somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

রাজনীতির পল্টিবাজীঃ কোথায় গেল শমী কায়সরের কান্না?

২০ শে এপ্রিল, ২০১০ রাত ১১:২১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

অনেকে একটা কথা প্রায় বলে- আওয়ামীলীগ বামদের দখলে চলে গেছে। এক্ষেত্রে উদাহরণ দেয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুন, শিক্ষামন্ত্রী নুরুল্ ইসলাম নাহিদ সহ আওয়ামীলীগ অনেক মন্ত্রী যারা ছাত্র জীবনে বাম রাজনীতির সাথে জড়িত ছিলেন। আর উদাহরনগুলো দিচ্ছে যারা ধর্মকে পুজি করে ব্যবসা করছে সেই জামাত শিবিরের চেলারা। তাদের চোখে কি বিএনপি’র বামদের চোখে পড়ে না? মান্নান ভূইয়া, নোমান সহ অনেক নেতা বাম দল থেকে এসেছে। জামাতেও তো বাম দল থেকে প্রচুর নেতা এসেছে। শিবিরের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি নুরুল ইসলাম বুলবুল চাঁপাইনবাবগঞ্জ কলেজের ছাত্র মৈত্রী থেকে নির্বাচিত জিএস ছিলেন। তাদের সাবেক সভাপতি মুজিবুর রহমান মঞ্জু বাম রাজনীতির সাথে জড়িত ছিলেন। জামাত শিবিরের অনেক নেতা কর্মী আছেন যাদের রাজনীতির হাতেখড়ি বামপন্থী রাজনীতিতে। সুতরাং যারা বাম রাজনীতির বিরুদ্ধে কথা বলছেন তাদের উদ্দেশ্য করে বলছি- বাংলাদেশের একমাত্র বুঝে শুনে রাজনীতি করে বামেরা। তারা পড়া লেখা করে বাম দলগুলোর দিকে এগোয়। এছাড়া আর যত রাজনীতিবিদ আছে তারা ক্ষমতা, অর্থ ইত্যাদির জন্য রাজনীতি করে। বাম দল থেকে অনেকে বিভিন্ন কারনে আওয়ামীলীগ ও বিএনপি’তে যোগ দিয়েছেন। খেয়াল করে দেখবেন সেই দলে তারাই Dedicated রাজনীতিবিদ। আমার কথা শুনে হয়ত আপনাদের খারাপ লাগতে পারে কিন্তু আপনারা একটু খেয়াল করে দেখেন আমার কথাগুলো সত্যি কিনা। আওয়ামীলীগের ভাগ্য ভাল যে বামপন্থীরা পঁচনশীল আওয়ামীলীগের হাল ধরেছে।


যাহোক আমার আজকের বিষয়বস্তু শমী কায়সার। যার মা আওয়ামীলীগ থেকে মনোনীত মহিলা এমপি হয়েছিলেন। তার বাবা ছিলেন বাংলাদেশের গর্ব। যিনি একাত্তরে রাজাকার বাহিনীর হাতে প্রান হারান। প্রতি বছর শহীদ বুদ্ধিজীবি দিবসে যার কথা আমরা স্বরণ করি।

১৯৯৬ সাল। তখন আমার বিশ্ববিদ্যালয়ের ২য় বর্ষ চলছে। আওয়ামীলীগ ক্ষমতা পাওয়ার পর প্রথম বুদ্ধিজীবি দিবস পালন করছে। সেই উপলক্ষ্যে আমরা চট্টগ্রাম মহানগরীতে বুদ্ধিজীবি দিবস উপলক্ষ্যে এক সেমিনার টাইপের আলোচনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করি। তারিখটা ঠিক মনে নেই তবে সেটা মনে হচ্ছে ডিসেম্বরের ১ বা ২ তারিখ হবে। ওই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রামের বর্তমান মেয়র মহিউদ্দিন চৌধুরী যাকে চট্টগ্রামের ‘মাহাথীর মোহাম্মদ’ বলা যায়। আর অতিথী হিসেবে ছিলেন বিশিষ্ট অভিনেত্রী শমী কায়সার ও তার মা পান্না কায়সার। পান্না কায়সারকে উপলক্ষ্য করে এই প্রোগ্রাম হলেও সবার নজরে ছিলেন শমী কায়সার। তখনকার নাটকে নায়িকা ছিলেন মাত্র দুইজন- শমী কায়সার ও বিপাশা হায়াত। অতিথীদের বক্তৃতায় শমী কায়সার যে হৃদয় বিগলিত বক্তৃতা দিলেন তাতে ওই প্রোগ্রামে এমন কোন দর্শক ছিল না যার চোখ দিয়ে পানি পড়েনি। শমী কায়সার অদ্ভূত দক্ষতায় সৃতিচারণ করে আমাদের জানালেন কীভাবে তার বাবা শহীদুল্লাহ কায়সারকে মাওলানা মান্নান বাসা থেকে ধরে নিয়ে যায়। সেই মাওলানা মান্নানের সাথে ছিল লন্ডন জামাতের নেতা খালেক মজুমদার (নামটা শিউর না)। সেমিনারের শেষে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছাত্রীদের অভিনীত একটা নাটক মঞ্চস্থ হয়েছিল। কিন্তু কারো নজর ওই নাটকের দিকে ছিল না। সবার চোখের সামনে ভাসছিল এক বাবা হারানো মেয়ের কান্নার ছবি। এমনকি নাটকের অভিনেতা অভিনেত্রীরাও ঠিক মত অভিনয় করতে পারেনি। তাদেরও একই অবস্থা হয়েছিল।

মাওলানা মান্নান ছিলেন তৎকালীন বিএনপি ও জামাতের মূখপাত্র রাজাকার আদর্শের দৈনিক পত্রিকার মালিক যার টাকা সম্ভবত সৌদি বা পাকিস্তান থেকে আসত। ‘ইনকিলাব’ ছিল সেই পত্রিকার নাম। মাওলানা মান্নান যখন এরশাদের মন্ত্রী ছিলেন তখন দেশের বিভিন্ন মসজিদের বরাদ্দ টাকা আত্মসাত করে ইনকিলাব পত্রিকা চালু করেন। বিএনপি’র আমলে এই পত্রিকা সরকারের অনুকূল্য পায়। প্রচুর সরকারী বিজ্ঞাপন ছাড়াও এই পত্রিকা নিউজপেপারেও অনেক ছাড় পেত যদি তখন সবচেয়ে জনপ্রিয় বহুল প্রচারিত দৈনিক ছিল ‘জনকন্ঠ’। ইনকিলাব পত্রিকার প্রতিটি কলামে তখন আওয়ামীলীগের কড়া অন্ধ সমালোচনা ছাড়া আর কিছুই থাকত না। এমনিতে আমরা আগেই জানতাম শহীদুল্লাহ কায়সার হত্যাকান্ডের সাথে মাওলানা মান্নান জড়িত। তার পরে শমী কায়সারের মুখে সেইদিন শহীদুল্লাহ কায়সারকে ধরে নিয়ে যাওয়ার ঘটনা শোনার পরে রাজাকারের বাচ্চাটাকে খুন করার একটা নেশা মাথায় উঠে গিয়েছিল।

মাঝখানে অনেক ঘটনা ঘটে গেছে। সেই দিকে আমরা না যাই। শুধু বলব মাওলানা মান্নান রাজাকার সাঈদীর সাথে গেঞ্জাম করে কীভাবে যেন আওয়ামীলীগার হয়ে গেলেন। তিনি এবং তার পুত্র বাহাউদ্দিন কড়া আওয়ামীলীগার। মাওলানা মান্নান মারা যাওয়ার পরে ইনকিলাবের প্রধান হর্তাকর্তা হন মান্নানের পুত্র বাহাউদ্দিন। মাওলানা বাহাউদ্দিন এখন শেখ হাসিনার বিদেশ সফরের সঙ্গী! সেই সফরে পান্না কায়সারও যায়!! গত নির্বাচনে চাঁদপুরের একটা আসন থেকে বাহাউদ্দিন আওয়ামীলীগে নমিনেশন চ্যেছিলেন যদিও দীপু মনির চেষ্টায় তা হয়নি।


