somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

রাতের সব তারাই আছে দিনের আলোর গভীরে.....ভ্যালেন্টাইন ডে স্পেশাল ( কাল্পনিক শেষ পর্ব)-

০৯ ই ফেব্রুয়ারি, ২০০৯ সকাল ৯:৪২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


Click This Link

২০৩১ সালের ১৪ই ফেব্রুয়ারী ( ২২ বছর পরের ঘটনা ) :
দু'জনেই কিছুক্ষন চুপচাপ ; অনু হঠাৎ গম্ভীর গলায় বলে , আমাদের বয়স তো কম হোল না , কখন কি হয় , কতদিন ধরে ভাবছি বলব তোমায় একটা কথা , বলা হয়ে উঠছে না ; আমার শেষ ইচ্ছের কথা ।
অমি : বল না , বলে ফেল ।
অনু : আমি তো তোমার আগে চলে যাব , আমার মৃত্যুশয্যায় খুব ইচ্ছে তুমি আমার কাছে থাকবে আর .... ; কন্ঠস্বরের কাঁপুনিটা বেশীই মনে হয় , থেমে যায় সে , শেষ করতে পারেনা কথা ।
অমি চকিতে অনুর চেয়ারের হাতলে রাখা ডান হাতটা চেপে ধরে দু'হাতে !
অনুর সারা শরীরে বিদ্যুৎ খেলে যায় ! শিহরিত অনুর মনে হল সে ভূমি পরে কোথাও নেই , হারিয়ে গেছে শূন্যে ; প্রথম ছোঁয়া অমির ! কতদিনের কল্পনার , কাঙ্খিত স্পর্শ। তার অনুভুতিরা অমির হাতের উষ্ণতাকে সব শক্তি দিয়ে জড়িয়ে রাখতে গিয়ে তাকে অবশ করে ফেলে !
সম্বিত ফিরে পায় , তাকিয়ে দেখে অমি কেমন শক্ত করে তার হাত ধরে অপলক তাকিয়ে আছে তার মুখের দিকে , চোখ দুটো যেন তার ব্যাথাকাতর , বেদনায় ভাষাহীন ! হয়তো বলতে চাইছে " চুপ কর , বলো না আর কিছু " ; নিজেকে সামলে নেয় , বুঝতে পারে অমি কতটা কষ্ট পাচ্ছে ; ওতো অমিকে কষ্ট দিতে চায় না । অমিও যেমন কোন কথায় বা কাজে কোনদিন তাকে কষ্ট দেয়নি , আহত করেনি । অনু বলে , তুমি যে আমার হাত ধরে বসে আছো , যা চাইছিলাম তার অনেকটাই পাওয়া হয়ে গেছে আজ । বাদ দাও ওসব , হাতটা ছাড় ; কেউ দেখলে কি মনে করবে ।
অমি হাত ছেড়ে দেয় , বাষ্পরূদ্ধ কন্ঠে বলে , তুমি কেন আমার আগে যাবে , আমি আগে যাব ।
অনু জিদ করে ; বলে , তুমি আর আমাকে হারিয়ে দিও না , সারা জীবন জিতে গেলে আমাকে পরাজিত করে ; শেষ বেলাতে জিততে দাও ।
অমি : জানিনা , বিধাতা জানে কি হবে ; তবে তুমি যদি সত্যি আমার আগে যাও , আমি এ শহর ছেড়ে , দেশ ছেড়ে চলে যাব --আর ফিরবো না । সেটা মনে রেখো , আমার সহ্য ক্ষমতা আর আগের মত নেই , কেন তুমি আমার জীবনে এসেছিলে , কেন ? তাকিয়ে দেখে অনুর চোখে পানি , আর কিছু বলতে পারে না , বলতে চেয়েছিল এখন অনেক কথা , কয়েক যুগের জমে যাওয়া কথা !
তারপরে আবার চুপচাপ দুজনে । উঠে দাড়ায় অমি , বলে মোহনের সাথে খবর দেখি চল ,ও আমার বন্ধু ছিল , আগে বুঝতে পারিনি ও এত অন্যরকম ; ওর জন্য আমার গর্ব হয়। ওর কথা শিপ্রা আমায় প্রায়ই বলে , সে নাকি তোমাকে খুব ভালবাসে , আমারও তাই মনে হয় ।

