somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

জাপানে কাটানো কিছু অমুল্য মুহুর্ত.........................

২৬ শে নভেম্বর, ২০১৪ রাত ১১:০৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


গত ২৩ অক্টোবর থেকে ৪ নভেম্বর পর্যন্ত জাপানে অনুষ্ঠিত “ইন্টারন্যাশনাল ইয়ুথ এক্সচেঞ্জ প্রোগ্রাম” এ বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করার জন্য আমি ও রাকিবুল আলম(সদর দপ্তর) রাব্বি ঢাকা ত্যাগের পর আমরা ২২/১০/১৪ তারিখ বিকালে টোকিও পৌছাই। পরদিন ২৩/১০/১৪ তারিখে অন্য ১৯ দেশের ৩৭ ডেলিগেট ও মালেশিয়ান অবজার্ভারের সাথে জাপানিজ রেড ক্রস সোসাইটির জাতীয় সদর দপ্তরে আমাদের ওরিয়েন্টেশন সম্পন্ন হয়।সেখানে আমরা জাপানিজ রেড ক্রস সোসাইটির যুব কার্যক্রম ও জাপানিজ জীবনযাত্রা সম্পর্কে অনেক কিছু শিখি। এসময় আমরা নিজেদের পরিচয় দেই, অন্য ডেলিগেটদের সাথেও পরিচিত হই। ওরিয়েন্টেশন চলাকালে আমরা ডেলিগেটদের মাঝে গিফট ও স্যুভিনিয়র এক্সচেঞ্জ করি। রাতে Opening Ceremony র মাধ্যমে দিনটির শেষ হয়। পর দিন সকালে আমরা হোক্কাইডোর উদ্দেশ্যে টোকিও ত্যাগ করি এবং পৌছানোর পর JRCS staff আমাদের হোক্কাইডো রেড ক্রস হসপিটালে নিয়ে যান। সেখানে আমরা তাদের বিভিন্ন বিভাগ ঘুরে দেখি এবং তাদের কর্মপন্থা, আধুনিক যন্ত্রপাতি, ক্যান্সারের ঔষধ তৈরীর প্রক্রিয়া ও বিশেষ রোগীদের জন্য বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করি। এছাড়া সেখানে হোক্কাইডো রেড ক্রসের ইতিহাস সম্পর্কেও ধারণা লাভ করি। তারপর আমরা জাপানিজ রেড ক্রস হোক্কাইডো ব্লাড সেন্টারে যাই, সেখানে আমরা তাদের ব্লাড ডোনেশন, ডোনার, রক্তদানের ডিজিটাল প্রক্রিয়া, ব্লাড ডোনেশন বাস ইত্যাদি সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করি।২৫/১০/১৪ ও ২৬/১০/১৪ তারিখে আমরা হাকোদাতে শহরের বিভিন্ন বিখ্যাত স্থান পরিদর্শণ করি, এর মধ্যে মাউন্ট হাকোদাতে, ওনুমা কুয়াসি ন্যাশনাল পার্ক, গোরিওকাকু পার্ক উল্লেখযোগ্য। ২৬/১০/১৪ থেকে ২৯/১০/১৪ পর্যন্ত আমরা Home stay এর জন্য ফুমিকি মরিতাকে ও মারিকো মরিতাকের পরিবারের সাথে অবস্থান করি।বলতে গেলে আমাদেরকে তারা নিজের সন্তানের মতই দেখে রাখে। সেখানে আমরা তাদের পারিবারিক আতিথেয়তার মুগ্ধ হওয়ার সুযোগ পাই। এসময় আমরা হোক্কাইডোর ২টি ইলিমেন্টারি স্কুল ও ৩ টি হাই স্কুল পরিদর্শন করি যার ভেতর তানিকাওয়া ইলিমেন্টারী স্কুল, হাকুরিও হাই স্কুল এবং শিরায়ুরি হাই স্কুল উল্লেখযোগ্য। এসময় আমরা তাদের শিক্ষা ব্যবস্থার অবস্থা ও আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থার সাথে তাদের পার্থক্য অনুভব করি। তাদের স্কুল, কলেজগুলোর পরিবেশ ও শিক্ষার মান সত্যিই প্রশংসনীয়। তখন আমরা শিক্ষার্থীদের থেকে ক্যালিগ্রাফি, ওরিগামি, জাপানি ঐতিহ্যবাহী খেলা, বাংলাদেশ সম্পর্কে তাদের মনোভাব ইত্যাদি সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করি। তখন আমরা বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির যুব কার্যক্রমেরও প্রচারনা চালাই। হাই স্কুল শিক্ষার্থীদের সাথে প্রেস কনফারেন্স ও গ্রুপ ওয়ার্কেরও সুযোগ হয় আমাদের, এতে তাদের মেধা ও দক্ষতা সম্পর্কে আমাদের যথেষ্ট ধারনা হয়। ৩০/১০/১৪ তারিখে আবারো হোক্কাইডোর বিভিন্ন দর্শনীয় স্থানে আমরা ঘুরতে যাই এবং পরদিন আমরা ‘মাউন্ট ফুজি ইন্টারন্যাশনাল মিটিং ২০১৪’ এ অংশগ্রহনের জন্য হোকাইডো ছাড়ি। এরপর সিজুওকার টোজানসোতে অবস্থিত ওয়াইএমসিএ যুব প্রশিক্ষন কেন্দ্রে তে আমরা ‘মাউন্ট ফুজি ইন্টারন্যাশনাল মিটিং ২০১৪’ অংশগ্রহনের জন্য পৌছাই।