somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

১৬ অক্টোবর – বিশ্ব খাদ্য দিবস : একটি তাৎক্ষণিক ব্লগ

১৬ ই অক্টোবর, ২০১১ রাত ৩:০২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আজ ১৬ অক্টোবর, বিশ্ব খাদ্য দিসব। ১৯৭৯ সালে বিশ্ব খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (FAO ) ২০তম সাধারণ সভায় হাঙ্গেরির তৎকালীন খাদ্য ও কৃষি মন্ত্রী ড. প্যাল রোমানী বিশ্বব্যাপী এই দিনটি উদযাপনের প্রস্তাব উত্থাপন করেন। ১৯৮১ সাল থেকে বিশ্ব খাদ্য ও কৃষি সংস্থার প্রতিষ্ঠার দিনটিতে (১৬ অক্টোবর, ১৯৪৫) দারিদ্র ও ক্ষুধা নিবৃত্তির নিমিত্তে বিভিন্ন বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে বিশ্বের ১৫০টিরও বেশি দেশে এই দিনটি গুরুত্ত্বের সাথে পালিত হয়ে আসছে; এবারের প্রতিপাদ্য বিষয়, “সঙ্কট নিরসনে সহনশীল খাদ্য মূল্য”।

একটি দেশের নাগরিকগণের মৌলিক চাহিদাগুলোর মধ্যে খাদ্য অন্যতম। তাই গত কয়েক দশকে পৃথিবীর আবহাওয়া পরিবর্তনের সাথে সাথে চাষযোগ্য জমি সংরক্ষণ, জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ, কৃত্রিম বনায়ন, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক অর্থনীতি নিয়ন্ত্রণ ইত্যাদি কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং পৃথিবীর সবগুলো উন্নত এবং উন্নয়নশীল দেশ, বৃহৎ ও গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানগুলো ব্যস্ত হয়ে আছে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে। পৃথিবীজুড়ে গ্লোবাল ওয়ার্মিং এবং আরো কয়েকটি বিষয়ের পাশাপাশি খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ এখন সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্যের মধ্যে একটি।

খাদ্য নিরাপত্তা বলতে খাদ্যের লভ্যতা এবং মানুষের খাদ্য ব্যবহারের অধিকারকে বোঝায়। কোন বাসস্থানকে তখনই “খাদ্য নিরাপদ ” বলে মনে করা হয়, যখন এর বাসিন্দারা ক্ষুধার্ত অবস্থায় বসবাস করেন না কিংবা খাদ্যাভাবে উপবাসের কোন আশঙ্কা করেন না। বিশ্ব খাদ্য সম্মেলন (১৯৯৬) অনুযায়ী “খাদ্য নিরাপত্তা তখনই আছে বলে মনে করা হয় যখন সকল নাগরিকের সব সময়ের জন্যে যথেষ্ট পরিমাণে, নিরাপদ ও পুষ্টিকর খাদ্য প্রাপ্তির প্রত্যক্ষ ও অর্থনৈতিক নিশ্চয়তা থাকে যা তাঁদের সক্রিয় ও সুস্থ জীবন নিশ্চিতকরণের জন্যে সঠিক পরিমাণ খাদ্যের চাহিদা পূরণ করে।”

বাংলাদেশের খাদ্য নিরাপত্তা অনেকটাই ধান উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন এবং ধানের মূল্য স্থিতিকরণের সমার্থক। প্রযুক্তির উৎকর্ষতার সাথে সাথে ধান উৎপাদনে বাংলাদেশ প্রভূত সাফল্য অর্জন করলেও জনসঙ্খ্যার ক্রমবর্ধমান বৃদ্ধির দরুন নির্দিষ্ট পরিমাণ চাষযোগ্য জমির উপর সৃষ্ট চাপের জন্যে এই অগ্রগতি বজায় রাখা বেশ কঠিন। বন্যা, খরা ও অন্যান্য প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে আভ্যন্তরীণ খাদ্য শস্য উৎপাদন ব্যাহত হয় যা খাদ্যের যোগানে অপ্রতুলতা সৃষ্টি, পাইকারি ও খুচড়া বাজারে চালের মূল্যের ঝুকিপুর্ণ ওঠানামার স্থায়ী হুমকি নিশ্চিত করে।
এমন সব প্রপঞ্চ বিবেচনায় এনে প্রতি বছর প্রয়োজনীয় পরিমাণ খাদ্য সরবরাহের জন্যে বিশ্ব খাদ্য ও কৃষি সংস্থা’র (FAO) পাশাপাশি বাংলাদেশও বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ, স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। এর মধ্যে জাতীয় খাদ্য নীতি ২০০৬ ও জাতীয় খাদ্য নীতি : কর্ম পরিকল্পনা ২০০৮-২০১৫ উল্লেখযোগ্য। এই নীতিগুলোর মূল উদ্দেশ্য হলো-

