'ধর্ম' একটি 'বিশ্বাস' - অতি পবিত্র একটি অনুভূতি, মূল্যবোধ। তা কখনোই যুক্তি তর্কের দাঁড়িপাল্লায় ওঠানো শোভন নয়। কারো আস্তিকতা নাস্তিকতা ব্যাপারটিও সাধারণ্যে আলোচ্য বিষয় নয়।এটিও যার যার 'একান্ত ব্যাক্তিগত লালিত বিশ্বাস' - কোন ভাবেই 'একে অন্যের ওপর' চাপিয়ে দেবার নয়।
সৃষ্টির রহস্য আজও অনুন্মোচিত। বিজ্ঞানের আলোকে আমরা যতটুকু জেনেছি তাও দ্বিধা-দ্বন্দে দোদুল্যমান ও আজো তর্কাতীত নয়। আর তাছাড়াও ধমর্কে বিজ্ঞানের কষ্টিপাথরে যাচাই করাও বাতুলতা মাত্র। ধর্ম সকল কিছুর উর্দ্ধে শুধুই একটি বিশ্বাস। কখনোই তা যুক্তি তর্কের বেড়াজালে আবদ্ধ করা উচিৎ নয়।
আমরা যদি সেই আদিম সমাজের (Primitive Society) দিকে তাকাই - যখন হিন্দু, মুসলিম, বৌদ্ধ, খ্রীষ্টানসহ নানা মত ও পথের উদ্ভব হয়নি। সেই সমাজেও ধর্ম শুধুই একটি বিশ্বাস হয়ে আর্বিভূত হয়েছে।
অনিশ্চয়তা, অজানা বিষয়, বিশালত্ব (যা মানুষ পরাভূত করতে পারে নাই) এমন সব অবস্থা মানুষকে চিরকালই ভীত সন্ত্রস্ত করে তোলে। আদিম মানুষও মেঘের গজর্ন, বজ্রপাত, ভূমিকম্প, চন্দ্র, সূর্য, নক্ষত্র, মহাকাশ এমনকি বিশাল কোন বৃক্ষ দেখেও ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে মাথা নত করতো। এসবের কল্যাণ অকল্যাণকর শক্তি তাদের মোহিত করতো। তাই আদিম মানুষ এমন সব প্রাকৃতিক শক্তির তুষ্টি বিধানে নানা মন গড়া আচার - অনুষ্ঠান পালন করতো, এই বিশ্বাসে যে এরা মানুষের প্রতি রুষ্ট না হয়ে যেন কোন অনিষ্টের কারণ না হয়ে দাঁড়ায়। এভাবেই মানুষের ভেতর সৃষ্টিকর্তা , ঈশ্বর বা ধর্ম চিন্তার উদ্ভব ঘটে। আর কালের বিবর্তনে তা নানা রূপ পরিগ্রহ করে।
আত্মিক চিন্তায় ধর্ম একটা চমৎকার বিশ্বাস যা মানুষের মনকে পরিপূর্ণ -পরিশুদ্ধ করে। সাংস্কৃতিক বিচারে ধর্ম এক বর্ণিল মিলন মেলা। সামাজিক বিজ্ঞানের আলোকেও ধর্ম একটি অতি সুদৃঢ় সামাজিক নিয়ণ্ত্রণের বাহক (Strong Agent Of Social Control)। নানা মত, পথ, রং, বর্ণ, বিচিত্র অনুভূতির এক বিশাল জনগোষ্ঠীকে এই ধর্মই এক সুশৃঙ্খল নিয়মানুর্বতিতায় আবদ্ধ করেছে।
প্রচীন কাল থেকেই এক শ্রেনীর স্বার্থান্বেসী মানুষ এই পবিত্র বিশ্বাস কে তাদের হীন উদ্দেশ্য পূরণের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহারের প্রয়াস চালিয়ে এসেছে - আজও নিরন্তর সেই প্রচেষ্টায় চলছে।
সেই সুপ্রাচীন ইতিহাসের আলোকে দেখলেও আমরা দেখতে পাবো, হিন্দু, মুসলিম, খ্রীষ্টান, ইহুদী সহ অনেক ধর্ম মতের পেছনেই লুকিয়ে রয়েছে কোন না কোন রাজনৈতিক ইতিহাস। ইহুদীরা যেমন এক সময় চরম নিগৃহিত হয়েছে, তেমনি ইহুদী দ্বারাও মুসলমানরাও হয়েছে লান্চিত ক্ষতিগ্রস্ত। একইভাবে হিন্দু-মুসলমান, মুসলমান- হিন্দু, মুসলমান - খ্রীষ্টান এমন অনেক ধর্ম অনুসারীরা একেক সময়ে একেক ভাবে একে অন্যের দ্বারা নির্যাতিত হয়েছে। আর এসব কিছুর পেছনেই ছিল কোন না কোন হীন রাজনৈতিক উদ্দেশ্য চরিতার্থের প্রয়াস।
আমরা কেহই হয়তো অস্বীকার করবো না যে সকল ধর্মের মূল মন্ত্র মানবতা - মানব কল্যাণ। অথচ এই আমাদেরই অনেকে নিজ নিজ ধর্ম অতি আড়ম্বরের সাথে পালনে সচেষ্ট হলেও অনেক সময়ই অকারণে আঘাত করে বসি অন্যের বিশ্বাস ধর্মানুভূতিতে - মানবতা মানব কল্যাণ যে ভূলুন্ঠিত হয়ে নিভৃতে কাঁদে তা যেন দেখেও দেখিনা।
ধর্ম শুধুই -
- শিব ঠাকুর-দূ্র্গা, যীশু, মহাবীর, বুদ্ধ, ঈসা-মূসা, মুহাম্মদ হয়ে নয়
- বেদ-পূরাণ, গীতা-রামায়ন, কোরান, বাইবেল, ত্রিপিকট হয়ে নয়
- মন্দির, মসজিদ, গীর্জা, গুরুদুয়ারা হয়ে নয় ....
বরং ধর্ম থাকুক আমাদের -
- শয়নে
- স্বপনে
- জাগরণে
- অন্তরে
- গভীর অনুভূতি বিশ্বাসে
- ব্যক্তি জীবন যাপনে
- সৃষ্টিকর্তার মহাত্ম অনুবোধনে
- বিশ্ব মানবতায় আর
- মানব কল্যাণে
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই জানুয়ারি, ২০১০ রাত ১০:৫৯