রাতের খাবারের টেবিলে ওরা চার জন বসে , বুশরা এসে পৌছে নি , তনিমারাও না ; সবাই ব্যস্ত নিজস্ব পরিচিত জগতের আঙিনায় ।
অমি জানায় মোহনের অনুরোধে শিপ্রা মেন্যুতে কতটা কাটছাট করেছে । শিপ্রা যে তাদের খাওয়ানোর ব্যাপারটা একেবারে অত্যাচারের পর্যায়ে নিয়ে যায় , এটা তারা বুঝে ফেলেছে । অনু বলে , অমির সৌভাগ্য যে এমন একটা বউ পেয়েছে , শিপ্রা সুযোগে বলে ফেলে , মোহন ভাইয়ের সৌভাগ্য যে ঈর্ষনীয় সেটা কেন বলছেন না ।
অনু মোহনকে বলে , একটা কিছু বল ।
মোহন : সৌভাগ্য কে বলল ! আমি তো একটা পঁচা মেয়ে বিয়ে করেছি , আমার বড়ই দুর্ভাগ্য ! হোল তো ! বলবার ভঙ্গীতে সবাই হেসে ফেলে ।

খাওয়ার পর্ব শেষ না হতে তনিমা আর ওর মেয়েকে নামিয়ে দিয়ে কি জরুরী কাজের বাহানায় চলে গেল তনিমার বর । তনিমা এসেই হারমোনিয়াম নামিয়ে নিল , আজ শিপ্রা আন্টির গান শুনবে , শুনেছে এক সময়ে গান গাইতো শিপ্রা । অমি এক ফাঁকে উঠে গিয়ে নিয়ে আসে অনুর জন্য কেনা রূপার চেইন চশমার । একদিন মোহন বলছিল , অনুর চশমা খোঁজা একটা জটিল কাজ ! প্রায়ই খুঁজে পায় না , অসুবিধায় পড়ে যায় । কেনার সময়ে শিপ্রার মত ছিল স্বর্নের চেইন কেনা । সোনালী রঙে চাকচিক্য বেশী মনে হয় অমির কাছে , এটার যে রজতশুভ্র রূপ ঝরছে সেটা অনুকে মানাবে ভাল । অনুকে দিতেই সে বলে , ধাতব কঠিন একটা মালা যদিও বা দিলে গলা পর্যন্ত পৌছুবে না আমার । মাথার কাছে থাকবে বাঁধা !
তারপরে কপালের টিপটা খুলে শিপ্রার কপালে পরিয়ে দেয় । ভারী সুন্দর দেখায় ওর মুখটা । বলে , খুলো না , পরে থাকো , বেশ মানিয়েছে তোমায় ।
শিপ্রা আবেগ আপ্লুত হয় ; বলে , টিপ টা দিয়েছো কপাল থেকে খুলে , ভালই হোল ; তোমার যে কপাল তার ছোঁয়া থাক আমার কপালে , তাতে করে যদি কিছু মেলে ! আগে তোমার কারনে ওর উপরে রাগ করতাম , প্রকাশও করতাম সে রাগ । এখন রাগ করি না , ওকে হিংসা করি , কেন করি সেটা প্রকাশ করতে পারিনা ; আজ তোমাকে বলি ; সে হিংসা তোমার কারনে , তোমাদের ভালবাসার কারনে । এসব কথায় কেমন অপ্রস্তুত হয়ে পড়ে অনু , কি করবে বুঝতে পারে না । মোহন বুঝতে পারে সেটা ; বলে দেরীতে হলেও বুঝেছো শিপ্রা , সেও ভালো । যেতে দাও , বাড়ি যেতে হবে , রাত বেশী হয়ে যায় না যেন ।
এরপরে অমি কাঁচের বয়ামে ভরা হারবাল টি আনে সাথে দেবে বলে ; যষ্টিমধু , লবঙ্গ , নিম পাতা আরো কি কি দিয়ে নিজে বানিয়েছে অনুর জন্য । অনু বলে , জীবনের বেশীরভাগ সময় পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে জ্ঞান অর্জন করে , অভিজ্ঞতা নিয়ে এসে শেষে এটা বানালে ! সবাই হেসে দেয় , অমিও হাসে ; মনে ভাবে , অনু কি বোঝে তার সুখের জন্য , শান্তির জন্য অমি কতটা উদগ্রীব হয়ে থাকে ! অমির আজ কেবলই কান্না পাচ্ছে ,
কেন পাচ্ছে সে জানে না ! পুরুষ মানুষের কি কান্না মানায় !
অনুর চোখেই বা কেন বারবার পানি চলে আসছে , কি হোল আজ !

