somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নিসর্গে সুর্যাস্তের অপেক্ষা (ছবিময় ব্লগ) ↻↻

২৫ শে নভেম্বর, ২০১৫ সন্ধ্যা ৬:১৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



অপেক্ষা করছিলাম সুর্যাস্ত দেখবো বলে। বসে আছি ভূমি থেকে শখানেক ফুট উঁচু টিলায়। সাথে আছে আমার জীবনের প্রথম বন্ধু। ওকে নিয়ে বেরিয়ে পড়েছিলাম ওর জি করোলা নিয়ে। ঘন্টাখানেক পরেই পেয়ে গেলাম ছায়া সুনিবিড় গ্রামের পরশ। বন্দে আলী মিয়ার ঐ ছড়াটি মনে পড়ে গেল-

আমাদের ছোট গাঁয়ে ছোট ছোট ঘর,
থাকি সেথা সবে মিলে নাহি কেহ পর।
পাড়ার সকল ছেলে মোরা ভাই ভাই,
এক সাথে খেলি আর পাঠশালে যাই।
আমাদের ছোট গ্রাম মায়ের সমান,
আলো দিয়ে, বায়ু দিয়ে বাঁচাইয়াছে প্রাণ।

মাঠ ভরা ধান তার জল ভরা দিঘি,
চাঁদের কিরণ লেগে করে ঝিকিমিকি।
আম গাছ, জাম গাছ, বাঁশ ঝাড় যেন,
মিলে মিশে আছে ওরা আত্মীয় হেন।
সকালে সোনার রবি পুব দিকে ওঠে,
পাখি ডাকে, বায়ু বয়, নানা ফুল ফোটে।


আপনাদের অনেকেই হয়তো জানেন এই ছড়াটি লিখেছিলেন বন্দে আলী মিয়া। এই ফাঁকে উনার সম্পর্কে দু একটি কথা বলার লোভ সামলাতে পারছি না।


বন্দে আলী মিয়া (১৯০৬-১৯৭৯)

গীতিকার, নাট্যকার, চিত্রশিল্পী, কবি, ঔপন্যাসিক, শিশু-সাহিত্যিক, সাংবাদিক বন্দে আলী মিয়ার জন্ম হয় ১৯০৬ সালের ১৭ জানুয়ারী পাবনা শহরস্থ রাধানগর মহল্লায়। ১৯২৩ খ্রিস্টাব্দে কবি বন্দে আলী মিয়া পাবনা শহরের রাধানগর মজুমদার একাডেমী থেকে প্রবেশিকা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন এবং ১৯২৭ খ্রিস্টাব্দে কলকাতার বৌ-বাজারস্থ ইন্ডিয়ান আর্ট একাডেমী থেকে চিত্রবিদ্যায় উত্তীর্ণ হন।
তিনি দীর্ঘদিন ধরে রাজশাহী বেতারে চাকরি করেছেন। এ সময় তিনি গল্পের দাদু নামের একটি শিশুদের প্রোগ্রাম করতেন।

তিনি তাঁর জীবনের সর্ব অবস্থায়ই শিশুদের বড় ভালবাসতেন । শিশুরাও তাঁকে প্রিয় কবি বলেই মনে করত। তাঁর বেশকিছু উল্লেখযোগ্য কবিতা দীর্ঘদিন শিশু-কিশোরদের মনে থাকবে। তাঁর লেখা শিশুতোষ গ্রন্থ/গল্পের মধ্যে যেগুলো স্মরণ করছি সেগুলো হলোঃ- শিয়াল পন্ডিতের পাঠশালা, ‘বাঘের ঘরে ঘোগের বাসা,’ ‘গুপ্তধন,’ ‘ঝিনুক-পরী,’ ‘দুই বন্ধু,’ ‘যেমন কর্ম-তেমন ফল’, চোর জামাই, মেঘকুমারী, মৃগপরী, বোকা জামাই, কামাল আতার্তুক, ডাইনী বউ, রূপকথা, কুঁচবরণ কন্যা, ছোটদের নজরুল প্রভৃতি।
বিশেষত 'আমাদের গ্রাম', ‘বন্দী', 'কলমিলতা' প্রভৃতি কবিতা মোটেই ভুলার কথা না।

