প্রথমেই বলে নিই, এই লেখটির কিছুই আমার নয় । সম্পূর্ণ লেখাটি মুভি এন্ড সিরিজ অ্যাডিক্টেড গ্রুপের ইসমাইল আহমেদ সাহেবের।
(জন্ম: ১৯ আগস্ট, ১৯৩৫ - মৃত্যু: ৩০ জানুয়ারি, ১৯৭২)
একজন প্রখ্যাত বাংলাদেশী চলচ্চিত্র পরিচালক, ঔপন্যাসিক, এবং গল্পকার।
জাতীয়তা - বাংলাদেশী
বংশোদ্ভূত - বাঙালি
নাগরিকত্ব - বাংলাদেশ
যে জন্য পরিচিত -চলচ্চিত্র পরিচালক, ঔপন্যাসিক, গল্পকার
ধর্ম - মুসলিম
দম্পতি - সুমিতা দেবী, সুচন্দা
সন্তান - বিপুল রায়হান, অনল রায়হান ও তপু রায়হান
পুরস্কার - একুশে পদক, বাংলা একাডেমী পুরস্কার, স্বাধীনতা দিবস পুরস্কার
সংক্ষিপ্ত জীবনীঃ
জহির রায়হান ১৯৩৫ সালের ১৯ আগস্ট বর্তমান ফেনী জেলার অন্তর্গত মজুপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৪৭ সালে দেশবিভাগের পর তিনি তার পরিবারের সাথে কলকাতা হতে বাংলাদেশে (তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান) স্থানান্তরিত হন। তিনি ১৯৫৮ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় হতে বাংলায় স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন। তিনি ব্যক্তিগত জীবনে দু'বার বিয়ে করেন: ১৯৬১ সালে সুমিতা দেবীকে এবং ১৯৬৬ সালে তিনি সুচন্দাকে বিয়ে করেন, দুজনেই ছিলেন সে সময়কার বিখ্যাত চলচ্চিত্র অভিনেত্রী।
কর্মজীবনঃ
জহির রায়হান বাংলা সাহিত্যে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। তার সাহিত্যিক ও সাংবাদিক জীবন শুরু হয়। ১৯৫০ সালে তিনি যুগের আলো পত্রিকায় সাংবাদিক হিসেবে কাজ করা শুরু করেন। পরবর্তীতে তিনি খাপছাড়া, যান্ত্রিক, সিনেমা ইত্যাদি পত্রিকাতেও কাজ করেন। ১৯৫৬ সালে তিনি সম্পাদক হিসেবে প্রবাহ পত্রিকায় যোগ দেন। ১৯৫৫ সালে তার প্রথম গল্পগ্রন্থ সূর্যগ্রহণ প্রকাশিত হয়। চলচ্চিত্র জগতে তার পদার্পণ ঘটে ১৯৫৭ সালে, জাগো হুয়া সাবেরা ছবিতে সহকারী হিসেবে কাজ করার মাধ্যমে। তিনি সালাউদ্দীনের ছবি যে নদী মরুপথেতেও সহকারী হিসেবে কাজ করেন। প্রখ্যাত চলচ্চিত্র পরিচালক এহতেশাম তাকে এ দেশ তোমার আমার এ কাজ করার আমন্ত্রণ জানান; জহির এ ছবির নামসঙ্গীত রচনা করেছিলেন। ১৯৬০ সালে তিনি রূপালী জগতে পরিচালক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন কখনো আসেনি চলচ্চিত্রের মাধ্যমে। ১৯৬৪ সালে তিনি পাকিস্তানের প্রথম রঙিন চলচ্চিত্র সঙ্গম নির্মাণ করেন (উর্দু ভাষার ছবি) এবং পরের বছর তার প্রথম সিনেমাস্কোপ চলচ্চিত্র বাহানা মুক্তি দেন। জহির রায়হান ভাষা আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে যুক্ত ছিলেন এবং ২১শে ফেব্রুয়ারির ঐতিহাসিক আমতলা সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন। ভাষা আন্দোলন তার ওপর গভীর প্রভাব ফেলেছিল, যার ছাপ দেখতে পাওয়া যায় তার বিখ্যাত চলচ্চিত্র জীবন থেকে নেওয়াতে। তিনি ১৯৬৯ সালের গণ অভ্যুত্থানে অংশ নেন। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে তিনি কলকাতায় চলে যান এবং সেখানে বাংলাদেশের স্বাধীনতার পক্ষে প্রচারাভিযান ও তথ্যচিত্র নির্মাণ শুরু করেন। কলকাতায় তার নির্মিত চলচ্চিত্র জীবন থেকে নেওয়ার বেশ কয়েকটি প্রদর্শনী হয় এবং চলচ্চিত্রটি দেখে সত্যজিত রায়, মৃণাল সেন, তপন সিনহা এবং ঋত্বিক ঘটক প্রমুখ ভূয়সী প্রশংসা করেন। সে সময়ে তিনি চরম অর্থনৈতিক দৈন্যের মধ্যে থাকা সত্ত্বেও তার চলচ্চিত্র প্রদর্শনী হতে প্রাপ্ত সমুদয় অর্থ তিনি মুক্তিযোদ্ধা তহবিলে দান করে দেন।
অন্তর্ধান ও মৃত্যুঃ
জহির রায়হান দেশ স্বাধীন হবার পর তার নিখোঁজ ভাই শহীদুল্লাহ কায়সারকে খুঁজতে শুরু করেন, যিনি স্বাধীনতার ঠিক আগমুহূর্তে পাকিস্তানী আর্মির এদেশীয় দোসর আল বদর বাহিনী কর্তৃক অপহৃত হয়েছিলেন। জহির রায়হান ভাইয়ের সন্ধানে মীরপুরে যান এবং সেখান থেকে আর ফিরে আসেননি। মীরপুর ছিল ঢাকা থেকে কিছুটা দূরে অবস্থিত বিহারী অধ্যুষিত এলাকা এবং এমন প্রমাণ পাওয়া গেছে যে সেদিন বিহারীরা ও ছদ্মবেশী পাকিস্তানী সৈন্যরা বাংলাদেশীদের ওপর গুলি চালালে তিনি নিহত হন মীরপুরে।
পরিবারের উল্লেখযোগ্য সদস্যঃ
বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের প্রবাদ পুরুষ জহির রায়হানের দুই স্ত্রী’র একজন সুমিতা দেবী। এই প্রয়াত অভিনেত্রীর দুই ছেলে বিপুল রায়হান ও অনল রায়হান। দুজনেই প্রতিষ্ঠিত নাট্য নির্মাতা। আরেক স্ত্রী সুচন্দা’র ছোট ছেলে তপু রায়হানও অভিনেতা। তিনি ‘সবুজ কোট কাল চশমা’ ছবিতে অভিনয় করেছিলেন। জাহির রায়হানের ভাই শহীদুল্লাহ কায়সারের মেয়ে শমী কায়সার।
জীবনপঞ্জিঃ
১৯৩৫: জন্ম ১৯ আগস্ট, মজুপুর গ্রাম, ফেনী।
প্রাথমিক লেখাপড়াঃ মিত্র ইন্সটিটিউট, কলকাতা।
আলিয়া মাদ্রাসা, কলকাতা।
১৯৪৯: নতুন সাহিত্য পত্রিকা (কলকাতা)-য় ওদের জানিয়ে দাও শীর্ষক কবিতা প্রকাশিত।
১৯৫০: আমিরাবাদ হাইস্কুল (ফেনী) থেকে মেট্রিক পরীক্ষা।
১৯৫১-১৯৫৭: কমিউনিস্ট পার্টির সাথে সরাসরি জড়িত।
১৯৫২: ছাত্র অবস্থাতেই মহান ভাষা আন্দোলনে অংশগ্রহন। মোহাম্মদ জহিরুল্লাহ থেকে জহির রায়হানে পরিণত। প্রমথেশ বড়ুয়া মেমোরিয়াল ফটোগ্রাফি স্কুল (কলকাতা)-য় ভর্তি।
১৯৫৩: জগন্নাথ কলেজ (ঢাকা) থেকে আই.এস.সি পরীক্ষা।
