somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সুন্নত এর প্রকৃত অর্থ

২০ শে এপ্রিল, ২০১২ বিকাল ৩:২৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


সুন্নাহ কথাটির শাব্দিক অর্থ পদ্ধতি (ত্বরীকা)। এ শব্দটি এসেছে 'সান আল শাই' আরবী মূল শব্দ হতে। যার অর্থ কোন কিছুকে ধারালো বা উজ্জল করা। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'য়ালা বলেন:

سُنَّةَ مَنْ قَدْ أَرْسَلْنَا قَبْلَكَ مِنْ رُسُلِنَا وَلا تَجِدُ لِسُنَّتِنَا تَحْوِيلا
আপনার পুর্বে আমি যত রাসূল প্রেরণ করেছি, তাদের ক্ষেত্রেও এরূপ সুন্নত ছিল, আপনি আমার সুন্নত এর কোন ব্যতিক্রম পাবেন না। [সূরা আল-ইসরা: ৭৭]

سُنَّةَ اللَّهِ فِي الَّذِينَ خَلَوْا مِنْ قَبْلُ وَلَنْ تَجِدَ لِسُنَّةِ اللَّهِ تَبْدِيلا
যারা পুর্বে অতীত হয়ে গেছে তাদের ব্যাপারে এটাই ছিল আল্লাহর সুন্নত, আপনি আল্লাহর সুন্নত-এ কখনো পরিবর্তন পাবেন না। [সূরা আহযাব: ৬২]


إِلا سُنَّةَ الأوَّلِينَ فَلَنْ تَجِدَ لِسُنَّةِ اللَّهِ تَبْدِيلا وَلَنْ تَجِدَ لِسُنَّةِ اللَّهِ تَحْوِيلا
তারা কেবল পুর্ববর্তীদের (ক্ষেত্রে আল্লাহ্‌র) সুন্নত এর অপেক্ষা করছে। অতএব আপনি আল্লাহর সুন্নত-এ পরিবর্তন পাবেন না এবং আল্লাহর সুন্নত-এ কোনরকম বিচ্যুতিও পাবেন না। [সূরা আল-ফাতির: ৪৩]


রাসূলুল্লাহ (সা) হাদীসেও এ শব্দটি একাধিকবার ব্যবহার করেছেন। যেমন:

‏أُوصِيكُمْ بِتَقْوَى اللَّهِ وَالسَّمْعِ وَالطَّاعَةِ وَإِنْ عَبْدٌ حَبَشِيٌّ فَإِنَّهُ مَنْ يَعِشْ مِنْكُمْ يَرَى اخْتِلَافًا كَثِيرًا وَإِيَّاكُمْ‏ ‏وَمُحْدَثَاتِ‏ ‏الْأُمُورِ فَإِنَّهَا ضَلَالَةٌ فَمَنْ أَدْرَكَ ذَلِكَ مِنْكُمْ فَعَلَيْهِ بِسُنَّتِي وَسُنَّةِ الْخُلَفَاءِ الرَّاشِدِينَ الْمَهْدِيِّينَ عَضُّوا عَلَيْهَا ‏بِالنَّوَاجِذِ
আমি তোমাদের তাকওয়ার উপদেশ দিচ্ছি এবং (ইসলামী নেতৃত্বের) শ্রবণ ও আনুগত্য করার উপদেশ দিচ্ছি যদি কোন হাবশী গোলামও (তোমাদের আমীর নিযুক্ত হয়)। কেননা তোমাদের মধ্যে যারা (ভবিষ্যতে) জীবিত থাকবে তারা অসংখ্য ব্যাপারে মতবিভেদ দেখতে পাবে। এরূপ অবস্থায় নতুন উদ্ভাবিত বিষয়াদি থেকে তোমরা নিজেদের বাঁচিয়ে রাখ, কারণ সেগুলো পথভ্রষ্টতা। সুতরাং, তোমাদের যে কেউ সেই (যুগ) কে পাবে, সে যেন আমার সুন্নত ও হেদায়াতদিশারী খুলাফায়ে রাশিদীনের সুন্নত দাঁত দ্বারা শক্ত করে কামড়িয়ে ধরে। [তিরমিযি]


অপর এক হাদীসে রাসূল (সা) বলেন:

فَمَنْ رَغِبَ عَنْ سُنَّتي فَلَيْسَ مِنّي

... যে আমার সুন্নত অনুসরন করলো না, সে আমার অন্তর্ভূক্ত নয়। [বুখারী, মুসলিম]
সুন্নতের শরয়ী অর্থ:
ফিকহ্‌-এর আলেমগণের নিকট:
সুন্নাহ বলতে রাসূলুল্লাহ (সা) হতে বর্ণিত নাফিলাহ বা নফল (অতিরিক্ত) কে বোঝানো হয়েছে; যেমন ফরয (বাধ্যতামূলক) ছাড়া উৎসাহিত রাকাত (রাকাত আস সুন্নাহ) সংখ্যা। যদিও সুন্নাহ রাসূলুল্লাহ (সা) হতে বিবৃত হয়েছে, কিন্তু একে উৎসাহিত কাজ বা নাফিলাহ করা হয়েছে বলে একে সুন্নাহ বলা হয়। একই ভাবে ফরয-কে বাধ্যতামূলক কাজ হিসাবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এভাবে ফজরের দুই রাকাত বাধ্যতামূলক (ফরয) নামাজের বিষয়টি রাসূলুল্লাহ (সা) এর নিকট হতে মুতাওয়াতির বিবরণের মাধ্যমে ফরয হিসাবে নির্ধারিত হয়েছে।

