somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ভেগানিজম আর বন্য প্রাণী

০৯ ই নভেম্বর, ২০১৭ দুপুর ২:২৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



কয়েকদিন আগে একজন ইনবক্সে এক লিঙ্ক দিয়েছিল; ছাগুসমাজে পরিচিত এক ব্যাক্তির স্ট্যাটাসের। নাম প্রকাশ করবো না তবে তার স্ট্যাটাসের বিষয়বস্তু এমন ছিল যে, উদ্ভিদভোজীরা মাংস ত্যাগ করার কথা বললেও তারা নাকি বন্যপ্রাণীর ব্যাপারে ইচ্ছাকৃতভাবে চুপ থাকে। বিজ্ঞান ও দর্শনের মৌলিক বিষয়গুলো বুঝতে অক্ষম ভদ্রলোকেরা যখন প্যারাডক্সিক্যাল বই লিখে জনপ্রিয়তা কুড়িয়ে নেয় তখন ভেগানিজম সম্পর্কে না জেনে ফ্যালাসি প্রয়োগ করে গড্ডালিকাবাদি পাঠকদের কড়তালি আদায় করবে এটা অস্বাভাবিক না।

আঙ্গুল তোলার ব্যাপারটা বাদ দিলে বন্যপ্রাণী নিয়ে প্রশ্ন করাটা যথেষ্ট ভ্যালিড প্রশ্ন বটে। সামনাসামনি বেশ কিছুবার এই প্রশ্নের উত্তর দিতেও হয়েছে। এখন লিখিত উত্তরের প্রয়োজনীয়তা দেখছি।

(১) পৃথিবীর একটা আইন ব্যবস্থা, ধর্ম ব্যবস্থা কেউ আমাকে বলতে পারবেন যেখানে প্রাণীদের নৈতিক হওয়ার আদেশ দিয়েছে ? কেন দেয়া হয় নাই ? কারণ অন্য প্রাণীদের বুদ্ধিমত্তা অপেক্ষাকৃত এতই সরল যে আপেক্ষিক নৈতিকতার মত জটিল বিষয় অনুধারন করার ক্ষমতা তাদের নেই। বৈশ্বিক উস্নায়ন, খাদ্যচক্র নষ্ট করার পিছনে শুধুমাত্র মানুষ একা দায়ী, আর আমাদের সিদ্ধান্তের মধ্যেই ক্ষমতা আছে যে সেটার মাশুল দিয়ে অবস্থার উন্নতি করার। যেহেতু আমাদের জ্ঞান, বুদ্ধিমত্তা ও ক্ষমতা আছে অবস্থার উন্নতি করার; সেটা থেকে বিরত থাকা আমাদের জন্যই দায়িত্বজ্ঞানহীন হবে।

নৈতিকতা নির্ভর করে আমাদের ক্ষমতা ( শারীরিক ও মানসিক ) এবং জ্ঞানের উপর। তাই মানসিক প্রতিবন্ধীদের বিচারের মানদণ্ডও আমাদের সমান না; অন্যপ্রাণীদের ব্যাপারও এমনই।

প্রাণীদের মধ্যে কেউ যদি বৈশ্বিক উস্নায়ন, পুষ্টিগুন, খাদ্যচক্র, বিকল্প সমাধান ইত্যাদি কনসেপ্টগুলো অনুধাবন করতে পারে; সাথে সাথে ফলপ্রসূ সিদ্ধান্ত নিতে পারে; তাহলে তার সেটা যে প্রাণীই হউক না কেন তারও নৈতিক দায়িত্ব হবে ভেগান হবার। কাল যদি Planet of the apes এর Caesar চরিত্রের মত কারো উদ্ভব হয়, তার জন্যও ভেগানিজম প্রাসঙ্গিক হবে।

(২) এরপর প্রশ্ন আসতে পারে, "ভাই, বুঝলাম যে তাদের ক্ষমতা নাই, তাই ভেগানিজম তাদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য না। কিন্তু ভেগানবাদ তো নিষ্ঠুরতার বিরুদ্ধে। এইসব প্রাণী যখন শিকার করে তখন ভিক্টিম প্রাণীদের কষ্ট দিয়েই তো হত্যা করছে শিকারি প্রাণীগুলো। ভেগানদের কি উচিত না এটা বন্ধ করার?"

