somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

এলিস গেল আজব দেশে

৩০ শে মে, ২০১০ সন্ধ্যা ৭:২৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
ছোটবেলায় বড়আপির কাছে গল্প শুনতে গেলেই ও এই গল্পটা শুরু করতো।


ছোট্ট মেয়ে এলিস, বড়বোনের সঙ্গে বাগানে খেলতে যায়। বড়বোন বসে বসে গল্পের বই পড়ে আর সে খেলে বেড়ায় নিজের মনেই। হঠাৎ দেখে একটা সাদা খরগোশ ওয়েস্ট কোট গায়ে হাতে একটা ঘড়ি দেখতে দেখতে হন্তদন্ত হয়ে হাঁটছে আর বিড়বিড় করছে, "ওহ দেরি হয়ে গেল, আমার দেরি হয়ে গেল, অনেক দেরি হয়ে গেল"। কথা বলা খরগোশটা দেখে কৌতূহলী হয়ে এলিস পিছু পিছু গেল। দেখে খরগোশটা একটা গর্ত দিয়ে ভিতরে ঢুকে গেছে। কি আছে গর্তে? এই ভেবে উঁকি দিতে গিয়ে পা হড়কে এলিসও পড়ে গেল নিচে। পড়ছে...............পড়ছে...........................পড়ছে....................


..............................................................................................................................................................................................................................................................................

'তারপর কি হল?'

'আরে ওতো এখনও পড়ছে, পড়া শেষ হোক তারপর বলবো। ঘুরে আয়।' অনেকক্ষণ পর ঘুরে ঘুরে এসে যদি জিঞ্জেস করতাম 'তারপর?' সেই একই উত্তর, 'ওর পড়াতো শেষ হয়নি এখনও'। সারাদিন ধরে বড়আপি ঘুরাতো আমাকে। এলিসের পড়াও শেষ হতো না, আমারও আর বাকিটা শোনা হতো না।/:)

তারপর একদিন হঠাৎ করেই টিভিতে সিরিজটা দেখালো। সাদা খরগোশের পেছন পেছন এলিস চলে গেল এক আজব দেশে। কি একটা পানীয় খেতেই হয়ে গেল এত্তটুকুন, ইঁদুরের সমান। আবার একটা কেক খেতেই হয়ে গেল এই বিশাল, একেবারে দৈত্যের মতন। সেখানে আছে কথা বলা খরগোশ, অদৃশ্য হয়ে যাওয়া বিড়াল, জ্ঞানী এক শুয়োপোকা। আর তাসের রাজা-রানী। অত্যাচারী লাল রানী দখল করে নিয়েছে সাদা রানীর মুকুট। এলিস যেতে তাকেও বন্দী করে ফেলল। কত কত কান্ড যে হল সেখানে। সেই ছোট্টবেলার কথা। কিচ্ছুই মনে নেই। শুধু মনে আছে লাল রানী চেয়েছিল তার বাগানে সব লাল গোলাপ, কিন্তু মালি করেছিল সাদা। তখন এলিস বসে বসে সব গোলাপ লাল রঙ করে দিয়েছিল।


তখন আমার এলিস হতে এত ইচ্ছে করতো! আম্মুর কানের কাছে ঘ্যানঘ্যান করে ওইরকম ফুলো ফুলো একটা সাদা জামা আদায় করেছিলাম এলিসের মতন। আপিদের সাথে বাগানে গেলেও ওদের সাথে ঘুরাঘুরি বাদ দিয়ে খরগোশের কোন গর্ত পাওয়া যায় কি না তাই খুঁজতে থাকতাম শুধু। একবার ছোট্ট একটা গর্ত দেখলাম এক গাছের গোড়ায়। আমিতো বড় করার জন্য দুই হাতে খুড়তে শুরু করে দিলাম। আমার সাদা জামা প্রথমে লাল, তারপরে কাল হয়ে গেল। খরগোশতো পেলামই না, উল্টে আম্মুর হাতে মার আর তিনদিন ধরে আপিদের টিটকিরিতে অস্থির।/:)
বাবা শুনে আমার জন্য খরগোশ কিনে নিয়ে এল। কিন্তু এই বোকা বোকা খরগোশতো আর ওয়েস্টকোট পরে ঘড়ি নিয়ে দৌড়ে আমাকে আজব দেশে নিয়ে যাবে না। সারাক্ষণ শুধু তিরতির করে কাঁপতো আর বাঁধাকপি খেতো। আমি মনযোগ দিয়ে দেখতাম আর কল্পনা করতাম এলিস হয়ে আমি আজব দেশে চলে গেছি। কথা বলা খরগোশেরা আমাকে চা-পার্টিতে ডেকেছে। অদৃশ্য বিড়ালের ঘাড়ে চেপে অদৃশ্য হয়ে গেছি আমিও। যুদ্ধ করছি শয়তান লাল রানীটার সাথে। সাদা জামাটা পরে আপিদের চোখ এড়িয়ে আয়নার সামনে ঘুরে ঘুরে এলিস হওয়ার প্র্যাকটিস করতাম। :P