• যথেষ্ট পরিমাণ পুষ্টিকর খাদ্যের স্থায়ী সরবরাহ নিশ্চিতকরণ
• সর্বসাধারণের ক্রয় ক্ষমতা বৃদ্ধি ও খাদ্যের সহজলভ্যতা নিশ্চিতকরণ
• সবার জন্যে, বিশেষ করে নারী ও শিশুদের যথেষ্ট পরিমাণ পুষ্টি সরবরাহ নিশ্চিতকরণ

বাংলাদেশের আয়তন ১,৪৫,৫৭০ ব.কি. (৫৬,৯৭৭ ব.মা.) এবং বর্তমান জনসঙ্খ্যা প্রায় ১৫.৮৫ কোটিরও বেশি। জনসঙ্খ্যার ঘনত্ব প্রতি বর্গ কিলোমিটারে ১০৭৪.৫৪ জন! মাথাপিছু আয় মাত্র ৬৩৮ ডলার। মানব উন্নয়ন সূচক ০.৪৬৯ (HDI )। দেশের ৪০% মানুষ দারিদ্র সীমার নিচে অবস্থান করছে এবং ৪৬% শিশু অপুষ্টিতে ভুগছে । অর্থাৎ পরিমিত এবং পুষ্টিকর খাদ্য সরবরাহে আমরা চরমভাবে ব্যার্থ।

বাংলাদেশ সরকার খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনে বেশ অনেক বছর ধরে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে এবং জাতিসঙ্ঘসহ আরো কিছু আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান মনে করে খাদ্যোৎপাদনে বাংলাদেশের সাফল্য উল্লেখযোগ্য। গত এপ্রিল মাসে (২ এপ্রিল, ২০১১) খাদ্য ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রী মুহম্মদ আব্দুর রাজ্জাক এক বিবৃতিতে বলেন যে বাংলাদেশ সরকার আগামী পাঁচ বছরের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্যে প্রায় ৮০০ কোটি ডলারের একটি পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে । কিন্তু খাদ্য মূল্য নিয়ন্ত্রণে শুধুমাত্র বৃহৎ পরিসরে পরিকল্পনা গ্রহণ নয় বরং মাঠ পর্যায়ে খাদ্যের সঠিক বন্টন নিশ্চিতকরণও খাদ্য নিরাপত্তার একটি অংশ। কিন্তু বাংলাদেশের কৃষকগণ, যারা আমাদের মোট জনসঙ্খ্যার ৪৫%, তাঁদের উৎপাদিত ফসলের সঠিক মূল্য পাচ্ছেন না। কঠোর পরিশ্রমের পর পাইকারি ক্রেতাদের এক রকম জবরদস্তির ভেতর দিয়ে তাদেরকে নাম মাত্র মূল্যে ফসল বিক্রি করতে হয় যা ঢাকায় আসার পথে একাধিক স্থানে সরকারি টোল ছাড়াও স্থানীয় নেতাদের বেসরকারি টোল (!), বিভিন্ন চেক পয়েন্টে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীকে চাঁদা প্রদাণ এবং শহুরে আড়তদারদের কারসাজীতে দ্বিগুণ-ত্রিগুণ দামে খুচরা বাজারে বিক্রি হয়। ফলশ্রুতিতে কৃষক তাঁর প্রাপ্য থেকে বঞ্চিত হন এবং সাধারণ ভোক্তাগণ অধিক অর্থ খরচ করে চরম দূর্ভোগ পোহান। অর্থাৎ, প্রান্তিক এবং শহুরে উভয় দলের নাগরিকগণ ক্রমশ সাধারণ ক্রয় ক্ষমতা হারাচ্ছেন। খাদ্যের বন্টন ব্যবস্থাপনায় দূর্নীতির জন্যে এবং প্রান্তিক জনগণ ক্রয় ক্ষমতার নিচে অবস্থানের ফলে জাতীয় খাদ্য নীতির কোন শর্তই পূরণ হচ্ছে না এবং এই পরিস্থিতি প্রতিনিয়ত স্থায়ী হয়ে উঠছে। এমন অবস্থায় ২০১৫ সালের মধ্যে খাদ্য নিরাপত্তা অর্জন সম্ভব নাকি তা নিছক আষাঢ়ে গল্প তা প্রশ্নের সম্মুখীন!