১৯৫৬-১৯৫৮: কোর্স শেষ না করেই চিকিৎসাশাস্ত্র (মেডিক্যাল কলেজ) ত্যাগ।
১৯৫৬: পাকিস্তানের প্রখ্যাত চিত্র পরিচালক জারদরি-এর সহকারী মনোনীত হয়ে চলচ্চিত্র জগতে প্রবেশ।
১৯৫৮: বি.এ.অনার্স (বাংলা ভাষা ও সাহিত্য), ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। পঞ্চাশের দশকে ছাত্র অবস্থায় প্রথম গল্পগ্রন্থ সূর্য গ্রহণ প্রকাশিত।
১৯৬১: : প্রথম চলচ্চিত্র কখনো আসেনির মুক্তি লাভ। চিত্রনায়িকা হেনা লাহিড়ী সুমিতা দেবীর সাথে পরিণয়। পাকিস্তানের প্রথম রঙ্গিন ছবি সঙ্গম (উর্দু ভাষায়) তৈরি।
১৯৬৪: হাজার বছর ধরে উপন্যাসের জন্য আদমজী পুরস্কার লাভ।
১৯৬৮: চিত্রনায়িকা কোহিনূর আকতার সুচন্দার সাথে পরিণয়।
১৯৭০: পাকিস্তানের প্রথম রাজনৈতিক-চেতনামন্ডিত চলচ্চিত্র 'জীবন থেকে নেয়া' মুক্তিলাভ।
১৯৭১: মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ। মুক্তিযুদ্ধের উপর প্রথম চলচ্চিত্র স্টপ জেনোসাইড নির্মাণ। মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে দ্বিতীয় চলচ্চিত্র এ স্টেট ইজ বর্ন নির্মাণ। মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে চলচ্চিত্র ইনোসেন্ট মিলিয়ন (পরিচালকঃ বাবুল চৌধুরী) এবং লিবারেশন ফাইটার্স (পরিচালকঃ আলমগীর কবীর)-এর তত্ত্বাবধান। বুদ্ধিজীবীদের বাংলাদেশ মুক্তি পরিষদ (Bangladesh Liberation council of Intelligentsia)-এর সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত। সাহিত্যে অবদানের জন্য বাংলা একাডেমী পুরস্কার লাভ (১৯৭২ সালে ঘোষিত)
১৯৭২: বুদ্ধিজীবী হত্যা তদন্ত কমিটি গঠন।
১৯৭২: নিখোঁজ (৩০ জানুয়ারি থেকে আজ পর্যন্ত)।
১৯৭৭: চলচ্চিত্র শিল্পে অবদানের জন্য রাষ্ট্রীয় একুশে পদক লাভ।
১৯৯২: সাহিত্যে কৃতিত্বের জন্য স্বাধীনতা দিবস পুরস্কার লাভ।
পুরস্কারঃ
আদমজী সাহিত্য পুরস্কার ১৯৬৪। (হাজার বছর ধরে)
নিগার পুরস্কার ('কাঁচের দেয়াল') চলচ্চিত্রের জন্য শ্রেষ্ঠ বাংলা ছবি হিসেবে।
বাংলা একাডেমী পুরস্কার ১৯৭১। (উপন্যাসঃ মরণোত্তর)
একুশে পদক ১৯৭৭। (চলচ্চিত্রঃ মরণোত্তর)
স্বাধীনতা দিবস পুরস্কার ১৯৯২। (সাহিত্যঃ মরণোত্তর)
উল্লেখযোগ্য উপন্যাসঃ
শেষ বিকেলের মেয়ে (১৯৬০)। প্রথম উপন্যাস।
প্রকাশকঃ সন্ধানী প্রকাশনী। রোমান্টিক প্রেমের উপাখ্যান।
হাজার বছর ধরে (১৯৬৪)
আবহমান বাংলার গ্রামীণ জীবনের পটভূমিতে রচিত আখ্যান। (চলচ্চিত্ররূপ, ২০০৫)
আরেক ফাল্গুন (১৯৬৯)। বায়ান্নর রক্তস্নাত ভাষা-আন্দোলনের পটভূমিতে রচিত কথামালা।
বরফ গলা নদী (১৯৬৯)। প্রথম প্রকাশঃ 'উত্তরণ' সাময়িকী।
