somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমার বাবা দিবস!

০৯ ই মে, ২০১১ রাত ২:১৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

মধ্যরাতের কিছু আগে, বিশাল গামলা নিয়ে ভাত খেতে বসেছি। খাবার টেবিলে ভাত রাখবার যে গামলা, সেটা। বসেছি বিছানায়, আসন দিয়ে; ইন্টারেস্টিং একটা বই পড়ছি সাথে, অনেক দিনের অভ্যাস। লোডশেডিং চলছে, হাতে মোবাইলের ক্ষুদ্র টর্চ লাইট, মনোযোগ পুরোপুরি সংযোজিত হয়ে আছে বইয়ের পাতায়। এমন অবস্থায় ছোট আপুর মোবাইলে রিমাইন্ডার এ্যালার্ম বেজে উঠলো। হঠাৎ করে আমি এক রকম স্তম্ভিত হয়ে খাওয়া থামিয়ে শব্দের উৎসের দিকে তাকালাম। আধোঅন্ধকারে কিছু দেখা যাচ্ছে না, শুধু ঢেউয়ের মতোন একটানা দোলায়িত শব্দ।

স্থির হয়ে থাকলাম বেশ কিছুক্ষণ; খুব ভালো করেই জানি ঐ রিমাইন্ডার কোন উপলক্ষকে নির্দেশ করছে। ছোট আপুর আগে ঐ মোবাইলটা আমি ব্যবহার করতাম। সেট পাল্টাবার সময় সবকিছুই পালটে দিয়েছিলাম শুধুমাত্র বার্ষিক উপলক্ষগুলো বাদে। আজও খুব গুরুত্বপূর্ণ একটা উপলক্ষ জানান দিচ্ছে ওটা। আজ ৯ মে, আমার বাবার ২৬তম মৃত্যবার্ষিকী!

গতকাল ছিলো মা দিবস। বেশ হল্লা করে বাসায় কেক কাটা হয়েছিলো, প্রবাসী বড়ো ভাই স্কাইপি’র বদৌলতে সরাসরি ছিলেন আমাদের সাথে। গূঢ় আনন্দময় পারিবারিক পরিবেশেও সবকিছু আমার কাছে স্বাভাবিক ছিলো না; যদিও সময় সবকিছু বেশ দক্ষতার সাথে মুছে দিতে পারে এবং হয়েছেও তাই, তবু। তবু গত কয়েক বছর ধরে আমার কাছে শূণ্যতাটা ধরা পড়ছে খুব!

সময়ের প্রবাহ বেশ দক্ষ আর চতুর (অন্য/অনেকের মতে রহস্যময়)। পারিপার্শ্বিকতা বুঝবার ক্ষমতা হবার পর থেকে দেখেছি বাবার মৃতুবার্ষিকীতে বাসায় অথবা মসজিদে মিলাদ, দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হোত। ক্রমে সেটা অনিয়মিত হয়ে ওঠে, ব্যাপারটা বাৎসরিক বলেই হয়তো কারো আমলে আসেনি (!)। মাঝে মাঝে মনে হোত সবাই কি ভুলে যাচ্ছে? নাকি ভুলে থাকার চেষ্টা করছে? এবং এভাবে এটা এক রকম চর্চার আকার ধারণ করলো, স্বাভাবিক আর সব ঘটনার মতোন এটাও অনেকে ভুলে যেতে থাকলো। একদিন, হতাশাগ্রস্ত আর প্রশ্নব্যাকুল হয়ে আবিষ্কার করলাম, আমি আমার বাবার মৃত্যুবার্ষিকী কবে সেটা ভুলে গেছি! অনুভূতিটা এমন ছিলো যেন আমি নিশ্চিত ছিলাম তারিখটা আসলে আমি কখনোই জানতাম না! তখন আমার বয়স ১৮, উচ্চ মাধ্যমিক ২য় বর্ষে পড়ছি। এমনই এক লোডশেডিঙের রাতে, ছাদে বসে আমার মা’কে জিজ্ঞেস করলাম; একটু থেমে তারিখটা বললো মা। এরপর আমরা দুজনেই নিশ্চুপ ছিলাম কিছুক্ষণ।

বাবাকে আমি দেখেছি তবে তাঁকে কেন্দ্র করে আমার কোন স্মৃতি নেই। আমার দেড় বছর বয়সে তিনি ব্রেইন টিউমারে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। তিনি একজন মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। যুদ্ধ করেছেন ৯নং সেক্টরে, বাংলাদেশ পুলিশ থেকে। মৃত্যুর সময় ছিলেন এস.আই পদে। মা, খালা, খালাতো বোন, ফুপুদের কাছে তিনি খুব মেজাজি ছিলেন বলে শুনেছি। তাঁর ব্যবহার্য্যের মধ্যে একটা ছোট নোটবুক আর পুলিশের খাঁকি টুপিটা ছাড়া আমার কাছে আর কিছুই নেই এখন। শুধুমাত্র ছবি থেকেই তাঁর চেহারার সাথে আমার পরিচয়!

