উবুন্টু ১০.০৪ লুসিড LTS: চোখ ধাঁধানো রিভিউ
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
Tweet
কারমিক কোয়ালা ফেইল করার পরে উবুন্টুর এই ভার্সনটা আমার কাছে বহুল প্রতিক্ষীত ছিল। তবে আগের বারের মত এবার আর রিস্ক নেই নি। আগে লাইভ সিডি থেকে চালিয়ে দেখেছি সব কিছু ঠিক আছে কিনা। গতবার জিপি মডেম নিয়ে সমস্যা ছিল। এবারও কিছুটা আছে বলে মনে হয়। আমার জিপি মডেম লাগানোর পরে সেটাকে মডেম হিসেবে ডিটেক্ট না করে ইউএসবি ড্রাইভ হিসেবে শো করছিল। তবে, সেটার সমাধান করতে পেরেছি। যদি আপনর মডেমটাকে মডেম হিসেবে ডিটেক্ট না করে তাহলে মডেমটা খুলে কানেকশনস সেটিংস থেকে একটা মোবাইল ইন্টারনেট কানেকশন তৈরি করে তারপর মডেমটা লাগান। আমার মডেমটা এভাবে পেয়েছে। কারমিক কোয়ালায় ইন্টারনেট শেয়ার করতে পারি নি। এটায় দেখলাম শেয়ার হচ্ছে। মনে হচ্ছে এই ভার্সনটা চালাতে পারব। জন্টির বিদায় ঘন্টা তাহলে অবশেষে বাজলো ।
যে বিযয়গুলো নিয়ে টেনশনে ছিলাম সেগুলো আগে বলে নিলাম। এবার স্টেপ বাই স্টেপ রিভিউ শুরু করি।
আমি লুসিড ইন্সটল করেছি আমার গিগাবাইট W451U ল্যাপটপে। এটার প্রসেসর কোর টু ডুয়ো ১.৮৩, মাদারবোর্ড Intel GM945,র্যাম ২ গিগা। বুট করেছি আমার Trancend V30 4GB পেনড্রাইভ থেকে ।
লাইভ সিডি লোড হতে "Try Ubuntu” সিলেক্ট করার পর সময় নিয়েছে ১ মিনিট ২২ সেকেন্ড। এই ভার্সন দেখলাম ইউএসবি ফ্লাশ ড্রাইভ কে ফ্লাশ ড্রাইভ হিসেবেই দেখাচ্ছে। আগে ইউএসবি থেকে বুট করলেও সিডি বলত। ইন্সটল করতে সময় লেগেছে৭ মিনিট ৪৩ সেকেন্ড যেটা আগের ভার্সন কারমিক এর প্রায় দ্বিগুণ। নতুন যে ফিচারটা ভাল লেগেছে সেটা হল ইন্সটলেশন প্রসেস চালু অবস্থায়ও লাইভ সিডি থেকে সব কাজই করা যায়। আমি ইন্সটল ৯৫% হবার পরেও সফটওয়্যার রান করতে পেরেছি। এটা খুবই ভাল একটা ব্যাপার যে ইন্সটল করতে গিয়ে চুপচাপ বসে থাকা লাগে না। এই ফিচার লুসিডেই প্রথম।
উবুন্টুর যে ১০ সেকেন্ড বুটের একটা লক্ষ্য ছিল যেটা লুসিডে বাস্তবায়ন হবার কথা ছিল সেটি সম্ভবত তারা করতে পেরেছে। লুসিড আমার ল্যাপটপে বুট করতে সময় নিয়েছে ৪০ সেকেন্ড। আগে জ্যাকিলোপ অফিসিয়ালী ৩০ সেকেন্ডে বুট করার কথা থাকলেও আমার লাগত ৫৫ সেকেন্ড। তারমানে আমার ল্যাপটপে তাদের এক্সপেরিমেন্ট এনভায়োর্নমেন্টের চেয়ে মোটামুটি দ্বিগুণ সময় লাগছে। সে হিসেবে ৪০ সেকেন্ড=১০ সেকেন্ড ধরা যায়। ৪০ সেকেন্ট বুট আমার কনফিগারেশনে আমি যথেষ্ট ফাস্ট বলে মনে করি।
এবার আসি উবুন্ট ব্যবহারে। এই ভার্সনে নতুন যা যা এসেছে,
স্প্যাশস্ক্রিন: উবুন্টুর স্প্যাশস্ক্রিন কেমন যেন ম্যারম্যারা হয়ে যাচ্ছে। গত ভার্সনে স্পটলাইট ইফেক্ট দেয়া হয়েছি। এবার আরও সাদামাটা। আমার মতে ৯.০৪ এর স্প্যাশস্ক্রিনটা সবচেয়ে সুন্দর ছিল।