৩১/১০/১৪ থেকে ২/১১/১৪ তারিখ পর্যন্ত অনুষ্ঠিত এই মিটিং এ বাংলাদেশ ছাড়াও ভারত পাকিস্তান, মিয়ানমার, চীন, দক্ষিণ কোরিয়া, ভিয়েতনামসহ আরো ১২টি দেশের প্রতিনিধিগণ এবং ৮০ জন জাপানি জুনিয়র রেড ক্রিসেন্ট মেম্বার অংশগ্রহন করে। মিটিং এর দিন গুলো আমার জন্য সবসময় স্বরণীয় হয়ে থাকবে।এই মিটিং চলাকালে আমরা বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির যুব কার্যক্রম সম্পর্কে জানানো,জাপানিজ জুনিয়র রেড ক্রস মেম্বার ও অন্য দেশের রেড ক্রস রেড ক্রিসেন্ট যুব সদস্যদের কার্যক্রম সম্পর্কে জানা, কার্যক্রম গুলো চালনার অসুবিধা নির্নয় করা ও একত্রে তার সমাধান খুজে বের করা, বিভিন্ন বিষয়ে যেমন দারিদ্র্য, দুর্যোগ, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের পার্থক্য, স্কুল জীবন, লিঙ্গ বৈষম্য ইত্যাদি নিয়ে নিজ দেশের দিক থেকে বক্তব্য উপস্থাপন এবং তা নিয়ে চলা ঘন্টার পর ঘন্টার বিতর্কের পর প্রেজেন্টেশন তৈরির অভিজ্ঞতা হয় আমার। এগুলোর মধ্যে শহীদ মিনার, স্মৃতিসৌধ ও জাতীর জনক বঙ্গবন্ধুর ছবিসহ ২ টাকার ব্যাংকনোটের মাধ্যমে বাংলাদেশের ইতিহাস উপস্থাপন ও গ্রুপের নেতৃত্বদান ছিল আমার সবচেয়ে প্রিয় কিছু মুহুর্ত। এসময় আমার অনেক ভালো বন্ধুও হয়। গ্রুপের যুব রেড ক্রস রেড ক্রিসেন্ট কার্যক্রমের পরিচয়ের সময় বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির রানা প্লাজা ট্র্যাজেডির মৃত দেহ ব্যবস্থাপনার কাজ দেখে অন্য অংশগ্রহনকারী ও JRCS Staff দের মনে তৈরী হওয়া অনেক প্রশ্নের সুবাদে আমি আমার সোসাইটিকে আরো ভালোভাবে উপস্থাপন করার সুযোগ পাই। এই মিটিংএ অংশগ্রহন করে আমি বাংলাদেশের যুব সমাজ ও বিশ্বের অন্যদের তুলনা করার সুযোগ পাই, এতে আমি বাংলাদেশের যুব সমাজের দৃড়তা অনুভব করি যা আসলেই প্রসংশনীয়। সেচ্ছায় রক্তদান থেকে শুরু করে সমাজের বিভিন্ন অসংগতিতে তাদের যে কার্যক্রম তা আসলেই অসাধারণ। বিশ্বের বিভিন্ন উন্নত দেশেও এই চিত্র দেখা পাওয়া ভার, নিজেকে বাংলাদেশী বলতে সত্যিই গর্ববোধ করছিলাম। যাই হোক ৩/১১/১৪ তারিখে আমরা মাউন্ট ফুজি ইন্টারন্যাশনাল মিটিং ২০১৪ শেষ করে টোকিওতে পৌছাই দেই। ৪/১১/২০১৪ তারিখে অর্থাৎ প্রোগ্রামের শেষ দিন টোকিও এর বিভিন্ন দর্শনীয় স্থান ভ্রমন শেষে রাতে সমাপ্তি অনুষ্ঠানের মাধ্যমে প্রোগ্রামের এর সমাপ্তি ঘোষনা করা হয়। এসময় ইন্টারন্যাশনাল ফেডারেশন অফ রেড ক্রস এন্ড রেড ক্রিসেন্ট তথা জাপানিজ রেড ক্রস সোসাইটির প্রেসিডেন্ট তাদাতেরু কোণয়ের হাতে আমি প্রোগ্রামের সার্টিফিকেট গ্রহন করি। পরদিন অর্থাৎ ৫/১১/১৪ তারিখে বাংলাদেশের উদ্দেশ্যে আমরা ঢাকা ত্যাগ করি।
৩টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কষ্ট থেকে আত্মরক্ষা করতে চাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৯



