আগেই বলেছি আমাদের হাতে সময় নেই মাত্র ১ দিনের সফর। তাই জাফলং পৗেছে আগে খাওয়া দাওয়া শেষ করে নিয়ে ছিলাম। যাতে করে আমাদের পরবর্তীতে সময় নষ্ট না হয়। খাওয়া দাওয়া শেষ করে শরীরটা খুব ক্লান্ত লাগতেছিল, মন যেন আর টানছিল না কোথাও যেতে, শরীরে যে দকল গেছে তাতে খুবই ক্লন্ত লাগছিলা, বিশ্রাম চাচ্ছিল। কিন্তু আমাদের যে হাতে একদই সময় নেই বিশ্রাম নেয়ার, তাই বিশ্রাম এর কথা বাদ দিয়ে আমরা আবার কাঁদা পানির পথ ধরে একগিয়ে যেতে লাগলাম। অব্যশ্য আমারা একা নয় সকলেই কষ্ট করে আচ্ছে। দূর দূরান্ত থেকে ঝর্ণা দেখতে। কাঁদা পানির পথ ছেড়ে এবার আমরা শুকনো নদীর ভীতর দিয়ে চলে যাওয়া পাথরের পথ ধরলাম।
সম্পূর্ণ নদী পাথর আর পাথর, পায়ের নীচে ও পথর হাটতে একটু কষ্ট হচ্ছিল। কিন্ত এই কষ্টযে আনন্দের আর ভাল লাগার কষ্ট। তবে পাথরের উপরে পানি থাকলে হাটতে ভিষণ মজা । এত কষ্টের পর যখন আমরা ঝর্ণার কাছে পৌছালাম তখন ঝর্ণা দেখে সমস্ত কষ্ট দূর হয়ে গেল। কিন্তু ঝর্ণা পানি কোথায় অল্প পানি তাও আবার ঝর্ণা অনেনক দূরে কি আর করা এখনতো আর বর্ষা কাল না তাই ঝর্ণায় পানিও নেই। বর্ষা এবং বর্ষার পরবর্তী সময় ঝর্ণার পূর্ণ যৌবন কাল, তখন গেলে আসল রূপে ঝর্ণাকে দেখা যাবে। এখান পানি অল্প আর ঝর্ণা থেকে পানি আচ্ছে না। বৃষ্টি হলে ঝর্ণা থেকে পানি পড়ে কন্তু বৃষ্টি নেই পানিও কম, তবু চার পাশের পাকৃতিক দৃশ্য খুব সন্দর, মনোরম দেখে চোখ জুবিয়ে গেল। কিন্তু চার পাশে শুধু মানুষ আর মানুষ কোলাহল এ মুখরিত।
মূল ঝর্ণা ভারতে অবস্থিত। আমাদের বাংলাদেশ থেকে শুধু দেখতে পাওয়া যায়, কাছে যাওয়ার উপায় নেই। বাংলাদেশ এবং ভারত এর সেনা পাহারা দিচ্ছে।
তবে ঝর্ণার খুব কাছাকাছি গিয়েছিলাম। ঝর্ণা থেকে অল্প অল্প পানি আচ্ছে। সেই পানিতে সকলে গোসল করছে। সামান্য স্রোত আছে, ঝর্ণা থেকে মনে হয় পানি আসচ্ছে। আমি আগে থেকে গোসল এর জন্য কাপড় নিয়ে গিয়েছিলাম। কাপড় পরিবর্তন করে নিলাম গোসল এর জন্য।
পানিতে পা রাখতেই পুরো শরীর ঠান্ডা অনুভব করলাম। পাথরের পানি তাই অনেক ঠান্ডা। আমাদের সবাই জামা কাপড় পরিবর্তন করে পানিতে নেমে পড়লাম। পানিতে গা ভাসিয়ে দিতেই পুরো শরীর ঠান্ডা হয়ে গেলো, সাথে সারা দিনের ভ্রমন ক্লান্তি কোথায় চলেগেল বুঝতেই পেলাম না।
আমরা প্রায় ১ ঘন্টার কাছা কাছি গোসল করলাম আর ছবি তুললাম। ঐখানে একটা ব্যবস্থা খুব ভাল লাগলো, তা হলো মহিলাদের জন্য কাপড় বরিবর্তন করার জন্য আলাদা ভাবে ব্যবস্থা করা আছে।
আমরা অনেক টা সময় নিয়ে গোসল এবং সাতার কাটলাম। তবে ঝর্ণার পানিতে গোসল করলে অন্য রকম একটা অনুভুতি হয়। পানি খুব ঠান্ডা হওয়ার পর ও শরীরে তেমন ঠান্ডা অনুভূতি হয় না। গোসল শেষে আমরা পাশে অবস্থিত মার্কেটে গেলাম।
আমরা বাংলাদেশ এর শেষ সিমান জাফলং এর শেষ এ কিছু ছবি তুলেছিলাম।