কাজেই ইবাদতের ক্ষেত্রে আদেশ (আম্‌র) ফরয বা নাফিলাহ হতে পারে। এবং অন্য কাজের ক্ষেত্রে ফরয, মানদুব কিংবা মুবাহ হতে পারে। অন্য কথায় নাফিলাহ মানদুবের সমার্থক হলেও একে নাফিলাহ বা সুন্নাহ বলা হয়।

এক্ষেত্রে এমন ধারণা পোষণ অনুচিত যে, ফরয আল্লাহর পক্ষ থেকে এবং সুন্নাহ রাসূলুল্লাহ্‌ (সা)-র পক্ষ থেকে। সুন্নাহ এবং ফরয উভয়েই আল্লাহর পক্ষ থেকে এসেছে, রাসূলুল্লাহ (সা) আল্লাহর পক্ষ থেকে এর বহনকারী মাত্র। কারণ রাসূলুল্লাহ (সা) নিজের খেয়াল খুশী অনুযায়ী একটি শব্দও উচ্চারণ করেননি, তিনি তা-ই বলেছেন যা তার উপর আল্লাহর পক্ষ থেকে অবতীর্ণ করা হয়েছে, অর্থাৎ ওহী হিসাবে প্রেরণ করা হয়েছে।

إِنْ هُوَ إِلا وَحْيٌ يُوحَى~وَمَا يَنْطِقُ عَنِ الْهَوَى
তিনি নিজের খেয়ালখুশী অনুযায়ী কিছু উচ্চারণ করেন না। (বরং) এটি ওহী যা প্রত্যাদেশ হয়। [সূরা নাজম: ৩-৪]

সকল সুন্নাহ্‌র নির্দেশই এসেছে আল্লাহ'র পক্ষ থেকে, রাসূলুল্লাহ (সা) এর পক্ষ থেকে নয়।

হাদীসের আলেমগণের নিকট:
অপর অর্থে সুন্নাহ বলতে কুরআন ব্যতীত রাসূলুল্লাহ (সা) এর পক্ষ থেকে আগত সকল শরঈ' তথ্য-প্রমাণকেও বোঝানো হয়। এর মাঝে তার কথা, কাজ এবং সম্মতিও (তার সম্মুখে সম্পন্ন কোন কাজে নীরব থাকা) অন্তর্ভূক্ত।


উসুল আল ফিকহ্‌-এর আলেমগণের নিকট:
সুন্নাহ হচ্ছে কুরআনের পাশাপাশি ইসলামী শরীয়তের অপর এক উৎস। উদাহরনসরূপ, যখন বলা হয় রমজান মাসের বহির্ভূত রোযা রাখা সুন্নতের অন্তর্ভূক্ত, তখন এটা বোঝানো হয় যে এটি সুন্নাহ হতে প্রমানিত।

এছাড়াও আক্বীদার আলেমগণের দ্বারা কখনো কখনো এটি ব্যবহার হতে দেখা যায়। সেক্ষেত্রে এটি সঠিক আক্বীদা অর্থে ব্যবহৃত হবে। যেমন: ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বলের আক্বীদার উপর একটি বইয়ের নাম হচ্ছে - উসুল আস-সুন্নাহ।

সুন্নাহ সম্পর্কে সমাজে প্রচলিত বিভিন্ন বিভ্রান্তি:


