somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আসুন একটি গল্প লিখি‬

২৩ শে এপ্রিল, ২০১৬ দুপুর ১:৪০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



ছেলেটি উচ্চ-মধ্যবিত্ত শ্রেণীর ছাত্র। উচ্চ-মধ্যবিত্ত ছাত্র বলতে বোঝানো হচ্ছে ফার্স্ট-সেকেন্ড নয় তবে মিডিয়ামের চেয়ে একটু ভালো। ক্লাস ফাইভে ওঠার পরে ছেলেটিকে বলা হলো, এই বছরটা জীবনের সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ সময়। খেলাধুলা, কার্টুন-সিনেমা সব একবছরের জন্য বাদ দিতে হবে; যথারীতি ছেলেটি সব বাদ দিলো। ঝলক, স্টার, গ্যালাক্সি তিনটা বৃত্তি গাইড ব্যাগে নিয়ে ছুটতে থাকলো দিন-রাত। ক্লাস ফাইভ পার হলেও ছেলেটির ছোটা শেষ হল না। বলা যায় শুরু হল মাত্র।

ক্লাস সিক্সেও একই উপদেশ, ক্যাডেটে ভর্তি হলেই জীবন পরিষ্কার। অনেক বন্ধুরা যখন পড়াশোনার চেয়ে খেলায় সময় দিত বেশি, ছেলেটি তখন মুখস্ত করেছে মাদার তেরেসার আসল নাম কি, হিমালয়ের গঙ্গোত্রী নামক হিমবাহ থেকে কোন নদীর উৎপত্তি, চৌধুরী এন্ড হুসেইনের বইয়ের ইংরেজী গ্রামার।

যেহেতু আমরা গল্প লিখছি তাই নিজেদের ইচ্ছে মত আমরা ছেলেটিকে বিশ্রাম দিতে পারি। ধরি ক্লাস সেভেন ছেলেটির মোটামুটি আরামেই কাটলো। তবে আসল দৌড় শুরু হলো ক্লাস এইট থেকে।

ক্লাস এইটঃ সামনে বৃত্তি পরীক্ষা। সব বাদ। শুধু পড়া।
ক্লাস নাইনঃ সামনে এসএসসি। সব বাদ। মেয়ে থেকে সাবধান।
ক্লাস টেনঃ প্রিটেস্ট, টেস্ট, মডেল টেস্ট, কোচিং, প্রাইভেট ইত্যাদি।
একাদশ-দ্বাদশ-ভর্তি পরীক্ষাঃ এসএসসি কিছুই না। ভালো ভার্সিটিতে ভর্তি হলেই সফল। মেয়ে থেকে সাবধান।

ধরি এবার ছেলেটি ভালো কোথাও চান্স পেয়ে গেছে। শুভাকাঙ্খিদের পরামর্শমত তখন ছেলেটির আরামের দিন শুরু হওয়ার কথা। প্রেম, আড্ডা সব কিছুর সময় তো ভার্সিটিতেই। কিন্তু গল্পটিকে আর বড় করার জন্য আমরা ছেলেটিকে আরও একটু বাজিয়ে দেখতে চাই।

ভার্সিটিতে ভর্তি হবার পড় ছেলেটির কাছে তার পরিবার ও আত্মীয়স্বজনের দাবি, এবার তাকে ফার্স্টক্লাস ফার্স্ট হয়ে টিচার হতে হবে।
যথারীতি ছেলেটি আবার দৌড় শুরু করলো। পরে অবশ্য ছেলেটি বুঝতে পেরেছিল তার মত সবাই দৌড় দিয়েছে।
যাই হোক এরপর ছেলেটির পড়া শেষ। চাকরি পেতে হবে। ব্যাচমেটদের মাঝে সবার আগে চাকরি দরকার। আবার ভালো চাকরিতো বটেই। ধরি, ছেলেটি এবার ভালো একটি চাকরি পেল এবং তার পরিবার নিয়ে সুখে শান্তিতে বসবাস করতে লাগল।

গল্পটি এখানেই শেষ হতে পারত...............।

আবার এই ভাবেও শেষ হতে পারত.........

