somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বাংলাদেশে নৈরাজ্য সৃষ্টি করতে জামাতকে টাকা দিয়েছিল মততার তৃণমূল

১৩ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ সন্ধ্যা ৭:০৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

তৃণমূল সাংসদ আহমেদ হাসান ইমরানের বিরুদ্ধে সারদার টাকা ব্যবহার করে বাংলাদেশে অস্থিরতা সৃষ্টির যে অভিযোগ উঠেছে, তার তদন্ত চলছে বলে জানিয়ে দিলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহ। আজ মন্ত্রকের একটি অনুষ্ঠানে এই বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “আইন আইনের পথেই চলবে। এতে আমরা কোনও হস্তক্ষেপ করব না।”

ইমরানের ‘সন্দেহজনক’ ভূমিকা নিয়ে রাজ্যের গোয়েন্দা, কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা এমনকী বাংলাদেশি গোয়েন্দা সংস্থাও যে সংশ্লিষ্ট মহলে নিয়মিত সতর্কবার্তা পাঠিয়ে এসেছে, তার প্রমাণ মিলেছে ইতিমধ্যেই। এ বার খোদ কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তদন্তের কথা জানিয়ে দেওয়ায় আরও এক দফা অস্বস্তি বাড়ল তৃণমূল শীর্ষ নেতৃত্বের। রাজ্যের শাসক দল অবশ্য বিজেপিকে কাঠগড়ায় তুলে দাবি করেছে, ইমরান সংখ্যালঘু বলেই তাঁকে জড়িয়ে ‘অপপ্রচার’ চালানো হচ্ছে। পাশাপাশি, দলীয় ওয়েবসাইটে আজ আনন্দবাজারকেও সরাসরি আক্রমণ করেছে তারা।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক সূত্র বলছে, বিষয়টি অত্যন্ত সংবেদনশীল। কারণ, রাজ্যসভার এক সাংসদের বিরুদ্ধে দেশবিরোধী কাজের অভিযোগ উঠেছে। তা ছাড়া, সারদা কেলেঙ্কারির তদন্ত করছে সিবিআই, যারা কেন্দ্রীয় কর্মিবর্গ মন্ত্রক তথা সরাসরি প্রধানমন্ত্রীর অধীনে। বস্তুত, সেই কারণেই রাজনাথ আজ বিষয়টির বিস্তারিত ব্যাখ্যা দেওয়া এড়িয়ে যান বলে মন্ত্রক-সূত্রের বক্তব্য।

তবে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দারা জানিয়ে দিচ্ছেন, ইমরানের ভূমিকা কখনওই সন্দেহের ঊর্ধ্বে ছিল না। দীর্ঘদিন তিনি নিষিদ্ধ মৌলবাদী সংগঠন স্টুডেন্টস ইসলামিক মুভমেন্ট অফ ইন্ডিয়া (সিমি)-র পশ্চিমবঙ্গ শাখার সভাপতি ছিলেন। ২০০১ সালে সিমিকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে কেন্দ্র। কিন্তু স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক মনে করে, তত দিনে সিমির শিকড় গোটা দেশে ছড়িয়ে গিয়েছে। তলে তলে ভারত-বিরোধী কাজে এখনও সক্রিয় তারা। জঙ্গি কাজকর্মের জন্য টাকাও তুলছে। কেন্দ্রীয় গোয়েন্দাদের অনুমান, এই ধরনের কাজে ইমরানের মতো প্রাক্তন সিমি নেতারাও জড়িত।

এই সূত্রেই এসে পড়ছে ইমরানের সারদা-যোগ ও জামাত-যোগের প্রসঙ্গ। কেন্দ্রের গুরুতর জালিয়াতি তদন্ত সংস্থা বা এসএফআইও তাদের রিপোর্টে সম্প্রতি জানিয়েছে, সারদা গোষ্ঠীর টাকার একটি বড় অংশ আমেরিকা ও পশ্চিম এশিয়ায় পাচার হয়ে গিয়েছে। হাওয়ালার মাধ্যমে বাংলাদেশ হয়ে ওই টাকা পাচার হওয়ার সম্ভাবনাও উড়িয়ে দিচ্ছে না কেন্দ্র। ইমরানের বিরুদ্ধে অভিযোগ, পাচার হওয়া টাকার একটি অংশ তিনি দিয়েছেন জামাতে ইসলামির তহবিলে। সেই টাকা বাংলাদেশে অস্থিরতা তৈরিতে ব্যবহার করা হয় বলে গোয়েন্দাদের দাবি। সূত্র বলছে, বাংলাদেশে গণহত্যার অপরাধে কাদের মোল্লার ফাঁসি ঘোষণা হওয়ার পর ধর্মতলায় বেশ কিছু সংগঠন প্রতিবাদ জানিয়েছিল। জামাত ও সিমির মদতেই ওই কাজ হয়েছিল এবং তাতে ইমরানের সক্রিয় ভূমিকা ছিল বলেই জানতে পেরেছে কেন্দ্র।

বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র সৈয়দ আকবরউদ্দিন অবশ্য আজ বলেছেন, “বাংলাদেশের ভারতীয় হাইকমিশন থেকে এই (ইমরান) সংক্রান্ত কোনও রিপোর্ট আমরা পাইনি। আজ বিকেল চারটে অবধি যোগাযোগে ছিলাম। তখনও পর্যন্ত রিপোর্ট আসেনি।”

আকবরউদ্দিনের কথার সূত্র ধরেই তৃণমূলের ওয়েবসাইটে একটি বিবৃতি দিয়ে বলা হয়েছে, “বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র জানিয়েছেন, তৃণমূলের টাকা বাংলাদেশে পাঠানো হয়েছে বলে আনন্দবাজারে যা প্রকাশিত হয়েছে তা সর্ম্পূণ ভুল।” তবে কূটনীতিবিদদের একাংশের বক্তব্য, দু’দেশের সম্পর্ক জড়িত, এমন একটি স্পর্শকাতর বিষয়ে কখনওই নির্দিষ্ট করে ‘হ্যাঁ’ বা ‘না’ বলা হয় না। তবে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী যে ভাবে জোর দিয়ে তদন্তের কথা জানিয়েছেন, তাতেই বিষয়টি স্পষ্ট।
বিবৃতির পাশাপাশি ইমরানের হয়ে বলার জন্য তৃণমূল আজ এগিয়ে দিয়েছিল দলের বর্ষীয়ান নেতা সুব্রত মুখোপাধ্যায় এবং সংখ্যালঘু মুখ ফিরহাদ (ববি) হাকিমকে। সংবাদমাধ্যম ‘অপ্রীতিকর ও অসত্য’ খবর করছে বলে অভিযোগ করে সুব্রতবাবুর দাবি, “জামাত-সিমিকে জড়িয়ে, আমাদের দলের সঙ্গে আর্থিক লেনদেনের কথা তুলে যে সব খবর প্রচার করা হচ্ছে, এত কুরুচিকর সংবাদ ইদানীং কালে দেখিনি!” ওই সব অভিযোগের পক্ষে তথ্যপ্রমাণ হাজির করার জন্য সংবাদমাধ্যমকে চ্যালেঞ্জও করেছেন সুব্রতবাবু। না হলে তাঁরা আইনের আশ্রয় নিতে পারেন বলেও জানিয়েছেন। পাশাপাশি তাঁর অভিযোগ, “এর পিছনে বিজেপি রয়েছে। তারা প্রাদেশিকতা, সংঘর্ষ ছড়াতে চাইছে। প্রয়োজনে রক্ত দিয়েও দাঙ্গাবাজদের রাজনীতিকে আমরা রুখব!” কিন্তু কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তো জামাত-যোগ নিয়ে তদন্তের কথা বলেছেন। সুব্রতবাবুর বক্তব্য, “তদন্ত হবে বলেছেন। তদন্তে কিছু প্রমাণিত হলে নিশ্চয়ই সাজা পাবে। কিন্তু তার আগেই ইমরানকে অপরাধী বানানো হবে কেন?” সুব্রতবাবুর থেকে এক ধাপ এগিয়েই ফিরহাদ বলেছেন, “সংখ্যালঘু বলেই ইমরানকে জড়িয়ে এ সব প্রচার হচ্ছে। তৃণমূল তাকে সাংসদ করেছে, এই অপরাধে বিজেপি সাধারণ ঘরের এক সংখ্যালঘু মানুষকে কালিমালিপ্ত করছে।”

