somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

এক ভাষা শহীদের কবর হতে উচ্চারিত কিছু কথা!!!

২১ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ রাত ১২:৫৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমাদের
সাংস্কৃতিতে হিন্দি, ইংরেজি শক্ত আসন গেড়ে বসেছে। নাটকে, গানে কোথাও বাংলার প্রীতি নেই।
দর্শকরা হিন্দি কিংবা ভিনদেশী চ্যানেলেই ঝুকে পড়েছে বেশী। আমাদের কাছে এখন বাংলা ভাষা যেন কেবলই
ফাঁকা আওয়াজ! তোতার বুলি! মুখস্থ বিদ্যা! হায় রে বাঙালির মন! যে বাঙালির মুখে এত পদ্য, এত গানের
ফোয়ারা তাদেরই সঙ্গে সুপার মার্কেটে দেখা হলে ‘হাই ! হাউ আর ইউ?’; ডিনারে দেখা হলে, ‘নাইস টু মিট ইউ!’
আর কোন পার্টিতে দেখা হলে, ‘ক্যান আই হ্যাভ দিস ডান্স উইথ ইউ?’ সব চেয়ে আশ্চর্য হয়ে যেতাম বাঙালির
ছেলেমেয়েদের দেখে। কেমন চোখ গোল গোল করে, মাথা দুলিয়ে, দুলিয়ে “আমি বাঙ্গালি বাংলা আমার”
বলে স্টেজ কাঁপাচ্ছে, অথচ স্টেজ থেকে নেমে মা বাবা, বন্ধু বান্ধবদের মাঝে বাংলার ‘ব’ পর্যন্ত উচ্চারণ
করছে না। কি আর বলবো আমার দু’ সন্তানেরওতো এই একই অবস্থা।
হায়রে ফেব্রুয়ারী ! মায়ের ভাষাকে বাঁচানোর তাগিদ আসে বছরে এই একটি মাসেই। আর
২১শে ফেব্রুয়ারী বা ভাষা আন্দোলন স্কুলের পাঠ্যবইয়েই সীমাবদ্ধ থাকে বর্তমানে। একুশের ভোরেই কেবল
অধুনা বাংলাদেশের মানুষের গন্তব্য হয় শহীদ মিনার। এই বিশেষ দিনটিতে মানুষের ঢল নামে পথে। কেবল
ফেব্রুয়ারী এলেই ভাষা নিয়ে হৈ চৈ হয়। তার পর মার্চ থেকে চলে ভিনদেশী ভাষা চর্চা। এটা যেন এক নয়া ধরন।
বলবার আর অপেক্ষা রাখে না যে দেশে বাংলার অবমাননা দিন দিন বেড়েই চলেছে। ভুলে ভরা সরকারি-
বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সাইনবোর্ড, ব্যানার, পোস্টারেও বানানরীতি মানা হচ্ছে না। ভাষা আন্দোলনের ষাট
বছর পরও ভুল বানানের ছড়াছড়ি সর্বত্র। যুগের পর যুগ নানাভাবে এ বিষয়ে কথা উঠলেও বাংলার
অবমাননা দিনকে দিন বেড়েই চলেছে। এমনকি এ সংক্রান্ত উচ্চ আদালতের নির্দেশেরও
তোয়াক্কা করা হচ্ছে না। রাজধানীর অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানেরই নামকরণ করা হয়েছে বিদেশি ভাষায়। কোথাও
বিদেশি শব্দ লেখা হয়েছে বাংলায়। আবার কোথাও অহেতুক বাংলা শব্দকে ইংরেজিতে লেখা হয়েছে। আবার
কোথাওবা বাংলা-ইংরেজির মিশেল আর ভুল বানানের ছড়াছড়ি। ঢাকার সব বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের নামফলক
লেখা হয়েছে ইংরেজিতে। উত্তরা থেকে শাহবাগ পর্যন্ত শত শত বিপণি বিতান আর দোকানে লক্ষ্য
করা গেছে ইংরেজিতে লেখা সাইনবোর্ড। ইংরেজি নাম লেখা হয়েছে বাংলা হরফে। শহর জুড়ে মোবাইল ফোন
কোম্পানির ডিজিটাল বিলবোর্ডগুলোয় ব্যবহার করা হয়েছে ইংরেজি ভাষা। হাউজিং কোম্পানির বিলবোর্ডেরও
দশা একই। খাবারের দোকানে বিরিয়ানি না লিখে লেখা হয়েছে ‘বিরানী’, কোথাও লেখা হয়েছে ভর্তার
পরিবর্তে ‘ভরতা’ এরকম অসংখ্য ভুল।
ভাষা প্রয়োগে কোথায় যেন এক ধরনের অবহেলা। কোথায় যেন এক ধরনের হীনমন্যতা। কেন এমন করা হয় ? এ
সব প্রশ্নের কোনো জবাব নেই।