আমাদের সমাজে অনেকেই সুন্নাহ বলতে কিছু নির্দিষ্ট আচার-অনুষ্ঠান ও কাজকর্ম বুঝেন এবং যারা সমাজে সেসব বিষয়াদি পালন করেন না, তাদের ব্যাপারে বলা হয় যে তারা নবীর সুন্নত পালন করে না। কিন্তু সুন্নাহ'র প্রকৃত অর্থ তা নয়। কুরআনে সুন্নাহ শব্দটি শাব্দিক অর্থে আসলেও, রাসূলুল্লাহ (সা) এর হাদীসে সুন্নাহ শব্দটি ব্যাপক অর্থবোধক শব্দ হিসেবে এসেছে। হাদীসে সুন্নাহ শব্দটি রাসূলুল্লাহ (সা) এর সম্পূর্ন জীবন পদ্ধতি বোঝাতে ব্যবহৃত হয়েছে। সুতরাং আমরা যখন ফজর-এর দুই রাকআত ফরজ নামাজ পড়ছি, তখন মূলত আমরা নবীজীর সুন্নতই (জীবনপদ্ধতি, এক্ষেত্রে ফরজ ইবাদত) অনুসরন করছি। রাসূলুল্লাহ (সা) এর পরবর্তী কয়েক যুগ পরে বিভিন্ন মুজতাহিদীনরা ইসলামের নফল (ফরজের বাইরে অতিরিক্ত) কাজ সমূহকে সুন্নত নামকরন করেছিলেন (যেমন: সুন্নতে মু'আক্কাদা, সুন্নতে জায়েদা)। কিন্তু এর অর্থ এই নয় যে তারা এর বাইরে অন্য বিষয়গুলোকে অনুসরন করাকে নবীর সুন্নাহ অনুসরন করা বলতেন না। অন্যকথায়, ইসলামের যেকোনো হুকুম পালন করা আসলে নবীর সুন্নতই পালন করা। আরবী ভাষা ও ইসলামী জ্ঞান সম্পর্কে অজ্ঞতার কারণে আজকে সমাজে এ ধরনের কথা প্রচলিত আছে।

এছাড়াও ফিকহী সুন্নত বা ফরজের বাইরে অতিরিক্ত সুন্নত আমল হচ্ছে এমন ধরনের আমল যা করলে সওয়াব রয়েছে আর না করলে সওয়াব নেই। এ ধরনের আমল কেউ না করলে তাকে ফরজ আমল তরককারীদের মতো তিরস্কৃত করা হয় না। ফিকহী সুন্নত মূলত পালনের জন্য উৎসাহিত করা হয়। বর্তমান সমাজে ইসলামী চিন্তা ও রাষ্ট্রব্যবস্থা বাস্তবায়িত না থাকায় ফিকহী সুন্নত পালনের সঠিক উৎসাহ সমাজে বাস্তবায়িত নেই। শুধুমাত্র ফিকহী সুন্নত নয়, বরং মুনকারে পরিপূর্ণ বর্তমান সমাজে হারাম থেকে বেচে থাকা ও ফরজ দায়িত্বসমূহ পালনের তাগিদেরও যথেষ্ঠ অভাব রয়েছে।
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শ্রমিক সংঘ অটুট থাকুক

লিখেছেন হীসান হক, ০১ লা মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪৮

আপনারা যখন কাব্য চর্চায় ব্যস্ত
অধিক নিরস একটি বিষয় শান্তি ও যুদ্ধ নিয়ে
আমি তখন নিরেট অলস ব্যক্তি মেধাহীনতা নিয়ে
মে দিবসের কবিতা লিখি।

“শ্রমিকের জয় হোক, শ্রমিক ঐক্য অটুট থাকুক
দুনিয়ার মজদুর, এক হও,... ...বাকিটুকু পড়ুন

কিভাবে বুঝবেন ভুল নারীর পিছনে জীবন নষ্ট করছেন? - ফ্রি এটেনশন ও বেটা অরবিটাল এর আসল রহস্য

লিখেছেন সাজ্জাদ হোসেন বাংলাদেশ, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৪

ফ্রি এটেনশন না দেয়া এবং বেটা অরবিটার


(ভার্সিটির দ্বিতীয়-চতুর্থ বর্ষের ছেলেরা যেসব প্রবলেম নিয়ে টেক্সট দেয়, তার মধ্যে এই সমস্যা খুব বেশী থাকে। গত বছর থেকে এখন পর্যন্ত কমসে কম... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রতিদিন একটি করে গল্প তৈরি হয়-৩৭

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৫১




ছবি-মেয়ে ও পাশের জন আমার ভাই এর ছোট ছেলে। আমার মেয়ে যেখাবে যাবে যা করবে ভাইপোরও তাই করতে হবে।


এখন সবখানে শুধু গাছ নিয়ে আলোচনা। ট্রেনিং আসছি... ...বাকিটুকু পড়ুন

একাত্তরের এই দিনে

লিখেছেন প্রামানিক, ০১ লা মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৬


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

আজ মে মাসের এক তারিখ অর্থাৎ মে দিবস। ১৯৭১ সালের মে মাসের এই দিনটির কথা মনে পড়লে এখনো গা শিউরে উঠে। এই দিনে আমার গ্রামের... ...বাকিটুকু পড়ুন

হুজুররা প্রেমিক হলে বাংলাদেশ বদলে যাবে

লিখেছেন মিশু মিলন, ০১ লা মে, ২০২৪ রাত ৯:২০



তখন প্রথম বর্ষের ছাত্র। আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে আমাদের আরেক বন্ধুর জন্মদিনের উপহার কিনতে গেছি মৌচাক মার্কেটের পিছনে, আনারকলি মার্কেটের সামনের ক্রাফটের দোকানগুলোতে। একটা নারীর ভাস্কর্য দেখে আমার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×