

আমার ছোটবেলায় আমি আমার নানী বাড়িতে ছিলাম। সেখানেই বেড়ে ওঠা। আমাদের আশেপাশে অনেক পাড়া-প্রতিবেশি ছিল সেই সুবাদে অনেক ছোট ছোট ছেলে-মেয়ে ছিল। আর আমরা সবাই মিলে এক সাথে খেলাধুলা করতাম। এক এক দিন এক এক রকমের খেলা।মাঝে মাঝে আমরা কাগজ দিয়ে অনেক কিছু বানাতাম যেমন নৌকা,পাখি,বল, পদ্ম ফুল সহ আরো কত কি। আমরা মনের মত যা খুশি তাই বানাতাম কিন্তু যানতাম না কাগজ ভাজ করে কিছু তৈরী করা একটা আর্ট। আর এর নাম অরিগামি।
Origami জাপানী শব্দ। 'Ori' শব্দের অর্থ ভাজ করা। আর 'Gami' শব্দের অর্থ কাগজ। Origami অর্থ হল কাগজ ভাজ করার পদ্ধতি। Origami প্রথম অথবা দ্বিতীয় শতাব্দীতে চীনে শুরু হয়েছিল তারপর ষষ্ঠ শতাব্দীর সময় জাপান প্রসারিত হয়। বলতে গেলে জাপানীরাই Origami কে এতদুর নিয়ে আসে। ছোট থেকে বড় সব রকম অনুষ্ঠানে অরিগামির ব্যবহার হত। তৎকালীন সময় সবার মাঝে অরিগামি খুব জন প্রিয় হয়েছিল, এটা কোনও বিষয় ছিলনা তারা সমৃদ্ধ অথবা দরিদ্র ।
তৎকালীন শতকে অরিগামি তৈরী করার জন্য কোনও লিখিত দিকনির্দেশনা ছিলনা। পরবর্তীতে দিকনির্দেশনা উৎপাদন এবং শিক্ষা প্রদান করা হয়েছিল তারপর তার প্রথম বই প্রকাশ করা হয়। অরিগামি শিল্পটি পরে জাপানী জনগণের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের অংশ হয়েছি।
১৭৯৭সালে How to Fold 1000 Cranes
নামে প্রথম একটি বই প্রকাশিত হয় অরিগামির উপর। সারস ভাজ করার পদ্ধতি নিয়ে বইটি লেখা হয়। সারস জাপানে একটি পবিত্র পাখি হিসাবে বিবেচিত। তখনকার সময় মনে করা হত যে ব্যক্তি ১০০০ সারস পাখি বানাবে তার একটি ইচ্ছা পূরণ হবে।
Window on Midwinter
নামে আরো একটি বই প্রকাশিত হয় ১৮৪৫ সালে, যেখানে আন্দাজ ১৫০ অরিগামি তৈরীর নমুনা দেয়া ছিল।এই বইটি ব্যাঙের মডেল উপস্থাপন করেছিল যা খুব ভাল পরিচিত লাভ করে।
শুধু জাপানেই নয়, আফ্রিকার মোর জাতি যখন অষ্টম শতাব্দীতে স্পেনে যুদ্ধ করতে আসে তখন তাদের সাথে কাগজ ভাজ করার পদ্ধতি তাদের সাথেই নিয়ে আসে। মোর জাতি জ্যামিতিক আকারে কাগজ ভাজ করে অরিগামি তৈরী করত। কারণ মোর জাতিদের ধর্মে কোন পশু-পাখির আকারে কিছু তৈরী করা নিষেদ ছিল। স্পেন থেকে পরে কাগজ ভাজ করার এই পদ্ধতি (অরিগামি) দক্ষিন আমিরেকাতে পরিচিতি পায়। তারপর ইউরোপে এবং পরে আমিরেকাতে এর প্রচলন শুরু হয়।
বর্তমানে অরিগামি জনপ্রিয় একটি শিল্প। পৃথিবীর সব জায়গাতেই অরিগামি তৈরীর শিল্পী আছে। জাপানের Akira Yoshizawa কে আধুনিক অরিগামির পিতা বলা হয় তার অত্তাধুনিক কাগজ ভাজ করার পদ্ধুতি উদ্ভাবনের জন্য। তিনিই অরিগামির কিছু বিশেষ পদ্ধুতি তৈরী করেন এবং তা লিখিত আকারে প্রকাশও করেছেন যা বর্তমান বিশ্বে সবার কাছে জনপ্রিয় হয়েছে।
দিন দিন অরিগামি অনেক জনপ্রিয় হয়েছে এবং এর ব্যবহারও অনেক বেড়েছে ।
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই মে, ২০০৯ দুপুর ১২:১৪

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