গানের আসর শুরু হয় , শিপ্রা গায় , "তুমি কোন কাননের ফুল , কোন গগনের তারা , তোমায় কোথায় দেখেছি......" , "বঁধূ কোন আলো লাগলো চোখে... " , শেষে গাইল , " তুমি জান না আমি তোমারে পেয়েছি অজানা সাধনে ,আমি তোমারই সঙ্গে বেঁধেছি আমারো প্রান ..." । তনিমা শোনায় , " জানি তোমার অজানা নাহি গো কি আছে আমার মনে... "--তার মায়ের প্রিয় গান । গান শেষ হতে ঘরে ঢোকে বুশরা সাথে তনিমার বর ; দুজনের হাতে অনেক ফুল , তনিমা বুশরার পরিকল্পনার কথা কিছু বুঝতে পারেনা এরা । আজ তো কারো জন্মদিন বা বিবাহবার্ষিকী নয় ! শুক্রবারে বেড়াতে আসা শুধু । ভুল ভাঙে যখন তনিমা আর বুশরা বলে ওঠে , " হ্যাপি ভ্যালেন্টাইন ডে , আজ ১৪ই ফেব্রুয়ারী শুক্রবার ভ্যালেন্টাইন ডে ; সবার জন্য ভালবাসার বিশেষ দিন ", তনিমার বরও গলা মেলায় ওদের সাথে ।
প্রাপ্ত বয়স্ক , প্রৌঢ় কজন নারী পুরুষের মিলন মেলায় অমি আর অনুকে মনে হল অনিন্দ্য সুন্দর , সে সৌন্দর্য্য অপার্থিব , স্বর্গের আলোয় আলোকিত ! ওদের চোখের কোণায় জমাট হীরে ঝরে পড়ে না , তার উজ্জল দ্যুতি বলে দেয় -- বয়স ওদের কাছ থেকে কিছু কেড়ে নিতে পারেনি ; মনে হোল ভাল লাগা পূর্ণ করে দিয়েছে ওদের সকল অপ্রাপ্তি । জীবনে আজই প্রথম ওদের ভ্যলেন্টাইন ডে এল !

( এমন একটা কাল্পনিক ঘটনা নিয়ে লিখতে বসে , লেখিকার চোখে পানি চলে আসছে , মানুষ মূলত: অনুভুতিপ্রবন ; আমার আগে কখনো এমন হয় নি যে লিখতে বসে কাঁদতে হয়েছে , বুঝতে পারছি -- আমার এত দিনের সকল লেখার মধ্যে এটি প্রিয়তম ) !

ছবির জন্য কৃতজ্ঞতা : রানা







সর্বশেষ এডিট : ২২ শে অক্টোবর, ২০১১ বিকাল ৪:৩২
৬৯টি মন্তব্য ৫৫টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমাদের গ্রামে মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি

লিখেছেন প্রামানিক, ১৪ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩১



২৬শে মার্চের পরে গাইবান্ধা কলেজ মাঠে মুক্তিযুদ্ধের উপর ট্রেনিং শুরু হয়। আমার বড় ভাই তখন ওই কলেজের বিএসসি সেকেন্ড ইয়ারের ছাত্র ছিলেন। কলেজে থাকা অবস্থায় তিনি রোভার স্কাউটে নাম... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিকেল বেলা লাস ভেগাস – ছবি ব্লগ ১

লিখেছেন শোভন শামস, ১৪ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৪৫


তিনটার সময় হোটেল সার্কাস সার্কাসের রিসিপশনে আসলাম, ১৬ তালায় আমাদের হোটেল রুম। বিকেলে গাড়িতে করে শহর দেখতে রওয়ানা হলাম, এম জি এম হোটেলের পার্কিং এ গাড়ি রেখে হেঁটে শহরটা ঘুরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারতে পচা রুটি ভাত ও কাঠের গুঁড়ায় তৈরি হচ্ছে মসলা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৪ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৩০

আমরা প্রচুর পরিমানে ভারতীয় রান্নার মশলা কিনি এবং নিত্য রান্নায় যোগ করে খাই । কিন্তু আমাদের জানা নেই কি অখাদ্য কুখাদ্য খাচ্ছি দিন কে দিন । এর কিছু বিবরন নিচে... ...বাকিটুকু পড়ুন

যমদূতের চিঠি তোমার চিঠি!!!!

লিখেছেন সেলিম আনোয়ার, ১৪ ই মে, ২০২৪ রাত ১১:০৮

যমদূতের চিঠি আসে ধাপে ধাপে
চোখের আলো ঝাপসাতে
দাঁতের মাড়ি আলগাতে
মানুষের কী তা বুঝে আসে?
চিরকাল থাকার জায়গা
পৃথিবী নয়,
মৃত্যুর আলামত আসতে থাকে
বয়স বাড়ার সাথে সাথে
স্বাভাবিক মৃত্যু যদি নসিব... ...বাকিটুকু পড়ুন

One lost eye will open thousands of Muslims' blind eyes

লিখেছেন জ্যাক স্মিথ, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ২:২৭



শিরোনাম'টি একজনের কমেন্ট থেকে ধার করা। Mar Mari Emmanuel যিনি অস্ট্রেলীয়ার নিউ সাউথ ওয়েলসের একটি চার্চের একজন যাজক; খুবই নিরীহ এবং গোবেচারা টাইপের বয়স্ক এই লোকটি যে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×