এই অভিযোগ প্রসঙ্গে রাজ্যে বিজেপির পর্যবেক্ষক সিদ্ধার্থনাথ সিংহ বলেন, “ওঁরা আদালতে গেলে ভালই হয়। আমি ওঁদের আদালতে স্বাগত জানাচ্ছি। সংখ্যালঘু বলে ইমরানকে আক্রমণ করার প্রশ্নই নেই। তিনি দেশদ্রোহিতায় যুক্ত। তাই তাঁর সমালোচনা করা হচ্ছে।” সিপিএম সাংসদ মহম্মদ সেলিমের কথায়, “এগুলো চেনা রাজনীতির ছক! দুর্নীতিতে জড়িয়ে মায়াবতীও বলতেন, দলিত বলে তাঁকে নিশানা করা হচ্ছে। তৃণমূল বলছে, সংখ্যালঘু বলে অভিযোগ করা হচ্ছে। বরং মুসলিম হিসেবেই ওই সাংসদের আরও ইমানদার হওয়া উচিত ছিল!” প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে সম্পর্ক নষ্ট করার বৃহত্তর পরিকল্পনায় যে ভাবে জামাতের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে কাজ হয়েছে, তা প্রতিরোধের চেষ্টা না করার জন্য রাজ্যের মুখ্যসচিব, স্বরাষ্ট্রসচিব, অর্থসচিব এবং অর্থমন্ত্রীর ভূমিকাকেও তদন্তের আওতায় আনা উচিত বলে মনে করেন সেলিম।

এ দিকে, বৃহস্পতিবার কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার রিপোর্টের প্রেক্ষিতে ইমরানের কাজকর্ম নিয়ে প্রশ্ন তুলে তাঁকে জঙ্গি বলে উল্লেখ করেছিলেন সিদ্ধার্থনাথ সিংহ। শুক্রবার বেনিয়াপুকুর থানায় তাঁর বিরুদ্ধে মানহানির অভিযোগ করেছেন ইমরান। পুলিশ জানিয়েছে, অভিযোগটি খতিয়ে দেখা হবে।

সূত্রঃ আনন্দবাজার পত্রিকা
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ সন্ধ্যা ৭:১১
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমি আর এমন কে

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:১৩


যখন আমি থাকব না কী হবে আর?
থামবে মুহূর্তকাল কিছু দুনিয়ার?
আলো-বাতাস থাকবে এখন যেমন
তুষ্ট করছে গৌরবে সকলের মন।
নদী বয়ে যাবে চিরদিনের মতন,
জোয়ার-ভাটা চলবে সময় যখন।
দিনে সূর্য, আর রাতের আকাশে চাঁদ-
জোছনা ভোলাবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

২০২৪ সালের জুলাই মাস থেকে যেই হত্যাকান্ড শুরু হয়েছে, ইহা কয়েক বছর চলবে।

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:৪৭



সামুর সামনের পাতায় এখন মহামতি ব্লগার শ্রাবনধারার ১ খানা পোষ্ট ঝুলছে; উহাতে তিনি "জুলাই বেপ্লবের" ১ জল্লাদ বেপ্লবীকে কে বা কাহারা গুলি করতে পারে, সেটার উপর উনার অনুসন্ধানী... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজাকার হিসাবেই গর্ববোধ করবেন মুক্তিযোদ্ধা আখতারুজ্জামান !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:১৮


একজন রাজাকার চিরকাল রাজাকার কিন্তু একবার মুক্তিযোদ্ধা আজীবন মুক্তিযোদ্ধা নয় - হুমায়ুন আজাদের ভবিষ্যৎ বাণী সত্যি হতে চলেছে। বিএনপি থেকে ৫ বার বহিস্কৃত নেতা মেজর আখতারুজ্জামান। আপাদমস্তক টাউট বাটপার একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

চাঁদগাজীর মত শিম্পাঞ্জিদের পোস্টে আটকে থাকবেন নাকি মাথাটা খাটাবেন?

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৫৭


ধরুন ব্লগে ঢুকে আপনি দেখলেন, আপনার পোস্টে মন্তব্যকারীর নামের মধ্যে "জেন একাত্তর" ওরফে চাঁদগাজীর নাম দেখাচ্ছে। মুহূর্তেই আপনার দাঁত-মুখ শক্ত হয়ে গেল। তার মন্তব্য পড়ার আগেই আপনার মস্তিষ্ক সংকেত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্মীয় উগ্রবাদ ও জঙ্গী সৃষ্টি দিল্লী থেকে।

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:১৫


((গত ১১ ডিসেম্বর ধর্মীয় উগ্রবাদ ও জঙ্গী সৃষ্টির ইতিবৃত্ত ১ শিরোনামে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম। সেটা নাকি ব্লগ রুলসের ধারা ৩ঘ. violation হয়েছে। ধারা ৩ঘ. এ বলা আছে "যেকোন ধরণের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×