দেহটা মনের সাথে দৌড়ে পারে না
মন উড়ে চলে যায় বহু দূর স্থানে
ক্লান্ত দেহ পড়ে থাকে বিশ্রামে
একরাশ হতাশায় মন দেহে ফিরে।

সময়ের চাকা ঘুরতে থাকে অবিরত
কি অর্জন হলো হিসাব... ...বাকিটুকু পড়ুন

রম্য : মদ্যপান !

লিখেছেন গেছো দাদা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫৩

প্রখ্যাত শায়র মীর্জা গালিব একদিন তাঁর বোতল নিয়ে মসজিদে বসে মদ্যপান করছিলেন। বেশ মৌতাতে রয়েছেন তিনি। এদিকে মুসল্লিদের নজরে পড়েছে এই ঘটনা। তখন মুসল্লীরা রে রে করে এসে তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মেঘ ভাসে - বৃষ্টি নামে

লিখেছেন লাইলী আরজুমান খানম লায়লা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩১

সেই ছোট বেলার কথা। চৈত্রের দাবানলে আমাদের বিরাট পুকুর প্রায় শুকিয়ে যায় যায় অবস্থা। আশেপাশের জমিজমা শুকিয়ে ফেটে চৌচির। গরমে আমাদের শীতল কুয়া হঠাৎই অশীতল হয়ে উঠলো। আম, জাম, কাঁঠাল,... ...বাকিটুকু পড়ুন

= নিরস জীবনের প্রতিচ্ছবি=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৪১



এখন সময় নেই আর ভালোবাসার
ব্যস্ততার ঘাড়ে পা ঝুলিয়ে নিথর বসেছি,
চাইলেও ফেরত আসা যাবে না এখানে
সময় অল্প, গুছাতে হবে জমে যাওয়া কাজ।

বাতাসে সময় কুঁড়িয়েছি মুঠো ভরে
অবসরের বুকে শুয়ে বসে... ...বাকিটুকু পড়ুন

Instrumentation & Control (INC) সাবজেক্ট বাংলাদেশে নেই

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৫




শিক্ষা ব্যবস্থার মান যে বাংলাদেশে এক্কেবারেই খারাপ তা বলার কোনো সুযোগ নেই। সারাদিন শিক্ষার মান নিয়ে চেঁচামেচি করলেও বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরাই বিশ্বের অনেক উন্নত দেশে সার্ভিস দিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×