somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

জোড়া শালিক

০৪ ঠা এপ্রিল, ২০১৩ সন্ধ্যা ৬:২৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ঢাকা বিশ্ববিদ্যলয়ের জিয়া হলে নিজের রুমের পেছনের বারান্দায় বসে সিগারেট টানছিলো শাহেদ। প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে ব্রাস করার আগে নিজের রুমের পেছনের বারান্দায় বসে একটা সিগারেট না টানলে নাকি ওর বাথরুম ক্লেয়ার হয় না। হলে ওর রুমমেটরা সবাই অনেক দেরি করে ঘুমায় আর উঠেও অনেক দেরিতে। কিন্তু শাহেদ সাধারনত ওঠে অনেক সকালে। সকালের মৃদ্যু মন্দ বাতাস, চারিদিকের নির্মল প্রকৃতি তার কাছে খুব ভালো লাগে। সিগারেট টানা শেষ করে চেয়ার থেকে উঠতে যাবে এমন সময় সে বারান্দার সিলিঙ্গে লক্ষ করলো একটা শালিক এসে এখানে বাসা বেঁধেছে। সাধারনত একটা শালিক কখনো বাসা বাঁধে না, দুইটা থাকে। ও ভাবলো, এইটা মনে হয় মেয়ে শালিক, ঘরদোর গোছানোর কাজে ব্যস্ত, পুরুষ শালিকটি হয়ত অন্নসংস্থানের কাজে বের হয়েছে। সে একবার ভাবলো, বারান্দায় একটা পাখি বাসা বেঁধেছে, এটা ভেঙে দিতে হবে। পরক্ষনেই আবার ভাবলো যে ওর নিজেকেও কিছুদিনের মাঝে হল ছেড়ে দিতে হবে, তখন এই শালিকটির মত ওরও অন্য কোথাও গিয়ে এমনিভাবেই বাসা বেঁধে থাকতে হবে। নিজের কথা ভেবেই সে আর শালিকটির বাসা ভাঙ্গার চিন্তা করলো না। এমনকি তার অন্যান্য রুমমেটদেরও বলে দিলো যেন তারা এই বাসাটি না ভাঙে। শাহেদ এই রুমের সবচে সিনিয়র। সিনিয়রের কথা অন্যেরা শুনতে বাধ্য।

পরেরদিন সকালে শাহেদ আবার চেয়ারটাতে বসে আছে। আজ সে সিগারেট টানছে আর শালিকের বাসার দিকে চেয়ে আছে। আজকেও সে একটা শালিকই দেখতে পেলো। একটা শালিক দেখে দিন শুরু করলে নাকি দিনটা খারাপ যায়, এমন কুসংস্কারে বিশ্বাস নেই শাহেদের। তারপরেও গতকাল একটা শালিক দেখে দিন শুরু করায় তার দিনটা ভালো যায়নি। তার প্রেমিকা তৃনার সাথে গতকাল বিশাল এক ঝগড়া হয়েছে তার। এর পর থেকে মনটা ভালো নেই শাহেদের। রাতে ঘুমটাও ভালো হয়নি। তৃনার সাথে শাহেদের সম্পর্ক সেই সেকেন্ড ইয়ার থেকে, একই সাথে পড়াশুনা করেছে ওরা। অনেকদিন ধরেই তৃনার বিয়ের কথাবার্তা চলছে, কিন্তু তৃনা শাহেদের জন্য অন্যান্য বিয়ের প্রপজালগুলো ফিরিয়ে দিয়েছে। এদিকে শাহেদ সদ্য মাস্টার্স শেষ করেছে, এখনো কোন চাকুরি যোগার করতে পারেনি। পারিবারিক অবস্থাও খুব একটা ভালো না যে বাপের টাকায় বউ পালবে। নিজের খরচ চালাতেই সে হিমসিম খায়, একটা টিউশনি করে আর ভর্তি সিজনে কোচিঙে ক্লাস নিয়ে তার নিজের খরচ যোগার করে। সে মাঝে মাঝে ভাবে, সমবয়সী একটা মেয়ের সাথে তার প্রেম করা উচিৎ হয়নি, কারন মেয়েদের বিয়ের জন্য একটা হৃষ্টপুষ্ট শরীরই যথেষ্ঠ কিন্তু ছেলেদের বিয়ের জন্য দরকার ক্যারিয়ার অমুক তমুক হাবিজাবি, যতদিনে একটা ছেলে বিয়ের উপযুক্ত হয়, ততদিনে অনেক মেয়ের কয়েকটা ছেলে মেয়ে জন্ম দেবার সময় পার হয়ে যায়। আজ আবার একটা শালিক দেখে তার মন খারাপ হয়ে গেলো, আজকের দিনটাও তার খারাপ যাবে মনে হয়।

