somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

একটি কমল অথবা কলির গল্প

১৬ ই ডিসেম্বর, ২০১৩ বিকাল ৪:১৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

চারদিক অন্ধকারাচ্ছন্ন । মাঝে মাঝে গোলাগুলির শব্দ ভেসে আসছে । কখনও বা একবার দুবার, কখনও একটানা সাইরেনের মতো । মেঝেটা খুব স্যাঁতস্যাঁতে । ঘরটাতে এতই অন্ধকার যে ভিতরে কি আছে বা কারা আছে দেখাই যাচ্ছে না । কিন্তু বেশ কিছুক্ষণ ভালমতো খেয়াল করলে কয়েকটা মানব মূর্তি দেখা যায় ; ভুল বললাম আসলে মূর্তিগুলো মানবীর । মূর্তি বলছি কারণ ওরা অসাড় হয়ে পরে আছে । কারো গায়েই একটা সুতাও নেই । এটা একটা মিলিটারি ক্যাম্প ।

আমাকে এখানে ফেলে গেছে খুব বেশি হলে ২ ঘণ্টা হয়েছে । আমি যখন এখানে এসেছি তখন আমিও ওদের মতই অসাড় ছিলাম । আমার অসাড়তা ভেঙেছে একরাশ যন্ত্রণা নিয়ে । সারাশরীরের এখানে ওখানে প্রচণ্ড ব্যথা ; ব্যথাটা ক্রমাগত ছড়িয়ে পরছে । মনে হচ্ছে অসাড় জীবনটাই স্বর্গসুখ ছিল । বুকে আর নাভির নিচে কোন অনুভুতি নেই । খুব তেষ্টা পেয়েছে । অনেক কষ্টে মুখ খুললাম পানি খাব বলে । হঠাৎ অসাড় মূর্তিগুলোতে প্রাণের স্পন্দন দেখা গেল । ওদেরই কেউ উঠে এসে পানি খাইয়ে দিলো । আমি আবার স্বর্গসুখে তলিয়ে গেলাম ।

***


হিজলপুর গ্রাম । জীবনানন্দের রূপসী বাংলার সব রূপ গায়ে মেখে আছে গ্রামটি । গ্রামের মেঠোপথ ধরে হেঁটে আসা যুবকটিকে দেখছে গ্রাম্য-বালিকাটি । যুবকটিকে ভালো লাগে ওর; হয়তো ভালও বাসে । কিন্তু গ্রাম-অঞ্চলে কেউ এ কথা মুখে বলে না । চোখের ভাষা একে অপরের পড়া হয়ে যায় । এক সময় একথা পরিবার পর্যন্ত পৌঁছায় । অতঃপর তার সাথেই অথবা অন্য কারো সাথে বিয়ে হয়ে যায় । অন্য কারোর সাথে হলে ভাব আদান প্রদানের ওখানেই সমাপ্তি ঘটে, কিন্তু ভালোবাসাটা মরে না । নিজের মধ্যেই বাড়তে থাকে ; একতাল অকেজো মাংসপিণ্ডের মতো ।

যুবকটির নাম কমল আর বালিকাটি কলি । পাশাপাশি বাড়ি ওদের । ছেলেবেলা থেকেই একসাথে বেড়ে উঠেছে ওরা । সেই ছোট থাকতেই ওদের বিয়ে ঠিক হয়ে আছে ; ২ টি পরিবারের আরও নিবিড় হয়ে আসার প্রথা অনুসারে । এ বছরেই ওদের বিয়েটা হবে ; হয়তো এ মাসেই । দেশে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয়ে গেছে । কিন্তু এর কোন টোকাই ওদের উপর এখনও পরেনি ।
কাল কমলের শহরে যাবার কথা । কলির জন্য লাল শাড়ি , লাল চুড়ি , আলতা , চুলে বাঁধার জন্য লাল ফিতা এভাবে লিস্ট করতে লাগল কমল । হঠাৎ জানালা দিয়ে বাইরে চোখ পড়তেই কমল দেখল ওর ঘনিষ্ঠ বন্ধু হাসু ওর বাড়ির দিকেই ছুটতে ছুটতে আসছে । কিছু না ভেবেই হাসুর দিকে ছুটে গেল ও ।
কমল- কি রে হাসু ? কি হইছে ?
হাসু- গ্রামে মিলিটারিরা আইছে কমল । আমাদের স্কুলঘরটারে তাগো ক্যাম্প বানাইছে । শুনছি গ্রামের সব জোয়ান পোলাপাইনরে নাকি কাল ক্যাম্পে লইয়া যাইব ।
কমল- কি করবি বইলা ভাবছিস ?
হাসু- আমি মুক্তিযুদ্ধ করুম । মারে কোনরকমে বুঝাইয়া বাইর হইছি । তোর কাছে আইছি তুই যাবি কিনা জানতে ।
কমল- কিন্তু কলি ..................
হাসু- দেশ স্বাধীন করতে পারলে আমাগো কোন দুঃখ থাকবে না । তুই কলিরে নিয়া চিন্তা করিস না । কলির জন্যি তুই যুদ্ধে যাবি ।
কমল- ঠিকই কইছস । দেশ আগে । তারপরও একবার কলিরে বলা দরকার ।
হাসু- চাচীরে কিছু কইবি না ?
কমল- কলিই মারে বুঝাইবনে ।
হাসু- চল তাইলে । রাত পোহাবার আগেই বর্ডারে পৌঁছাইতে হইব ।

