সিলেটের বৃষ্টি আসলেই একটু অন্যরকম। একটু বেশি রোমান্টিক.. একটু বেশি স্মৃতিকাতর করে তোলে.. একটু বেশি ভিজতে ইচ্ছে করে.. একটু বেশি সময় পেতে ইচ্ছে করে ! আর আমারও একটু বেশিই প্রসংশা করতে ইচ্ছে করে।
ছবিটা সিলেট থেকে তুলেছিলাম..
ঢাকায় আছি প্রায় এগারো বছর হতে চলল। এখানে এসে বুঝতে পারছি কত সৌভাগ্যবান ছিলাম আমি। এখানের সিসায় ভরা বাতাসটা ঠেলে আসতে বৃষ্টিকে অনেক কাঠ-খর পুরাতে হয়। আর চাতক পাখি হয়ে ব্যস্ত আমরা একটু মেঘলা আকাশ দেখার জন্য দিনের পর দিন বসে থাকি। এই দীর্ঘ অপেক্ষার পর সে আসলে সামাজিক সাইটগুলো স্ট্যাটাসে ভরপুর হয়ে যায়, ব্লগগুলোতে কবিতা গানের অঝর ধারা বইতে থাকে। হায় ! দিন দিন কত অভাগা হয়ে যাচ্ছি .......
আর ছোটবেলায়... এই সময়গুলোতে কোন নোটিস ছাড়াই গুড়োম-গুড়োম করে আকাশের ডাকাডাকি শুরু হয়ে যেত। বাতাসে গাছপালাগুলো এক অদ্ভুত আনন্দে নেচে উঠত ! আমরা হয়ত কলেজ মাঠে ক্রিকেট খেলছিলাম। হয়ত আমরা পুকুরে গোসল করছিলাম নয়ত স্কুলে টিফিন টাইম চলছে... ঝরঝর করে বৃষ্টিটা যেই আসল আর থামার নাম নেই। সবুজ শহরটাকে দেখে মনে হয় এই মাত্র কোন শিল্পী জলরঙের ছবিটা এঁকে ফেলল ! আর বাতাসে আমের গন্ধ আর স্কুলের রাস্তাটা একেবারে কৃষ্ণচূড়ার ফুলে গালিচা বিছিয়ে রাখে।
আর পুকুরের আমরা তখন আরও দ্বিগুন উৎসাহে দাপাদাপি শুরু করি। এই বৃষ্টিতে ভিজে কে বারণ করতে আসে ! আর ডুব দিয়ে ঝমঝম বৃষ্টির শব্দ শুনা? এটা যারা উপভোগ করেনি তাদেরকে বুঝানো আমার পক্ষে কোনভাবেই সম্ভব না! এটা মনে হয় যেন অন্য জগৎ, অন্য কিছু.. পা দুটো দু হাত দিয়ে ভাজ করে পানির নিচে ওজনহীন হয়ে থেক বৃষ্টির প্রতিটা ফোটা উপভোগ করা। এটা আসলেই অন্য কিছু.. আর চোখ দুটো আগুন লাল করে বাসায় ফেরা... আহ! আমার বৃষ্টিভেজা শৈশব।
আমি আবার চাই সেই বৃষ্টিভেজা শৈশব........ তার জন্য কি চাও তুমি!
যেতে যেতে একটা গান দিয়ে যাই... জানালা থেকে নেয়া এক পশলা সিলেটের বৃষ্টি। আর ভিডিওতে যে রোডটা আছে, ঐটাতে বৃষ্টি আসলেই পাড়ার ছেলেরা মিলে এ মাথা, ও মাথা দৌড়ে বেড়াতাম..
The Rain Song....