Click This Link
২০৩১ সালের ১৩ এবং ১৪ই ফেব্রুয়ারী ( ২২ বছর পরের ঘটনা ) :
বারান্দায় তোয়ালেটা তুলতে গিয়ে অনুরাধা শুনল ফোন বাজছে , ধরবে এসে তার আগে মেয়ে তনিমা কর্ডলেসটা দিল এগিয়ে ; বলল , অমি চাচ্চু ফোন করেছে , ধর । ঘরে ঢুকে বারান্দার দরজা লাগিয়ে দিল , বিছানায় বসে হ্যালো বলতেই ওপাশ থেকে অমিতাভ বলল , বারান্দায় গেলে সন্ধ্যায় , ঠান্ডা না ! বুঝল তনিমার কাছ থেকে শুনেছে সে ।
অমি জানতে চাইল ,শরীর কেমন , কাল যেতে পারবে কিনা ওদের বাড়িতে । এও জানাল , ওর বউ শিপ্রা খুব ব্যস্ত হয়ে পড়েছে অনুরা কাল যাবে বলে , রাতে খাবে একসাথে ; বড় কৈ মাছ যোগাড় করেছে , আরো কিকি সব ।
অনু বলল , না গেলে তো আমার আরো খারাপ লাগবে , তুমি চিরকাল কেবল শরীরের কষ্ট বোঝ , মনের কষ্ট বুঝি কিছু না !
অমি : ওষুধ খাচ্ছো ঠিকমত ,অবহেলা করো না যেন ।
অনু : শোন ,আমার স্বামী মোহন ঔষধ দিয়ে , পথ্য দিয়ে , যত্ন দিয়ে আমার আয়ু রেখাটাকে টেনে কেবল লম্বা করছে আর করছে ।
অমি হাসলো সেই হাসি যা শুনলে অনুর ভিতরে এই বয়সেও ভাল লাগায় মন ভরে যায় কানায় কানায় । সন্ধ্যার আযান শোনা যায় , কাল দেখা হবে বলে ফোন রেখে দেয় ।
পরদিন সকালে আলমারী খুলে হালকা বেগুনী জামদানী শাড়ি , সাথের ব্লাউজ বের করে রাখে বিছানায় , ছোট রুবীর কানের ফুল জোড়া দেখে রাখে হাতে কাছে ; টিপ পরতে ইচ্ছে করছিল ,কেমন লজ্জা লজ্জা লাগে তাই সরিয়ে রাখে ।
আজ শুক্রবার , বাসায় সব চলছে ঢিলে ঢালা ভাবে । দুপুরে বিছানায় গা এলিয়ে দিতেই শিশুসুলভ চপলতা টের পায় ভিতরে ভিতরে , মনের কি বয়স বাড়ে না !
আজ অমিতাভ শিপ্রা ডেকেছে ওদের । ওদের মেয়ে বুশরা দেশে এসেছে , সেই উপলক্ষে ; তবে বুশরা নিজেই সেদিন ব্যস্ত থাকবে অনত্র জানিয়ে দিয়েছে ।
মোহন ঘুমিয়ে পড়েছে , অনু উঠে ঢাকনাসহ মগটা নেড়েচেড়ে দেখে , সিরামিকের মগে বাঁশপাতার ছবি , খুঁজে খুঁজে কিনেছে অমির জন্য -সোনালী বর্ডার দেয়া । নিজ হাতে রান্না করা সবজী বাটির ঢাকনা সরিয়ে দেখে , অমির পছন্দের ডিস। ভাবে , প্রবাসের পাট চুকিয়ে দেশে এসেছে ,তা না হলে আর নিজে রান্না করা সবজী খাওয়ানো হত না ;
মোহনকে ঘুম থেকে তুলে দেয় , দুজনে তৈরী হয়ে নেয় । তনিমা তার বর আর মেয়েকে নিয়ে রাতে একসাথে হবে সেখানে , সন্ধ্যায় কোথায় পার্টি আছে ওদের ; তবু তনিমা মায়ের পাশে থাকে । সে লক্ষ্য করেছে অমি চাচ্চুর ব্যাপারে কেমন যেন শিশুসুলভ উচ্ছলতা আম্মুকে ঘিরে ধরে । বুশরাও বলছিল একদিন , জান তনু আপু আম্মু বলে আব্বুর নাকি বেস্ট ফ্রেন্ড অনু আন্টি , হি লাইকস হার , কেয়ারস হার এ্যা লট !
হালকা বেগুনী লিপস্টিকটা সেই এগিয়ে দেয় মাকে , আম্মুকে সাজলে এত মিষ্টি লাগে ; অমি চাচ্চুকে দেখলে মায়ের চেহারায় অপূর্ব আলো খেলা করে !
বিকেলে পৌছে গেল অমির বাড়িতে , ওরা অপেক্ষায় ছিল ; বাড়ির সামনে প্রশস্ত বাগান , ঘাসে ঢাকা লন । শিপ্রার রুচী আর অমির অর্থের সদ্ব্যবহার হয়েছে পুরোপুরি । শিপ্রা প্রায় দৌড়ে এল , অমিকে দেখা গেল বারান্দায় এসে দাড়িয়েছে , মনে হল কতদূর , কতদূরে দাড়িয়ে আছে মুগ্ধচোখে -চোখেরও কি বয়স বাড়েনা !