এইটা বাংলাদেশ এর শেষ তার পর থেকে ভারত এর সিমানা শুরু। পাশেই মার্কেট। ওখান থেকে বেশ কিছু কেনাকাটা কলাম। কেনাকাটা শেষে দোকানি কে জিজ্ঞাসা করলাম যে আসে পাশে ঘুরে দেখার আর কি কি স্পট আছে। সে আমাদের বলো খাশিয়া পল্লী আছে, নদীর ঐ পাড়ে। আমরা তার কাছ থেকে শুনে নদী পাড় হওয়ার জন্য পাড়ে গেলাম। নদীতে অসংখ্য খৈয়া নৗেকা, তাদের ভিতর থেকে একজন এর নৗেকাতে উঠে পড়লাম। জন প্রতি ১০ টাকা দিয়ে নদী পার হলাম।
খেয়ার মাঝি আমাদের নদী পাড় করে বালুর চরে নামিয়ে দিল। আমরা হাটতে হাটহে নদী ঐ পাড় এ পৌছালাম। পাড়ে একটা টং দোকান, পাশে একটা কাঠ এর বেঞ্চ আছে, তাতে বসে ১ কাপ চা পান কলাম এবং দোকান থেকে ১ বোতল পানি কিনে সঙ্গে নিলাম। যাতে করে পথে পানি পিপাশা পেলে পান করতে পারি। চা পান করার শেষে আবার রওনা হইলাম। আমাদের পরের গন্তব্য খাঁশিয়া পল্লী।
কিছু পথ যেতে আমরা দেখতে পেলাম ইজি বাইক দাড়িয়ে আছে আর তার ডাইভার ডাকা ডাকি করছে। ডাইভারদের ভিতর থেকে এক জন এগিয়ে এসে আমাদের জিজ্ঞাস কলো আমরা কোথায় যাব । আমরা তাকে বলাম কি কি দেখার আছে। সে বললো পানশুপারি বাগান, খাঁশিয়া পল্লী, খাঁশিয়া জমিদার বাড়ি, চা বাগান ইত্যাদি। আমরা এক কথায় রাজি হয়ে গেলাম, ঠিক আছে যাব কিন্তু ভাড়া কত পরবে। তারা বললো ৬০০ টাকা সম্পূর্ণ ঘুরিয়ে দেখাবো। আমরা অনেক দর দাম করে ৪৫০ টাকা ঠিক করলাম। সবাই ইজি বাইকে উঠে বসলাম, আমাদের নিয়ে ডাইভার রওনা দিল। কিছু দুর পরে প্রথম আমাদের সামনে পরলো পানশুপারি বাগান।
উপরের রাস্তা দিয়ে আমাদের ইজি বাইক চলছে। আর দুই পাশে পানশুপারি বাগান। দেখতে দেখতে রাস্তা ধরে চলছি। রাস্তা ধরে কিছু দূর চলতেই খাঁশিয়া পল্লীর টং ঘর দেখতে পেলাম। খাঁশিয়ারা কাঠ দিয়ে উঁচু করে টং এর মতো করে ঘর তৈরী করে। আমরা ডাইভার এর কাছে জান্তে চাইলাম তাদের জীবন জীবিকা কি? সে আমাদের জানাইলো তারা ইজি বাইক চালায় আর চাষ বাষ করে জীবন জীবিকা নিবাহ করে। আবার কেও পাথর তুলে নদী থেকে আবার কেও জমিতে কৃষাণদেয় ইত্যাদি।
অনেকটা পথ চলে আসার পর হটাৎ ইজি বাইকের ডাইভার বললো ঐ দেখেন খাঁশিয়া জমিদার বাড়ি। আমরা ডাইভার কে বলাম একটু থামান আমরা ছবি তুলব, তিনি আমাদের বললো আসতে দেখাবে, কিন্তু আমরা তবু অনুরোধ কলাম। সে অল্প সময়ের জন্য ইজি বাইক থামালো আমরা ছবি তুললাম।
ছবি তুলে আবার রওনা হইলাম। এভাবে কিছু দূর রাস্তা চলার পর আমাদের ইজি বাইক একটা সরু রাস্থার মাথায় বাইক থামল। ডাইভার আমাদের নামিয়ে দিয়ে বললো এই রাস্তা ধরে সামনে এগিয়ে গেলে চা বাগান দেখতে পাবেন। ডাইভার তার মোবাইল নাম্বার দিয়ে বললো আপনাদের দেখা শেষ হইল আমার নাম্বারে ফোন করবেন। আমি এসে আপনাদের নিয়ে যাবো। আমরা রাস্তা ধরে এগিয় চলছি খানিক টা পথ চলার পর একটা টং দোকান পেলাম সেখান থেকে ১ বোতল পানি নিলাম আর চা পান করলাম আর দোকানির কাছে জিজ্ঞাসা কলাম চা বাগান আর কতদূর, সে বললো এইতো সামনে এগিয়ে যান পাবেন। অল্প কিছুটা পথ হাটার পর পৌছে গেলাম আমাদের কঙ্খিত লক্ষ্যে, আমাদের চরম চোখের সামনে দেখতে পেলাম চোখ জুরানো চা বাগান।
