somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গল্পাংশঃ জয়তুন

১০ ই আগস্ট, ২০১৪ দুপুর ১:১৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

লোকটা ভালো না।

তার মা প্রায়ই বলতো, মানুষের চরিত্র বোঝা যায় তার দৃষ্টিতে, তার নজরে। আর মেয়েদের একটা ষষ্ঠ ইন্দ্রীয় থাকে এ ব্যাপারটা বোঝার জন্য।
লোকটা কেমন যেন বিশ্রী দৃষ্টিতে তাকায়। মনে হয় ভেতরে কিছু একটা কুমতলব খেলা করছে।

আজ তিনদিন হলো জয়তুন এ বাড়িতে পা রেখেছে। এ পর্যন্ত তার পর্যবেক্ষণ হলো, বাড়ির খালাম্মা কেমন যেন খাইস্টা টাইপের। উঠতে বসতে খাবারের খোঁটা দেন।

“ভাতের সাথে তরকারী বেশি নিবা না, তোমার লাইগা বাজার করি না। আমরা খাওয়ার পর যা বাঁচবে তাই দিয়ে ভাতটা খেয়ে শুয়ে পড়বে। ফ্রিজের দিকে নজর দিবা না। আমার রাসু রাত জাগে, ফ্রিজের খাবার ওর দরকার পরে।”

বাংলাদেশের হিসেবে জয়তুনকে লম্বাই বলা যায় - গায়ে গতরে পুরুষ্টু। গায়ের রঙ পোড়া কয়লার মতো না হলে হয়তো মাঝারী গোছের সুন্দরী বলে চালিয়ে দেয়া যেত। নিজের সংসারে অভাব হোক আর যাই হোক, কোনদিন খাবার কম পরেনি। পরের বাসায় কাজ করতে আসার মত মেয়ে সে মোটেই না – ভাগ্য যদি এতটা বিরূপ না হতো তো।

প্রায় বছরখানেক ধরে জয়তুনের স্বামীর দোকান বন্ধ। কি যেন একটা গন্ডগোল হলো সেই সময় ঢাকা শহরে, অনেকগুলো গাড়ী পোড়ানো হলো – দোকানপাট পোড়ানো হলো। এক বছর পরে ঢাকার মানুষ সেই পুরনো স্মৃতি ভুলে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে গিয়েছে। শুধু জয়তুনের পরিবারের চার জনের সংসার এখনো চক্রে ঘুরপাক খাচ্ছে।

“হ্যারা লোক ভালো। বায়তুল মোকাররমে আসলেই আমার দোকান থেকে জায়নামাজ-টুপি-আতর-কিতাব কিনতো। ঈদের আগে আমি হ্যাদের বাসায় যাইতাম কদমবুসি করতে। আমারে বখশিশ দিতো। কী বড়লোক, বাব্বাহ্‌!”

বলার সময় হাফিজুলের চোখ বড় বড় হয়ে যেতো। “এদের বাসায় তোমার একটুও কষ্ট হবে না। কয়েকটা দিন একটু সয়া নাও। বাচ্চা দুইটার পড়া থামানের দরকার নাই। আল্লায় চাইলে এদের আমগো মতন দিন আনি দিন খাই অবস্থা হইবো না। পড়ালেখা কইরা ঢাকায় বড় অফিসে চাকুরি করবো।”

অবশেষে এই বাসায় এসে উঠতে হলো। আসেপাশে বোন-বউয়েরা সাবধান করে দিয়েছিলো, খোঁটা থাকবেই। শুধু একটু মানিয়ে নিতে হবে ব্যাস্‌। খাবার কষ্ট, শোবার কষ্ট সহ্য হয়। কিন্তু, সন্মান নিয়ে টানাটানি হলে আর এ বাড়িতে থাকবে না – নিজেকে আরেকবার মনে করিয়ে দেয় সে।
ঘটনার সূত্রপাত গতকাল দূপুরে। রান্নাঘরে কলের পাড়ে বসে বাসন ধুচ্ছিলো জয়তুন। এক খেয়ালে শাড়িটা হাঁটুর কাছে উঠে এসেছিলো। হঠাৎ কী মনে হতে পিছনে ফিরে দেখে ঐ লোকটা। কেমন যেন একটা অসভ্য দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।

জয়তুনের টের পায় আস্তে আস্তে তার মাথায় রাগ উঠে যাচ্ছে। তার রাগ প্রচণ্ড। একবার রেগে গেলে একটা হেস্তনেস্ত না করে সে ছাড়ে না। তাকে দেখে বোঝা যায় না, কিন্তু তার স্নায়ু বরফের মতো ঠান্ডা।

বিয়ে হবার আগে গ্রামে সে দুরন্ত একটা মেয়ে হিসেবে পরিচিত ছিলো। তখন তার বয়স পনের কি ষোল, স্কুলের শেষ বছরে উঠেছে। একটা গুন্ডা টাইপের ছেলে তার পিছে লেগেছিল। ছেলেটা রাজনীতি করতো। আসলে রাজনীতির নামে দলের ছত্রছায়ায় থেকে অসহায় মেয়েদের জীবন নস্ট করাই ছিলো তার নেশা। বাসায় এসে জয়তুনকে বিরক্ত করতো। এমনকি তুলে নিয়ে যাবারও হুমকি দিয়েছিলো।

সেই সময় তার বাবা সামাজিক ঝামেলা থেকে বাঁচতে তাড়াহুড়ো করে জয়তুনের বিয়ে দিয়ে দেন। স্কুল ছেড়ে চলে আসতে হয়। আসার আগের দিনও জয়তুনের চোখে কী জল দেখেনি। চোখে ছিলো রাগ – ধ্বক ধ্বক করে জ্বলতে থাকা কয়লার আগুনের মতো।

ঐ ছেলেটিকে কেউ আর কখনো দেখেনি।

----------
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্মৃতিপুড়া ঘরে

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৩০



বাড়ির সামনে লম্বা বাঁধ
তবু চোখের কান্না থামেনি
বালিশ ভেজা নীরব রাত;
ওরা বুঝতেই পারেনি-
মা গো তোমার কথা, মনে পরেছে
এই কাঠফাটা বৈশাখে।

দাবদাহে পুড়ে যাচ্ছে
মা গো এই সময়ের ঘরে
তালপাতার পাখাটাও আজ ভিন্নসুর
খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

গরমান্ত দুপুরের আলাপ

লিখেছেন কালো যাদুকর, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৫৯




মাঝে মাঝে মনে হয় ব্লগে কেন আসি? সোজা উত্তর- আড্ডা দেয়ার জন্য। এই যে ২০/২৫ জন ব্লগারদের নাম দেখা যাচ্ছে, অথচ একজন আরেক জনের সাথে সরাসরি কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজীব নূর কোথায়?

লিখেছেন অধীতি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:২৪

আমি ব্লগে আসার পর প্রথম যাদের মন্তব্য পাই এবং যাদেরকে ব্লগে নিয়মিত দেখি তাদের মধ্যে রাজীব নূর অন্যতম। ব্যস্ততার মধ্যে ব্লগে কম আসা হয় তাই খোঁজ-খবর জানিনা। হঠাৎ দু'একদিন ধরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৬



©কাজী ফাতেমা ছবি

মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।

হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।

ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×