somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

রাপুনজেল, এক স্বর্ণকেশী রাজকুমারী...

১১ ই মার্চ, ২০১১ রাত ৯:২১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

অনেক অনেকদিন আগে...এক দেশে ছিল এক রাজা আর এক রানী...তারা ছিল অনেক সুখী...শুধু তাদের একটা বাবু নেই...এই হল একমাত্র দু:খ...কিন্তু যখনই রানীর বাবু হবে, রানী এত অসুস্থ হয়ে গেল...

হুহ গল্পগুলোতো এভাবেই শুরু হয় বরাবর...

আচ্ছা দেখোই না, তারপর কি হয়!



অনেকদিন পর পুরো রাজ্যের লোক জানতে পারল বাবু হবে রানীর...কিন্তু তখনই রানী এত অসুস্থ হয়ে গেল...রাজকীয় চিকিৎসক বলল, রানীকে যাদুর স্বর্ণফুল ধোয়া পানি খাওয়ানো হোক। কিন্তু ওদিকে হয়েছে কি ওই যাদুর ফুলটার ওপরে একটা দুষ্টু ডাইনীরও যে নজর পড়েছে। ফুলটার অনেক ক্ষমতা কিনা। ওই ফুলটার কাছে গিয়ে একটা যাদুর গান গাইলেই হল, তুমি পাবে অনন্ত যৌবন, মানে হল গিয়ে কক্ষনো বুড়ো হবে না তুমি। রাজসেনারাতো ফুলটা নিয়েই এল খুঁজতে খুঁজতে। আর সেই ফুল ধোয়ানো পানি খেয়ে রানী জন্ম দিল এক স্বর্ণকেশী রাজকুমারী। রাজা রানী আদর করে তার নাম দিল রাপুনজেল।

কেউ কিন্তু জানে না রাজকুমারীর সোনার চুলেই যাদুর ফুলের সব ক্ষমতা এখন। কিন্তু শর্ত হল সেই চুল কাটা যাবে না, কাটলেই চুল হয়ে যাবে বাদামী আর সব ক্ষমতা যাবে চলে। দুষ্টু ডাইনী গোথেল এটা বুঝতে পেরে এক রাতে রাজকুমারীকে চুরি করে নিয়ে গেল। আর বন্দী করে রাখল জঙ্গলের ভিতর এই উঁচু এক দূর্গে। কেউ যেন খুঁজে না পায়। বেচারি রাপুনজেল সবসময় এটাই জানল যে এই দুষ্টু গোথেলই বুঝি তার মা।


এমনি করেই রাপুনজেলের জীবনের আঠারটা বছর চলে গেল। তার সঙ্গী শুধু জ্ঞানী গিরগিটি প্যাসকেল।

সে কখনো বাইরে যেতে চাইতো না, কারণ গোথেল তাকে বুঝিয়েছিল বাইরের পৃথিবী খুব খুব খারাপ...সবাই শুধু রাপুনজেলের যাদুর চুল কেটে তাকে ব্যবহার করতে চায়। রাপুনজেলের শুধু একটাই ইচ্ছে, প্রতিবছর ওর জন্মদিনে দূর আকাশে ও দেখতে পায় লক্ষ লক্ষ বাতি উড়ছে তারার মত। ওর কেন যেন মনে হয় বাতিগুলো ওর জন্যই ওড়ানো বুঝি। ওর খুব ইচ্ছে একদিন কাছ থেকে দেখবে। কিন্তু কোনভাবেই মায়ের অনুমতি সে পায় না। তারপরে একদিন............

এইবার গল্পটার আসল কাহিনী শুরু, বুঝলে?