অর্থনৈতিক কারণে বিপর্যস্ত ক্ষয়িষ্ণু মধ্যবিত্ত পরিবারের অসহায়ত্ব গাঁথা।
আর কত দিন (১৯৭০)
অবরুদ্ধ ও পদদলিত মানবাত্নার আন্তর্জাতিক রূপ এবং সংগ্রাম ও স্বপ্নের আত্নকথা।
অন্যান্য রচনাঃ
সূর্যগ্রহণ, প্রথম গল্পগ্রন্থ (১৩৬২ বাংলা সন)
তৃষ্ণা (১৯৬২)
একুশে ফেব্রুয়ারি (১৯৭০)
কয়েকটি মৃত্যু
জহির রায়হান পরিচালিত চলচ্চিত্রসমূহ হচ্ছেঃ
কখনো আসেনি (১৯৬১)
সোনার কাজল (১৯৬২) (কলিম শরাফীর সঙ্গে যৌথভাবে)
কাঁচের দেয়াল (১৯৬৩)
সঙ্গম (১৯৬৪)
বাহানা (১৯৬৫)
আনোয়ারা (১৯৬৭)
বেহুলা (১৯৬৬)
জ্বলতে সূরযকে নীচে
জীবন থেকে নেয়া (১৯৭০)
স্টপ জেনোসাইড (চলচ্চিত্র) (১৯৭১)
এ স্টেট ইজ বর্ন (১৯৭১)
লেট দেয়ার বি লাইট (অসমাপ্ত) (১৯৭০)
পত্রিকা সম্পাদনা - এক্সপ্রেস (ইংরেজি সাপ্তাহিক) , প্রবাহ (বাংলা মাসিক)
জহির রায়হান সম্পর্কে কিছু মূল্যায়নঃ
বাংলাদেশের চলচ্চিত্র জগতে জহির রায়হান এক বিশিষ্ট শিল্পী । জহির রায়হান তাঁর জীবন ও শিল্পের গন্তব্যকে গ্রন্থিত করেছিলেন মুক্তিসংগ্রামের সঙ্গে । জীবন ছিল তাঁর সবচেয়ে প্রিয় পরিভ্রমণের স্থান আর শিল্প ছিল সেই পরিভ্রমণ উদ্ভাসনের দীর্ঘ পথ। জীবন ও শিল্পের পরিভ্রমণ ও উদ্ভাসন তাঁকে নিয়ে গিয়েছিল আরও এক দীর্ঘ পথের বাকে, যেখানে দাঁড়িয়ে তিনি উপলব্ধি করেছিলেন, পরাধীন দেশে জীবন ও শিল্প অর্থময় হতে পারে না । তিনি তাই স্বাধীকার আন্দোলনের দীর্ঘতর পথ ধরে হাঁটতে থাকেন। তাঁর জীবন ও শিল্পের গন্তব্য এক ও অভিন্ন হয়ে পড়ে মুক্তিযুদ্ধের সঙ্গে। দীর্ঘতর ওই পথ তাঁর জীবনকে হ্রস করে দিয়েছে – কেননা মুক্তির জন্যে মানুষকে মূল্য দিতে হয় । জহির রায়হানকেও দিতে হয়েছে, তিনি নিরুদ্দেশে হয়েছিলেন, পরে উদ্ঘাটিত হয়েছে তিনি শহীদ হয়েছেন । জীবন তাঁর হারিয়ে গেছে, কিন্তু শিল্প তাঁর এখনও উজ্জল আলো ছড়াচ্ছে; কেননা মুক্তির নিরবধি সংগ্রাম এক পরম শৈল্পিকতা, ওই শৈল্পিকতায় জহির রায়হান এক হয়ে গেছেন, লীন হয়ে আছে তাঁর জীবন ও শিল্প। প্রায়-উপনিবেশিক এক শাসন যে পূর্ববাংলায় জীবন ও শিল্পের সমস্ত পথ রুদ্ধ করে রেখেছে জহির রায়হান তা জেনেছিলেন নিজের জীবনের মধ্যে দিয়ে। সিনেমাতে তাঁর প্রথম ফুটপ্রিন্ট ছিল ‘জাগো হুয়া সাভেরা’, ১৯৫৭ সালে ছবিটিতে সহকারী পরিচালকের কাজ করেন তিনি। কয়েক বছরের মধ্যেই পরিচালক হয়ে ওঠেন, ১৯৬১ সালে নির্মাণ করেন ‘কখনো আসেনি’,১৯৬২ তে ‘সোনার কাজল’আর ১৯৬৩তে ‘কাচের দেয়াল’। কিন্তু পরপর তিনটি চলচ্চিত্রই অসফল হয় বাণিজ্যের দৌড়প্রতিযোগিতায়। সমাজের অবকাঠামো তার কাঠামোর উপযোগী মনস্তত্ব