আমি প্রায়ই খুব প্রকটভাবে বাবার অভাব অনুভব করি। কিন্তু বাবা হারাবার কষ্ট হয় না একদম! প্রাণপ্রিয় বন্ধুকে বাবা হারাতে দেখেছি, খুব কাছ থেকে পর্যবেক্ষণ করেছি। নিজেকে তবু এই অনূভুতির প্রতি বেশ ভোঁতা আর অপরিচিত মনে হয়। এতকিছুর পরেও সবগুলো সমিকরণ পাশাপাশি চলে এলে অদ্ভুত কিছু ভাবাবেগ গ্রাস করে আমাকে।

বাবাকে স্মৃতিতে সংরক্ষণের জন্যে আমি যথেষ্ট সময় পাইনি তবু খুব মিস করি তাঁকে। বেঁচে থাকে তিনি হয়তো আমাকে রাত জাগতে দিতেন না। হয়তো আমার লেখালেখি পছন্দ করতেন না, জোর করে প্রোকৌশলী বা সিকিৎসক হতে বলতেন। হয়তো আমার বন্ধুবাৎসল্যের সমালোচনা করতেন। হয়তো আমার মাধ্যমিক অথবা উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার সময় পাশের ঘরে রাত জাগতেন। হয়তো পরীক্ষার ফলাফল শুনে কাঁধে হাত রেখে আরো ভালো করার উৎসাহ দিতেন। হয়তো কোন মেয়ের প্রতি আমার দূর্বলতা তাঁকে কিঞ্চিত চিন্তিত করে তুলতো। হয়তো আমার খোঁচা খোঁচা দাড়ি দেখে আমার বড়ো হয়ে ওঠা তাঁকে গর্বিত করে তুলতো... হয়তো!

বাবা, তোমাকে আমি খুব মিস করি!!
৩টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আগামী নির্বাচন কি জাতিকে সাহায্য করবে, নাকি আরো বিপদের দিকে ঠেলে দিবে?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:১২



আগামী নির্বচন জাতিকে আরো কমপ্লেক্স সমস্যার মাঝে ঠেলে দিবে; জাতির সমস্যাগুলো কঠিন থেকে কঠিনতর হবে। এই নির্বাচনটা মুলত করা হচ্ছে আমেরিকান দুতাবাসের প্রয়োজনে, আমাদের দেশের কি হবে, সেটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ফেসবুক বিপ্লবে সেভেন সিস্টার্স দখল—গুগল ম্যাপ আপডেট বাকি

লিখেছেন মহিউদ্দিন হায়দার, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:৩০




কিছু তথাকথিত “বাংলাদেশি বিপ্লবী” নাকি ঘোষণা দিয়েছে—ভারতের সেভেন সিস্টার্স বিচ্ছিন্ন করে ফেলবে! সহযোগী হিসেবে থাকবে বিচ্ছিন্নতাবাদী সন্ত্রাসী আর পাকিস্তানি স্বপ্ন।শুনে মনে হয়—ট্যাংক আসবে ইনবক্সে। ড্রোন নামবে লাইভ কমেন্টে। আর... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গু এনালিস্ট কাম ইন্টারন্যাশনাল সাংবাদিক জুলকার নায়েরের মাস্টারক্লাস অবজারবেশন !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:২৬

বাংলাদেশের দক্ষিণপন্থীদের দম আছে বলতে হয়! নির্বাচন ঠেকানোর প্রকল্পের গতি কিছুটা পিছিয়ে পড়তেই নতুন টার্গেট শনাক্ত করতে দেরি করেনি তারা। ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহ ঘিরে নতুন কর্মসূচি সাজাতে শুরু করেছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ক্ষমতাচ্যুত ফ্যাসিবাদ: দিল্লির ছায়া থেকে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র

লিখেছেন কৃষ্ণচূড়া লাল রঙ, ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ ভোর ৫:৫৭

একটা সত্য আজ স্পষ্ট করে বলা দরকার—
শেখ হাসিনার আর কোনো ক্ষমতা নেই।
বাংলাদেশের মাটিতে সে রাজনৈতিকভাবে পরাজিত।

কিন্তু বিপদ এখানেই শেষ হয়নি।

ক্ষমতা হারিয়ে শেখ হাসিনা এখন ভারতে আশ্রয় নিয়ে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

Grameen Phone স্পষ্ট ভাবেই ভারত প্রেমী হয়ে উঠেছে

লিখেছেন অপলক , ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ২:৪৯



গত কয়েক মাসে GP বহু বাংলাদেশী অভিজ্ঞ কর্মীদের ছাটায় করেছে। GP র মেইন ব্রাঞ্চে প্রায় ১১৮০জন কর্মচারী আছেন যার ভেতরে ৭১৯ জন ভারতীয়। বলা যায়, GP এখন পুরোদস্তুর ভারতীয়।

কারনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×