প্রতিদিন সকালে উঠে যেন একটা শালিক না দেখতে হয় এই জন্য শাহেদ কাঁটাবন থেকে একটা খাঁচা আর একটা শালিক কিনে নিয়ে আসলো। কাঁটাবনের দোকানগুলোতে সাধারনত শালিক বিক্রি করে না। শালিক পাখিটির শরীরের সাদাকালো রঙ আর কথা বলতে পারার অক্ষমতার কারনেই কেউ কখনো শালিক কেনে না। তাই দোকানীরা রাখেও না। শাহেদকে অর্ডার দিয়ে শালিক আনাতে হয়েছে, তাই খরচটাও একটু বেশী পরেছে। খাঁচাটিকে সে পাখির বাসাটির খুব কাছেই ঝুলিয়ে রাখলো। এখন থেকে সকালে উঠে আর একটা শালিক দেখতে হবে না তার, তার দিনগুলো ভালো যাবে এই ভেবে সে মনে মনে কিছুটা প্রশান্তি অনুভব করলো।

এরপর থেকে কিছুদিন শাহেদের ভালোই কাটলো। দুইটা চাকুরীর জন্য ভাইভা দিয়েছে, যদিও কোনটাতেই এখনো ডাকেনি। একটা ভালো বেতনের টিউশনিও পেয়েছে। তৃনার সাথে ঝামেলাটাও মিটেছে। সময়টা ভালোই কাটছে ওর। প্রতিদিন সকালে উঠে সে এখন দুইটা শালিক দেখে, একটা খাঁচার ভেতরে আরেকটা পাখির বাসায়। খাঁচার শালিকটা দেখে শাহেদের খুব খারাপ লাগে যে আরেকটা পাখি তার সামনে দিয়েই সবসময় উড়ে উড়ে বেড়ায় অথচ সে খাঁচায় বন্দি থাকে সবসময়। পাখা থেকেও সে উড়তে পারে না। খাঁচার শালিকটিকে শাহেদ নিয়মিত খাবার দেয়, অথচ অন্যটি স্বাধীনভাবে নিজের খাবার নিজেই যোগার করে। সে মাঝে মাঝে ভাবে, খাচার পাখিটিকে ছেড়ে দেবে কিনা, কিন্তু খাঁচা থেকে ছেড়ে দিলে পাখিটি এখানে থাকবে সেটার নিশ্চয়তা কি? আবার সে ইচ্ছে করলেই বাসার পাখিটিকে খাঁচায় ভরতে পারবে না। পাখিদুটোর এই দুইরকম অবস্থা নিয়ে শাহেদের চিন্তার শেষ নেই।