ওহ, সে কতদিন আগের কথা। আমার সেই ফুলো ফুলো সাদা জামাটা আমি এখনো রেখে দিয়েছি। যদিও আর পরতে পারিনা। :)

কিছুদিন আগে নতুন করে এলিস ইন ওয়ান্ডারল্যান্ড মুভিটা দেখলাম। সেই ওয়েস্টকোট পরা সাদা খরগোশ, দুই কুমড়োপটাশ বন্ধু টুইডলডাম আর টুইডলডি, জ্ঞানী শুয়োপোকা এ্যাবসোলম, অত্যাচারী লাল রানী আর ভাল সাদা রানী....................সব্বাই.....................সব্বাই...................

দেখতে দেখতে মনে হচ্ছিল সেই ছোট্টবেলায় চলে গেছি। আর সেই ফুলো ফুলো সাদা জামাটা পরে খরগোশের পিছু পিছু দৌঁড়ে বেড়াচ্ছি। ইস, সত্যি যদি এমন একটা আজব দেশ থাকতো! আর আমি এলিস হয়ে হুশ করে চলে যেতাম:P
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে মে, ২০১০ রাত ১০:১৪
২৬টি মন্তব্য ২৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আগামী নির্বাচন কি জাতিকে সাহায্য করবে, নাকি আরো বিপদের দিকে ঠেলে দিবে?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:১২



আগামী নির্বচন জাতিকে আরো কমপ্লেক্স সমস্যার মাঝে ঠেলে দিবে; জাতির সমস্যাগুলো কঠিন থেকে কঠিনতর হবে। এই নির্বাচনটা মুলত করা হচ্ছে আমেরিকান দুতাবাসের প্রয়োজনে, আমাদের দেশের কি হবে, সেটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ফেসবুক বিপ্লবে সেভেন সিস্টার্স দখল—গুগল ম্যাপ আপডেট বাকি

লিখেছেন মহিউদ্দিন হায়দার, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:৩০




কিছু তথাকথিত “বাংলাদেশি বিপ্লবী” নাকি ঘোষণা দিয়েছে—ভারতের সেভেন সিস্টার্স বিচ্ছিন্ন করে ফেলবে! সহযোগী হিসেবে থাকবে বিচ্ছিন্নতাবাদী সন্ত্রাসী আর পাকিস্তানি স্বপ্ন।শুনে মনে হয়—ট্যাংক আসবে ইনবক্সে। ড্রোন নামবে লাইভ কমেন্টে। আর... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গু এনালিস্ট কাম ইন্টারন্যাশনাল সাংবাদিক জুলকার নায়েরের মাস্টারক্লাস অবজারবেশন !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:২৬

বাংলাদেশের দক্ষিণপন্থীদের দম আছে বলতে হয়! নির্বাচন ঠেকানোর প্রকল্পের গতি কিছুটা পিছিয়ে পড়তেই নতুন টার্গেট শনাক্ত করতে দেরি করেনি তারা। ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহ ঘিরে নতুন কর্মসূচি সাজাতে শুরু করেছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ক্ষমতাচ্যুত ফ্যাসিবাদ: দিল্লির ছায়া থেকে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র

লিখেছেন কৃষ্ণচূড়া লাল রঙ, ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ ভোর ৫:৫৭

একটা সত্য আজ স্পষ্ট করে বলা দরকার—
শেখ হাসিনার আর কোনো ক্ষমতা নেই।
বাংলাদেশের মাটিতে সে রাজনৈতিকভাবে পরাজিত।

কিন্তু বিপদ এখানেই শেষ হয়নি।

ক্ষমতা হারিয়ে শেখ হাসিনা এখন ভারতে আশ্রয় নিয়ে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

Grameen Phone স্পষ্ট ভাবেই ভারত প্রেমী হয়ে উঠেছে

লিখেছেন অপলক , ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ২:৪৯



গত কয়েক মাসে GP বহু বাংলাদেশী অভিজ্ঞ কর্মীদের ছাটায় করেছে। GP র মেইন ব্রাঞ্চে প্রায় ১১৮০জন কর্মচারী আছেন যার ভেতরে ৭১৯ জন ভারতীয়। বলা যায়, GP এখন পুরোদস্তুর ভারতীয়।

কারনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×