দিল দরিয়ার মাঝে দেখলাম আজব কারখানা।।
দেহের মাঝে বাড়ি আছে
সেই বাড়িতে চোর ঢুকেছে
ছয় জনাতে সিঁদ কাটিছে,
চুরি করে একজনা।।
এই দেহের মাঝে নদী আছে
সেই নদীতে নৌকা চলছে
ছয় জনাতে গুণ টানিছে,
হাল ধরেছে একজনা।।
দেহের মধ্যে বাগান আছে
নানা জাতির ফুল ফুটেছে
ফুলের সৌরভে জগত্ মেতেছে
কেবল লালনের প্রাণ মাতলো না।।
----------------------------------------------------------------
০২.
যে জন হাওয়ার ঘরে ফাঁদ পেতেছে,
ঘুচেছে তার মনের আঁধার, সে যে
দিন ছাড়া নিরিখ বেঁধেছে।।
হাওয়ার দমে বেঁধে ভেলা
অধর চাঁদ মোর করছে খেলা
ঊর্ধে নালে সদা চলা
বহু সাধন-গুণে কেউ দেখেছে।।
হাওয়া দ্বারে দম কুঠরি
মাঝখানে অটল বিহারী
শূন্য বিহার স্বর্ণ পুরী
কলকাঠি তার ব্রহ্মদ্বারে আছে।।
মন ছুটে প্রেম-ফাঁসি করে
জান শিকারী শিকার ধরে
ফকির লালন কয়, বিনয় করে
সে ভাব ঘটল না মোর হৃদয়-মাঝে।।
----------------------------------------------------------------
০৩.
হায় একি কলের ঘরখানি বেঁধে
সদায় বিরাজ করে সাঁই আমার।।
দেখবি যদি সে কুদরতি
দেল-দরিয়ার খবর কর।।
জলের জোড়া সকল সেই ঘরে
তার খুঁটির গোড়া শূনের উপরে
শূন্য ভরে সন্ধি করে
চার যুগে আছে অধর।।
তিল পরিমাণ জায়গা বলা যার
শত শত কুঠরি কোঠা তার
ও তার নিচে-উপর নয়টা দুয়ার
নয় রূপে সাঁই দিচ্ছে বার।।
ঘরের মালিক আছে বর্তমান একজন
তারে দেখলি নারে, দেখবি আর কখন
সিরাজ সাঁই কয়, লালন
তোমায় বলব কি সাঁইর কৃতি আর।।
-----------------------------------------------------------
০৪.
হাওয়ার ঘরে দম আটকা পড়েছে
কি অপরূপ কারখানা।
শুদ্ধ হাওয়া-কলে অনেক দমে চলে
হাওয়া নির্বাণ হলে দম থাকে না।।
হাওয়া দমে জেকার গণি
নিগুম তত্ত্ব শুনি
বলতে ডরাই সেসব অসম ভাব-বাণী
লীলে নিত্যকারী
হাওয়া যোগেশ্বরী
হাওয়ার ঘরে দমের হয় লেনাদেনা।।
নির্মল হাওয়ার গুণ বলবো কি আর
এক সঙ্গে দম হলো আর
অঙ্গে হাওয়া দম খেলছে সদায়
ঘরে কলকাঠি যার হাতে বাহিরে সে জনা।।
যেজন হাওয়া-শক্তি ধরে
যোগে জানতে পারে
নিগূঢ় করণ কারণ সেই যাবে সেরে
লালন বলে, মোরে
কোলে বিষম ঘোর
হাওয়ার ফাঁদ পাতিলে যেত সব জানা।।
-----------------------------------------------------------
০৫.
নিরাকার ভাসছে রে এক ফুল।
বিধি বিষ্ণু হর
আদি পুরন্দর
তাদের সে ফুল হয় মাতৃফুল।।
বলবো কি সে ফুলের গুণবিচার
পঞ্চমুখে সীমা দিতে নারে হর।
যারে বলি মূলাধার
সেও তো অধর
ফুলে আছে ধরা চোর সমুতুল।।
লীলা নিত্য পাত্রস্থিতি সে ফুলে
সাধকের মূল বস্তু এ ভূ-মণ্ডলে।
সে যে বেদের অগোচর
সে ফুলের নাগর
সাধুজনা ভেবে করেছে উল।।
কোথায় বৃক্ষ হারে কোথায় রে তার ডাল
তরঙ্গে পড়ে ফুল ভাসছে চিরকাল।।
সে যে কখন এসে অলি
মধু খায় সে ফুলি
লালন বলে, চাইতে গেলে দেয় ভুল।।
---------------------------------------------------------
০৬.
আঠারো মোকামে একটি রূপের বাতি জ্বলছে সদাই।
নাহি তেল তার নাহি তুলা আজগুবি হয়েছে উদয়।।
মোকামের মধ্যে মোকাম
শূন্য শিখর বলি যার নাম
বাতির লুন্ঠন সেথায় সুদন
ত্রিভুবনে কিরণ দেয়।।
দিবানিশি আট প্রহরে
এক রূপে চার রূপ ধরে
বর্ত থাকতে দেখলি নারে
ঘুরি মলি বেদের বিধায়।।
যে জানে সে বাতির খবর
ছুটেছে তার নয়নের ঘোর
সিরাজ সাঁই কয়, লালন রে তোর
দৃষ্ট হয় না মনের দ্বিধায়।।
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই সেপ্টেম্বর, ২০০৯ দুপুর ১২:৪৩