একটা চাকুরীর ভাইভা দেবার জন্য চট্টগ্রাম গিয়েছিলো শাহেদ। ওখানে ওর ফুফুর বাসায় গিয়ে উঠেছিলো, অনেক দিন পর ফুফুর বাসায় যাওয়ায় ফুফু কয়েকদিন না থেকে আসতে দেয়নি। পতেঙ্গা সি বিচে ঘুরতে গিয়ে নিজের মোবাইলটা পানিতে ফেলেছে শাহেদ। তারপর থেকে সবার সাথে যোগাযোগ বন্ধ। ঢাকায় ফেরার পর প্রথমেই সে এলো তার বারান্দায়, বারান্দায় এসে দেখে খাচার ভেতরের পাখিটি মরে পরে আছে। গত কয়েকদিনে সে বাইরে থাকায় তাকে খাবার দেয়া হয়নি, না খেতে পেয়ে পাখিটি মরে গেছে। কিছুক্ষনের মাঝে বাসার পাখিটি বাসায় ফিরলো। আবারো তাকে দেখতে হলো একটা শালিক। শাহেদের রুমমেট ওর হাতে একটা চিঠি ধরিয়ে দিয়ে বলল, এই চিঠিটা গতকাল এসেছে। চিঠিটা খুলে শাহেদের মুখটা উজ্জ্বল হয়ে উঠল, চট্টগ্রামে যে ভাইভাটা দিয়েছিলো সেই চাকুরিটি ওর হয়ে গেছে। সে তখন ভাবলো, শালিক একটা হোক আর দুইটা হোক এইটা কোন ব্যাপার না, আসলে সবকিছু নিজের মধ্যে, ভাগ্য বলে কিছু নেই। চাকুরীর খবরটা তৃনাকে না জানালেই নয়। রুমমেটের ফোন থেকে তৃনাকে ফোন করলো শাহেদ। ফোন ধরলো তৃনার মা, ধরে বলল, তৃনার আজ বিয়ে, ছেলে ম্যাজিস্ট্রেট।

শাহেদ বারান্দায় বসে একটা সিগারেট জ্বালিয়ে একটি মৃত আরেকটি জীবিত শালিকের দিকে অপলক নয়নে তাকিয়ে রইলো।
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

অনির্বাণ শিখা

লিখেছেন নীলসাধু, ০৭ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩১



রাত ন’টার মত বাজে। আমি কি যেন লিখছি হঠাৎ আমার মেজো মেয়ে ছুটতে ছুটতে এসে বলল, বাবা একজন খুব বিখ্যাত মানুষ তোমাকে টেলিফোন করেছেন।

আমি দেখলাম আমার মেয়ের মুখ উত্তেজনায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

=ইয়াম্মি খুব টেস্ট=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৭ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:১৪



©কাজী ফাতেমা ছবি
সবুজ আমের কুচি কুচি
কাঁচা লংকা সাথে
ঝালে ঝুলে, সাথে চিনি
কচলে নরম হাতে....

মিষ্টি ঝালের সংমিশ্রনে
ভর্তা কি কয় তারে!
খেলে পরে একবার, খেতে
ইচ্ছে বারে বারে।

ভর্তার আস্বাদ লাগলো জিভে
ইয়াম্মি খুব টেস্ট
গ্রীষ্মের... ...বাকিটুকু পড়ুন

অণু থ্রিলারঃ পরিচয়

লিখেছেন আমি তুমি আমরা, ০৭ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৭


ছবিঃ Bing AI এর সাহায্যে প্রস্তুতকৃত

১৯৪৬ কিংবা ১৯৪৭ সাল।
দাবানলের মত সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা ছড়িয়ে পড়েছে সারাদেশে।
যে যেভাবে পারছে, নিরাপদ আশ্রয়ে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে। একটাই লক্ষ্য সবার-যদি কোনভাবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

শিরোনামহীন দুটি গল্প

লিখেছেন সাহাদাত উদরাজী, ০৭ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৫৫

গল্প ১।
এখন আর দুপুরে দামী হোটেলে খাই না, দাম এবং খাদ্যমানের জন্য। মোটামুটি এক/দেড়শ টাকা প্লাস বয়দের কিছু টিপস (এটা আমার জন্য ফিক্সড হয়েছে ১০টাকা, ঈদ চাদে বেশি হয়,... ...বাকিটুকু পড়ুন

এশিয়ান র‍্যাংকিং এ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান !!

লিখেছেন ঢাবিয়ান, ০৭ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:২০

যুক্তরাজ্যভিত্তিক শিক্ষা সাময়িকী 'টাইমস হায়ার এডুকেশন' ২০২৪ সালে এশিয়ার সেরা বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকা প্রকাশ করেছে। এশিয়ার সেরা ৩০০ তালিকায় নেই দেশের কোনো বিশ্ববিদ্যালয়।তালিকায় ভারতের ৪০, পাকিস্তানের ১২টি, মালয়েশিয়ার ১১টি বিশ্ববিদ্যালয়... ...বাকিটুকু পড়ুন

×