপদে ফেলতে পারি না!
—শাট আপ! প্লেন ছাড়ুন বলছি!
—আগামী তিন দিন আমরা এই দ্বীপেই থাকব। বারবিকিউ পার্টি হবে, কনসার্ট হবে। তারপর সোজা দেশে ফিরে যাব। শুরু হবে বিপিএল।


ককপিট থেকে নেমে এলেন কর্মকর্তা। প্রচণ্ড রাগে লাল হয়ে আছে তাঁর মুখ। ককপিটের দিকে এগোলেন দলের অধিনায়ক মুশফিক। তাঁকে দেখে নামলেন পাইলট। হাত মিলিয়ে বললেন, ‘আপনারা আমাদের আনন্দে ভাসান। আপনাদের ওই নরকে আমরা নিয়ে যেতে পারি না। তাই সবাই মিলে এই প্ল্যান করেছি।’
পাইলটের হাতটা শক্ত করে ধরে শুধুই মুচকি হাসলেন মুশফিকুর রহিম।

(পুরোটাই লেখকের অনুর্বর মস্তিষ্কের কল্পনা)


লেখক
আদনান মুকিত
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে ডিসেম্বর, ২০১২ দুপুর ২:৪৩
২টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

লিখেছেন এস.এম. আজাদ রহমান, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৪৪



বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

কেন বিএনপি–জামায়াত–তুরস্ক প্রসঙ্গ এখন এত তপ্ত?
বাংলাদেশের রাজনীতিতে দীর্ঘদিন ধরে একটি পরিচিত ভয়–সংস্কৃতি কাজ করেছে—
“র”—ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা নিয়ে রাজনীতিতে গুজব,... ...বাকিটুকু পড়ুন

নিশ্চিত থাকেন জামায়েত ইসলাম এবার সরকার গঠন করবে

লিখেছেন সূচরিতা সেন, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:৪২


আমাদের বুঝ হওয়ার পর থেকেই শুনে এসেছি জামায়েত ইসলাম,রাজাকার আলবদর ছিল,এবং সেই সূত্র ধরে বিগত সরকারদের আমলে
জামায়েত ইসলামের উপরে নানান ধরনের বিচার কার্য এমন কি জামায়েতের অনেক নেতা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×