ভেগানরা আপেক্ষিক নৈতিকতা মেনে চলে। ভেগান কেউ যদি দূর্গম দ্বীপে আটকা পড়ে সেখানে প্রাণী শিকার করা ছাড়া টিকে থাকা অসম্ভব। সে সেটাই করবে। সেটা ভেগানবাদের সাথে সাংঘর্সিক হবে না। কারণ সেই পরিস্থিতিতে সেটাই আমাদের জন্য "নুন্যতম নিষ্ঠুরতা"। মানব সভ্যতা এখনো এতটা ক্ষমতাবান হয় নাই যে অগণিত প্রাণীদের বেদনা দূর করতে পারবে। আমাদের স্বল্প ক্ষমতায় পরিবেশে মাত্রাতিরিক্ত হস্তক্ষেপ উল্টো আরও হিতে বিপরীত হবে। তাহলে নুন্যতম নিষ্ঠুরতা কোনটা হবে ? একটা প্রাণীকে বেদনামুক্ত করতে গিয়ে আরও দশটাকে ঝুঁকিতে ফেলার; নাকি প্রাণী জগতে যা আছে সেটা হতে দিয়ে অবস্থার স্বাভাবিক ক্রম অক্ষুণ্ণ রাখার ? ভবিষ্যতে কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তা ও বিগ ডেটার প্রভাবে আমরা হয়ত্ব সহজে বুঝতে পারবো কোথায় কোথায় আমাদের হস্তক্ষেপ করা উচিত (বড় পরিসরে) ।

হ্যাঁ, এমন অনেক পরিস্থিতি আছে যখন পরিবেশে হস্তক্ষেপ করতে হিতে বিপরীত হওয়ার সম্ভাবনা কম হবে। যেমন শিকারি প্রাণীর ভয়ে ছুটে গিয়ে একটা প্রাণী চোরাবালিকে আটকা পড়েছে। শিকারি প্রাণীও তাকে ধরতে পারবে না। খাদ্যচক্রে এটার কোন ইতিবাচক প্রভাব নেই; কিন্তু প্রাণীটা কষ্ট পাচ্ছে। বিষয়টা মানুষের জ্ঞাত, আমাদের ক্ষমতায় আছে, উড়োযানের মাধ্যমে করলে বন্য প্রাণীদের উপরও প্রভাব খুবই সীমিত। তখন এটা আমাদের নৈতিক দায়িত্ব হবে, প্রাণীকে কষ্ট থেকে রক্ষা করার। আমাদের সকল সময় পরিস্থিতি ও সেটার দীর্ঘমেয়াদি সুফল-কুফল চিন্তা করে কাজ করা উচিত।

আমি আশা করি একটা সময় আমরা টাইপ-টু সভ্যতা হবো (Read: Kardashev Scale) তখন জীবজগতের বেদনাকে নিশ্চিহ্ন করতে পারবো। কিন্তু ততদিন পর্যন্ত আমাদের রুঢ় বাস্তবতা মেনে আপেক্ষিকতার মাধ্যমেই সিদ্ধান্ত নেয়া সবচেয়ে মানবিক উপায় হবে। ভবিষ্যতে ভেগানিজম নিয়ে গঠনমূলক আলোচনার আশা রাখি।
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই নভেম্বর, ২০১৭ বিকাল ৫:৫৬
৪টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

দু'টো মানচিত্র এঁকে, দু'টো দেশের মাঝে বিঁধে আছে অনুভূতিগুলোর ব্যবচ্ছেদ

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১২:৩৪


মিস ইউনিভার্স একটি আন্তর্জাতিক সুন্দরী প্রতিযোগিতার নাম। এই প্রতিযোগিতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সুন্দরীরা অংশগ্রহণ করলেও কখনোই সৌদি কোন নারী অংশ গ্রহন করেন নি। তবে এবার রেকর্ড ভঙ্গ করলেন সৌদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার প্রফেশনাল জীবনের ত্যাক্ত কথন :(

লিখেছেন সোহানী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সকাল ৯:৫৪



আমার প্রফেশনাল জীবন বরাবরেই ভয়াবহ চ্যালেন্জর ছিল। প্রায় প্রতিটা চাকরীতে আমি রীতিমত যুদ্ধ করে গেছি। আমার সেই প্রফেশনাল জীবন নিয়ে বেশ কিছু লিখাও লিখেছিলাম। অনেকদিন পর আবারো এমন কিছু নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

×