শুভেচ্ছা বিনিময়ের পালা শেষ করলো । কাঁচঘেরা বারান্দায় বসলো ওরা ।
মোহন আগেই খাবারের মেন্যুর বিষয়ে শিপ্রাকে পরামর্শ দিয়ে রেখেছিল , চায়ের টেবিলেও তাদের দুজনের যৌথচিন্তার বহি:প্রকাশ -- ফলের সালাদ , টকদই আর বিস্কিট দিয়ে সারলো , সাথে আদা চা । সবজী বাটি আর অমির জন্য আনা মগ দেখে অমি এমন ভাবে হাসলো যেন অপরাধ করে ফেলেছে অনু । বলল , সিরামিক মগ ,পড়ে ভেঙ্গে গেলে তখন কষ্ট লাগবে যে ! কেন আনো এসব !
অনু : সামান্য মগের জন্য ভাবছো , কত দামি জিনিস ভেঙ্গে গেল ,তার জন্য আক্ষেপ হয়নি ! সব দরদ মগে ঢালছো !
মোহন : অনু ভাল তসবিহ গাঁথে , শক্ত সুতোয় , বলেছিলাম অমির জন্য গেঁথে দাও , ভাল হোত ।
শিপ্রা : অনু আপা তসবিহ গেঁথে আনলে তো তসবিহ পড়ার উদ্দেশ্য সাধন হবে না ,অন্য সাধনা হত ! তবে যদি আনো আপা হীরে বা মুক্তো দানা গেঁথে এনো ।
শিপ্রা এমনই বলে , সবাই হেসে দিল ।
মাগরেবের নামাজ পড়ে আবার বারান্দায় বসলো ওরা । মোহন আর অমি কি সব নিয়ে আলোচনা করছে ; শিপ্রা অনুকে নিয়ে রান্না ঘরে গেল ,করলা ভাজি ,ধনেপাতা দিয়ে কৈ মাছ , মুগ ডাল , অল্প মসলায় মুরগী ভুনা , সর্ষে ইলিশ , মোহনের জন্য ছুরি শুটকির স্পেশাল ডিস --দেখেই বোঝা যাচ্ছিল সুস্বাদু হবে । একফাকে শিপ্রা একটা গাঢ় বেগুনী রঙের টিপ পরিয়ে দিল অনুকে , তনিমার কাছে শুনেছে টিপ পরা তার মায়ের খুব পছন্দ !
বারান্দায় ফিরে আবার কি কাজে উঠে গেল শিপ্রা , মোহন টিভিতে খবর দেখতে গেল , মনে হল ওরা ইচ্ছে করে ওদের একা করে দিয়ে গেল । একদিন শিপ্রা বলেছিল কথায় কথায় মোহনকে , অমি আর অনু অনেকের মধ্যে বেশ চেনা হয়ে থাকে ,স্বাভাবিক থাকে ; ওদের একা করে দিলে দুজনে কেমন অচেনা হয়ে যায় , কি যেন খুঁজতে থাকে , খুঁজে মনে হয় পায় না , তাই মনে হয় ।
নিশ্চুপ , নীরব কিছুক্ষন , তারপরে অমি বলে , হার্টের অসুটার কি খবর তোমার ?
অনু : তুমিই তো দূর্বল করে দিয়েছো হার্ট , ভিতরে ঢুকে কল কব্জা সব নাড়িয়ে চাড়িয়ে ফেলেছো , আবার ভুল হাতে জুড়েছো , ধরে বসে আছো সেখানে , বেরও তো হচ্ছো না ।
অমি : বের হব কিভাবে ? তুমি বন্দী করে রেখেছো আর আমার ইচ্ছেও নেই । তোমার হার্ট তো তবু আছে যেমন তেমন , আমারটা যে একজন ভেঙ্গে চুরে , রক্তাক্ত করে একেবারে নাই করে ফেলেছে !
অনু : আহা ! কে সে ? হার্ট নেই তো বেঁচে আছো কিভাবে ?
অমি : আরেকজনের হার্টের মধ্যে বসে আছি যে , তার ধুক ধুকানিতে বেঁচে আছি , আমার প্রানভ্রমর তার কাছে ; তুমি চেন না তাকে ? কপালে বেগুনী টিপ পরে বসে আছে আমার সামনে ।
অবাক হয়ে যায় অনু ; বলে , অমি তুমি এতসব আবেগমাখা কথা বলতে পারো !
অমি : তুমি কবি , তোমার ছোঁয়ায় শিখেছি ।
অনু: তুমি তো কবির কবিতা , পড়ি তোমাকে , অর্ধেক বুঝি , অর্ধেক বুঝিনা ।
চলবে ..
পরের পর্ব -- ২ : Click This Link
ছবির জন্য কৃতজ্ঞতা: রানা
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে অক্টোবর, ২০১১ বিকাল ৪:৩১

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