রেফারেন্সঃ
1. Food Security and Nutrition in Bangladesh: Progress and Determinants; Vol. 2, No. 2, 2005
2. National Food Policy Plan of Action 2008-2015
3. National Plan for Disaster Management
4. The National Food Policy Plan of Action
5. Bangladesh Agricultural Research Councile (BARC)
6. National Food Policy 2006, 14 August 2006
7. Monga – Seasonal Food Insecurity in Bangladesh by Sebastian Zug
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মুসলিম কি সাহাবায়ে কেরামের (রা.) অনুরূপ মতভেদে লিপ্ত হয়ে পরস্পর যুদ্ধ করবে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪৯




সূরাঃ ৩ আলে-ইমরান, ১০৫ নং আয়াতের অনুবাদ-
১০৫। তোমরা তাদের মত হবে না যারা তাদের নিকট সুস্পষ্ট প্রমাণ আসার পর বিচ্ছিন্ন হয়েছে ও নিজেদের মাঝে মতভেদ সৃষ্টি করেছে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদে মসজিদে মোল্লা,ও কমিটি নতুন আইনে চালাচ্ছে সমাজ.

লিখেছেন এম ডি মুসা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সকাল ১০:২৩

গত সপ্তাহে ভোলার জাহানপুর ইউনিয়নের চরফ্যাশন ওমরাবাজ গ্রামের এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। লোকটি নিয়মিত মসজিদে যেত না, মসজিদে গিয়ে নামাজ পড়েনি, জানা গেল সে আল্লাহর প্রতি বিশ্বাসী ছিল, স্বীকারোক্তিতে সে... ...বাকিটুকু পড়ুন

গল্পঃ অনাকাঙ্ক্ষিত অতিথি

লিখেছেন ইসিয়াক, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ দুপুর ১:১২

(১)
মাছ বাজারে ঢোকার মুখে "মায়া" মাছগুলোর উপর আমার  চোখ আটকে গেল।বেশ তাজা মাছ। মনে পড়লো আব্বা "মায়া" মাছ চচ্চড়ি দারুণ পছন্দ করেন। মাসের শেষ যদিও হাতটানাটানি চলছে তবুও একশো কুড়ি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগে বিরোধী মতের কাউকে নীতি মালায় নিলে কি সত্যি আনন্দ পাওয়া যায়।

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১৮

ব্লগ এমন এক স্থান, যেখানে মতের অমিলের কারণে, চকলেটের কারণে, ভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শের কারণে অনেক তর্কাতর্কি বিতর্ক কাটা কাটি মারামারি মন্তব্যে প্রতিমন্তব্যে আঘাত এগুলো যেনো নিত্য নৈমিত্তিক বিষয়। ব্লগটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগার'স ইন্টারভিউঃ আজকের অতিথি ব্লগার শায়মা

লিখেছেন অপু তানভীর, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ১১:০৫



সামুতে ব্লগারদের ইন্টারভিউ নেওয়াটা নতুন না । অনেক ব্লগারই সিরিজ আকারে এই ধরণের পোস্ট করেছেন । যদিও সেগুলো বেশ আগের ঘটনা । ইন্টারভিউ মূলক পোস্ট অনেক দিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×