ফ্লিন রাইডার বলে এক চোর রাজপ্রাসাদ থেকে চুরি করে পালাল রাপুনজেলের ছোট্টবেলার মুকুটটা, আরো দুইটা এই পালোয়ান সঙ্গী যদিও ছিল তার। কিন্তু বুদ্ধিমান ফ্লিন তাদের ফাঁকি দিয়ে এসে লুকাল রাপুনজেলের দূর্গে। সেতো প্রথমে খুবই ভয় পেয়ে গেল আর ফ্লিনকে ফ্রাইং প্যান দিয়ে মেরে একেবারে কুপোকাত করে দিল।

কিন্তু পরে মায়ের অনুমতি না পেয়ে রাজকুমারী পালাল চোর ফ্লিনের সাথে। তার ইচ্ছে একবার শুধু কাছ থেকে তারার মত বাতিগুলো উড়তে দেখবে, তারপরতো ফিরেই আসবে।

রাপুনজেল কি আর জানতো বাইরের পৃথিবীটা কেমন! সেতো তার মায়ের কথামতো ভেবেই নিয়েছিল সবাই অনেক অনেক খারাপ, আর লোভী, আর ধূর্ত। আসলে তো আর তা নয়, তাই না? তুমি যদি ভাল হও লোকে তোমার সাথে ভাল আচরণ করবেই করবে। তারা দুজন মিলে এক সরাইখানায় গেল, যেখানে কি না ভয়ংকর সব অপরাধীদের আড্ডা। কিন্তু কি আশ্চর্য, রাজকুমারীর মিষ্টি কথায় তারা মুগ্ধ হয়ে গেল আর গাইতে লাগল স্বপ্ন নিয়ে এত্ত গান। ওদিকে আবার মুকুট চোর ফ্লিনকে ধরতে পিছু পিছু হাজির হল রাজসৈন্যরা, আর রাজকীয় ঘোড়া ম্যাক্সিমাস। বুদ্ধি দিয়ে সৈন্যদের ফাঁকি দিতে পারলেও ম্যাক্সিমাসকে ফাঁকি দেয়া গেল না। কিন্তু মিষ্টি মেয়ে রাপুনজেল তার মিষ্টি কথায় ম্যাক্সিমাসকে ঠিকই বশ করে ফেলল। তারপর রাপুনজেল, ফ্লিন, প্যাসকেল আর ম্যাক্সিমাস এসে হাজির হল রাজধানীতে, তারাবাতির উৎসব দেখতে।

ভাল কথা, ফ্লিন কিন্তু আসলেই ফ্লিন নয়। ওর নাম হল গিয়ে ইউজিন। ছোটবেলায় অনাথ ইউজিন দু:সাহসী বীর ফ্লিনের এতই ভক্ত হয়ে গিয়েছিল যে নিজেকে ওই নামেই পরিচয় দিতে ভালবাসতো সে।

তারপরে সেই রাতে রাজপ্রাসাদের সামনের নদীতে ছোট্ট ভেলায় বসে রাপুনজেল আর ইউজিন দেখল তারাবাতি উড়ে যাওয়ার সেই স্বপ্নের মত মিছিল।

আর রাজকুমারী রাপুনজেল আর সুদর্শন ইউজিনের তখন প্রেম হয়ে গেল। রাপুনজেলের এতদিনের স্বপ্ন ছিল একবার কাছ থেকে তারাবাতিগুলো দেখবে। সেই স্বপ্নতো পূরণ হল। এবার সে নতুন করে ইউজিনকে নিয়ে স্বপ্ন দেখতে শুরু করল।

এমন সময় যথারীতি গল্পে ভিলেনের আবির্ভাব। ইউজিনের দুই পালোয়ান সঙ্গী নিয়ে গোথেল লুকিয়ে এসে হাজির। চালাকি করে ইউজিনকে তারা মেরে নৌকায় উঠিয়ে দিল, যাতে রাজার সৈন্যরা ধরতে পারে। আর রাপুনজেলকে নিয়ে ফিরে গেল সেই দূর্গে, যেখানে বন্দী থেকেছে বেচারি সারাজীবন।