নিজের চোখ কে যেন বিশ্বাস করতে পারতেছিলাম না। এতো সুন্দর চা বাগান। সবাই যে যার ক্যামেরা, মোবাইল বাহির করে ছবি তুলতে লাগল।
জীবনে এই প্রধম স্ব চোখে চা বাগান দেখলাম, কিজে আনন্দ লাগতে ছিল, বলে বুঝানো যাবে না। নিজে না গেলে এর অনুভূতী বুঝানো সম্ভব নয়। আমি সকলের ছবি তুলে দিচ্ছিলাম নিজেও কিছু ছবি তুলছি এই ছবি গুলি আমার তোলা। আমরা অনেকটা সময় নিয়ে চা বাগান ঘুরে দেখেছি ছবি তুলেছি আর সাথে কিছু কেনা কাটা করেছি। ঐখানে সাবান, মধু, আর বিভিন্ন প্রসাধনী সামগ্রী পাওয়া যায়। চা বাগানের পাশে এক লোক বাগান থেকে ছিড়ে পান বিক্রি করছে আমরা ১টা পান খেলাম। চা বাগান ঘুরা শেষে আমরা আবার রাওনা হইলাম। এই বার বাড়ি ফেরার পালা। প্রথম এ আমারা সরু রাস্তা ধরে আবার আগের জায়গাতে ফিরে আসলাম এসে দেখি ডাইভার সাহেব হাজির। আমার গাড়িতে উঠে বসলাম। আমাদের নিয়ে ইজি বাইক ছুটে চলছে নদীর ঘাট এ যখান হইতে আমরা সিলেট গামী গাড়িতে উঠব। যথা সময় আমাদের নিয়ে ডাইভার নদীর ঘাটে নামিয়ে দিল। আমরার তার ভাড়া পরিশোধ করে। ঘাট এ গিয়ে দারালাম, খেয়া নৌকা দিয়ে মাঝি লোক পার করছে। আমরা একটা নৌকাতে জন প্রতি ১০ টাকা দিয়ে পার হলাম।
নদী পাড় হতে চোখে পড়ল মার্কেট তাতে হরেক রকম সামগ্রী সাজিয়ে বসে আছে। আমি তা থেকে ১ প্যাকেট ভারতীয় চকলেট কিনলাম। তারপর বাস ষ্ট্যান্ড এ গিয়ে সিলেট গামী একটা গাড়িতে সকলে উঠে বসলাম। গাড়ি ২-২:৩০ ঘন্টা পর আমাদের সিলেট এ নামিয়ে দিল। ততক্ষনে রাত হয়ে গেছে, তাই আমরা একটা হোটেলে ডুকলাম রাত এর খাবার খেতে। রাতের খাবার খেতে খেতে শুরু হল প্রচন্ড ঝর বৃষ্টি। খাওয়া দাওয়া শেষ করে বাহিরে গিয়ে দারিয়ে দেখি প্রচন্ড বৃষ্টি তার ভিতর কোন গাড়ি পাচ্ছিলাম না। অনেক কষ্টে একটা সিএনজি করে ট্রেন ষ্ট্যান্ড গেলাম। ট্রেন ষ্ট্রেশনে গিয়ে দেখি ঢাকা গামি কোন ট্রেন এর টিকিট নেই। আমরা অনেক কষ্টে ৩টি টিকিট ক্রয় করলাম। টিকিট এর ঝামেলা শেষ করে আমরা ষ্ট্রেশন থকে ১ বোতল পানি আর কিছু হাল্কা খাবার সাথে নিয়ে ট্রেনে উঠে পড়লাম। আমাদের ট্রেন রাত ১০টায় ছাড়ল সারা রাত প্রচন্ড বৃষ্টি। তার উপরে আমরা যে ট্রেন এর বোগিতে উঠেছি তার অবস্থা করুন, প্রচন্ড শব্দ হয়। সারা রাত একটুও ঘুমাতে পারিনি। সকাল ৮ টা নাগাত আমাদের ট্রেন কমলাপুর এসে নামিয়ে দিল। যথা রিতি আবার ঢাকার জীবন শুরু হল। এতো কিছুর পরেও খুব সুন্দর একটি দিন কাটিয়ে আসলাম-আলহামদুল্লিলাহ।
তবে একটা কথা যারা ১দিন এর জন্য যাবেন তারা অব্যশই খুব তারা তারি করে সব কাজ সারবেন। যাতে করে স্পট গুলি কোনটা মিস না হয়। আর একটা কথা তা হল আমরা ইজি বাইক ভাড়া করেছিলাম ৪৫০ টাকায়। আপনারা এটা না করের আপনারা পায়ে হেটে যাবেন তাতে অনেক সময় নিয়ে দেখতে পারবেন এবং খরচ কম লাগবে।
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই আগস্ট, ২০১৭ সন্ধ্যা ৬:০২