তৈরি করে চলে, মারাত্মক সেই মনস্তত্ব ষাটের দশকে তো বটেই, এখনও আমাদের প্রতিনিয়ত হিতোপদেশ দেয় – জীবন এত কষ্টের, সিনেমা, নাটক আর গল্প উপন্যাস যদি আমাদের একটু হাসাতেই না পারে, তা হলে কি দরকার ওসবের? অতএব জহিরকে একপা এগুনোর জন্যে দু’পা পেছাতে হলো। মুখ ফেরাতে হলো বাণিজ্যিক ছবির দিকে। ১৯৬৪ সালে তিনি পাকিস্তানের প্রথম রঙিন চলচ্চিত্র সঙ্গম নির্মাণ করেন (উর্দু ভাষার ছবি) এবং পরের বছর তার প্রথম সিনেমাস্কোপ চলচ্চিত্র বাহানামুক্তি দেন।১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি প্রথম যে ১০ জনের দলটি ১৪৪ ধারা ভেঙেছিল, জহির রায়হান ছিলেন তাঁদেরই একজন। ভাষা আন্দোলন তাঁর ওপর যে গভীর প্রভাব ফেলেছিল, তার ছাপ দেখতে পাওয়া যায় তাঁর বিখ্যাত ‘জীবন থেকে নেওয়া’চলচ্চিত্রে। তিনি ১৯৬৯ সালের গণ অভ্যুত্থানে অংশ নেন। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে তিনি কলকাতায় চলে যান এবং সেখানে বাংলাদেশের স্বাধীনতার পক্ষে প্রচারাভিযান ও তথ্যচিত্র নির্মাণ শুরু করেন।কলকাতায় তার নির্মিত চলচ্চিত্র জীবন থেকে নেওয়া’র বেশ কয়েকটি প্রদর্শনী হয় এবং চলচ্চিত্রটি দেখে সত্যজিত রায়, মৃণাল সেন, তপন সিনহা এবং ঋত্বিক ঘটক প্রমুখ ভূয়সী প্রশংসা করেন। সে সময়ে তিনি চরম অর্থনৈতিক দৈন্যের মধ্যে থাকা সত্ত্বেও তার চলচ্চিত্র প্রদর্শনী হতে প্রাপ্ত সমুদয় অর্থ তিনি মুক্তিযোদ্ধা তহবিলে দান করে দেন।বাংলার এই উজ্জ্বল নক্ষত্রকে স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালের ৩০শে জানুয়ারী নির্মম ভাবে হত্যা করে পাকিস্তানীদের ফেলে যাওয়া দোসর বিহারীরা। তার অন্তর্ধানের দীর্ঘ আঠাশ বছর পর্যন্ত তাকে অপহরন করে গুম করে ফেলার খবর প্রচার করা হয়। কিন্তু পহেলা সেপ্টেম্বর ১৯৯৯ দৈনিক ভোরের কাগজের এক রিপোর্টে বেরিয়ে আসে জহির রায়হান খুনের আসল রহস্য। জহির রায়হান ১৯৭২ সালের ৩০শে জানুয়ারী রোজকার মত তার নিখোঁজ অগ্রজ শহীদুল্লাহ কায়সার (সাংবাদিক ও সাহিত্যিক) এর খোঁজে বেরুলে, মিরপুর ১২ নম্বর সেকশনের পানির টেঙ্কি এলাকায় পাকিস্তানের ফেলে যাওয়া দোসর সশস্র বিহারীদের গুলিতে ঝাজড়া হয়ে যায় জহির রায়হানের বুক। স্বাধীন বাংলার মাটি আরেকবার রক্তাক্ত হয় পাকিদোসরদের বুলেটের আঘাতে। সেখান থেকে বিহারীরা জহির রায়হানের লাশ টেনে নিয়ে গিয়ে অন্যকোথাও গুম করে ফেলে। মাটিতে লুটিয়ে পড়ে বাংলার এক উজ্জ্বল নক্ষত্র।
তথ্যসূত্র/কৃতজ্ঞতাঃ - ঢালিউড টুয়েন্টিফোর এবং উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে