somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

রম্য : ফোন যখন যন্ত্রনা !!

০৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০২০ সন্ধ্যা ৭:১০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

দোকানে পরার জন্য একটা নতুন প্যান্ট না কিনলেই নয়। পুরোনোটায় ডাল, তেলের নোংরা হাত পুঁছতে পুঁছতে, পেছনটা মশারি প্রায়। আক্ষরিক অর্থেই যেকোনো দিন পেছন ফেটে অক্কা পেতে পারে।
গত শুক্কুরবার ভাবলাম, যাই সোদপুর থেকে একটা কোমরে ইলাস্টিক লাগানো, চার-পাঁচটা পকেট-ওয়ালা একটা প্যান্ট কিনে আনি। অনেকগুলো পকেট থাকার সুবিধা হলো, নানা দরকারি জিনিস, যেমন বিড়ির প্যাকেট, খৈনীর ডিব্বা, গুটকার প্যাকেট, মোবাইল ইত্যাদির সাথে অদরকারী জিনিসও যেমন, টাকা-পয়সাও রাখা যায় সহজে।
মোটরসাইকেল বের করে স্টার্ট দেবো হটাৎ ফোন...
"নমস্কার স্যার, আমি 'যত পাই তত খাই' রেস্টুরেন্ট থেকে বলছি। আমাদের ইলিশ উৎসব শুরু হয়েছে মাত্র তিনদিনের জন্য। কিছু বাছা-বাছা এলিট কাস্টমারদের ফোন করে জানানো হচ্ছে। গতবার আপনি এসেছিলেন এবং ভিজিটরস বুকে খুব ভালো কমেন্ট লিখেছিলেন, স্যার।"
"ঠিক আছে, দেখছি"... বলে ফোন কেটে দিলাম।
বাইক স্টার্ট দিয়ে আমবাগান অব্দি পৌছেছি, আবার ফোন...
"স্যার আপনার জুতো মনে হয় ছিঁড়ে গেছে। নতুন নিয়ে নিন।"
"কে ভাই তুমি? তুমি কি করে জানলে আমার জুতো ছিঁড়ে গেছে?"... আমি দৃশ্যতই বিরক্ত।
"স্যার, আমি 'পদসেবা ফুট ওয়্যার' থেকে বলছি। আমাদের কম্পিউটার বলছে, আপনি আমাদের দোকান থেকে দেড়বছর আগে জুতো কিনেছিলেন। স্বাভাবিক ভাবেই হয় আপনার জুতো ছিঁড়ে গেছে, নয়তো ছিঁড়বে ছিঁড়বে করছে।"
"তুমি কি করে ভাবলে, আমার এক জোড়াই জুতো আছে!? তাছাড়া এইভাবে যখন তখন ফোন করে বিরক্ত করা, এ কেমন ভদ্রতা?"... রাগে ফোন কেটে দিলাম আমি।
ফোন পকেটে রেখেছি কি রাখিনি আবার ঝনঝন করে উঠলো ....
"নমস্কার স্যার, আপনার মোটরসাইকেল সার্ভিসিং ডিউ হয়ে গেছে ছ'মাস হলো। আমাদের মাত্র এক সপ্তাহের জন্য মোটরসাইকেলের সাথে বাইসাইকেল ফ্রি সার্ভিসিং অফার চলছে।"
"নিকুচি করেছে সার্ভিসিং'এর। আমার বাইক আমি ছ'মাসে সার্ভিসিং করাবো, নাকি ছ'বছরে, তাতে আপনার কি মশাই!? প্রাইভেসি বলে বস্তুটা দেশ থেকে উবে গেলো নাকি!?"... রাগে গরগর করতে করতে ফোন পকেটে রেখে বাইক স্টার্ট দিলাম।
সোদপুর পৌছানোর আগে মাঝ রাস্তায় আরেকবার ফোন বেজেছিলো, আমি ধরিনি।
জামাকাপড়ের দোকানে পৌঁছে বাইক স্ট্যান্ড করতে না করতেই আবার ফোন....
"স্যার, 'মিশন মঙ্গল' সিনেমার আগামীকালের টিকিট অন লাইন বুক করে দিই, আইনক্সে?”...এবারে একটি বামা কণ্ঠ
"কেন ম্যাডাম?"
"আমাদের সিস্টেম বলছে, আপনি অক্ষয় কুমারের কোনো সিনেমা মিস করেন না, তাই।"
না করতে করতে আমি আমি তখন ক্লান্ত বিধ্বস্ত। পিছন ছাড়াতে এবার বললাম...
"হ্যা, করে দিন।"
"ঠিক আছে স্যার। আমি তবে নাইন টু টু......... নম্বরের চুমকি ম্যাডামকেও ফোন করে জানিয়ে দিচ্ছি। আমাদের সিস্টেম বলছে, আপনাদের দুজনের টিকিট বরাবর একসাথেই বুক হয়।"
সর্বনাশ !!! মাথায় বাজ পড়লো মনে হলো। শালার মোবাইলের জ্বালায় কোনো কিছুই আর গোপন নেই দেখছি। আমি তখন রীতিমতো ঘাবড়ে গেছি। কোনক্রমে বললাম....
"থাক, থাক, আর টিকিট বুক করে কাজ নেই। আপনারা আমায় ক্যালান খাওয়ানোর তালে আছেন নাকি!?".... ফোন কেটে তারাতাড়ি শোরুমে ঢুকে পড়লাম।
একটা প্যান্ট নিয়ে বিলিং কাউন্টারে দাঁড়াতেই ওপাশ থেকে ছেলেটি বললে....
" স্যার, আপনার মোবাইল নম্বর?
"দেবো না"...আমি দৃঢ স্বরে জানালাম।
" স্যার, মোবাইল নম্বর দিলে আপনি প্রথমবার টোয়েন্টি পার্সেন্ট ডিসকাউন্ট পাবেন, তারপর থেকে টেন পার্সেন্ট
"নিকুচি করেছে ডিসকাউন্টের। ফ্রিতে দিলেও নম্বর দেবো না। ফোন ভেঙ্গে ফেলবো তোওভি আচ্ছা।"...
আমি তখন 'প্রাণ যায় পর ফোন নং না যায়' মুডে।
" স্যার এত রেগে গেলেন কেনো?"
"রাগবো না মানে!? এই শালা মোবাইলের চক্করে আমার প্রাইভেসির বারোটা বেজে গেছে। জানিনা কতজনের কাছে আমার নম্বর চলে গেছে। বলা যায় না, কাল হয়তো পাড়ার নাপিত ফোন করে বলবে...'স্যার, এক সপ্তা আগে আপনি শেষবার দাড়ি কেটেছেন। এ্যাদ্দিনে আপনার দাড়ি বড় হয়ে গেছে নির্ঘাত।' আমার দৃঢ বিশ্বাস, বয়েস ষাট হতে না হতে শশ্মান ঘাট থেকে ফোন আসবে..'স্যার, সময় আর এখনকার ছেলে মেয়েদের কোনো ভরসা নেই। এখুনি টাকা জমা করে আপনার বডি পোড়ানো বুক করলে, শব যাত্রার গাড়ি ফ্রি পাবেন। বডি সাজানোর জন্য আমাদের এখানে সস্তায় বিউটিশিয়ানও পাবেন।' অনেক হয়েছে। আমার আর নতুন প্যান্টের দরকার নেই।"
এই অব্দি বলে আমি কাউন্টারের ছেলেটিকে পিছন দেখালাম। পুরানো প্যান্টের ফাঁক দিয়ে.. আক্ষরিক অর্থেই।
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০২০ সন্ধ্যা ৭:২১
৬টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে...

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে,
পড়তো তারা প্লে গ্রুপে এক প্রিপারেটরি স্কুলে।
রোজ সকালে মা তাদের বিছানা থেকে তুলে,
টেনে টুনে রেডি করাতেন মহা হুলস্থূলে।

মেয়ের মুখে থাকতো হাসি, ছেলের চোখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অহমিকা পাগলা

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১৪


এক আবেগ অনুভূতি আর
উপলব্ধির গন্ধ নিলো না
কি পাষাণ ধর্মলয় মানুষ;
আশপাশ কবর দেখে না
কি মাটির প্রণয় ভাবে না-
এই হলো বাস্তবতা আর
আবেগ, তাই না শুধু বাতাস
গায়ে লাগে না, মন জুড়ায় না;
বলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

হার জিত চ্যাপ্টার ৩০

লিখেছেন স্প্যানকড, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩




তোমার হুটহাট
চলে আসার অপেক্ষায় থাকি
কি যে এক ছটফটানি
তোমার ফিরে আসা
যেন প্রিয় কারো সনে
কোথাও ঘুরতে যাবার মতো আনন্দ
বারবার ঘড়ি দেখা
বারবার অস্থির হতে হতে
ঘুম ছুটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবনাস্ত

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৪৪



ভোরবেলা তুমি নিশ্চুপ হয়ে গেলে একদম,
তোমার বাম হাত আমার গলায় পেঁচিয়ে নেই,
ভাবলাম,তুমি অতিনিদ্রায় আচ্ছন্ন ,
কিন্তু এমন তো কখনো হয়নি
তুমি বরফ জমা নিথর হয়ে আছ ,
আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে দেশে সকাল শুরু হয় দুর্ঘটনার খবর দেখে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১১

প্রতি মিনিটে দুর্ঘটনার খবর দেখে অভ্যস্ত। প্রতিনিয়ত বন্যা জলোচ্ছ্বাস আসে না, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর আসে। আগে খুব ভোরে হকার এসে বাসায় পত্রিকা দিয়ে যেত। বর্তমানেও প্রচলিত আছে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×