“কলি......... কলি ” ফিসফিস করে ডেকে ওঠে কমল । কলি ভয়ে ভয়ে জানালা খুলে দেখে কমল দাঁড়িয়ে আছে , সাথে হাসু ভাই ।
কলি- কি হইছে কমল ? কই যাও তোমরা ?
কমল- আমরা মুক্তিযুদ্ধে যাইতাছি কলি ।
কলি- কিন্তু তোমার আর আমার ...!
কমল- হুম, আমি তোমার আর আমার জন্যই যুদ্ধে যাইতাছি । মারে কইতে পারিনাই । তোমার উপরেই সব ছাইড়া দিলাম । মারে তুমি সব বুঝাইয়া কইবা ।
কলি কমলের হাত ছাড়তে চায় না ; কিন্তু কিছু কিছু হাত চাইলেও ধরে রাখা যায় না ।
কমলের যুদ্ধে যাওয়ার পর ৩ মাস পার হয়েছে । প্রতিদিন ভয়ে ভয়ে থেকেছে ওরা এই বুঝি কেউ খবর দেয় যে কমল আর নাই । এই বুঝি ওদের বাড়িতে মিলিটারি আসে । বহুবার বহুভাবে বুঝিয়ে কলিকে মামাবাড়ি পাঠানো গেল না । এতদিন যে ভয়ে রাতদিন পার করেছে ওরা সেটাই ঘটে গেল এবার । একদল মিলিটারি গ্রাম ছাড়খার করতে এলো । ধরে নিয়ে গেল কলির মতো আরও অনেককে । অতঃপর ..............................!!!

***


“ দাদীমা, এরপর কি হল ? ”- ছোট্ট পুষ্প জানতে চায় কলির কাছে । তার ছোট্ট হাতটি দিয়ে আঁকড়ে ধরে কলির হাত ।
কলি আবার শুরু করে , “চারদিক অন্ধকারাচ্ছন্ন । মাঝে মাঝে গোলাগুলির শব্দ ভেসে আসছে । কখনও বা একবার দুবার, কখনও একটানা সাইরেনের মতো । মেঝেটা খুব স্যাঁতস্যাঁতে । ঘরটাতে এতই অন্ধকার যে ভিতরে কি .................. ” ।
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মিশন: কাঁসার থালা–বাটি

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:২৭

বড় ভাই–ভাবীর ম্যারেজ ডে। কিছু একটা উপহার দেওয়া দরকার। কিন্তু সমস্যা হলো—ভাই আমার পোশাক–আশাক বা লাইফস্টাইল নিয়ে খুবই উদাসীন। এসব কিনে দেওয়া মানে পুরো টাকা জ্বলে ঠালা! আগের দেওয়া অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

লিখেছেন এস.এম. আজাদ রহমান, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৪৪



বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

কেন বিএনপি–জামায়াত–তুরস্ক প্রসঙ্গ এখন এত তপ্ত?
বাংলাদেশের রাজনীতিতে দীর্ঘদিন ধরে একটি পরিচিত ভয়–সংস্কৃতি কাজ করেছে—
“র”—ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা নিয়ে রাজনীতিতে গুজব,... ...বাকিটুকু পড়ুন

×