গত বছর রাজধানীর একটা হোটেলে ব্যবসায়ীদের সম্মানে আয়োজিত আওয়ামীলীগের এক ইফতার পারটিতে শমী কায়সারের সাথে দেখা হয়। তিনি আমাকে চিনতে পারেন নি। চেনার কথাও নয়। আমিতো আর বিখ্যাত কেউ নই। একটু পরে সেখানে বাহাউদ্দিন সাহেব এলেন। আমি রুদ্ধশ্বাসে অপেক্ষা করছি কী হয়। বাবার খুনির পুত্রের সাথে দেখা। দল এখন ক্ষমতায়। দু’জনই ক্ষমতাসীন দলের লোক।

সে আরেক ইতিহাস! দু’জনই হাসিমুখে দুজনকে সম্ভাষন জানালেন! এর পরে এক টেবিলে বসে পিতার হত্যাকারীর পুত্রে সাথে ইফতার করলেন।

এই লেখার প্রথম কলামটা শুধু বামপন্থী ব্লগারদের জন্য। তারা ছাড়া আর কেউ বুঝবে না কেন আমি এই ‘অপ্রাসঙ্গিক প্যারা’টা এই লেখায় যোগ করেছি!!!!
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে এপ্রিল, ২০১০ রাত ১২:৪৩
৩৫টি মন্তব্য ২৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মুসলিম কি সাহাবায়ে কেরামের (রা.) অনুরূপ মতভেদে লিপ্ত হয়ে পরস্পর যুদ্ধ করবে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪৯




সূরাঃ ৩ আলে-ইমরান, ১০৫ নং আয়াতের অনুবাদ-
১০৫। তোমরা তাদের মত হবে না যারা তাদের নিকট সুস্পষ্ট প্রমাণ আসার পর বিচ্ছিন্ন হয়েছে ও নিজেদের মাঝে মতভেদ সৃষ্টি করেছে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদে মসজিদে মোল্লা,ও কমিটি নতুন আইনে চালাচ্ছে সমাজ.

লিখেছেন এম ডি মুসা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সকাল ১০:২৩

গত সপ্তাহে ভোলার জাহানপুর ইউনিয়নের চরফ্যাশন ওমরাবাজ গ্রামের এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। লোকটি নিয়মিত মসজিদে যেত না, মসজিদে গিয়ে নামাজ পড়েনি, জানা গেল সে আল্লাহর প্রতি বিশ্বাসী ছিল, স্বীকারোক্তিতে সে... ...বাকিটুকু পড়ুন

গল্পঃ অনাকাঙ্ক্ষিত অতিথি

লিখেছেন ইসিয়াক, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ দুপুর ১:১২

(১)
মাছ বাজারে ঢোকার মুখে "মায়া" মাছগুলোর উপর আমার  চোখ আটকে গেল।বেশ তাজা মাছ। মনে পড়লো আব্বা "মায়া" মাছ চচ্চড়ি দারুণ পছন্দ করেন। মাসের শেষ যদিও হাতটানাটানি চলছে তবুও একশো কুড়ি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগে বিরোধী মতের কাউকে নীতি মালায় নিলে কি সত্যি আনন্দ পাওয়া যায়।

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১৮

ব্লগ এমন এক স্থান, যেখানে মতের অমিলের কারণে, চকলেটের কারণে, ভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শের কারণে অনেক তর্কাতর্কি বিতর্ক কাটা কাটি মারামারি মন্তব্যে প্রতিমন্তব্যে আঘাত এগুলো যেনো নিত্য নৈমিত্তিক বিষয়। ব্লগটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগার'স ইন্টারভিউঃ আজকের অতিথি ব্লগার শায়মা

লিখেছেন অপু তানভীর, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ১১:০৫



সামুতে ব্লগারদের ইন্টারভিউ নেওয়াটা নতুন না । অনেক ব্লগারই সিরিজ আকারে এই ধরণের পোস্ট করেছেন । যদিও সেগুলো বেশ আগের ঘটনা । ইন্টারভিউ মূলক পোস্ট অনেক দিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×