মাশরাফিকে নিয়ে দুই নায়িকার টানাটানি! ট্যাবলয়েড পত্রিকার শিরোনামের মতো শোনালেও শুক্রবার সকালে ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগের (আইপিএল) নিলামে বাংলাদেশ দলের সহ-অধিনায়ককে নিজ নিজ দলে টানতে একরকম টানা-হ্যাঁচড়াই চলেছে দুই বলিউড স্টার প্রীতি জিনতা ও জুহি চাওলার মধ্যে। প্রথমজন কিংস এলেভেন পাঞ্জাবের অংশীদার। অন্যজন শাহরুখ খানের কলকাতা নাইট রাইডার্সের হয়ে ভারতের গোয়ায় অনুষ্ঠিত নিলামে দরযুদ্ধে সামিল হয়েছিলেন। শেষপর্যন্ত জুহিরই জয় হয়েছে, সর্বোচ্চ ৬ লাখ ইউএস ডলার (বাংলাদেশী মুদ্রায় ৪ কোটি ২০ লাখ, এক ডলার ৭০ টাকা হিসাবে) দর হেঁকে বাংলাদেশ দলের মূল স্ট্রাইক বোলারকে দুই বছরের জন্য কিনে নিয়েছে সৌরভ গাঙ্গুলী-জন বুকাননের দল।
এবারের নিলামে সবচেয়ে বেশি সময় ধরে দর কষাকষি চলেছে তাকে নিয়েই। প্রায় আধ ঘন্টা ধরে এটা চলার সময় নিলাম ঘরের বড় স্ক্রিনে মাশরাফির ক্যারিয়ারের দুর্দান্ত কিছু মুহূর্তও দেখানো হচ্ছিল। এই যেমন কখনো ভারতের ওয়াসিম জাফরের স্টাম্প উপড়ে ফেলে উল্লাস করছেন আবার কখনো যুবরাজ সিংকে আউট করে আনন্দে জার্সির কলার উঁচু করছেন। এনডিটিভিতে সরাসরি স¤প্রচারিত এই অনুষ্ঠানে জুহি চাওলাকে দেখা গেছে একাধিকবার কলকাতা নাইট রাইডার্সের কোচ বুকাননের সঙ্গে দর নিয়ে শলাপরামর্শ করতে। নিলামের টেবিলে হাতুড়ির বাড়ি পড়ার সঙ্গে সঙ্গেই তারা মাশরাফির বেজ প্রাইস (নিলাম শুরুর দর) ৫০ হাজার ইউএস ডলার থেকে ডাকা শুরু করে। ক্রিকইনফো বলছে, নিলামে 'সবচেয়ে নাটকীয় বিক্রি'র শুরু সেখানেই।
এরপর মাশরাফিকে কেনার দৌড়ে প্রীতির নেতৃত্বে সামিল হয় কিংস এলেভেন পাঞ্জাবও। ধীরে ধীরে 'নড়াইল এক্সপ্রেস'-এর মূল্য উঠে যায় চার লাখে। নিলামকারী তখন জানতে চান পাঞ্জাব ৪ লাখ ১০ হাজার ডলার দিতে ইচ্ছুক কিনা। প্রীতি রাজী হওয়ার পর দর ডাকাডাকি চলতেই থাকে। কলকাতা ৫ লাখ ডাকে প্রথম। পাঞ্জাবও পিছু হটার পাত্র নয়। তারা একসময় সাড়ে পাঁচ লাখে নিয়ে যায় দর। তবে কলকাতা ছয় লাখ বলার পর অবশ্য হাল ছেড়ে দেয় পাঞ্জাব। মাশরাফি কলকাতা নাইট রাইডার্সের হয়ে যাওয়ার পর আইপিএল কমিশনার ললিত মোদি বলেছেন, "কলকাতার জন্য ভালোই হল ব্যাপারটা।" কারণও ব্যাখ্যা করেছেন তিনি, "একেই বাংলাদেশ কলকাতার খুব কাছের একটা জায়গা। তারওপর আইপিএলের দলগুলোকে বিদেশে গিয়ে ম্যাচ খেলতে দেওয়ার নতুন একটা প্রস্তাব নিয়েও আলোচনা করছি আমরা। এক্ষেত্রে মাশরাফিকে দলভুক্ত করাটা পরে কাজে লাগতে পারে নাইট রাইডার্সের।"