রাজকুমারীর মুকুট চুরির দায়ে ইউজিনের ফাঁসির আদেশ হল। কিন্তু ম্যাক্সিমাস সাহায্য করল তাকে। ডেকে আনল সরাইখানার সব পাগলা আউট ল'দের। তারপর সবাই মিলে রাজসেনাদের এ্যায়সা কুপোকাত করল না! আর ইউজিন, ম্যাক্সিমাসের পিঠে চড়ে ছুটতে ছুটতে হাজির হল রাপুনজেলের দূর্গে, তাকে উদ্ধারের জন্য।

ওদিকে হয়েছে কি রাপুনজেল দূর্গে ফিরে রাজপ্রতীক সূর্যটাকে দেখতে পেল নিজের ঘরে, জ্বলজ্বল করছে পুরো ঘরের সব নকশা জুড়ে। তখনতো সে বুঝেই গেল হারিয়ে যাওয়া রাজকুমারী আর কেউ না, রাপুনজেল নিজেই। তখন সে গোথেলকে বলল চলে যাবে সে, আর কোনদিন সাহায্য করবে না তাকে। আর দুষ্টু ডাইনী গোথেল বেঁধে রাখল রাপুনজেলকে। এমনকি ইউজিন যখন দূর্গে এসে ঢুকল, ছুরি বসিয়ে দিল তার পেটে পিছন থেকে।

রাপুনজেল, কতই না ভালবাসে ইউজিনকে। সে বলল সে সব কথা শুনবে গোথেলের, সবসময় তার সাথেই থাকবে আর যাদু চুল দিয়ে সাহায্য করবে যদি গোথেল ইউজিনের ক্ষত সারিয়ে তুলতে দেয়। রাপুনজেলের যাদু চুল দিয়ে যেকোন ক্ষতও সারিয়ে তোলা যায়। গোথেল রাজি হল। কিন্তু ইউজিন কেন রাপুনজেলকে সারাজীবন বন্দী হয়ে থাকতে দিবে বল? সেওতো ভালবাসে রাজকুমারীকে। তাই সে করল কি শেষ মূহুর্তে রাপুনজেলের সব চুল কেটে দিল একেবারে। চুলগুলো দেখতে না দেখতে হয়ে গেল বাদামী আর ডাইনী গোথেল হয়ে গেল থুত্থুরে বুড়ি। তারপর সেই লম্বা চুলেই পা প্যাঁচিয়ে পড়ে গেল সেই উঁচু দূর্গ থেকে এক্কেবারে নিচে, সাথে সাথেই তার ভবলীলা সাঙ্গ।

আর ওদিকে ইউজিনতো মারা যাচ্ছে। রাপুনজেল আর কি করে বাঁচাবে তাকে। তার স্বর্ণচুলের সব যাদু ক্ষমতাও যে শেষ হয়ে গেছে। তাই ইউজিনকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে লাগল খুব। আর কি আশ্চর্য, সেই স্বর্ণফুলের সব যাদুক্ষমতা এসে গেছে রাপুনজেলের চোখের পানিতে। এক ফোঁটা অশ্রু তাই ইউজিনের গালে পড়তেই জ্বলে উঠল স্বর্ণরশ্মি আর দেখতে না দেখতে ভাল হয়ে উঠল ইউজিন।

তারপর আর কি! হারিয়ে যাওয়া রাজকুমারী রাপুনজেল ফিরে এল বাবা-মা'র কাছে। রাজা রানীর মুখে হাসি ফিরল আর রাজ্যে ফিরে এল আনন্দ। তারপরে একদিন শুভক্ষণ দেখে রাজকুমারী রাপুনজেল আর ইউজিনের বিয়ে হয়ে গেল।

কি করে হবে? অনাথ ইউজিনের সাথে রাজকুমারীর বিয়ে হতে পারে? একটা রাজকুমার লাগবে যে!

