কল্যাণকর্মে অগ্রগামী হোন
যে কেউ তার চিন্তার ভিতগুলোকে মুক্ত করে দেয়, চোখ ও দৃষ্টি মেলে গভীরভাবে তাকায় এবং মহান শরিয়তের মূলনীতিতে নজর দেয়, কোনোরূপ কষ্ট-ক্লেশ ছাড়াই তার সামনে সুস্পষ্ট প্রতিভাত হবে যে তার স্বভাব চাওয়া হলো, মুসলিমকে পবিত্র করা এবং তাকে উচ্চতম মর্যাদা ও শ্রেষ্ঠতম চরিত্র-বৈশিষ্ট্যে উন্নীত করা। যাতে করে প্রগতি-উৎকর্ষ ও বৃহত্তর প্রত্যাশা বাস্তবায়িত হয়। আর চাওয়া পূরণ হবে কল্যাণকাজে উদ্বুদ্ধ করা এবং সম্মানজনক বৈশিষ্ট্যাদি অর্জনে প্রতিযোগিতার মধ্য দিয়ে। একে ঈমানদারের বৈশিষ্ট্য ও স্বাতন্ত্র্যে পরিণত করার মাধ্যমে। আল্লাহ সুবহানাহু বলেন, ‘তারাই কল্যাণ দ্রুত অর্জন করে এবং তারা তাতে অগ্রগামী।’ (সূরা মুমিনুন : ৬১)
ইসলাম এ উন্নত বৈশিষ্ট্যকে সুষমামন্ডিত ও মুকুটশোভিত করেছে। এর প্রাসাদকে বানিয়েছে সুউচ্চ। ইসলাম কতই না প্রশংসা করেছে অগ্রগামীর। ‘অগ্রবর্তীগণ তো অগ্রবর্তীই। তারাই নৈকট্যশীল।’ (সূরা ওয়াকিয়া : ১০-১১) অগ্রগামিতা ও অগ্রসরতার কী সুবাসিত প্রশংসাই না করা হয়েছে। এতে কী বৃষ্টিধোয়া প্রেরণাই না প্রদান করা হয়েছে। কুরআনুল কারিম কল্যাণ কাজে অগ্রগামী হওয়া ও অন্যদের পিছিয়ে ফেলার কত প্রশংসাই না করেছে। ‘কাজেই সৎকাজে প্রতিযোগিতামূলকভাবে এগিয়ে যাও।’ (সূরা বাকারা : ১৪৮)
অগ্রগামিতা ও অগ্রসরতার শ্রেষ্ঠ উপমা ও উৎকৃষ্ট দৃষ্টান্ত আমরা দেখতে পাই নবীজীবনে। বুখারি ও মুসলিমে আনাস বিন মালেক (রা.) থেকে বর্ণিত হয়েছে, “‘নবী (সা.) ছিলেন শ্রেষ্ঠতম সুদর্শন, দানশীল ও বীর ব্যক্তিত্ব। এক রাতে মদিনাবাসী আতঙ্কে জেগে উঠল। লোকেরা আওয়াজ শুনে ছুটতে লাগল। নবী (সা.) (ফিরতি পথে) তাদের অভ্যর্থনা জানালেন। সবার আগে তিনিই আওয়াজের উৎস আবিষ্কার করে এসে বলছেন, ‘তোমরা ঘাবড়িও না, তোমরা ভয় পেয়ো না।’ তিনি ছিলেন আবু তালহার ঘোড়ায় বসা। তাঁর গা খালি আর কাঁধে নাঙা তরবারি।”’ আনাস (রা.) বলেন, ‘আমি নবী (সা.) এর ঘোড়াকে পেয়েছি সাগরের মতো দ্রুতগামী’। ইমাম বুখারি (রহ.) এ হাদিসটিকে স্থান দিয়েছেন ‘বিপদকালে সর্বাগ্রে নেতার এগিয়ে যাওয়া’ শিরোনামে। সুতরাং বিপন্ন সময়ে ইমাম বা নেতার সর্বাগ্রে এগিয়ে যাওয়া একটি সুন্নত, রাসূল (সা.) যা প্রবর্তন করেছেন। সাহাবায়ে কেরাম (রা.) আদর্শের এ ঝর্ণা থেকেই প্রথম পান করেছেন। এজন্যই আবু হুরায়রা (রা.) নবীজির সাহাবিদের সম্পর্কে বলেছেন, ‘তাঁরা ছিলেন কল্যাণের প্রতি সর্বাধিক আগ্রহী।’ মানুষের মধ্যে কে আছে আবু বকর (রা.) এর মতো দানশীলতার প্রতিযোগিতায় অগ্রবর্তী? তিনি নিজের সম্পদ থেকেও দ্বিগুণ দান করেছেন। উসামাবাহিনীকে যুদ্ধে প্রেরণ করেছেন। মুরতাদগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে যুদ্ধে নেমেছেন। কোথায় মিলবে উমর ফারুক (রা.) এর উপমা যাকে দেশে শয়তান পর্যন্ত পলায়ন করে? কে আছে দুই নুরের অধিকারী উসমান (রা.) এর মর্যাদায় যুক্ত হবে? তিনিই সবার আগে কুরআনের কপিগুলোকে একত্রিত করেছেন। কে আছেন আলী (রা.) এর মতো অগ্রগামিতা দেখাবেন, যিনি প্রথম দিকে ইসলাম গ্রহণ করেছেন?