এবারের নিলামে বিক্রি হওয়া ১৭ ক্রিকেটারের মধ্যে চারজনের মূল্যই কেবল মাশরাফির চেয়ে বেশি। সাড়ে ১৫ লাখ ডলারে বিক্রি হয়ে আইপিএল ইতিহাসের সবচেয়ে দামি ক্রিকেটার বনে গেছেন ইংল্যান্ডের দুই সাবেক অধিনায়ক অ্যান্ড্রু ফ্লিনটফ এবং কেভিন পিটারসেন। প্রথমজন যোগ দিয়েছেন এর আগে সবচেয়ে দামি ক্রিকেটার, ভারত অধিনায়ক মহেন্দ্র সিং ধোনির (১৫ লাখ ডলার) নেতৃত্বাধীন চেন্নাই সুপার কিংস-এ। অন্যজন আইপিএলের প্রথম আসরে পয়েন্ট তালিকার তলানিতে থাকা রাহুল দ্রাবিড়ের ব্যাঙ্গালোর রয়েল চ্যালেঞ্জার্সে। এই দু'জন ছাড়া মাশরাফির চেয়ে বেশি পেয়েছেন কেবল দুই দক্ষিণ আফ্রিকান জাঁ পল ডুমিনি (সাড়ে নয় লাখ ডলারে মুম্বাই ইন্ডিয়ানসে) এবং এখনো কোনো টেস্ট কিংবা ওয়ানডে না খেলা অলরাউন্ডার টিরন হেন্ডারসন (সাড়ে ছয় লাখ ডলারে বর্তমান চ্যাম্পিয়ন রাজস্থান রয়েলসে)।
অনেক নামী তারকারাও বিকিয়েছেন মাশরাফির চেয়ে কম মূল্যে। এই যেমন অস্ট্রেলিয়ান পেসার শন টেইট এবং ইংল্যান্ডের সাবেক অধিনায়ক পল কলিংউড তার চেয়ে কম পাচ্ছেন যথাক্রমে সোয়া দুই ও সোয়া তিন লাখ ডলার করে। আর বাংলাদেশের হয়ে ৩৫ টেস্ট ও ১০৩ ওয়ানডে খেলা মাশরাফি তার বেজ প্রাইসের চেয়ে ১২ গুণ বেশি মূল্যে বিক্রি হয়েছেন। যা পেছনে ফেলে দিয়েছে গতবার চরম বিস্ময়ের জন্ম দিয়ে ইশান্ত শর্মার বিক্রি হওয়ার ঘটনাকেও। সেবার বেজ প্রাইসের চেয়েও পৌনে ছয়গুণ বেশি মূল্য (সাড়ে ৯ লাখ ডলার) পেয়েছিলেন ভারতীয় দলের এই পেসার। যাকে অচিরেই কলকাতা নাইট রাইডার্সে সতীর্থ হিসেবে পেতে যাচ্ছেন মাশরাফি।
নিলাম থেকে মাশরাফির জন্য চরম আনন্দের খবর এলেও অন্য বাংলাদেশীদের জন্য হতাশার খবরই বেশি। আইসিসির র্যাঙ্কিংয়ে ওয়ানডের সেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান এবং ওপেনার তামিম ইকবালকে কোনো দলই কেনার বিষয়ে আগ্রহ দেখায়নি। প্রথমে এই অবস্থা ছিল মোহাম্মদ আশরাফুলেরও। এমনিতেই নিয়মানুযায়ী আইপিএলের একেকটা দল সর্বোচ্চ ১০ জন বিদেশী ক্রিকেটারকে দলভুক্ত করতে পারে। প্রায় সব দল আগেই সাত-আটজন করে বিদেশী কিনে রাখায় এবার খুব বেশি ক্রিকেটারের দলভুক্তির সম্ভাবনা ছিল না। কলকাতা নাইট রাইডার্স যেমন একজনকেই নিতে পারতো, কারণ তারা এর আগেই নয়জনকে নিয়ে রেখেছিল। সবমিলিয়ে ১৭ জন খেলোয়াড় বিক্রি হওয়ার কথা থাকলেও নিলাম শেষে দেখা যায় হয়েছেন ১৫ জন। এরপর অবিক্রিত ক্রিকেটারদের মধ্য থেকে বাংলাদেশ অধিনায়ককে তার বেজ প্রাইস ৭৫ হাজার ডলারে কিনে নেওয়ার সুযোগটা ছাড়েনি শচীন টেন্ডুলকারের মুম্বাই ইন্ডিয়ানস। মূল্যটা যে আশরাফুলের প্রত্যাশিত নয়, তা না বললেও চলে।
আশরাফুল কিংবা সাকিবদের নিয়ে দলগুলোর ততোটা আগ্রহ না থাকলেও ছিল মাশরাফিকে নিয়ে। সেটা তাকে না পাওয়ার পরও বলা প্রীতি জিনতার কথাতেই বেশ বোঝা যাচ্ছে, "মর্তুজা গ্রেট ক্রিকেটার। ওর মতো অলরাউন্ডারকে আমরা খুব করে চেয়েছিলাম। কিন্তু কিছু জিততে হলে কিছু হারাতেও হয়।"
তবে মাশরাফিকে নিয়ে লড়াইয়ে জুহি চাওলার কাছে তিনি হেরেই গেছেন!
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০০৯ রাত ১০:৫৭