সংস্কৃতের অপভ্রংশ মাগধী-প্রাকৃত ভাষা থেকে বাংলা ভাষার উতপত্তি হয় ১০০০-১২০০ খ্রিষ্টাব্দে। জন্মের
প্রথম লগ্ন থেকেই এই বাংলাভাষা এতটাই উন্নত এবং সমৃদ্ধ যে সাংষ্কৃতিক বৈষম্যের
উর্ধ্বে গিয়ে একটি বিস্তীর্ণ অঞ্চলের অগণিত মানুষকে এক সূত্রে বাঁধতে পেরেছিল। গড়ে তুলেছিল
বাংলা সংষ্কৃতি ও জাতি। কিন্তু মাতৃদুগ্ধসম এমনই এক ভাষাকে যখন বর্জন করার আদেশ এলো তখন
সন্তানদের বুকে খুব স্বাভাবিক ভাবেই বেজে উঠেছিল বিদ্রোহের দামামা যার আগুন
জ্বলেছিলো ২১শে ফেব্রুয়ারী ১৯৫২ সালে। কিন্তু মায়ের সে ভাষা এখন কালো মেঘে ছায়াচ্ছন্ন।
মায়ের ভাষাকে বাঁচানোর তাগিদ আসে বছরে এই একটি মাসেই। কেবল ফেব্রুয়ারী এলেই ভাষা নিয়ে হৈ চৈ হয়। তার
পর মার্চ থেকে চলে ভিনদেশী ভাষা চর্চা।

এই সকল ভিনদেশী ভাষা প্রীতি দেখলে আজ ভাষা শহীদরা আত্মহত্যা করতে চাইতো আমার মনে হচ্ছে। আজ হয়ত ওরা কবর হতে আক্ষেপে দীর্ঘ শ্বাস ফেলেছেন।
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=হিংসা যে পুষো মনে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২২ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:৫৮


হাদী হাদী করে সবাই- ভালোবাসে হাদীরে,
হিংসায় পুড়ো - কোন গাধা গাধিরে,
জ্বলে পুড়ে ছাই হও, বল হাদী কেডা রে,
হাদী ছিল যোদ্ধা, সাহসী বেডা রে।

কত কও বদনাম, হাদী নাকি জঙ্গি,
ভেংচিয়ে রাগ মুখে,... ...বাকিটুকু পড়ুন

গণমাধ্যম আক্রমণ: হাটে হাঁড়ি ভেঙে দিলেন নূরুল কবীর ও নাহিদ ইসলাম !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ২৩ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:০৫


জুলাই গণঅভ্যুত্থানের রক্তস্নাত পথ পেরিয়ে আমরা যে নতুন বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখেছিলাম, সাম্প্রতিক মব ভায়োলেন্স এবং গণমাধ্যমের ওপর আক্রমণ সেই স্বপ্নকে এক গভীর সংকটের মুখে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে। নিউ এজ... ...বাকিটুকু পড়ুন

রিকশাওয়ালাদের দেশে রাজনীতি

লিখেছেন এস.এম. আজাদ রহমান, ২৩ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:৪৯

রিকশাওয়ালাদের দেশে রাজনীতি

সবাই যখন ওসমান হাদিকে নিয়ে রিকশাওয়ালাদের মহাকাব্য শেয়ার করছে, তখন ভাবলাম—আমার অভিজ্ঞতাটাও দলিল হিসেবে রেখে যাই। ভবিষ্যতে কেউ যদি জানতে চায়, এই দেশটা কীভাবে চলে—তখন কাজে লাগবে।

রিকশায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিএনপিকেই নির্ধারণ করতে হবে তারা কোন পথে হাটবে?

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ২৩ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:০৫




অতি সাম্প্রতিক সময়ে তারেক রহমানের বক্তব্য ও বিএনপির অন্যান্য নেতাদের বক্তব্যের মধ্যে ইদানীং আওয়ামীসুরের অনুরণন পরিলক্ষিত হচ্ছে। বিএনপি এখন জামাতের মধ্যে ৭১ এর অপকর্ম খুঁজে পাচ্ছে! বিএনপি যখন জোট... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় আগ্রাসনবিরোধী বিপ্লবীর মৃত্যু নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ২৩ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:৩৭



শরিফ ওসমান হাদি। তার হাদির অবশ্য মৃত্যুভয় ছিল না। তিনি বিভিন্ন সভা-সমাবেশ, আলোচনা ও সাক্ষাৎকারে বক্তব্য দিতে গিয়ে তিনি অনেকবার তার অস্বাভাবিক মৃত্যুর কথা বলেছেন। আওয়ামী ফ্যাসিবাদ ও ভারতবিরোধী... ...বাকিটুকু পড়ুন

×