নতুন আউটলুক: উবুন্টু অবশেষে তাদের সেই বাদামী হিউম্যান থিমটি বাদ দিয়েছে। নতুন যে থিমটা দেয়া হয়েছে সেটি পুরোপুরি বাদামী রং বর্জিত এবং যথেষ্ট সুন্দর। এই থিম উবুন্টু পুরো ইমেজটাই পাল্টে দিয়েছে। আমি মনে করি এটা নতুন ব্যবহারকারীদের আকৃষ্ট করতে সাহায্য করবে। দুটো সম্পূর্ণ নতুন থিম যোগ করা হয়েছে।
গত ভার্সনে ওয়ালপেপার গুলো সুন্দর ছিল। এবার আরও সুন্দর, এককথায় চমৎকার। অসাধারণ সব ওয়ালপেপার। উবুন্টু এত দিনে আউটলুকটা মানানসই করতে পেরেছে। গত ভার্সনে একটা স্লাইডশো ওয়ালপেপার ছিল। সেটা এখনও আছে। বাঁকীগুলো সব নতুন। একটা ব্যপারে ব্যবহারকারীরা সমস্যায় পড়তে পারেন। ক্লোজ, মিনিমাইজ, ম্যাক্সিমাইজ বাটনগুলো বাম পাশে সরিয়ে নেয়া হয়েছে। আমরা যারা ডান পাশে এগুলো ব্যবহার করে অভ্যস্ত তারা কিছুটা সমস্যা অনুভব করব। এর কারণ হিসেবে উবুন্টু বলছে যে তারা পরের ভার্সনে বামপাশের কন্ট্রোল সিস্টেমে নতুন কিছু ফিচার যোগ করতে যাচ্ছে। তার আগে ব্যবহারকারীদের প্রস্তুতির জন্য এ ভার্সনে এগুলো সরানো হয়েছে। তবে, আপনি চাইলে থিম কাস্টমাইজ করে সেগুলো বাম পাশে নিয়ে যেতে পারেন।
সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং ইন্ট্রিগেশন: উবুন্টু ডেস্কটপ থেকেই সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটগুলোর সাথে যোগাযোগ রাখার জন্য Broadcasting ফিচার যোগ করা হয়েছে। এটা দিয়ে ফেসবুক, টুইটার সহ অনেকগুলো সাইটে সরাসরি স্ট্যটাস আপডেট আর ম্যাসেজ আদান প্রদান করা যায় ডেস্কটপ থেকেই। ক্লাউড কম্পিউটিং এর প্রস্তুতি হিসেবেই মনে হয় উবুন্টু ওয়ান ইন্ট্রিগ্রেশন আরও সহজ করা হয়েছে। উপরে প্যানেলে ডানপাশে উবুন্টু ওয়ান, Broadcast, মেইল আর চ্যাটিং এর জন্য আলাদা একটা প্যানেল ইনগ্রেডিয়েন্ট যোগ করা হয়েছে। গত ভার্সনেই পিজিনের পরিবর্তে ইম্ফানী আনা হয়েছিল। এবারও সেটাই আছে। ভিওআইপি ক্লায়েন্ট Ekiga কে এ ভার্সনে বাদ দেয়া হয়েছে কোন বিকল্প ছাড়াই।
ফায়ারফক্স: এটা নিয়ে নতুন কিছু বলার নেই। ডিফল্ট হিসেবে দেয়া আছে 3.6.3। ডিফল্ট সার্চ ইন্জিন ইয়াহু দেবার কথা থাকলেও সেটা করা হয় নি। গুগলই আছে।
সফটওয়্যার সেন্টার: সফটওয়্যার সেন্টার কারমিক কোয়ালাতে যোগ করা হলেও তাতে অনেক সমস্যা ছিল। মাঝেমাঝে ইন্সটল বাটন দেখাতো না। এ ভার্সনে সফটওয়্যার সেন্টার কে সম্পূর্ণ এরর ফ্রী করা হয়েছে। আগের ক্যটাগরীগুলোর আবার সাব ক্যাটাগরী করা হয়েছ। এই ফিচারটা দারুণ। যেমন, ইন্টারনেট ক্যাটাগরীতে সাব ক্যাটাগরী হিসেবে রয়েছে চ্যাট, ফাইল শেয়ারিং, মেইল আর ওয়েব ব্রাউজার। তিনটি নতুন ক্যাটাগরী যোগ হয়েছে, ফন্ট, সায়েন্স এন্ড ইন্জ্ঞিনিয়ারিং আর থিমস এন্ড টোয়েকস। সফটওয়্যার খুঁজে পাওয়া এখন পানির মত সহজ। সার্চ অপশন তো আছেই।
