
মাদার ইন ল আই সি ইউ তে। দুইদিন ধরে হসপিটাল আর বাসা। হসপিটালে আই সি এর সামনে বসে আছি। এক বৃদ্ধ মহিলা বিলাপ ধরে কাদছেন। যার দুইটি মেয়ে দেখতে কালো। তাদের বাবাও আই সি ইউ তে। মায়ের কষ্ট উনার মেয়ে কালো, এমনি বিয়ে দিতে কষ্ট হবে, তার উপর একমাত্র উপার্জনকারীর কিছু হলে কি হবে ভেবে উনি বিলাপ করছেন। চিন্তা করে দেখলাম ওনার কান্না করার পেছনে যথেষ্ট কারণ আছে। আই সি ইউ এর সামনে বসেই পোস্টটি লিখলাম।
বিয়ের বাজারে শুধু মাত্র কালো হওয়ার অপরাধে একটি মেয়ে যেভাবে অপমানিত ও অপদস্থ হয় তা বলার অপেক্ষা রাখে না। বিয়ে করতে গেলে সবাই সুন্দর মেয়ে খোজে। আর সমানে চলতে থাকে সুন্দর হওয়ার প্রতিযোগিতা। এটা দোষের কিছু নয়। সবাই চাইতেই পারে সুন্দর বা সুন্দরী হতে। দোষটা হল আমরা কেউ মননে ও প্রজ্ঞায় সুন্দর হতে চাইনা। শুধু গায়ের রঙ ফর্সা করার প্রতিযোগিতা।এক মহিলা তার মেয়েকে সুন্দর করার জন্য এমন কোন পদ্ধতি নেই যা তিনি এপ্লায় করেন নি। কারণ কোন ভালো ছেলে নাকি কালো বলে উনার মেয়েকে বিয়ে করতে চাইবে না। আচ্ছা একটি ফর্সা মেয়ে যদি শিক্ষিত ভদ্র মার্জিত না হয়, ব্যক্তিত্বই না থাকে সে শুধু মাত্র সুন্দর হওয়ার কারণে একজন কোয়ালিফাইং ছেলেকে পাবে, আর একটি মেয়ে ব্যবহার, আচরণে, অন্যকে শ্রদ্ধায় , সৃজনশীলতায় ও ভদ্রতায় এগিয়ে থাকার পরও শুধু মাত্র কালো হওয়ার মনের ইচ্ছার বিরুদ্ধে অপছন্দের কাউকে বিয়ে করতে হবে এ কেমন নীতি?
আমাদের দেশে মেধার চেয়ে সৌন্দর্যের দাম বেশী। একটি ফর্সা মেয়ে খুব সহজেই সবখানে গ্রহণযোগ্যতা পায়। আমাদের দেশেই সম্ভবত ফর্সা দিয়ে সৌন্দর্যের মাপকাঠি নির্ধারিত হয়। এদেশের অধিকাংশ এখনো কন্যা সন্তান হলে মন খারাপ হলে। কালো হলে এদের চেহারায় কালো মেঘ জমে থাকে মেয়ের বিয়ে না হওয়া পর্যন্ত। কি অমানবিক! আজ থেকে ৫২ বছর আগে ১৯৭০ সালে লন্ডনে অনুষ্ঠিত মিস ওয়ার্ল্ড এর ক্রাউন জিতেছিল একটি কালো মেয়ে নাম জেনিফার হুস্টেন।মিস ওয়ার্ল্ড বা মিস ইউনিভার্স প্রতিযোগিতা গুলো যারা দেখেন দেখবেন সেখানে কম্পিটিশন করার জন্য অনেক কালো বা কম ফর্সা মেয়েও সিলেক্টেড হয়। আমরা কি তাদের চেয়েও মড়ার্ন হয়ে গেলাম?
সুন্দর হওয়ার সবচেয়ে বেশী প্রতিযোগিতা চলে বাংলাদেশ এবং ভারতে। অভিনেত্রী পূজা বেদির কন্যা আলেয়া এফ কে চিনেন? খুব বেশী যে ছবি করছে তা নয় একটি মাত্র ছবিতে অভিনয় করেছেন হিট করেনি। ইনস্টাগ্রামে গিয়ে দেখেন কি পরিমাণ জনপ্রিয় এ প্রজন্মের ছেলেমেয়েদের কাছে। নিজেকে ‘সুন্দর’ করার জন্য শরীরে অনেক কাটছেরা বলিউডে নতুন নয়। সার্জারি করিয়ে কেউ নিজের ঠোঁটের ভোল বদলে ফেলেছেন। কেউ আবার নাকের শেপ বদলে ফেলেছেন। আলেয়া এগুলোর বিপক্ষে। শুধু মাত্র সৌন্দর্য বৃদ্ধি করার নেশায় বড় লোকের বেটিরা প্লাস্টিক সার্জারি করছে শরীর কেটে। শরীর না কেটেও সুন্দর হওয়া যায়। কোরবানি ঈদ চলে গেল। পশু কোরবানির সাথে যদি একটি মেয়ে কালো হিসেবে জন্ম নেয়াটা অপরাধ এই মানসিকতার কোরবানি না হয় সে কোরবানি কি গ্রহণযোগ্যতা পাবে? ফর্সা হলেই সুন্দর না। একটা শ্যাম বর্ণের মেয়ে নিজেকে গ্রুমিং করার মাধ্যমে ফর্সা মেয়েদের পেছনে ফেলে দিতে পারে। আমগো ফর্সা মেয়েরা প্রশ্ন ফাঁস বি সি এস ক্যাডারদের জন্য বরাদ্দ। এরা যদি বি সি এস পাশ করার পরও ফর্সা মেয়েকেই সুন্দর মেয়ে করে আর সুন্দর মনের কালো মেয়েকে বিয়ে করতে না চায় এদের জন্য প্রশ্ন-ফাঁস জেনারেশান কথা টা ঠিক আছে।
আমাদের নোংরা সমাজ ব্যবস্থা একটি কালো মেয়ে বুদ্ধি হওয়ার পর মাথায় ঢুকিয়ে দেয় তুই কালো তো বিয়ে দিতে কষ্ট হবে! অথচ বুদ্ধি হওয়ার সাথে সাথে যদি তাকে পৃথিবীর অন্যতম সফল ও এওয়ার্ড উইনিং কালো মেয়ে মারসাই মার্টিন এর গল্প বলতো তবে আমাদের কালো মেয়েরা হতাশায় অন্তত ভুগত না।কালো ফর্সা বলে কিছু নেই ।একজন ভালো মানুষ হতে হবে আগে। সুন্দর নয় ক্লাসি হওন। একজন মানুষের ক্লাস বুঝা যায় তার ব্যবহার, আচরণ এবং ব্যক্তিত্বে।সুন্দর না হওয়ার জন্য অথবা কালো বলে যারা হতাশায় ভুগেন তাদের জন্য পেরিস হিলটন একটি উক্তি- "একটি মেয়ে দেখতে কেমন তা কোন ব্যপারই না, যদি সে কনফিডেন্ট হয় তবে সে অবশ্যই সেক্সি "
ছবিতে কপি রাইট আছে
শিরোনাম আর্টসেল এর দুঃখ বিলাস গানের লিরিক্স থেকে।
মেয়েদের বিয়ে নিয়ে কথা হচ্ছে। তাই বিয়ের সাজে একটা ছবি দেয়া হলো। কনফিডেন্ট হলে কালো মেয়েদের কেউ কতো স্মার্ট দেখায় তা বুঝানোর জন্য।
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই জুলাই, ২০২২ রাত ২:০৩

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