জীবনের ম্যারাথনে দৌড়াতে দৌড়াতে ব্যস্ততা জিনিসটি ছেলেটি এতদিন না বুঝলেও এবার ঠিকই টের পেলেন। পকেটে টাকা আছে অথচ বাবাকে স্যান্ডেল কিনে দেওয়ার সময় নাই, মোবাইলে ব্যালেন্সের অভাব নেই অথচ প্রিয়জনদের একমিনিট ফোন করা হয় না। স্ত্রীর সিজারের সময় ছেলেটির আফিসে জরুরী কাজ থাকে।ইত্যাদি, ইত্যাদি।

ছেলেটির কি এমন জরুরি কাজ থাকে যে, জ্বরের মধ্যেও অফিস করতে হয়; ছুটি নেয়া যায় না?
ছেলেটির কি এমন জরুরি কাজ থাকে যে, অপারেশান থিয়েটারে স্ত্রী কে রেখে তাকে ল্যাপটপ কাধে নিয়ে ছুটতে হয় অফিসে?

এই প্রশ্নগুলো তার পরিবারের বাকি সদস্যদের মনে দানা বাধতে থাকে।
শুধু দানা বাধে না। মাঝে মাঝে বিস্ফোরণ ঘটে।

ছেলেটির বাবা হয়ত একদিন আক্ষেপ করে বলে, "এত কষ্ট করে ছেলেকে জজ ব্যারিষ্টার বানিয়ে কি হলো, অমুকের ছেলে মুদির দোকানদার হলেও বাবা-মা'কে পুজো করে, আমার ছেলে আমার সাথে বসে ভাত খাওয়ার ও সময় পায় না "
অথচ কেউ বুঝলো না যে, এই হাজার হাজার সফল অমুকের ছেলের মত হতে গিয়েই তার ছেলে আজ সিস্টেমে বন্দি।

ছেলেটির স্ত্রী হয়ত একদিন ফেসবুকে হতাশামাখা স্ট্যাটাস দিয়ে বলবে, " এত টাকার আমার দরকার ছিলো না, আমার স্বামী যদি আমাকে আরেকটু সময় দিত"
অথচ বিয়ের আগে যদি ছেলেটির এই বড় চাকরিটি না থাকত তবে এই মেয়েই, ছেলেটিকে হয়ত বিয়েই করতো না।

আসলে তাদেরও দোষ নেই। তারাও সিস্টেমে পড়ে গেছে।

বাবা-মা চায়- তার সন্তান সবার সেরা হোক।
স্ত্রী চায়- তার স্বামী সেরা হোক।
সন্তান চায়- আমি যেন আমার বাবা-মা ও পরিবারকে সুখে রাখতে পারি।

কিন্তু আমরা সবাই সিস্টেমে পড়ে গেছি। কর্মক্ষেত্রে আপনি যত বড় পজিশনে আছেন আপনার দায়িত্ব তত বেশী। তাই ব্যস্ততাও বেশী।
এটা আমাদের সিস্টেম। সিস্টেমের এই জাল থেকে বের হতে পারেনাই এই প্রজন্ম, তার আগের প্রজন্ম, হয়ত সহজে বের হতে পারবেনা ভবিষ্যৎ প্রজন্মও।

তবে আমাদের প্রত্যাশা আমরা দ্রুত এই জাল থেকে বেরিয়ে আসব।
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে এপ্রিল, ২০১৬ দুপুর ১:৪১
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্মৃতিপুড়া ঘরে

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৩০



বাড়ির সামনে লম্বা বাঁধ
তবু চোখের কান্না থামেনি
বালিশ ভেজা নীরব রাত;
ওরা বুঝতেই পারেনি-
মা গো তোমার কথা, মনে পরেছে
এই কাঠফাটা বৈশাখে।

দাবদাহে পুড়ে যাচ্ছে
মা গো এই সময়ের ঘরে
তালপাতার পাখাটাও আজ ভিন্নসুর
খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

গরমান্ত দুপুরের আলাপ

লিখেছেন কালো যাদুকর, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৫৯




মাঝে মাঝে মনে হয় ব্লগে কেন আসি? সোজা উত্তর- আড্ডা দেয়ার জন্য। এই যে ২০/২৫ জন ব্লগারদের নাম দেখা যাচ্ছে, অথচ একজন আরেক জনের সাথে সরাসরি কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজীব নূর কোথায়?

লিখেছেন অধীতি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:২৪

আমি ব্লগে আসার পর প্রথম যাদের মন্তব্য পাই এবং যাদেরকে ব্লগে নিয়মিত দেখি তাদের মধ্যে রাজীব নূর অন্যতম। ব্যস্ততার মধ্যে ব্লগে কম আসা হয় তাই খোঁজ-খবর জানিনা। হঠাৎ দু'একদিন ধরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৬



©কাজী ফাতেমা ছবি

মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।

হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।

ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×