ইমাম আবু ওয়াফা বিন আকিল (রহ.) বলেন, লক্ষ্য অর্জনে কেউ ব্যর্থ হয় না, যদি সে সত্যিকারার্থেই তা হাসিল করতে চায় এবং এর জন্য পূর্ণ প্রচেষ্টা নিয়োগ করে। চেষ্টার পর আল্লাহর কাছে লুটিয়ে পড়ে। লক্ষ্যসিদ্ধিতে তাওফিক ও হেদায়েতের জন্য আল্লাহর কাছে সকাতর প্রার্থনা করে। এটা করে এ আয়াতে বিশ্বাস রেখে : ‘যারা আমার পথে সাধনায় আত্মনিয়োগ করে, আমি অবশ্যই তাদেরকে আমার পথে পরিচালিত করব।’ (সূরা আনকাবুত : ৬৯) তাই সুসংবাদ এবং সুখবর ওই ব্যক্তির জন্য যে কল্যাণের পথ উন্মুক্ত করে এবং অকল্যাণের পথ বন্ধ করে। আর ধ্বংস ও পরিতাপ তার জন্য যে ফেতনায় আহŸান করে; অকল্যাণের পথ খোলে এবং কল্যাণের পথ রুদ্ধ করে।
আমরা এসব দৃষ্টান্ত আলোচনা করছি এমন যুগে, যখন বিভিন্ন টিভি চ্যানেল ও সামাজিক মাধ্যমগুলোকে অবলম্বন করে বুদ্ধি ছিনতাইকারী ও মতবাদক-সন্ত্রাস প্রচলনকারীদের উৎপাত বেড়ে গেছে। যারা অসৎ উদ্দেশ্যে মানুষের বুদ্ধ ছিনতাই করছে। তাদের সম্পর্কে ধারণা না থাকায় অসচেতনরা প্রতারিত হচ্ছে। ভাবছে তারা বুঝি পরহেজগার ও তাকওয়াবান। সচেতন মুসলিমদের কর্তব্য ওদের খপ্পর থেকে সচেতন থাকা। মুসলিম জাতির তরুণসমাজ ও ভবিষ্যতপ্রজন্মের দায়িত্ব হবে সেসব কাজ ও চিন্তায় সীমাবদ্ধ থাকা যাতে নিজের ও দেশের কল্যাণ রয়েছে। তাদের দায়িত্ব ইতিবাচক ধারায় অগ্রগামী হওয়া। অন্যদেরও দেশের কল্যাণে ধাবিত করা। যাতে দেশে ও সমাজে ইতিবাচক পরিবর্তন ঘটে। যাতে আল্লাহর কথা বাস্তবায়িত হয়, ‘আল্লাহ কোন জাতির অবস্থা পরিবর্তন করেন না, যে পর্যন্ত না তারা তাদের নিজেদের অবস্থা পরিবর্তন করে।’ (সূরা রাদ : ১১) আরও ইরশাদ হয়েছে, ‘কাজেই সৎকাজে প্রতিযোগিতামূলকভাবে এগিয়ে যাও। যেখানেই তোমরা থাকবে, আল্লাহ অবশ্যই তোমাদেরকে সমবেত করবেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ সর্ব বিষয়ে ক্ষমতাশীল।’ (সূরা বাকারা : ১৪৮)