হবে না কেন পাগল! শুধু রাজপুত্তুর হলেই বুঝি বিয়ে হয়? ইউজিনতো রাপুনজেলকে ভালবাসে প্রাণ দিয়ে আর বাসবে সারাজীবন। এ্টাইতো সবচেয়ে দরকার, না?


তারপরে...........and then they lived happily ever after and after and after...........




ছোটবেলায় আপুর মুখে শোনা স্বর্ণকেশী রাজকুমারীর গল্পটা এত পছন্দ ছিল আমার! আর তারপরে অবাক হয়ে দেখি গল্পটাই এত্ত সুন্দর একটা সিনেমা বানিয়েছে। এত্ত ভাল লাগল দেখে! মনে হল আনন্দটা আমার বন্ধুদের সাথে ভাগাভাগি করে নিই। বন্ধুরা, তোমাদেরও ভাল লেগেছে নিশ্চয়ই।

২৬টি মন্তব্য ২৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আগামী নির্বাচন কি জাতিকে সাহায্য করবে, নাকি আরো বিপদের দিকে ঠেলে দিবে?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:১২



আগামী নির্বচন জাতিকে আরো কমপ্লেক্স সমস্যার মাঝে ঠেলে দিবে; জাতির সমস্যাগুলো কঠিন থেকে কঠিনতর হবে। এই নির্বাচনটা মুলত করা হচ্ছে আমেরিকান দুতাবাসের প্রয়োজনে, আমাদের দেশের কি হবে, সেটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ফেসবুক বিপ্লবে সেভেন সিস্টার্স দখল—গুগল ম্যাপ আপডেট বাকি

লিখেছেন মহিউদ্দিন হায়দার, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:৩০




কিছু তথাকথিত “বাংলাদেশি বিপ্লবী” নাকি ঘোষণা দিয়েছে—ভারতের সেভেন সিস্টার্স বিচ্ছিন্ন করে ফেলবে! সহযোগী হিসেবে থাকবে বিচ্ছিন্নতাবাদী সন্ত্রাসী আর পাকিস্তানি স্বপ্ন।শুনে মনে হয়—ট্যাংক আসবে ইনবক্সে। ড্রোন নামবে লাইভ কমেন্টে। আর... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গু এনালিস্ট কাম ইন্টারন্যাশনাল সাংবাদিক জুলকার নায়েরের মাস্টারক্লাস অবজারবেশন !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:২৬

বাংলাদেশের দক্ষিণপন্থীদের দম আছে বলতে হয়! নির্বাচন ঠেকানোর প্রকল্পের গতি কিছুটা পিছিয়ে পড়তেই নতুন টার্গেট শনাক্ত করতে দেরি করেনি তারা। ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহ ঘিরে নতুন কর্মসূচি সাজাতে শুরু করেছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ক্ষমতাচ্যুত ফ্যাসিবাদ: দিল্লির ছায়া থেকে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র

লিখেছেন কৃষ্ণচূড়া লাল রঙ, ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ ভোর ৫:৫৭

একটা সত্য আজ স্পষ্ট করে বলা দরকার—
শেখ হাসিনার আর কোনো ক্ষমতা নেই।
বাংলাদেশের মাটিতে সে রাজনৈতিকভাবে পরাজিত।

কিন্তু বিপদ এখানেই শেষ হয়নি।

ক্ষমতা হারিয়ে শেখ হাসিনা এখন ভারতে আশ্রয় নিয়ে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

Grameen Phone স্পষ্ট ভাবেই ভারত প্রেমী হয়ে উঠেছে

লিখেছেন অপলক , ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ২:৪৯



গত কয়েক মাসে GP বহু বাংলাদেশী অভিজ্ঞ কর্মীদের ছাটায় করেছে। GP র মেইন ব্রাঞ্চে প্রায় ১১৮০জন কর্মচারী আছেন যার ভেতরে ৭১৯ জন ভারতীয়। বলা যায়, GP এখন পুরোদস্তুর ভারতীয়।

কারনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×