চলুন আজ ঘুরে আসি গ্রামের পথে প্রান্তরে অথবা কাছের কোনও টিলায়, উঁচুতে। গ্রামের অপরুপ সৌন্দর্য তুলে ধরতে হলে আসলে যে ভাষা ও শব্দচয়ন দরকার সেটা আমার কাছে নেই। তাই একটু খারাপও লাগছে।


ছবিঃ কাজী ফাতেমা(সামু)


ছবিঃ কাজিরহাট


ছবিঃ যশোর

হাঁটতে হাঁটতে এলাম বাঁশঝাঁড়ের কাছে। বাঁশের উচ্চতাটা আসলেই প্রশংসনীয়। তেমন মজবুত বেইজমেন্ট না থাকলে কি হবে। এরা দলবেঁধে দাঁড়িয়ে থাকে এক জায়গায়। ঝড়ঝাপ্টা যাই আসুক সবাই মিলে মোকাবেলা করে। আমার কাঁচা হাতের তোলা বাঁশের ঝাঁড়ের কিছু ছবি দেখে নিন তাহলেঃ-







হাঁটার পথে পেলাম নাম না জানা অনেক প্রজাতির লতা, গুল্ম, বৃক্ষরাজি। এর মধ্যে নিচের কয়েকটা দেখে নিন। প্রথমেই যে ছবিটা দিলাম সেটার নাম শুনলে আপনিও আমার ন্যায় টাসকি খেতে পারেন। এই নামটা এলাকার লোকদের কাছ থেকে নেয়া। নামের সাথে কামের আকাশ পাতাল তফাৎ।













এই সুন্দর সফেদ ফুলের নাম পিশাচ ফুল। আর গাছের নাম পিশাচ। B:-) নিচে আমি একটি ফুলের ছবি দিচ্ছি। এর আসল নাম জানি না। এটাও ছোট প্রজাতির একটি ল্যান্টানা জাতীয় কাঁটাওয়ালা(ছোট ছোট) গুল্ম। এর স্থানীয় নাম মশালত।









আরেকটি ফুল দেখুন। এর নাম শুনলাম পিসন্ডি। আমার কাছে মনে হলো এটাকেও বিকৃত করে বলা হচ্ছে। হয়তো পাষন্ড থেকে একে বলা হচ্ছে পিসন্ডি।
সত্যিই অবাক করার মতো। পিশাচ, পাসন্ডি। কি অদ্ভুত!! তাই না?
নিচে দেখুন পিসন্ডি(নাকি পাসন্ডি) এর ফুল ও ফুলের আগে যে বৃন্ত/গোটা হয় সেটা এবং গাছ।










যাইহোক, একসময় আমরা হাটতে হাটতে টিলায় উঠে পড়লাম। ঐখানে যেয়ে যেই নির্মল প্রাকৃতিক দৃশ্য পেলাম তাতে মন না ভরে থাকবার কোনই উপায় নেই। আকাশে সাদা খন্ড খন্ড মেঘেরা ধীর ধীর গতিতে অজানা গন্তব্যের দিকে ছুটে চলছে। সুর্যের কীরণের জাদুতে সৃষ্ট অনবদ্য নীলাভ আকাশকে রাবার গাছের সাথে ক্যামেরাবন্দি করতে মোটেও ভুল করিনি।






এই হলো টিলা থেকে তোলা ছবি। সাদা ধুঁয়া এটা হলো খুব সম্ভবত কুয়াশা। বেড়ি পাকিয়ে ছড়িয়ে পড়ছে।


টিলা থেকে তোলা ছবি।


এইখানে একটি গর্ত দেখা যাচ্ছে। এই গর্ত থেকে গ্রামের মানুষরা মাটি নেয়। নিয়ে ঘর বানায়।


এর মধ্যে একটা লোক আসল। এই লোকটি উড়িষ্যা থেকে আগত রাবার বাগানের শ্রমিকবস্তি থেকে এদিকে এসেছে। লোকটাকে জিজ্ঞেস করলাম আমি কি আপনার একটি ছবি তুলতে পারি?

লোকটা অনুমতি দিবে কি আনন্দে একগাল হেসে জানিয়ে দিল, এই কাজটি সে আমাদের সাথে করতে সানন্দে রাজি আছে। মজার বিষয় হলো লোকটা ছবি তুলার সময় পোজের ভাব নেয়ার সময় যে ছবি ওঠেছিল তারচেয়ে আনরেডি অবস্থার ছবিই ভাল হয়েছে।



লোকটা রেডি অবস্থায়ঃ-


আনরেডি অবস্থায়ঃ


পুরো বিকেল ঐ টিলাতেই কাটাতে মনস্থির করে ফেললাম। এই যে দেখুন টিলার উপরের কিছু ছবি।


ছবিঃ সুর্যাস্তের অপেক্ষায়


ছবিঃ সুর্যাস্তের আগের ছবি


ছবিঃ সুর্যাস্তের পরের ছবি


ছবিঃ সুর্যাস্তের পরের ছবি

এই দেখুন শেষ বিকেলের ছবি। ২য় ছবিতে সুর্যাস্তের অপেক্ষায়।






আজ তাহলে এটুকুই। যে ছবিগুলো দিয়েছি সেগুলো আমার সেলফোনের ক্যামেরা দিয়েই। স্বল্পমাত্রার ভ্রমণের কয়েকটি পোস্ট ড্রাফটে পড়ে আছে। সময়ের অভাবে পারছি না। তবে দেয়ার ইচ্ছে আছে। ভাল থাকুন। হ্যাপি ব্লগিং।
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ রাত ৩:২৪
৯৪টি মন্তব্য ৯৮টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে...

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে,
পড়তো তারা প্লে গ্রুপে এক প্রিপারেটরি স্কুলে।
রোজ সকালে মা তাদের বিছানা থেকে তুলে,
টেনে টুনে রেডি করাতেন মহা হুলস্থূলে।

মেয়ের মুখে থাকতো হাসি, ছেলের চোখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অহমিকা পাগলা

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১৪


এক আবেগ অনুভূতি আর
উপলব্ধির গন্ধ নিলো না
কি পাষাণ ধর্মলয় মানুষ;
আশপাশ কবর দেখে না
কি মাটির প্রণয় ভাবে না-
এই হলো বাস্তবতা আর
আবেগ, তাই না শুধু বাতাস
গায়ে লাগে না, মন জুড়ায় না;
বলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

হার জিত চ্যাপ্টার ৩০

লিখেছেন স্প্যানকড, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩




তোমার হুটহাট
চলে আসার অপেক্ষায় থাকি
কি যে এক ছটফটানি
তোমার ফিরে আসা
যেন প্রিয় কারো সনে
কোথাও ঘুরতে যাবার মতো আনন্দ
বারবার ঘড়ি দেখা
বারবার অস্থির হতে হতে
ঘুম ছুটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবনাস্ত

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৪৪



ভোরবেলা তুমি নিশ্চুপ হয়ে গেলে একদম,
তোমার বাম হাত আমার গলায় পেঁচিয়ে নেই,
ভাবলাম,তুমি অতিনিদ্রায় আচ্ছন্ন ,
কিন্তু এমন তো কখনো হয়নি
তুমি বরফ জমা নিথর হয়ে আছ ,
আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে দেশে সকাল শুরু হয় দুর্ঘটনার খবর দেখে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১১

প্রতি মিনিটে দুর্ঘটনার খবর দেখে অভ্যস্ত। প্রতিনিয়ত বন্যা জলোচ্ছ্বাস আসে না, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর আসে। আগে খুব ভোরে হকার এসে বাসায় পত্রিকা দিয়ে যেত। বর্তমানেও প্রচলিত আছে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×