somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

একটি সাদা কবিতা

২৫ শে জানুয়ারি, ২০২৩ সকাল ১১:২৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


বিশ্বব্যাংক যেখানে নিম্নবিত্তের শেষ রেখার গ্রাফ টেনেছে
সেই রেখার শেষ সীমা আমার দাদা চাঁদপুরে কোনো মতে ছুঁইয়ে দিয়ে গেছেন।

আমার বাবা নিম্ন-মধ্যবিত্ত রেখার শুরুর লাইনে অনেক বছর দাঁড়িয়ে ছিলেন,
সেই সময় আমাদের ডেমরার নতুন বাড়িতে মাত্র একতলা বাড়ি হয়েছে-
বাবার সব জমানো টাকা, প্রভিডেন্ট ফান্ড,
ধার-দেনা আর মায়ের গয়না বিক্রির বাড়ি।

পুরো বাড়ির অনেক ঘরই ছিলো আস্তরহীন।
তখনই আমার বাবা মা নিম্ন-মধ্যবিত্ত রেখার শুরুর গ্রাফ থেকে জানপ্রাণ দিয়ে দৌড়াতে শুরু করলেন-
সারাদিন অফিস,তারপর টিউশনি, একসময় ছোট ব্যবসা।
এই করেই নিম্ন- মধ্যবিত্ত গ্রাফের শেষ সীমায় পৌঁছে মধ্যবিত্ত শুরুর গ্রাফ ছোঁয়ার জন্য দৌড়াতে দৌড়াতে বাবা-মা দু’জনের বুকের পাঁজর ভেঙে যাবার দশা।

সেই সময় বাস থেকে নেমে বাসায় হেঁটে আসতে বিশ মিনিট লাগত,
রিকশায় পাঁচ মিনিট।
খুব কমই উঠতাম রিকশায়,
কাউকে বুঝতে দিতাম না
টাকা বাঁচানোর জন্য আমরা সবাই হেঁটেই আসা যাওয়া করতাম।

নতুন বাড়িতে উঠে প্রথমেই আমার মা একটা কামিনী ফুলগাছ লাগলো,
কামিনী গাছটা বড় হতে হতে আমাদের বাড়ির সব ঘরে‌ই আস্তর লাগলো।
প্রথম যেদিন কামিনী গাছটা সাদা ফুলে ভরে গেল,
সেদিন সারা বাড়ির বাতাসে নেশা ধরা এক গন্ধে আমার মাথা ধরে গেল!
আমি ঠিকই দেখেছিলাম সেদিন আমার মা খুশিতে লুকিয়ে গুণগুণ করে গান গেয়েছিল,
অথচ আমি না দেখার ভান করেছিলাম।

সারারাত কামিনী ফুল মাটিতে ঝরে পড়ত,
ভোরবেলা মনে হতো অলস সাদা মেঘ মাটিতে বিশ্রাম নিচ্ছে!
কামিনী ফুলের গন্ধে আমার এই মাথা ধরার গোপন কথা
আমি ভুলেও কখনো কাউকে জানতে দেইনি।

মধ্যবিত্ত শুরুর গ্রাফ ছুঁয়ে দিতে দিতেই আমার বাবা-মা চিরদিনের জন্য বিশ্রামে চলে গেলেন,
আর আমরা ছুঁয়ে দিলাম বিশ্বব্যাংকের আঁকা মধ্যবিত্তের গ্রাফ
এখন আমরা বাবার মতো দৌড়াচ্ছি উচ্চবিত্তের শুরুর গ্রাফ ছোঁয়ার জন্য।

আমি এখন মাঝে মাঝে ডেমরার বাসায় যাই নিজের গাড়িতে চড়ে,
ভাড়া দেওয়া সেই বাড়িতে এখন আর কোনো কামিনী ফুল গাছ নেই।
তবুও আমি ডেমরার বাড়ির সীমানায় ঢুকলেই
কামিনী ফুলের গন্ধ নাকে ভেসে আসে।
মাথা ধরার বদলে এখন মাথায় ঘুরে শুধু
বাবা -মা’র ভেঙে যাওয়া বুকের পাঁজর।

এখন রাতে স্বপ্নের মাঝে প্রায়ই ডেমড়ার সেই বাস স্টপেজ থেকে নেমে
আমি হেঁটে হেঁটে বাড়ি ফিরি।
সেই আস্তরহীন ঘরে বসে জানালা দিয়ে তাকিয়ে দেখি
অসংখ্য কামিনী ফুল মাটিতে ঝরে পড়ছে অলস মেঘের মতো।
—————————
র শি দ হা রু ন
২৪/০১/২০২৩
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে জানুয়ারি, ২০২৩ সকাল ১১:২৪
৭টি মন্তব্য ৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আপনি কি বেদ, উপনিষদ, পুরাণ, ঋগ্বেদ এর তত্ত্ব বিশ্বাস করেন?

লিখেছেন শেরজা তপন, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫২


ব্লগে কেন বারবার কোরআন ও ইসলামকে টেনে আনা হয়? আর এই ধর্ম বিশ্বাসকে নিয়েই তর্ক বিতর্কে জড়িয়ে পড়ে সবাই? অন্য ধর্ম কেন ব্লগে তেমন আলোচনা হয় না? আমাদের ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

দুলে উঠে

লিখেছেন সাইফুলসাইফসাই, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:৫৬

দুলে উঠে
সাইফুল ইসলাম সাঈফ

মন খুশিতে দুলে দুলে ‍উঠে
যখনই শুনতে পাই ঈদ শীঘ্রই
আসছে সুখকর করতে দিন, মুহূর্ত
তা প্রায় সবাকে করে আনন্দিত!
নতুন রঙিন পোশাক আনে কিনে
তখন ঐশী বাণী সবাই শুনে।
যদি কারো মনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

তরে নিয়ে এ ভাবনা

লিখেছেন মৌন পাঠক, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১০:৩০

তরে নিয়ে এ ভাবনা,
এর শুরু ঠিক আজ না

সেই কৈশোরে পা দেয়ার দিন
যখন পুরো দুনিয়া রঙীন
দিকে দিকে ফোটে ফুল বসন্ত বিহীন
চেনা সব মানুষগুলো, হয়ে ওঠে অচিন
জীবনের আবর্তে, জীবন নবীন

তোকে দেখেছিলাম,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আপনি কি পথখাবার খান? তাহলে এই লেখাটি আপনার জন্য

লিখেছেন মিশু মিলন, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১০:৩৪

আগে যখন মাঝে মাঝে বিকেল-সন্ধ্যায় বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দিতাম, তখন খাবার নিয়ে আমার জন্য ওরা বেশ বিড়ম্বনায় পড়ত। আমি পথখাবার খাই না। ফলে সোরওয়ার্দী উদ্যানে আড্ডা দিতে দিতে ক্ষিধে পেলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

কষ্ট থেকে আত্মরক্ষা করতে চাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৯



দেহটা মনের সাথে দৌড়ে পারে না
মন উড়ে চলে যায় বহু দূর স্থানে
ক্লান্ত দেহ পড়ে থাকে বিশ্রামে
একরাশ হতাশায় মন দেহে ফিরে।

সময়ের চাকা ঘুরতে থাকে অবিরত
কি অর্জন হলো হিসাব... ...বাকিটুকু পড়ুন

×