গ্রাফিক্স এডিটর: এই ভার্সনে যে কাজটা আমার সবচেয়ে খারাপ লেগেছে সেটা হল, কোন বিকল্প সফটওয়্যার না দিয়ে জিম্প কে বাদ দেয়া। এতে উবুন্টুর যে Out of the Box ইমেজ ছিল সেটা অনেকাংশে নষ্ট হয়েছে বলে আমার মনে হয়। জিম্প উবুন্টুর একটা অবিচ্ছদ্য অংশ হিসেবে ছিল, এটাকে কেন বাদ দেয়া হল, তাও আবার কোন বিকল্প সফটওয়্যার ছাড়া সেটা বুঝলাম না। নতুন একটা ভিডিও এডিটর দেয়া হয়েছে Pitivi। ডকুমেন্ট স্ক্যানের জন্য একটা সফটওয়্যার দেয়া যোগ হয়েছে Simple Scan। বাঁকী সব আগের মতই।
ওপেন অফিস: ওপেন অফিসের নতুন ভার্সন ৩.২ দেয়া হয়েছে। মাইক্রোসফট অফিসের docx সাপোর্ট দেয়া হয়েছে। আগের ভার্সনে সম্ভবত এটা ছিল না। ৩.২ দেখলাম অনেক ফাস্ট। পরিবর্তন চোখে পড়ে যেটা তা হল স্প্যাশস্ক্রিনে সান মাইক্রোসিস্টেমের পরিবর্তে ওরাকল। আর তেমন কোন পরিবর্তন দেখলাম না।
ফাইল ম্যানেজার: ফাইল ম্যানেজার নটিলাসের সবকিছু আগের মতই আছে। নতুন বলতে View মেন্যূতে "Exter Pane” অপশন যোগ হয়েছে। এতে এক সাথে দুইটা ড্রাইভে একই উইন্ডোতে কাজ করা যায়। ট্যাবড ব্রাউজিং আগেও ছিল কিন্তু তাতে ট্যাব চেন্জ করতে হত। এখন সেটা লাগে না।
ডিস্ক ইউটিলিটি: পার্টিশন ম্যানেজারের অনেক পরিবর্তন করা হয়েছে। নামও পরিবর্তন করে রাখা হয়েছে ডিস্ক ইউটিলিটি। কিছু নতুন ফিচার দেখতে পাচ্ছি তবে কাজ করলে বোঝা যাবে আসলে কতটুকু উন্নতি হল।
ওভার অল যদি বলতে চাই, তাহলে বলব এই ভার্সনে একবারে ব্র্যান্ড নিউ বলতে তেমন কিছুই নেই। যা আছে সেগুলো কারমিকের মডিফিকেশন আর ঘঁসামাজা। বরং কিছু জিনিস বাদ দেয়া হয়েছে। কারমিকে অনেক কিছুরই ফিনিশিং টাচ বাঁকী ছিল। সেটা এ ভার্সনে করা হয়েছে। ইন্সটল করার পরে আমার কাছে এই ভার্সনকে অচেনা বা নতুন মনে হয় নি। এটাই আসলে সবচেয়ে বড় প্লাস পয়েন্ট। ৬ মাস পর পর যদি নতুন করে নতুন এনভায়োর্নমেন্টে অভ্যস্ত হতে হয় তাহলে মুশকিল ।
৫৯টি মন্তব্য ৫৪টি উত্তর
পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন
আলোচিত ব্লগ
আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।
ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন
ভারতীয় পণ্য বয়কটের কেন এই ডাক। একটি সমীক্ষা-অভিমত।।
ভারতীয় পণ্য বয়কটের কেন এই ডাক। একটি সমীক্ষা-অভিমত।।
সাইয়িদ রফিকুল হক
বিএনপি ২০২৪ খ্রিস্টাব্দে দেশে অনুষ্ঠিত “দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে”-এ অংশগ্রহণ করেনি। তারা এই নির্বাচনের বহু আগে থেকেই নির্বাচনে অংশগ্রহণ... ...বাকিটুকু পড়ুন
মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )
যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন
শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন
কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন
একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।
এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।
ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন